somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নায়িকা আর আমার ধাক্কা

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৬ ভোর ৬:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



স্কুল পালিয়ে প্রথম বাংলা ছবি " কেয়ামত থেকে কেয়ামত " দেখার পর মনের মধ্যে যে কি কেয়ামত শুরু হয়েছিল, এখনো ভাবলে ভয় লাগে ।এক অন্য রকম অনুভূতি ছিল তখনকার সময় । বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছিল ছবিটা ।সম্ভবত এইটা নায়িকা মৌসুমীর প্রথম ছবি ছিল ।তবে প্রথম বা দ্বিতীয় এটা যতটা না গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বেপার ছিল মৌসুমীর উপস্থিতি । তখনকার সময়ের প্রচন্ড আবেনদনময়ী এই নায়িকার CRASH খাননি এমন পুরুষ ছিল না বললেই চলে ।

আর আমি বা আমার বয়সের সবার কাছে মৌসুমী ছিল একটা ফ্যান্টাসি । যাই হোক , এই রকম ফ্যান্টাসি হয়তো সময়ের সাথে সাথে অনেক বার আসে আর চরিত্রও হয়তো বদলায় । কিন্তু জীবন এর প্রথম বার বলে হয়তো কিছু কথা থাকে । স্কুল পেরিয়ে কলজে , কলেজ পেরিয়ে ইউনিভার্সিটি অনেক বড় হয়ে গেলাম , এর পর চাকরি , বিয়ে , ছেলে মেয়ে , সংসার ,আট- দশ জন বাঙালির মতো ক্রেডিট কার্ড নির্ভর একটা জীবন ।

সবার জীবনের কাহিনীতেই টুইস্ট থাকে । কারো বড় ,কারো ছোট । জীবন এর এই নাটকীয় টুইস্ট গুলো নির্ভর করে আপনার উপর । মানে আপনি যত বড় মাপের মানুষ , আপনার টুইস্ট তত বড় । ধরুন আপনি বাস এ করে অফিস থেকে বাসায় আসার সময় সর্বোচ্ছ আপনার সাথে টিভির উঠতি কোনো প্রেসেন্টের বা নায়িকার সাথে দেখা হয়ে যেতে পারে , কিন্তু আপনি যদি রেডিসন বা ভালো কোনো হোটেল এর দরজা দিয়ে বের হন, হয়তবা আপনার সাথে আপনার ফ্যান্টাসিতে ভোগা কোনো নায়িকার সাথে ধাক্কা লেগে যেতেও পারে ।চিন্তা করুন , সিনেমার মতো হটাৎ দমকা হওয়া আর নায়িকা মুচ্কি হেসে বললো সরি । Sorry এমনটি সিনেমাতেই হয় , বাস্তবে এমনটা হবার চান্স খুবই কম । কারণ নায়িকার গায়ে ধাক্কা খাওয়ার জন্য আপনার আগে অনেক সিরিয়াল আছে । সে যাই হোক , কবে কোথায় ধাক্কা খাবো এই ভেবে কি দরজা ধরে দাঁড়িয়ে থাকবো ? মোটেও না , জীবন চলতে থাকে ।

চাকরির সুবাদে একবার একটা টিভি এড বানানোর সুযোগ হয় আমার । আমি ছিলাম, ব্র্যান্ড ম্যানেজার । কাজের অংশ হিসাবেই আমাকে আমার ব্র্যান্ড এর জন্য প্রমোশনাল এড বানাতে হয় । আমার কাজটা ছিল , আমার ম্যানেজমেন্টকে প্রেসেন্টেশন এর মাদ্ধমে প্ল্যান দেয়া , কিভাবে কি করে এই নামহীন ব্রান্ডকে সুনামধন্য ব্র্যান্ড এ পরিণত করা যায় । বেপারটা এতো সহজ কিছু না । অনেক টাকার পয়সার বেপার , প্রতি মাসে প্রায় কোটি খানেক টাকার বাজেট । সেই যায় হোক, টাকা তো আর আমার না । তবে ধাক্কা একটা খাওয়ার সুযোগ আছে , এতেই আমি খুশি । ঘটা করে এজেন্সী ঠিক করা হলো, স্ক্রিপ্ট থেকে শুরু করে আরো কত কি । কিন্তু আমরা কোনো ভাবেই কোন নায়িকাকে দিয়ে এডটা বানাবো , ঠিক করতে পারছিলাম না । এজেন্সী থেকে রেফার করা অনেক নায়িকার মধ্যে থেকে এবার বেছে যাবার পালা । সাধারণত এই বেছে যাবার কাজটা ম্যানেজমেন্ট এর উওপর এর লেভেল এর বস বা MD , Charman ইনারা করে থাকেন । কিন্তু , এইবার আমার MD আর চেয়ারম্যান দায়িত্বটা আমার উপর দিলেন । আমি প্রচন্ড একটা ধাক্কা খাওয়ার আশায় আমার ছোট বেলার ফ্যান্টাসি মৌসুমীকে বেছে নিলাম আমার ব্র্যান্ড এর জন্য । আমার ব্র্যান্ড এর জন্য আমার প্রিয় নায়িকা মৌসুমী কাজ করবে , চিন্তা করতেই তো কত ভালো লাগছিলো । ধাক্কা আমার কপালে আছেই ।

