তখন মাত্র তৃতীয় সেমিস্টারে উঠেছি, ভার্সিটি তো শেষ ই কইরা ফালাইলাম ভাবের চোটে আর বাঁচি না, আমার চেয়ে এক সেমিস্টার জুনিয়ার গো পাত্তাও দেই না। স্কুল কলেজ থেকেই মাথায় একটা বিপ্লবী ভুত সাওয়ার ছিলো আমার। ১ম সেমিস্টারে 'ভ্যাট' আন্দোলনের সময় কিছু জন-গুরুত্বপুর্ণ স্ট্যটাস দিয়ে বিশাল কি যেন হয়ে গেছি ভাবে আছি। আগের থেকেই সামান্য লিখা লিখি করতাম একটা ব্লগ ও খুলে ফেললাম সামোয়্যার ইন ব্লগে। পাশা পাশি কিছু তত্ত্ব কপচাইয়া বেশ জনপ্রিয় তাও পাইলাম টি এস সি এলাকায়। ঢাকা শহরে তখন বিপ্লবী ফ্যাশন টা শুরু হয় নায় সে ভাবে। কিন্তু আমি ফ্যশানেবল না হলেও সে যুগের বিপ্লবী ছিলাম। এবং এটা আসলেই ছিলাম । জিন্সের প্যান্ট পাঞ্জাবি এর উপর চাদর চোখে কালো ফ্রেমের চশমা, ওমাথায় বুদ্ধুজীবি ক্যাপ জড়িয়ে একটা বুড়িয়ে যাওয়া ভাব, যেন অনেক বয়স। জীবনের কিছু সত্যি ঘটনার উপরে সামান্য রঙ চরিয়ে সামান্য বিখ্যাত (ভাবস) ও হয়ে গেলাম। প্রতিদিন ব্লগে কম পক্ষে ২-৩ টা করে লিখা দেই। প্রবাদ প্রতিম দুজন ব্লগার আমার সঙ্গী @শিপু ভাই (আলহাজ্ব মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন শিপু মোল্লা আল বিক্রমপুরী) ও @জাহাজী পোলা (নায়ক রিয়াজ) এক এক জন সেই লিখা লিখি করি। দুক্ষের ব্যপার হইলো আমার লিখায় সাবাসি পড়ে, গালি গালাজ হয়, আলোচনা সমলোচনা হয়, ,কিন্তু নারীরা আসে না। নারীরা যায় ঐ দুই প্রবাদ প্রতিম হ্যান্ড সাম বৃদ্ধের কাছে যদিও আমার তখন কচি বয়স। যদিও সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম বিয়ে করবো না কখনো বিপ্লবের জন্যই জান কোরবার। কিন্তু কি করবো হরমোন বলে কিছু একটা আছে।
যাই হোক বাংলা ব্লগে তখন একটা নতুন ব্লগ এলো নাম মুক্ত ব্লগ। ব্লগ টা এখন আছে কি না জানি না। থাকলে থাকতেও পারে। http://www.muktoblog.net এই ঠিকানায়। সেখানে যেয়ে পরিচয় হয় কিছু পিকুলিয়ার ক্যারেক্টারের সাথে @কারিম ভাই (লুল গুরু), @হাফিজ ভাই (হ্যান্ডসাম ভস), @সোনালী আপা (নাম টাই মনে আছে), @সুফী ভাই (কফি খাইতে ভালোবাসে এবং কবি), @মুক্ত ভাই (শুটকি ভাই) এবং আরো অনেকে। সেখানে আরেকজনের সাথে পরিচয় হইলো তার নাম রিক্সা আফা (আসল নাম আপাদত উহ্য)। যাই হোক অনেক দিন লিখা লিখি ও ক্যাচালের পর একদিন সিদ্ধান্ত হলো সবাই দেখা করবো। সবাই হাজির। একমাত্র রিক্সা আফা নাই। ওকে ব্যপার না। মাইয়া মানুষের প্রতি আমি কখনোই তেমন আগ্রহ ছিলো না ()। সোনালী আফার সাথে কারিম মিয়ার সেই খাতির। ব্যটা বুইড়া আবিয়াইত্তার কারণে আফার সাথে কথা বলার চান্স ই আমরা পাইলাম না। যথারীতি এইটাই সোনালী আফার সাথে আমার শেষ দেখা। আর কখনোই দেখা হয় নায়।
