somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ফেলুদার তোপসে
নিষ্পত্তি কি সব সময়ে জয়-পরাজয়ে? ময়দানি ধুলোয় তার বাইরেই যে পড়ে থাকে খেলার আসল-নকল গল্পগুলো৷ ময়দানের ঘাস-ধুলো যাঁর প্রিয়তম বন্ধু, তাঁর কলমে অভিজ্ঞতার দস্তাবেজ৷

কাশিতে কাশিও না

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কাশিতে কাশিও না

মানুষের অদ্ভুত অদ্ভুত সব ভাল লাগা থাকে। আমারও এমন একটা আছে, বলা ভাল ছিল। আমার অদ্ভুত ভাল লাগা হল কাশির শব্দ শুনে সেটা নকল করা।

ছোটবেলায় ভাঙা দালানের কোণে বসে দাদু যখন কাশতো, আমি সেটা হুবহু নকল করতাম। দাদুর কাশিকে নকলটা এত ভাল হত, সবাই আমাকে বারবার সেটাই করতে বলত। বিয়েবাড়ি, উত্সব যেখানেই যাই সবাই আমায় টেনে এনে বলত, এই বাপ্পা ওই কাশির আওয়াজটা একবার শোনা না। ছোটবেলায় কাশি আমায় একেবারে 'ফেমাস' বানিয়ে দিল।

এরপর যখন ক্লাস ফাইভে নামজাদা এক স্কুলে ভর্তি হওয়ার ইন্টারভিউতে বসি তখন আমায় বাঁচিয়ে দেয় কাশিটাই। স্কুলের অ্যাডিমিশনে টেস্টে ইংরেজি পরীক্ষাটা ভাল দিতে পারিনি। তবু তিন চারদিন পর মৌখিক পরীক্ষায় ডাকা হয়েছিল। পাঁচজন বাঘা বাঘা স্যার-ম্যাডামদের সামনে একেবারে ইঁদুর হয়ে বসলাম মৌখিক পরীক্ষায়। প্রথম প্রশ্ন উড়ে আসার আগেই দিলাম জোরে একটা কাশি, তারপর আবার, তারপর আবার...সেখানেই বাজিমাত। স্যাররা আর প্রশ্ন করার সুযোগ পাননি। শরীর খারাপ বলা ভাল কাশির সৌজন্যে অ্যাডিমিশন টেস্টে উতরে গেলাম।

ক্লাস এইটে আবার আমার জীবনে কাশি ফিরে এল। বাংলার তাপস স্যার বললেন, আজ একটা খেলা খেলব, যে এই খেলায় জিতবে তাকে অ্যানুয়াল পরীক্ষার আমি বাংলার পুরো প্রশ্নপত্র বলে দেব। ক্ষ্যাপাটে তাপস স্যার দিলেন একটা রচনা লিখতে হবে, বিষয় শীত, যে সবচেয়ে ভাল লিখবে সে পাবে পুরস্কার। আমি লিখলাম শীতের সাইডএফেক্ট নিয়ে... হেডিংয়ে দিলাম 'কাশিতে কাশিও না'। বাকিরা লিখল নিয়মমাফিক সব রচনা। 'কাশিতে কাশিও না' পরে একেবারে গদগদ তাপস স্যার আমায় পুরস্কার দিলেন। জীবনে ওই একবার লেটার মার্কস পেলাম।

কলেজে উঠে কাশির সংজ্ঞা বদলে দিলাম। নিঝুম বলে একটা মেয়ের প্রেমে পড়লাম। কিন্তু নিঝুম এত চুপচাপ থাকত যে ওকে কোনও কথাই বলতে পারতাম না। কলেজ শেষ হব হব করছে সাহস করে মনের কথাটা ওকে বলে বসলাম অনেকটা সিনেমার কায়দায়। ক্লাসে প্রফেসার ঢুকব ঢুকব করছে সেই সময় ওকে বললাম, জানি তুমি কথা খুব কম বল, তাই সঙ্কেতে তোমার জবাব চাই। যদি তুমি আমায় ভালবাসো, তাহলে ক্লাসের মাঝে তুমি একটু জোরে কাশবে, তাহলেই বুঝে যাব তুমি আমায় ভালবাসো, আর না কাশলে আমি আর তোমায় কোনওদিন মুখ দেখাবো না।

