ভাষা রক্ষার্থে গুলি খেয়ে বাংগালী প্রাণ দিয়েছেন, শহীদ মিনার হয়েছে, মিনারে ফুল দেয়া হচ্ছে, এ নিয়ে গান রচনা হয়েছে, কবিতা লিখা হচ্ছে; সবই ঠিক আছে; কিন্তু ৬৬ বছর পরেও, শ'তে ৪০ জন বাংগালী বাংলা লিখতে ও পড়তে পারেন না; ১৯৫২ সালের বিপ্লব সফলতার মুখ দেখেনি আজো। সব বাংগালী লেখাপড়া না-জানা অবধি, সাময়িকভাবে দিনটির পালন বন্ধ রাখা হোক।
প্রেসিডেন্ট প্রতি বছরই ফুল দেন, তিনি উচ্চ-শিক্ষিত, তিনি ১ম বার যখন ফুল দিয়েছেন, সেদিনও গ্রাম বাংলার ৩/৪ লাখ বাচ্চা স্কুলে যায়নি; সেই বছর হয়তো ২/১ লাখ বাচ্ছা স্কুল থেকে ঝরে পড়েছে; এবারও তিনি ফুল দিয়েছেন, এখনো সব বাচ্চা স্কুলে যায় না, আজকেও শহীদ মিনারের পাশে 'টোকাই'রা ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রেসিডেন্ট বাংলা পড়তে ও লিখতে পারেন, যারা পারে না, তাদের জন্য তিনি কি করবেন বলেছেন আজকে? কিছুই বলেননি; উনার একার পড়ালেখায় আমরা পুরোজাতি কোনভাবে দাঁড়াতে পারবো না; উনার বয়স বাড়ছে, কিন্তু কাজের পরিমাণ বাড়ছে না, দরকারী কথা বলছেন না, দরকারী পদক্ষেপ নিচ্ছেন না, শুধু মিনারে ফুল দিয়ে কি হবে?
সব শিক্ষিত লোকেরা এসে মিনারে ফুল দেয়, মিনার তাদের দিবস পালনের জন্য, বাংলার ভাষার পক্ষে বক্তৃতা দেয়ার জন্য, নতুন কাপড় পরে অনুষ্ঠানে গিয়ে গান শোনার জন্য; যে বাংলা পড়ার জন্য সুযোগ পায়নি, এত ফুল, এত মিনার তাকে কি দিচ্ছে? এসব মিনার, এসব ফুল অশিক্ষিতদের জন্য সামান্য পড়ালেখার দুয়ারও খোলেনি।
সব বাংগালীকে বাংলা শিখানোর কাজ শুরু হোক, যতদিন সব বাংগালী পড়তে ও লিখতে পারবে না, ততদিন মিনারে যাওয়া বন্ধ থাকুক; ঐ মিনার শুধু মাত্র শিক্ষিতদের জন্য, ওখানে অশিক্ষিতদের জন্য কিছুই নেই; উহা এখন জাতিকে উৎসাহ দিচ্ছে না, উহা শিক্ষিতদের জন্য একটি ছুটির দিন, অশিক্ষিতদের জন্য কাজের দিন; কয়েক বছরের জন্য দিনটি পালন বন্ধ রাখা হোক, সব মানুষ পড়তে ও লিখতে শিখলে, সবাই মিলে যাবো, এখন বাংগালীদের একাংশ মিনারে যাচ্ছে, ইহা সার্বজনীন নয়; যেদিন সবার যাবার ক্ষমতা হবে, সেদিন যাবো।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২৬