২৫ আগষ্ট রাত ৯টা ৷
মিতু অনলাইনে পত্রিকা পড়ছে ৷ একপর্যায়ে তার চোখ আটকে গেল প্রথমআলো পত্রিকার নিম্নলিখিত সংবাদটিতে -
"ঝিনাইদহ আদালতে করা মামলায় প্রথম আলোর সম্পাদক ও প্রকাশক মতিউর রহমান, নিজস্ব প্রতিবেদক আজাদ রহমান ও স্থানীয় সাংবাদিক সুব্রত সরকার জামিন পেয়েছেন। ঝিনাইদহের বিচারিক হাকিম আদালত আজ মঙ্গলবার এই তিনজনের জামিন মঞ্জুর করেন।
মানহানির পাঁচ মামলায় আজ আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন মতিউর রহমান। আদালত তা মঞ্জুর করেন।
পরে পৃথক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম আলোর সম্পাদককে এই পাঁচ মামলায় ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেন একই আদালত।
অন্যদিকে আজাদ রহমান ও সুব্রত সরকার মানহানির ওই পাঁচটি মামলাসহ চাঁদাবাজির পৃথক দুটি মামলায় জামিনের আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন।
আজ আদালতে বিবাদীদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আজিজুর রহমান, শফিউল্লাহ, এস এম মশিউর রহমান, মো. আমিনুল ইসলাম ও প্রশান্ত কুমার কর্মকার।
ভর্তুকির টাকায় ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে ১৫টি কলের লাঙল কেনায় অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রথম আলো। এর পরিপ্রেক্ষিতে মতিউর রহমান, আজাদ রহমান ও সুব্রত সরকারের বিরুদ্ধে আটটি মানহানির মামলা হয়। মামলাগুলোর বাদী কলের লাঙলের জন্য নির্বাচিত স্থানীয় যুবলীগের নেতা-কর্মীরা।
এ ছাড়া আজাদ রহমান ও সুব্রত সরকারের বিরুদ্ধে অজামিনযোগ্য ধারায় পৃথক দুটি চাঁদাবাজির মামলা করা হয়। এর একটির বাদী কলের লাঙলের ডিলার, অন্যটির বাদী একজন যুবলীগ কর্মী।
গত ২৭ মে প্রথম আলোয় ‘কলের লাঙলের ভর্তুকির টাকার সিংহভাগ সরকারি দলের নেতাদের পকেটে’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়। ওই দিনই কৃষি মন্ত্রণালয় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ১৬ জুন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী জাতীয় সংসদে ৩০০ বিধিতে বিবৃতি দিয়ে দাবি করেন, প্রথম আলোর খবর অসত্য। পরদিন তিনি আবারও সংসদে বিবৃতি দেন। এরপর প্রথম আলো পুরো বিষয়টি আবারও অনুসন্ধান করে। তার ভিত্তিতে ২ জুলাই ‘প্রথম আলোর খবর অসত্য নয়, এখনো পাঁচজন লাঙল কেনেননি’ শিরোনামে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ৩ জুলাই আগের তদন্ত দল আবারও কোটচাঁদপুরে যায় এবং অভিযুক্তদের সঙ্গে কথা বলে। ৫ জুলাই কৃষিমন্ত্রী সংসদে তৃতীয়বারের মতো বিবৃতি দেন। দুই দিন পর ৭ জুলাই কলের লাঙল বিক্রেতা আসাদুল ইসলাম প্রথম আলোর ঝিনাইদহের নিজস্ব প্রতিবেদক আজাদ রহমান ও স্থানীয় সাংবাদিক সুব্রত সরকারের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করেন। এরপর ১২,১৩ ও ২৬ জুলাই যুবলীগের নেতা-কর্মীরা বাদী হয়ে প্রথম আলোর সম্পাদকসহ তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে আটটি মানহানির মামলা করেন। ১২ জুলাই আজাদ রহমান ও সুব্রত সরকারের বিরুদ্ধে আরেকটি চাঁদাবাজির মামলা করা হয়। এ বিষয়ে গত ৪ আগস্ট প্রথম আলো ‘কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা’ শিরোনামে সম্পাদক মতিউর রহমানের লেখা একটি মন্তব্য প্রতিবেদন প্রকাশ করে।"
সংবাদটি পড়ে মিতু স্তম্ভিত বা হতভম্ব হল না ৷ কেননা এ ধরণের সংবাদ অহরহ চোখে পড়ে ৷ এরপরও তার নাক-মুখ দিয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস বেরিয়ে গেল ৷ বুকের মধ্যে চিন চিন ব্যথা অনুভব করল ৷
তার অবচেতন মন বলে উঠল-
রক্ষক যদি ভক্ষক হয়, প্রহরী যদি চোর হয়, বিচারক যদি আসামী হয়- তাহলে কে করবে কার বিচার?