somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ফেলুদার তোপসে
নিষ্পত্তি কি সব সময়ে জয়-পরাজয়ে? ময়দানি ধুলোয় তার বাইরেই যে পড়ে থাকে খেলার আসল-নকল গল্পগুলো৷ ময়দানের ঘাস-ধুলো যাঁর প্রিয়তম বন্ধু, তাঁর কলমে অভিজ্ঞতার দস্তাবেজ৷

হে প্রিয় পুরুষ, নারীর শরীর মাত্রই পন্য নয়

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অফিসে পাশাপাশি বসে কাজ করে তোর্সা আর সিদ্ধার্থ। গায়ে গা লাগানো কিউবিকল তাঁদের। বাইরে যেতে প্রতিবারই তোর্সার পাশ কাটিয়ে যেতে হয় সিদ্ধার্থকে। আর প্রতিবারই তোর্সা বুঝতে পারে সিদ্ধার্থর হাত ছুঁয়ে যায় তিস্তার শরীরের কিছুটা অংশ। প্রথমে অতটা খেয়াল করেনি। ভাবত ছোট জায়গা, হাত লেগে যেতেই পারে। কিন্তু আস্তে আস্তে অস্বস্তির কাঁটাটা গেঁথে বসতে লাগল তোর্সার মনে। এই ছোঁয়াটা যে নিছকই অনিচ্ছাকৃত নয়, বরং খানিকটা জোর করেই জায়গা বুঝে হাত বাড়িয়ে দেওয়া – সেটা বুঝতে তোর্সার বিশেষ অসুবিধে হয়নি।
কিন্তু এটা বুঝতে পেরেই অফিসটাই কেমন বিষের মতো লাগতে শুরু করেছে তার। সিদ্ধার্থ তোর্সার থেকে অনেকটাই ছোট, ডাকেও তোর্সা দি বলে। খেলাধুলো, ঘরের খবর, রাজনীতি – সবকিছু নিয়েই বেশ জমিয়ে আড্ডা হয় তাদের। একসঙ্গে চা খেতেও যায় মাঝেমধ্যে। সেই সিদ্ধার্থ! যাকে সে অনেক সময় অনেক অফিস পলিটিক্স থেকে রক্ষা করেছে! তাহলে কি সত্যি ছেলেদের কাছে মেয়েদের শরীরটা ছাড়া আর কোনও সম্পর্কেরই দাম নেই? সিদ্ধার্থ উঠছে দেখেই নিজের চেয়ারো পুরো গুটিয়ে যায় তোর্সা। সেটা সিদ্ধার্থর ছোঁয়া বাঁচানোর জন্য যতটা না হোক, তার বন্ধু সিদ্ধার্থ, স্নেহের সিদ্ধার্থকে নিজের চোখে আরও নীচে নামতে না দেওয়ার চেষ্টায়। বাধ্য হয়ে চেষ্টা করে নিজের বসার জায়গা বদলানোর।


