এখন মাঝরাত পেরিয়ে গেছে। রাতের বাসে কটকটে আলোয় ফিরছি ঘরে। আমার ডানপাশের সিটে এক পূর্বইউরোপিয় তরুনী, একমনে মোবাইল টিপে চলেছে; সামনের সিটে ভারতীয় উপমহাদেশীয় এক তরুন ঠোঁট চুসছে শ্বেতাঙ্গী যুবতীর। আর একবারে পিছনে বৃদ্ধ কালো এক মাতাল বিড়বিড় করে কথা বলছে আনমনে।
আমি অপারগ হয়ে ঘাড় ফিরিয়ে ফিরিয়ে দেখছি এসব। আমি সময় কাটানোর ধান্ধায় খুব করে চোখ বুলিয়ে নিলাম সবার মুখের উপর। মানুষের পরিচয় আর সম্ভাব্য সব কর্মসমাচার তো মুখে লেখা থাকে না, তবে মুখের ভাজ আর আর্দ্রতা কিছুটা ধারনা এনে দেয়। যেমন এখন ভারতীয় উপমহাদেশীয় যুবকের চকচকে চোখ আমাকে কাম আর লালসার ছবি দেখাচ্ছে, যেখানে ভালোবাসা নেই; আবার চুম্বনরত যুবতীর চোখে ক্লান্তির উৎপ্রক্ষা, এখানেও ভালোবাসা নেই। আমি পাশের তরুনীটির চোখে দায়িত্ব আর ঘরে ফেরার তাড়া দেখে বৃদ্ধ মাতালকে তাক করলাম- কিন্তু হায়! এখানেও রাজ্যের বিতৃষ্ণা আর অদ্ভুত চাহনীর অপলক ঘৃণা। আমার বাস পাল্টানোর সময় হলে আমি ড্রাইভারকে ধন্যবাদ বলে গেটে পা রাখলাম, আর ভেবে নিলাম এই মাঝারাতে মানুষের ভালোবাসা হয়ত শুধু বিছানায় খেলে! কিন্তু ড্রাইভারের প্রতিউত্তরে সে দিকে তাকিয়ে বিবশ আর অস্ফূট আমার দু'চোখ ভালোবাসা খুঁজে পেল- তাহলে মানুষের হৃদয় শুধু ক্রমাগত প্রেতপুর হয়ে যায় নি!
আমার জন্য আরো বিস্ময় অপেক্ষা করছিল। অন্য বাসের অপেক্ষায় আকাশে চোখ তুলে দেখি- ভালোবাসা থইথই করছে জোছনায়। আমি বিলম্ব না করে ছবি তুলে নিলাম!
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:০৩