
প্রথম পর্ব
''অনেক ছিলো বলার, যদি সেদিন ভালোবাসতে
পথ ছিলো গো চলার, যদি দুদিন আগে আসতে
আজকে মহাসাগর স্রোতে চলেছি দূর পারের পথে
ঝরা পাতা হারায় যথা, সেই আঁধারে ভাসতে
যাই সেই আঁধারে ভাসতে।''
মৌনতার কথা:
"জানেন তো, বাবা সরকারী চাকুরীজীবি হওয়ায় আমরা সব সময় বিশাল বিশাল সরকারী কোয়ার্টারে থেকে অভ্যস্ত, যে কারণে এই হতচ্ছাড়া দুই কামরার ভাড়াটে বাসায়, আমাদের সব ফার্নিচারগুলি আটানোই দায়! একমাত্র খোলামেলা বারান্দাটাই, তাই সকল আনন্দের উৎস। হিম হিম শীতের সকালে কুয়াশামাখা বারান্দায়, আগের রাতের বেঁচে যাওয়া বেগুন আর মুলার তরকারী দিয়ে কড়কড়ে ঠান্ডা ভাত খাবার যে কি মজা! উমমম! মায়ের হাতের এক একটা লোকমা যেন ঠিক এক একটা অমৃতের গোল্লা! মাঝে মাঝে কাঁচা মরিচে কুটুস করে একটা কামড়! সকালটা এখানে এভাবেই শুরু হয়, বুঝলেন! আপাতত দু'মাস পড়ালেখা নেই। কৈশরের প্রজাপতি দিনগুলো ঠিক এমনিভাবেই শুরু হলো আমার। সারাদিন বারান্দায় ছোটাছুটি, টিংকুর সাথে খুনশুঁটি আর গল্পের বইয়ে ডুবে থেকে কিভাবে যে সারাবেলা পার হয়ে যায়! আজকের দিনটা অবশ্য একটু আলাদা।
আজ আমার জন্মদিন। আজ থেকে আমি টিনএজ হয়ে গেলাম, দারুন ব্যাপার, তাই নাহ? জন্মদিনে নতুন জামা পড়া এখনও পর্যন্ত মিস হয়নি আমার। জন্মদিনে আরও দুটি স্পেশাল ঘটনা ঘটে, একটি হলো সকালে বাবা কপালে চুমু দিয়ে উইশ করে আর মা পোলাউ মাংস রান্না করে। জন্মদিনে বন্ধু বান্ধব না থাকলে কি আর ভালো লাগে? স্কুলের পুরোনো বন্ধুরা অবশ্য আছে। কিন্তু আজ মনে হয় আর ওদের সাথে দেখা হবে না। এর চেয়ে বিকেলে নিচের তালায় বেড়াতে যাওয়া যেতে পারে। বাড়ীওয়ালার তিনটি মেয়ে আছে, বড়জনের বিয়ে হয়ে গেছে, মেজো মেয়ে কচি আপু পড়ে ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে আর সবচেয়ে ছোট মেয়ে, কলি ক্লাস ফাইভে, ছোট মেয়েটা আবার আমারই প্রাক্তন স্কুলেই পড়ে।"
মৌনতার পড়নে আজ লিলেনের কমলা রঙের সেলোওয়ার কামিজ, তার উপরে জয়পূরী কাজ করা কালো কটি। ম্যাচিং করে আবার হেয়ার ব্যান্ড ও লাগিয়েছে সে। বিকেলবেলায় ছোট্ট পুতুল বোনটাকে সাথে নিয়ে প্রথমবার গেলো নীচের তালায়। মৌনতাদের বাসার সাথের বারান্দা থেকে একটা সিঁড়ি সোজা চলে গিয়েছে নীচের তালার বারান্দায়। এ বাসাটিতেও ঠিক ওপরের মতই, বারান্দা ঘেঁষে সারবাঁধা রুম । তবে বারান্দাটা গ্রীল দিয়ে ঘেরা আর ঠিক তার সামনে রয়েছে উঠোনমত একটা জায়গা, সেখানে আবার একটা কল লাগানো বাঁধানো জায়গামত আছে, মৌনতা দোতলা থেকে চুপি চুপি দেখেছে, ঐ ছেলেটি সকাবেলা ঘুম থেকে উঠে সেখানেই মুখ ধোঁয়!
