somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাহুবলীর গণতন্ত্র ও আমাদের রাজকীয় ভাবনা

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১১:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শুনেছি ব্রিটিশ রানী বাহুবলি ২ এর প্রথম শো দেখেছেন । উনার ভালো লাগতেই পারে। কারণ এমন নির্ভেজাল রাজকীয় কাহিনী হলিউড ও এখনো বানাতে পারেনি । আমাদেরও ভালো লাগছে । কল্প কাহিনী মনে করে আনন্দ নিচ্ছি । তবে বাহুবলি নিয়ে ব্রিটিশ রানীর আনন্দ আর আমাদের আনন্দের মাঝে একটু পার্থক্য আছে । আমরা যেটা কল্প কাহিনী বলে মজা নিচ্ছি সেটা রানীর কাছে বাস্তব । ব্যাপারটা বোঝার ।এখনো যেখানে বাহুবলীর মতো ছবি এক দিনে একশো কোটি রুপি কামায় আর সাধারণ মানুষ যেখানে দুই বছর ধরে বসে থাকে বাহুবলিকে কাটাপ্পা কেন মেরে ছিলো জানার জন্য সেখানে রাজা রানীর দোষ দিয়ে লাভ নেই ।রাজ্য রাজা রানী আমাদেরই তৈরি ।

প্রায় ১৫ বছর আগে এক বুক স্বপ্ন নিয়ে যখন লন্ডনের ফ্লাইট ধরি তখন ভাবতেও পারিনি স্বপ্নের সমাধি প্লেনের ভিতরেই হবে । আমার স্বপ্ন ভঙ্গ হয় যখন ব্রিটিশ এয়ার ওয়েজের প্লেনটি সামান্য কাত হয়ে হিত্রো এয়ারপোর্টের কাছাকাছি আসে । উপর থেকে আমি একটি উঁচু বিল্ডিং ও দেখতে না পেরে বুজতে পারছিলাম না কোথায় আসলাম ? এই যদি লন্ডন হয় তাহলে টিভি তে কি দেখলাম ? এর চেয়ে আমার ঢাকা শহরে অনেক উঁচু দালান কৌঠা আছে । মন খারাপ হলেও ফিরে আসার উপায় নাই । দেশ থেকে যখন ফুলের মালা দিয়ে আপনাকে লন্ডন আমেরিকার ফ্লাইট এ বিদায় দেয়া হয় তখন খুব সহজে আর ফিরে আসার উপায় থাকে না ।

আমার কাজে লন্ডন ছিল ভুতুড়ে এক শহর । যেখানে বছরের ৯ মাস থাকে আবছা অন্ধকার গুরু গুড়ি বৃষ্টি আর জোম্বি টাইপের মানুষ জন । সারাক্ষন কান্না কাটির মতো একটা আবহাওয়া । কিভাবে এই দ্বীপটিতে ব্রিটিশরা থাকে আমার জানা নেই । চাইলেই এরা আরো ভালো জায়গায় থাকতে পারতো যেহেতু ব্রিটিশ সাম্রাজ্য অনেক বড়ো ছিল । রাজা রানীর এই দেশে কিভাবে গণতন্ত্র কাজ করে আমার ক্ষুদ্র মনে তার ধারণ ক্ষমতা ছিল না । এই দেশটিতে রাষ্ট্র ক্ষমতা আসলে কার হাতে তা বুজতে হলে আপনাকে এই দেশে অনেক দিন থাকতে হবে । কারণ যখন আপনি এই দেশের রেসিডেন্ট হবেন তখনি কেবল আপনি বুজতে পারবেন ক্ষমতা কার হাতে । ঘুরতে গেলে মোটেও টের পাবেন না কিছু ।

ব্রিটেনে ট্যাক্স এর টাকা জমা হয় রানীর কোষাগারে সামরিক বাহিনী রানীর অধীনে পোস্ট অফিস থেকে শুরু করে প্রায় সব ধরণের সরকারি কার্যকলাপ রানীর অধীনে । অর্থাৎ যেসব প্রতিষ্ঠানের নাম রয়াল দিয়ে শুরু তাদের প্রধান রানী নিজে । এই সব দপ্তরের সব ধরণের কাজ রানী নিজে দেখা শুনা করেন লন্ডনের বাকিংহাম প্যালেসে থেকে । তাহলে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বা এম পি রা ঠিক কিভাবে সিদ্ধান্ত নেয় তা আমার জানা নেই । তবে এটুকু জানি ব্রিটেনের এক ইঞ্চি জায়গা নেই যেখানে ব্যাক্তি মালিকানা আছে । পুরো ব্রিটেন হচ্ছে রানীর সম্পত্তি । আপনি চাইলে লিজ নিয়ে পারেন তবে মালিকানা কখনোই আপনার হবে না ।