এর পর আইলো ১৬ ডিসেম্বার ব্লগাররা সব যাবে শহীদ মিনারে ফুল দিতে (সাভারে যাওয়া কষ্ট) তাই চইল্লা আইলাম সকল পুরুষ ব্লগার আর সামু ব্লগের জানা আফা আর তাঁর মেয়ে ছাড়া কোন কোন নারী ব্লগার আশে পাশে নাই। রিক্সা আফাও নাই। তিনি নাকি বাড়ি গিয়াছিলেন। আমি ভাবতেছিলাম উনারে যখনই নক দেই উনি বাড়ি থাকেন কাহিনী কি। পোলা মানুষ তাই কইতেও পারি না আসেন দেখা করি আর দেখা করলেও বে-ইজ্জতি। পকেটে ফুটা পয়সা ও নাই। শাহাবাগ যাওয়া আসার জন্য পাই ৩০ টাকা যাইতে ৫ আইতে ৫ বাকীডা বিড়ি ফুকতে (যদিও বড় ভাইদের বদৌলতে চা-বিড়ি কখনোই কিন্না খাইতে হয় নায়)। তখন মানুষ কে জানার প্রচন্ড্র কৌতহল আমার মাঝে কাজ করত, সেটা এখনো করে। যাই হোক সারাদিন হৈ হল্লুড় করে মিছিল করে বিজয় দিবস পালন করার পর বসলাম পাব্লিক লাইব্রেরীর পাদ দেশে। শুনলাম সামনে ব্লগ দিবস ১৯ ডিসেম্বার। এর আগের বছর ব্লগ দিবসে গেছিলাম তখন কৌশিক ভাই সবার জন্য প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছিলেন ব্লগ থেকে কারুর প্রেম হইছে কি না। আমি পুরা ভাবে ছিলাম ব্লগে মানুষ প্রেম করে। ছি যে পরিমান ছাইয়া চারিদিকে। আমি আসল মাইয়ারেও ছাইয়া ভাবতাম। আমি কনফেস করছি সে দিন আমি রিক্সা আফারেও ছাইয়া ভাবছিলাম।
যাই হোক ১৮ ডিসেম্বার রাত্রে, রিক্সা আফার সাথে কথা হইলো মোটামুটি এরকম,
- রিফাত ভাই কাল কি আসছেন?
- নাহ, আমি আসবো না, ব্লগ দিবস ফাউল অনুষ্ঠান, পেটি বুর্জোয়াদের আড্ডা।
- উফ, আপনি এতো ইরিটেটিং কেন।
- বিপ্লবীদের এরকম ই হতে হয়। বাই, লাল সালাম
- উফ, যান যান তো।
পরের দিন বিকেল বেলা গট গট করে হাজির ব্লগ দিবসে। যাই হাই দেখা মুক্ত ভাই এর সাথে। আমি যাইয়া জাস্ট ভাই রে জিগাইলাম রিকশা আফা আইছে? হ্যাহ কয় আইছে। আমি মনে মনে কই খাইছে আমারে। আমি জিগাইলাম কই? মুক্ত ভাই কয় ভিতরে হল সাজায় (পাব্লিক লাইব্রেরীর মিলনায়তন)। আমি ভাবছি না জানি আফা দেখতে ক্যামুন। একটু পরে একটা একটা আন্টি আমার সামনে আসলো, আইসা বললো আপনে না আজ আসবেন না। আমি তো অবাক এইডা কে। পরে বুঝলাম এইডা রিক্সা আফা। সেই থেকে আফা হয়ে গেলো খালা, রিকশা খালা। সেদিন মুক্ত ব্লগ অনুষ্ঠান শেষে সেরা ব্লগারের পুরুষ্কার দেয়। রিকশা খালা আর আমি যৌথ ভাবে পুরুষ্কার পাই।
এর পর আরো অনেকবার দেখা হইছে। খালা আমারে কখনো অপমান ছাড়া কথা কয় নায়। দুনিয়াতে আমার আম্মার পর কেউ আমারে অপমান করে, আমার ইগোতে হার্ট করে কথা বলে। ব্যপার টা আমার ভালোই লাগে আবার খারাপ ও লাগে। ভালো লাগে এই কারণে, কেউ আমারে নিয়া ভাবে, খারাপ লাগে কারণ আপনে কিডা গো আমারে নিয়া ভাবার। তবে কাকতালীয় ব্যপার হইলো, খালাম্মার যেদিন কোন অনুষ্ঠান থাকে শাহাবাগে সেদিন ক্যামনে ক্যামনে যেন আমি শাহাবাগ থাকি। অনুষ্ঠানে ডাইকা খালা আমারে কোচা মারে উমান করে, আমি হাসি, গায়ে লাগ্লেও হাসি। বাসায় যায়া উনারে ব্লক করি, কয় দিন পর ব্লক খুলে এ্যড করি। আমি সব সময় নিঃসঙ্গ থাকলেও মানুষের পাগলামি আমার ভালো লাগে। যখন কেউ আমার উপর অধিকার দেখায় আরো ভালো লাগে।