প্রথম ধাক্কা

রাট প্রায় সাড়ে ১১ টা । আমি আর আমার এক কলিগ মৌসুমীর উত্তরার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে । আজকে উনাকে উনার পেমেন্ট এর চেক দেবার কথা । দীর্ঘ ৩ ঘন্টা বাইরে দাঁড়িয়ে রাখার পর মৌসুমী আসলেন । আমরা উনার ড্রয়িং রুম এ গল্প করছিলাম ।পেমেন্ট এর বেপারটা নিয়ে কথা উঠলো, আর আমি উনাকে পরের দিন চেক দেবার কথা বললাম ।অনেকটা সিনেমার স্টাইলে আমাদের সবাইকে মুহূর্তের মধ্যে পরের দিন আসতে বলা হলো । এক মুহূর্ত দেরি না করে ।

দ্বিতীয় ধাক্কা

নায়িকা মৌসুমীর ড্রাইভার, আমি নামটা ভুলে গেছি , আমাকে ফোন করে বললো, প্রতি দিন শুটিং এর জন্য এক্সট্রা ৪০০০ টাকা করে দিতে হবে উনাকে । কারণটা আরো অদ্ভুত । মৌসুমীর গাড়ির তেল কিনার টাকা এক্সট্রা দিতে হবে । আমি বেপারটা বুজলাম না ।এজেন্সী কে ফোন করে জিজ্ঞেস করলাম । ওরা পরিচিত একটা হাসি দিলো , যার অর্থ , এটা খুবই সাধারণ বেপার । কিন্তু আমি এক্সট্রা ৪০০০ টাকা প্রতি দিন নিজের পকেট থেকে তো দিতে পারি না । দিলাম না ।এর পর ফোন করলো ওমর সানি সাহেব । খুব সুন্দর ভাবে ড্রাইভার কে প্রতিদিন এক্সট্রা টাকাটা দিয়ে দিতে বললো । আমি কিছুই বুজতে পারছিলাম না কি হচ্ছিলো । মাত্র ৪০০০ টাকার জন্য এতো জনপ্রিয় একজন নায়ক আমাকে কেন ফোন দিচ্ছে ।

তৃতীয় ধাক্কা

BKSP তে শুটিং চলছিল । রোজার মধ্যে শুটিং এর সবার জন্য খাবার বেবস্তা করা হয়েছে । কিন্তু নায়িকা শুধু চাইনিস খায় লাঞ্চে , এটা আমাদের কারো জানা ছিল না । মৌসুমীর সেই ড্রাইভার গাজীপুর থেকে প্রায় ঢাকা পর্যন্ত গেলো চাইনিজ আনতে ।তাও এজেন্সিকে টাকায় । পরের দিন সারারাত শুটিং হলো , তেজগাঁওয়ের কোক ফ্যাক্টরি তে ।হটাৎ রাত ১২ টার সময় মৌসুমী কান্না শুরু করে দিলো । আমি বুজলাম না কি হচ্ছে । পরে ডিরেক্টর এসে আমাকে বললো , ওমর সানি হসপিটালে , তাই নায়িকার মন খারাপ । আমার মনটাও খারাপ হলো । আমি ডিরেক্টরকে বললাম শুটিং ক্যান্সেল করে দিতে । এর পর আমার ডিরেক্টর আমাকে যা বললেন তা মি লিখতে পারবো না । তবে মানে ছিল এমন, "ভাই আপনি নতুন এই লাইন এ , একটু ওয়েইট করেন , শট রেডি হোক, দেখবেন সব ঠিক হয়ে যাবে । রাত বা সকাল ২ টা, শুটিং শেষ, মৌসুমী তার ড্রাইভারকে পেছনের সিট্ এ যেতে বলে নিজে ড্রাইভিং সিট্ এ বসলো । শাড়ি পড়া অবস্থা গাড়ি স্টার্ট দিলো ।কেয় শাড়ি পরে গাড়ি চালাতে পারে আমি আগে দেখিনি । আমার বদ্দমূল ধারণা ছিল , শাড়ি এস্কেলেটর প্যাডেল এ আটকে যাবে । আমি গিয়ে উনাকে বললাম আপনি এতো রাত এ শাড়ি পড়া অবস্থা গাড়ি ড্রাইভ না করলে হয় না ? বললেন, রাত এর বেলায় উনার গাড়ি চালাতে ভালো লাগে , ঢাকার রাস্তা ফাঁকা থাকে । বুজলাম না ওমর সানি কে দেখতে না গিয়ে উনি ঢাকার রাস্তাতে ড্রাইভ দিচ্ছে । কিছুই মিললো না ।

এই রকম আরো শ খানেক ধাক্কা খেয়ে আমার ফ্যান্টাসির ইতি টানলাম আমি । শুটিং শেষ হলো ।টিভিতে এড গেলো ।এখন এই এড নিজেই দেখি ন । এই এড কেন কোনো এড , সিনেমা , নাটক কোনো কিছুতেই আর ফ্যান্টাসি আসে না ।

সাধারণ এই জীবন এর মায়ার সাদ কেন পায় না অসাধারণ মানুষ গুলো ? কাছের মানুষ গুলোর মুখের দিকে কতোক্ষন তাকান আপনি ? কেন ,সারাক্ষন কাছে থাকে বলে ? কখনো যদি দূরে যায় , তবে বুজতে পারবেন কতটা ফ্যান্টাসিতে আপনি থাকেন এই কাছের মানুষটাকে নিয়ে । সব দূরের আর না পাওয়া জিনিস গুলোই সবার চাই , একবার পেয়ে গেলে মায়া কেটে যায় । যা আছে আপনার কাছে তাকে কেন ফ্যান্টাসি করেন না ? একবার তাকান আপনার পরিবার এর দিকে । যদি বিরিক্ত লাগে তবে কিছু দিন দূরে চলে যান সব ছেড়ে , বুজবেন ফ্যান্টাসি কাকে বলে , ধাক্কা কাকে বলে । ।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৮:২৩
১৭টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×