২০১০ সালে ব্রিটেনের নির্বাচন পরবর্তী সংকট দেখা দেয় । তখন কার্যত কয়েক সপ্তাহ ব্রিটেনে কোন প্রশাসন ছিল না । আমরা খুব অবাক হয়ে দেখছিলাম নব নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী সরকার গঠন না করে ব্রেড কিনে বাসায় ফিরছেন । কারণ উনি শনি -রবি বার কাজ করেন না । পুরো পৃথিবী বসে বসে এই নাটক দেখছিলো । একটা দেশে প্রধানমন্ত্রী নেই কয়েক সপ্তাহ ধরে সেখানে নব নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ছুটির দিনে কাজ করবেন না বলে ব্রেড কিনতে দোকানে যাচ্ছেন নিজে । অতঃপর সোমবার রানী মাতার ঘুম ভাঙলো আর সামান্য একটা সন্দেশে রীতিমতো ঘাড় ধাক্কা দিয়ে গর্ডন ব্রাউনকে তার বাস ভবন থেকে বের করে দিলেন আর ডেভিড ক্যামেরনকে ডেকে পাঠালেন বাকিংহাম প্যালেস । মাত্র ৪৫ মিনিটের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিলেন রানী । কারণ এই দেশটিতে প্রধানমন্ত্রী রানীর অধীনে একজন কর্মচারী মাত্র । যার অপোইনমেন্ট লেটার বাকিংহাম প্যালেস থেকে দেয়া হয় । পুরো বিশ্ব তলিয়ে দেখলো ক্ষমতার উৎস ।



নিচের ভিডিওটি দেখলে বুজতে পারবেন সেদিন আসলে কি হয়েছিল । কিভাবে একই সময়ে রানী একজনকে অপোইনমেন্ট দেন আর একজনকে এক কাপড়ে অফিস থেকে বের করে দেন ।

https://www.youtube.com/watch?v=BYCrVnB80AA



প্রশ্ন হলো যে প্রধানমন্ত্রী জনগণের ভোট নির্বাচিত হয় তার এপোইনমেন্ট লেটার রানী র কাছ থেকে কেন নিতে হবে ? তাহলে জনগণ কি শুধু রানীর ইন্টারভিউ প্যানেল এর কাজ করে ? অনেকটা তাই । আরো জঘন্য রীতি হলো প্রধানমন্ত্রীকে রানীর সামনে হাটু গেড়ে বসে মাথা নিচু করে আনুগত্য দেখাতে হয় । এর পরই কেবল প্রধানমন্ত্রী সামরিক বাহিনীর গোপন তত্ত্য বিষয়ক মিটিংএ উপস্থিত হতে পারবেন ।কার্যত প্রধানমন্ত্রীকে নীল ডাউন করার মানে হলো সমগ্র জনগণের প্রতিনিধিকে নীল ডাউন করানো । এর মধ্যে ঠিক কোথায় গণতন্ত্র আমার জানা নেই ।



এই ব্যাপারগুলো আমি যেরকম জানি ব্রিটিশরাও তেমনি জানে । কিন্তু তারা তাদের রাজতন্ত্র মেনে নেয় আর এ নিয়ে গর্ব করে । শুধু ব্রিটেনই নয় অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ড কানাডা এর মতো দেশ এখনো রানীর অধীনস্ত । সামগ্রিকভাবে আমাদের জানা গণতন্ত্রের বাইরে এরা এক ধরণের রাজতন্ত্রের মধ্যে বসবাস করে ।এখন প্রশ্ন হলো ব্রিটেনে কি কারো একবার মনে হয় না সত্যিকারের গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করার ? কখনও কি শুনেছেন কাওকে রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে কথা বলতে ? ব্রিটেনের ইতিহাসে এমন খবর দেখবেন না । কিন্তু এ কি করে সম্ভব ? অন্তত একজন হলেও তো থাকার কথা যে কিনা রানী বিরুদ্ধে কথা বলতে পারে । কিন্তু এমন একজনও খুঁজে পাবেন না । শেষ একজন কিছু বলার চেষ্টা করছিলেন তবে তার পরিণতি খুব একটা সুখকর হয়নি । প্রিন্সেস ডায়না ।

