গত এক বছর যাবৎ প্রতি সপ্তাহে পে-পাল দিয়ে নিউ ইয়র্ক থেকে দেশে টাকা পাঠাই আমি । আমার কোনো পে-পাল একাউন্ট নেই । আমার স্ত্রীরও কোন পে-পাল একাউন্ট নেই । আমরা খুব ভালো ভাবেই টাকার আদান প্রদান করি । আমি আমার ডেবিট কার্ড দিয়ে মোবাইল থেকে মুহূর্তের মধ্যে এই কাজটি সেরে আসছি গত একটা বছর। ঠিক কি কারণে এখন ঘটা করে এই সার্ভিসটির এতো আয়োজন আমার বোধগম্য নয় । অনেক কিছুই হয়তো আমার বোধগম্য হচ্ছে না বেশ কিছুদিন ধরে । ঠিক কিভাবে দেশে নীল তিমির গেমটা খেলে সবাই বা ঠিক কিভাবে উবার এর মতো সার্ভিসে চলে দেশের রাস্তায় ? অনেক কিছুই ।
আমার বোধের উপর বোধ করি দেশ চলেনা । বোধের কথা না হয় বাদই দিলাম । যেখানে সুবোধ থাকে দৌড়ের উপর । আমার বোধ তো নস্যি । দেশ চালানোর জন্য অনেক মন্ত্রণলায় আছে । আছে বেশ জ্ঞানী গুণী বোধ সম্পন্ন মানুষজন । জ্ঞানী মানুষের সমস্যা হলো উনারা চোখ বন্ধ করে ভাবেন । আর তাতেই উনাদের মনে হয় কেওই কিছু দেখছেন না । নিজের বন্ধ করা চোখের অন্ধ বিশ্বাসে দেশে ঢুকে পরে উবার , নীল তিমি অথবা জুম এর নামে পে-পাল । আর সাধারণ মানুষ জন অজ্ঞান অবস্থায় উঠে পড়েন উবারে বা খেলে ফেলেন নীল তিমির মতো ডার্ক ওয়েব এর গেম গুলো ।
পে-পাল নিয়ে সরকারের আই সি টি মন্ত্রনণালয়ের উচ্ছাসের শেষ নেই । এই পে-পালের মাদ্ধমেই নাকি আমাদের উঠতি প্রজন্মের স্মার্ট জেনেরেশনরা বাইরে থেকে রেমিটেন্স এনে দিবে দেশকে । যে জেনেরেশন রিয়েল আই পি ছাড়া ডার্ক ওয়েভ এর নীল তিমি গেম খেলে ছাদ থেকে লাফিয়ে মরে তারা এনে দিবে দেশে রেমিটেন্স ? তাহলে আমি কি করছি নিউ ইয়র্কে ? গত এক বছর এতোগুলু টাকা জুম পে-পালের মাধ্যমে কোথায় পাঠালাম ? খুব সম্ভবত আগামী সপ্তাহ থেকে আমি হুন্ডি দিয়ে কিভাবে দেশে টাকা পাঠাতে হয় তা নিয়ে আগ্রহী হতে পারি । কারণ নিউ ইয়র্ক থেকে আমার কিঞ্চিৎ অপমান বোধ হতেই পারে । বোধ করি এতে কারো আপত্তি থাকার কথা না ।
আই সি টি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মহোদয় আমার অসম্ভব প্রিয় একজন মানুষ । বেশ সাদা মনের । উনি মন্ত্রী হয়ে এখনো থাকেন এম পি হোস্টেলে । চড়েন ট্যাক্সি-রিক্সায় । এই অসম্ভব ভালো মানুষটি আমার কাছে একজন ন্যায় পালের মতো ব্যাক্তিত্ব । আদর্শের কাছে জিতে যাওয়া এই মন্ত্রী মহোদয় স্বাভাবিক ভাবেই উবার বা নীল তিমি অথবা পে-পালের মতো ভার্চুয়াল জগতের মার্ প্যাচ নিয়ে বেশ যন্ত্রনায় থাকতে পারেন । কিন্তু উনাকে যারা ডিটেইলিং দেন উনারা বেশ জটিল ধরণের মানুষ জন । আছেন দেশ সেরা আই টি বিশেষজ্ঞ ।আছেন নামকরা বিজ্ঞানীরা । তাহলে প্রশ্ন হলো কিভাবে এবং কেন আমি যে জুম পে-পাল গত এক বছর যাবৎ ব্যবহার করছি তা এতদিন পর দেশে উদ্ভোধন হচ্ছে ?অথবা ঠিক কোন লিংক এ দেশে নীল তিমি জাতীয় গেম খেলা হচ্ছে ? অথবা উবারের ভাড়া বাবদ কেটে রাখা টাকার ট্যাক্স সরকার ঠিক কিভাবে পাচ্ছে ?