এ গল্প শুধু তোর্সা নয়। কখনোও অফিসে, কখনোও বন্ধুদের আড্ডায়, কখনোও কলেজ ক্যাম্পাসে – এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়নি, এমন মেয়ে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। গত ২৫ নভেম্বর ছিল International Day for the Elimination of Violence against Women। সেই উপলক্ষ্যে মিটিং, মিছিল, সেমিনার – অনেক কিছুই আয়োজিত হয়েছে পৃথিবীর অনেক জায়গায়। কিন্তু মেয়েদের বিরুদ্ধে হিংসা বলতে ঠিক কী বুঝি আমরা, সেটাই কি এখনও স্পষ্ট হয়েছে? তোর্সা তো একটি আধুনিক শিক্ষিত মেয়ে। সেখানে তাকেই যদি প্রতিদিন এই যৌন অত্যাচারের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, সেখানে শিক্ষার আলো না পৌঁছনো সমাজের প্রত্যন্ত প্রান্তের ছবিটা ভাবলেই শিউরে উঠতে হয়।
প্রায় প্রতিদিন সকালে ধর্ষণের খবর পড়তে পড়তে ওটাও আমাদের এখন গা সওয়া হয়ে গিয়েছে। চা-বিস্কুটের সঙ্গেই হজম করে ফেলি অবলীলায়। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫-তে আমাদের দেশে ৩৫ হাজারটি ধর্ষণ ঘটেছে। অবশ্যই একটা বিরাট সংখ্যক ধর্ষণ রিপোর্ট না হওয়ায় জানা যায়নি। তাই সে সংখ্যাটা বাদ রাখাই হল। কিন্তু এই ৩৫ হাজারের মধ্যে ৯৫.৫%-এ পরিচিতজনেরই লালসার শিকার হতে হয়েছে ধর্ষিতাকে। ধর্ষণের পাশাপাশি রয়েছে শিশু বিবাহ, বধূহত্যা, নারী পাচার, গার্হস্থ্য হিংসার মতো রকমফেরে ভায়োলেন্স। এ ছাড়াও রয়েছে তোর্সার মতো আরও অজস্র মেয়ের কথা। যারা কখনও বুঝে, কখনও না বুঝে অত্যাচারের শিকার হয়। এ সব ক্ষেত্রে অভিযোগ জানালে আইনের সাহায্য কতটা পাবে তা নিয়ে যেমন সংশয় রয়েছে, তেমনই রয়েছে সমাজে চিহ্নিত হয়ে যাওয়ার ভয়। বাসে উঠে কোনও সহযাত্রীর গায়ে পড়া অসভ্যতার প্রতিবাদ করলে যেমন শুনতে হয়, ‘দিদি ট্যাক্সি করে চলে যান।’ এটাও অনেকটা ঠিক তেমনই।
হে পুরুষকুল, আপনারা কি জানেন, কখনও বন্ধু হিসেবে, কখনও বয়ফ্রেন্ড হিসেবে, কখনও সহকর্মী হিসেবে আপনারা প্রতিদিন কোনও না কোনও মেয়ের ওপর অত্যাচার করছেন? আপনাদের মেয়ে, বোন, স্ত্রী-ও একই ভাবে কোনও না কোনও ছেলের অত্যাচারের শিকার হচ্ছে? সকালে চায়ের কাপ থেকে শুরু করে রাতের বিছানা পর্যন্ত অত্যাচারের দলিল আঁকা থাকছে একটি মেয়ের জীবনে।

