somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাওয়ায় নুপূর বাজে শিরিষ পাতায় : প্রথম পর্ব

১৩ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


"রেলগাড়ী ঝমঝম
পা পিছলে আলুর দম!"


ট্রেন জার্নিটা বরাবরই খুব ভালো লাগে মৌনতার! কিন্তু আজ একটুও ভালো লাগছে না ! মা আজ বড্ড তিরিক্ষী হয়ে আছে! সব সময় ট্রেনে কতকিছু খাওয়া হয়, শুকনো মরিচের গুঁড়ো আর লবন দিয়ে মাখানো আমড়া, পেঁয়াজ মরিচ দিয়ে বানানো চানাচুর কিংবা শসা টমেটো দিয়ে বানানো ছোলামুড়ি! আজ মা কিছু তো কিনে দিচ্ছেই না , উল্টো আরও বকা জুটছে কপালে! উফফ এমন বোরিং! গল্পের বই পড়া ছাড়া আর কিছু করার নাই !

রেহানা হকের শরীর ভাল নেই, মেজাজটাও তাই তিরিক্ষী হয়ে আছে! এত কষ্টের রক্ত পানি করে বাড়ী বানিয়ে সেই বাড়ী ফেলে পাড়ি জমাতে হচ্ছে মফস্বলে! ভাগ্য ভাল কাজের বুয়াটা পাওয়া গেছে, নাহলে দুই মেয়ে নিয়ে একা একা এতদুর যাওয়া কষ্টকর হয়ে যেত।

মামুন সাহেব আগেই চলে গিয়েছেন ট্রাকের সাথে মালামাল নিয়ে। এবারে শহরে দু'কামরার একটা বাসা ভাড়া নিয়েছেন, যাতে মেয়েদের স্কুলে যেতে অসুবিধা না হয়! ওরা এসে পৌঁছবে বেলা আড়াইটায় , ওদের জন্য গাড়ি নিয়ে যেতে হবে স্টেশনে! অনেক ব্যস্ততা আজ ওনার।

গল্পের বইয়ে মন বসাতে পারে না মৌনতা, ছোট্ট বোনটা পুতুল কোলে নিয়ে বুয়ার কোল ঘেঁষে বসে আছে! বারবার ওর দিকেই মন চলে যাচ্ছে ! টিংকু ওর থেকে পাঁচ বছরের ছোট! দু'বোন একজন আরেকজনের জান, কিন্তু স্বভাবে একদম বিপরীত! মৌনতা যেমন চন্চল , অস্থির , টিংকু তেমনই শান্ত, ধীর স্থির! চেহারাও দুজনের আলাদা! মৌনতা শ্যামলা আর টিংকু হলুদাভাব ফর্সা! মৌনতা সারাদিন বই নিয়ে থাকে আর টিংকু খেলা! টিংকুর সাথে খুঁনসুটি করতে করতেই ট্রেনজার্নির বোরিংনেস কেটে যায়!

স্টেশনে বাবাকে পেয়ে দুই মেয়ে গলা জড়িয়ে ধরে! মামুন সাহেব নিজের কলিজা কেটে আদর করেন দুই মেয়েকে! দুজনের কপালে পরম মমতায় চুমু এঁকে বুকে জড়িয়ে নেন! এদের জন্য সব করতে পারেন মামুন সাহেব! কত স্বপ্ন এদেরকে নিয়ে , এরা একদিন বড় হবে , নিজের পায়ে দাঁড়াবে! নিজের জীবনের যা কিছু ব্যর্থতা, পর্যাপ্ত মেধা থাকা স্বত্তেও সুযোগের অভাবে যা কিছু করতে পারেননি, সব তাঁর মেয়েরা করে দেখাবে! মৌনতা ছোট থেকেই মেধাবী, তাই ওকে নিয়ে বেশী আশা ওনার! মৌনতা একদিন অনেক বড় ডাক্তার হবে, গায়ে এপ্রন, চোখে চশমা, কানে স্টেথোস্কোপ লাগিয়ে রোগীদের পরীক্ষা নিরীক্ষা করবে, ভাবতে ভাবতে চোখ ঝাঁপসা হয়ে আসে মামুন সাহেবের।

বাড়ী দেখে আনন্দে নেচে উঠলো মৌনতার মন! কি দারুন একটা বাড়ী! বেশ ইনটারেস্টিং একটা দোতালা বাড়ী , নীচতলায় বাড়ীওয়ালা সপরিবারে থাকেন, দোতালাটা ভাড়া। ভাড়াটিয়াদের জন্য বাড়ীর বাইরে দিয়ে একতলা থেকে উঠে গেছে প্যাঁচানো লোহার সিঁড়ি। উপরে উঠতেই বেশ খানিকটা ফাঁকা জায়গা ছাদের মত। সেখান থেকে আবার মইয়ের মত লোহার সিঁড়ি আছে তিনতলার ছাদে যাবার জন্য! সামনে এগুলেই সাড়ি বাঁধা কামরা গুলো ! দোতালায় দুইটি বাসা। প্রতিটি বাসায় রয়েছে দুটি করে কামরা, রান্নাঘর আর বাথরুম , আর প্যেসেজ হলো টানা বারান্দা! বাড়িওয়ালা শহরের নাম করা লোক, এ বাড়ীর তাই নাম ডাক আছে, রিক্সাওয়ালাদের বললে চেনে। তাই ভাড়াটিয়া দেন খুব বুঝেশুনে। দোতালার একটি বাসায় থাকেন ফুড ইনস্পেক্টর। মৌনতাদের বাসাটা ভিতরের দিকে, ও দিক দিয়ে আরেকটা সিড়ি আছে নীচ তলায় বাড়ীআলার বাসায় যাবার।

মৌনতা শুনেছে এই বাড়ীতে ছোট একটা মেয়ে আছে , যে কিনা ওর আগের স্কুলে পড়ে। ওহ, বলে নেয়া ভাল, মৌনতারা এই শহরে নতুন নয়, আগে থেকেই ছিলো, শুধু মাঝখানে একটি বছর ছিলো না।মৌনতা বারান্দা থেকে উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করলো, ছোট মেয়েটিকে দেখা যায় কিনা! নিচতলার উঠোনে বড় বড় পাতিল, নীচে এখনও কয়লার পোঁড়া টুকরো দেখা যাচ্ছে । জানা গেলো, বাড়িআলার বড় ছেলের সবে বিয়ে হয়েছে। সারা বাড়ীতে এখনও বিয়ে বাড়ীর খাবারের গন্ধ লেগে আছে! ইশশ, যদি একটু জর্দা পাওয়া যেত! বিয়ে বাড়ীর জর্দা যে মৌনতার ভীষন প্রিয়!

বারান্দায় দাড়িয়ে আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতে হঠাৎ চোখে পড়লো নীচতলায়। খিরকি দরজা খুলে বাইরে যাচ্ছে জিন্স পড়া একটু পাঙ্কু টাইপ একটা ছেলে। হঠাৎ বুকটা ছ্যাৎ করে উঠলো, ছেলেটা এভাবে তাকালো কেনো? কেমন বখাটে দেখতে ! নাহ , এর কাছ থেকে দুরে থাকতে হবে!

"প্রহর শেষের আলোয় রাঙ্গা সেদিন চৈত্র মাস
তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ"


(চলবে)

দ্বিতীয় পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুন, ২০১৬ রাত ১:০৬
৩৩টি মন্তব্য ৩৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

=হিংসা যে পুষো মনে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮


হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।

কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৫


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৫




অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×