আমার দুই মেয়ে । একজন এর বয়স ৭ আর একজনের ২ বছর । বড় মেয়ের ডিটেইলিং এর অবস্থা খুবই বাজে । ও একসাথে অনেক্ষন ধরে বসে কিছু করতে পারে না । অস্থির হয়ে উঠে । যেটাকে আমরা ধৈর্যের অভাব বলি । ওর জন্য একটা খেলা বানানো হলো । ছোট জনকে দিয়ে একটা সুতোতে প্যাচ লাগিয়ে দেয়া হবে আর বড় জন ওই প্যাচ খুলবে আমার সামনে । আমি আই পি ক্যামেরা দিয়ে দেখবো কতটা ডিটেইলিং এর মাধ্যমে আমার বড় মেয়ে সুতোর প্যাচ খুলতে পারে । সুতোর প্যাচ খোলার এই ধৈর্য পরীক্ষা আমরা অনেকেই পারবো না । কারণ আমরা পত্রিকার শিরোনাম পড়ে বাকি খবরটা চোখ বন্ধ করে নিজেরা বানিয়ে ফেলি । যেহেতু বেশীর ভাগ আমরা জ্ঞানী ধরণের মানুষ । আমরা চোখ বন্ধ করলেই আমাদের দুনিয়া শুরু হয়ে যায় । সুতোর প্যাচ খোলাটা জরুরি কিছু না । বিষয় হলো কত তাড়াতাড়ি আমরা নিজেদের গল্প বানাতে পারি । হোক উবার , হোক নীল তিমি অথবা পে-পাল ।
আমরা যারা দেশের বাইরে থাকি তারা দেশ নিয়ে সব সময় গর্ব করার চেষ্টা করি । দেশের কিছু গর্ব করার মতো থাকলে তা আসে পাশের সবাইকে বলি । কিন্তু দেশ যখন বাতিল জিনিস নিয়ে এতো মাতামাটি করে তখন এই রকম লেখা ইংরেজিতে লিখতে ভয় হয় । এখানে আমার আসে পাশের মানুষ গুলু যদি বুজতে পারে অবশ্যই এরা আমার দেশ নিয়ে হাসবে ।
সুতোর প্যাচ খোলাটা বেশ জরুরি । আর এর মধ্যেই অভিজ্ঞতা আর চঞ্চল তারুণ্যের পার্থক্য । ন্যায়পাল হতে সুতোর প্যাচ খুলতে হয় না । কিন্তু দেশের জন্য কিছু করতে সুতোর জট অবশ্যই খোলা জরুরি ।
পরিশেষে সকল ক্ষার এই ক্ষারক কিন্তু সকল ক্ষারকই ক্ষার না । এই সূত্র মতে জুম পে- পালের একটা অংশ হলেও কিন্তু পে -পাল না । এখন এই সুতোর প্যাচ খোলার দায়িত্ব আপনাদের ।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ৮:১৫