যেখানে সেনাবাহিনী প্রশাসন গোয়েন্দা বাহিনী এমনকি প্রধানমন্ত্রী নিজে রানীর অধীনে সেখানে কার্যত গণতন্ত্রের সংঘা কি হতে পারে আমার জানা নেই । হয়তো আমার বোঝার ভুল । হয়তো ব্রিটিশরা এতো ভালো ব্রান্ডিং করছে নিজেদের তাই গণতন্ত্রের সংঘা বদলে দিতে পেরেছে । হয়তো ধনী রাষ্ট্র বলে কেও কিছু বলছে না । আর নয়তো এটাই নতুন ধরণের এক রাজতন্ত্র । যেখানে গণতন্ত্রকে প্রজাদের দেখানোর জন্য রাখা হয় আর ক্ষমতা রাজ রানীর হাতে ।



আমি কেন লন্ডনে উঁচু দালান খুঁজে পাইনি তার উত্তর আমি পেয়েছি । যে দেশে রানীর অনুমতি ছাড়া আপনার বাড়ির বাইরের রং পর্যন্ত বদলাতে পারবেন না সেখানে উঁচু দালানের আশা করা বোকামি । কারণ রানী মাতা তার মতো করে সব রক্ষা করবেন । আর এই রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বা এম পি যখন আমাদের দেশে গনতন্তের পয়গাম নিয়ে আসেন তখন আমরা বেমালুম ভুলে যাই এটা আসলে রানীর পয়গাম । কারণ রানীর অধীনে কর্মরত একজন সামান্য কর্মচারীর এর চেয়ে বেশি কিছু করার নেই ।

ভালো লাগা মন্দ লাগা আপেক্ষিক ব্যাপার । আমার বড় মেয়ের জন্ম রয়েল লন্ডন হাসপাতাল এ । অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে আমার স্ত্রীকে আমি এই হসপিটালে ভর্তি করিয়ে ছিলাম । এর একমাত্র কারণ কালপাতালের নাম রয়েল লন্ডন । লন্ডন আর রয়েল এই দুটি শব্দ আমার মেয়ের বার্থ সার্টিফিকেট জুড়ে দেবার জন্য ।এখন আপনি যতই দেশপ্রেম দেখান না কেন ঠিক ওই জায়গায় গিয়ে সবাই এই রকম শব্দের মাঝে হারিয়ে যায় । আমিও তাই করেছি । শব্দ দুটির মাঝে যতই কন্ট্রাভের্সই থাকুক এর জন্য এখনো মানুষ বেমালুম ভুলে যায় সত্যিকারের কিছু সংঘা । শুধু লন্ডন তেমন ভালো ব্র্যান্ড না হলেও রয়েল লন্ডন অনেক বড় একটা ব্র্যান্ড এখনো অনেকের কাছে । যত দিন রাজা রানীরা এই ব্র্যান্ডিং টিকিয়ে রাখতে পারবে ততদিন রাজা রানী থাকবে । আর গণতন্ত্রের ব্র্যান্ডিং দেখার তো কেও নেই । ঐটা নিতান্তই সাধারণ মানুষের বোজার ভুল মাত্র ।

আর আমার মতো অতি সাধারণ কয়েক বছর লন্ডন এ থেকে দেশে ফিরে আসি অদ্ভুত এক ধারণা নিয়ে । বদলে দেই নিজের বাসার নাম । ভালো বাসা থেকে হয়ে যায় নম্বর ১০ । মাথার ভেতর সুক্ষ ভাবে ঢুকে যাওয়া ব্রিটিশ ব্রান্ডিং বের করা এতো সহজ নয় । রবীন্দ্রনাথ পারেন নি । মধুসূদন পারেন নি । আমি তো কোন ছাড় ।

https://www.facebook.com/NoTen-1428403280563466/
https://www.facebook.com/asraful.alam
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১:৪৫
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×