হে পুরুষকুল, আপনারা কি আদৌ জানেন, মেয়েদের জীবনে প্রতি মুহূর্তের এই ভায়োলেন্সের সংজ্ঞাটা ঠিক কেমন? যে মেয়ে কখনোও ধর্ষিত হয়নি, বা যাকে পণের দাবিতে পুড়িয়ে মারা হয়নি, বা যাকে ভিন রাজ্যে পাচার হয়ে যেতেও হয়নি, সুস্থ স্বাভাবিক জীবন কাটানো একটি মেয়েও যে কতটা ভায়োলেন্স সহ্য করে জীবন কাটায়, সে সম্পর্কে কোনও ধারণা আছে কি আপনাদের?
ডিয়ার বয়ফ্রেন্ড
সম্পর্কের দোহাই দিয়ে আমাকে তোমার সঙ্গে শুতে বাধ্য করা ভায়োলেন্স। এই সম্পর্কটা আমার খুব প্রিয়। একে ছাড়ার কথা ভাবলেই আমার কষ্ট হয়। খুব কষ্ট হয়। সেই কষ্টটাকে পুঁজি করে জোর করে আমার শরীর ভোগ কোরো না। আমি এখন প্রস্তুত নই। অন্য কোনও ছেলের সঙ্গে কথা বললে, তা নিয়ে রাগারাগি করাটা ভায়োলেন্স। হতেই পারে আমি মোটা। তা দেখেই আমার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছ। এখন আমাকে সচেতন করার নামে যে বডি শেমিং-এর প্রক্রিয়াটা তুমি চালাও, সেটা ভায়োলেন্স।
ডিয়ার হাসব্যান্ড
জোর করে সেক্স হল ধর্ষণ, তা তোমার বিবাহিত স্ত্রী-র সঙ্গে হলেও। কত রাতে নিজের স্ত্রীর ইচ্ছের বিরুদ্ধে তাকে ভোগ করেছ, খেয়াল আছে? তাকে বাইরে কাজে যেতে না দেওয়া বা ইচ্ছে করে এমন পরিস্থিতি তৈরি করা যাতে সে তার কেরিয়ার ছাড়তে বাধ্য হয় – এটা ভায়োলেন্স। সন্তান কখনোই একমাত্র আমার দায় নয়। সমান দায়িত্ব না নেওয়াটা ভায়োলেন্স। সকালের তাড়াহুড়োয় স্ত্রী-কে রান্নাঘরে সাহায্য না করাটা ভায়োলেন্স। পরিবারের অন্যান্যদের সুখের জন্য স্ত্রীর স্যাক্রিফাইস আশা করাটা ভায়োলেন্স।
ডিয়ার ফ্রেন্ড
‘নো মিনস নো’। আমার কাছে তোমার বন্ধুত্ব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তার জন্য ইচ্ছের বিরুদ্ধে কিছু করতে চাপ দেওয়াটা ভায়োলেন্স। আমি নিজের জন্য ভাবি, আমাকে নিজের জন্য ভাবতে হবে। সেটা মেনে নাও। আমি এই বন্ধুত্বকে অন্য কোনও স্তরে নিয়ে যেতে আগ্রহী না হলে জোর করাটা ভায়োলেন্স।
ডিয়ার এক্স-বয়ফ্রেন্ড
তোমার-আমার ব্রেক আপ হয়ে গেছে বলেই আমার শরীরের ব্যক্তিগত অংশ নিয়ে অন্যের সঙ্গে আলোচনা করার ছাড়পত্র তুমি পাওনি। আমার ছবিও বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করার অধিকার তোমায় কেউ দেয়নি। ব্রেকআপ প্রেমে পড়ার মতোই জীবনের একটা অঙ্গ। তাকে সহজ ভাবে মেনে না নেওয়াটা ভায়োলেন্স।


ডিয়ার কলিগ

প্রত্যেকেরই কিছুটা পার্সোনাস স্পেসের প্রয়োজন। একে শ্রদ্ধা করতে শেখো। আমাকে দেওয়া তোমার সেক্সি কমপ্লিমেন্টটা আমি পছন্দ করছি কিনা, সেটা আগে দেখো। সবার সঙ্গে সবরকম ঠাট্টা-ইয়ার্কি চলে না। এটা না বোঝাটা ভায়োলেন্স। আমরা প্রত্যেকেই অ্যাডাল্ট। আমার পিঠে তোমার হাত রাখার অর্থ যে আমি খুব ভালোই বুঝছি, এটা তুমিও বুঝতে পারছ। তাও প্রতিবার যেন কিছুই হয়নি, এমন ভান করাটা ভায়োলেন্স।


ডিয়ার আঙ্কল

তুমি ঠিক কী করছ, তা স্পষ্ট করে বোঝার মতো বয়স আমার হয়নি। তাই আমাকে নিয়ে যা ইচ্ছে তাই করবে? সারা জীবন পুরুষদেক ঘেন্না করতে আমায় বাধ্য কোরো না। তোমার শিশুকন্যার সঙ্গেও এমনটা হতে পারে।
ডিয়ার পথচারী
আমি ছোট স্কার্ট পরি, বা লাল লিপস্টিক। সেটা আমার পার্সোনাল চয়েস। আমাকে দেখে হুইসল মারা, বা মন্তব্য করার কোনও অধিকার তোমার নেই। এটা ভায়োলেন্স। পাবলিক স্পেসে যতটা তোমার অধিকার, ঠিক ততটা আমারও।
হে পুরুষকুল, আমাদের জীবনে নানা সম্পর্কে বড় প্রিয় কিছু পুরুষ আছে। তাদের প্রতি সন্দেহ জাগতে বাধ্য হয়, এমন কিছু তোমরা প্লিজ কোরো না।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:০৮
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×