''কচি আপু প্রথমেই আমাদের কচি আপুদের রুমে নিয়ে গেলো, সেখানে কিছুক্ষন বসবার পর ভিতরের আরেকটি রুমের মধ্য দিয়ে ড্রয়িংরুমে নিয়ে গেলো। মাঝের রুমটি দিয়ে আসার সময় দেখলাম কি, ঐ যে ঐ বখাটে ছেলেটি আছে নাহ? সে দিব্যি বাবু সেজে ঘুমিয়ে আছে, পড়নে নীল রঙা জিন্সের প্যান্ট আর জিন্সের জ্যাকেট, একটা হাত চোখের ওপর তোলা, ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় অবশ্য তাকে আর বখাটে দেখাচ্ছে না। পরে জেনেছিলাম, ওর নাম হলো রাশেদ, এবার এস এস সি দিবে, পরীক্ষার আর বেশী সময় নেই, কিন্তু পড়াশোনায় একদম মন নেই সাহেবের, ওর শুধু ভাল লাগে গান গাইতে আর গান শুনতে। ওর স্বপ্ন হলো ও একটা ব্যান্ডের দল বানাবে আর বড় হয়ে সে পাইলট হবে, গান গাইতে গাইতে আকাশে উড়াউড়ি করে বেড়াবে! ''
ওদের ড্রয়িংরুমটা বিশাল বড়, একদম এই মাথা থেকে ঐ মাথা পর্যন্ত! বাড়ীওয়ালা শহরের নামকরা উকিল, উনি পলিটিক্স করেন, উনার বাসায় দেশের প্রধানমন্ত্রীও একবার এসেছিলেন! দেয়ালে প্রধানমন্ত্রীর বিশাল বড় ছবি টাঙানো। এই ঘরে অনেক রাজনৈতিক মিটিং ও হয় বৈ কি! সে যাই হোক, মৌনতা ঘরটা দেখতে থাকে, তার ছোট্ট মনে এসব কোনো প্রভাব ফেলে না। এর মধ্যেই ট্রে ভর্তি নাস্তা চলে আসে, কচি আপু ওদের সাথে অনেক গল্প করে, মৌনতার ড্রেসটারও অনেক প্রসংশা করে। প্রথম দিনেই অনেক আপন করে নিলেন তিনি মৌনতা আর টিন্কু কে। ওহ, একটা কথা তো বলাই হয়নি, কচি আপু দেখতে ঠিক ডানাকাটা পরীর মত সুন্দরী, যেমনি তার বাহ্যিক সৌন্দর্য, তেমনি অন্তরের। চমৎকার কাটলো মৌনতার জন্মদিনের বিকেলটা!
রাশেদের কথা:
''আরে নতুন ভাড়াটিয়ার মেয়েটি নাহ? হঠাৎ আমাদের বাসায়?" দরজার পাল্লাটা ঈষৎ ফাঁকা করে কৈশরের কৌতুহলি চোখ দিয়ে চুপি চুপি একনজর দেখে নেয় মৌনতাকে! "নাহ শ্যামলা হলেও মেয়েটার মধ্যে কোথায় যেনো একটা মায়াকাড়া ব্যাপার আছে!"
(চলবে)
লেখকের কথা: প্লিজ কেউ বকা দিয়েন না, তৃতীয় পর্ব এখনই লেখা শুরু করবো, লিখতে লিখতে প্রয়োজনে কিবোর্ড ভেংগে ফেলবো, তবও পাঠককে লম্বা বিরতিতে রাখবো নাহ!
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুন, ২০১৬ রাত ১:০৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