রাশভারী চেহারার অধ্যাপক ক্লাসে ঢুকলেন। ইউনিয়ন করা ছেলেগুলো পর্যন্ত রাগী অধ্যাপকের ক্লাসে একেবারে চুপচাপ হয়ে গেছে। আমি বসে নিঝুমের কাশির অপেক্ষায়। স্যার তখন পড়াচ্ছেন চাহিদার সঙ্গে জোগানের সম্পর্কের কথা। আর আমি ভাবছি প্রেমের সঙ্গে কাশির সম্পর্কের কথা। একটু বেঞ্চ সরানোর আওয়াজ হলেই আমার বুকটা ধক করে উঠছে। এই বোধহয় কাশির আওয়াজ হল বলে। ক্লাস চলছে, মাঝে মাঝে দু একটা আওয়াজও হচ্ছে। চক পড়ে যাওয়ার শব্দটাও একেবারে বুকে এসে গাঁথছে। ক্লাস শেষ হতে চলল, কাশির আওয়াজ আসছে না, আমার বুকটা এবার কাঁপতে শুরু করল। বুঝতে পারলাম মেয়েটাকে বড্ড ভালবেসে ফেলেছি। এই ক মিনিটের মধ্যে কাশির আওয়াজ কানে না এলে আমি ভেঙে পড়ব। ক্লাস শেষের ঘণ্টা বেজে গেল, আমার শরীরটা কেমন করতে লাগল, জ্বর এলো বোধহয়। সেই জ্বরের জন্য আর কলেজে যাওয়া হয়নি। শরীর খারাপ নিয়েই কোনও মতে ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষাটা দিলাম। রেজাল্টের দিনে কলেজে গিয়ে নিঝুমকে খুঁজলাম পেলাম না।

তা হোক, ততদিনে আমার বিশ্বাস এসে গেছে কাশিটা আমার কাছে খুব 'লাকি সাইন'। প্রতি শীতেই একবার না একবার কাশি হয় আমার। তখন বেশ লাগে। কফ সিরাপগুলো খেতেও বেশ ভাল। মিথ্যা বলব না কাশি আমার কাছে পয়া বলে মাঝে মাঝে জোর করে ওকে ডেকেও আনি। বিশ্বাসটা আরও দৃঢ় হল গত বছর শীতে। বলা নেই কওয়া নেই একটা পত্রিকায় গল্প লেখার জন্য বেশ ভাল টাকার অফার পেলাম, গলায় তখন আমার কফ, মাঝে মাঝেই তখন আমি খকখক শব্দে কাশি।

ও ঘর থেকে কাশির শব্দটা শুনে এখন কানে হাত দিই। অসহ্য লাগে শব্দটা। যেখানেই যাই যেন ওটা তাড়া করে বেরোয়। সেদিনে এক বন্ধুর বাড়ি পার্টিতে রাতে খুব জোরে গান বাজাচ্ছে, আমি তখন ঘোর মাতাল, হঠাত্‍ কোত্থ থেকে এসে পড়ল আওয়াজটা। গানের সুর ছাপিয়ে ধুকো কাশির আওয়াজ..আমি দুটো হাত দিয়ে ভাল করে কান দুটো বন্ধ করে দিলাম। ঠিক ফাঁক খুঁজে ঢুকে পড়ল বেয়ারা কাশির শব্দটা। আমি ছুটে বাইকে উঠে পড়ে পালালাম..আওয়াজটাও আমায় তাড়া করে ধরে ফেলল। বাইকের ঘঁ ঘঁ আওয়াজের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাজছে কাশির শব্দটা।

অনেক টাকা দরকার এখন...বাবার কাশির সঙ্গে রক্ত বেরোচ্ছে। জানি না কী হবে...কাশির শব্দটা এখন আমায় ভেঙচি কাটে। দিনরাতে রাতবেরোতে উদয় হয়...কানে চাপা দিয়ে দিই তখন। এখন আবার ওই শব্দের সঙ্গে নতুন একটা যোগ হয়েছে। দাদুর শ্রাদ্ধের দিন মজা করে দাদুর কাশির ডাকটা অন্য ভঙ্গিমায় নকল করেছিলাম, সেই ডাকটা এখন শুনতে পাই। কাশি জিনিসটা ভয়ঙ্কর আমি আর ওকে ভালবাসি না, একদম না....
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৪৬
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×