যাই হোক, সময় টা ২০১৩। আমি ভীষন অসুস্থ। আমার যায় যায় অবস্থা। সে অবস্থা ১ ফেব্রুয়ারী আমরা আড্ডা দিলাম শাহাবাগে, আমি @নোমান ভাই, @রুমকি আপু, @মেঘ লুল , @কাক ভাই, @দূর্বা জাহান, @তন্ময় ভাই ও আরো অনেকে। বেশ অনেক দিন পর সে দিন আমি বাইরে বেরিয়েছিলাম। অনেক গুলা সিগেরেট খাইছিলাম, যদিও আমার ফুস ফুস তা নিতে পারছিলো না তবুও, বিপ্লবীদের মতো শেষ চেষ্টা। কেউ কি জানতো মাত্র ৪ দিন পর আমার জীবন টা এলো মেলো হয়ে যাবে। একেবারে এলোমেলো। সেই আমি আর আজকের আমি এক না। সেই আমি কে হারিয়ে ফেলেছি। যে যাই হোক। সে অন্য গল্প।
৫ তারিখ বিকেলে সামান্য সময় থেকে ৬ তারিখ সকাল বেলা দৌড়ে গেলাম শাহাবাগ, এ যেন মায়ের ডাকে স্বন্তানের আসা। এর পরের ইতিহাস সকলের জানা। সে তিক্ত ইতিহাস আর বলতে চাই না। যেহেতু মজার হাসির গল্প লিখছি/ লিখার চেষ্টায় আছি। ৬ তারিখ বিকেলে রিক্সা খালার সাথে দেখা। এর পর দেখা ১৪ তারিখ, খালা একটা নীল শাড়ী পড়েছিলেন। আমি আবার ও কনফেস করছি সে দিন সত্যিই আমার কাউকে খুব ভালো লেগেছিলো। যদিও সেটা বলার সাহস বা উপযোগিতা সময় আমাকে দেয় নি। গেরিলার পোষাক পরে ভালো লাগার কথা বলা যায় না।
এর পর অনেক দিন দেখা নেই। ৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৪, আমি গেলাম বই মেলায় অনেক দিন পর পুরানো বন্ধুদের সাথে দেখা, তিক্ত অভিজ্ঞতা গুলো মনে পড়ে গেলো, কিন্তু বাঁদরের মতো আমি নাচতে লাগলাম যাতে ভুলে যেতে পারি সব পুরানো কথা। সেখানে দেখলাম খালা দাড়ায়ে আছে , আমি কইলাম খালা ভালো আছেন। তিনি বললেন বিরক্ত কইরেন না তো রিফাত ভাই। বুঝলাম তার মন খারাপ। এর পর আবার দেখা বই মেলার এক আড্ডায় মঞ্চের পাশে, সে দিন আমি কি ভাবে যেন সেই আগের আমিতে ফিরে ফিয়েছিলাম, মোটিভেট করছিলাম তাকে, কারণ জানতাম, তার মন খারাপ। হয়তো অনেক দিনের দেখা সাক্ষাতে একটা মায়া পড়ে দিয়েছিলো। মজার ব্যপার হলো লাস্ট ৫ বছরের পরিচয়ে আমি কখনোই তাকে নাম ধরে ডাকি নাই। সব সময় আপনি, শোনেন খালাম্মা, আফা ইত্যাদি চালাইছি। তিনি আমার চেয়ে বয়সে ছোট কিন্তু তার ম্যাচুরিটি আমার চেয়ে অনেক বেশি।
এর পর সে দিন আমিন ভাই, শিপু ভাই, জাজিদ ভাই , জান্নাতুল ফেরদৌস ভাই এবং আরো অনেকের সাথে সেই আড্ডা হলো, খালার সাথে দাঁড়িয়ে দড়িয়ে বিড়ি ফুকতে ফুকতে সেই কথা। ৫/২/১৩ এর পর অনেক দিন ধরে আমি কথা খুজে পাচ্ছিলাম না। সে দিন পেলাম। বরাবরের মতোই আমি প্রচন্ড্র ভিতু। মেয়েদের সামনে আরো বেশি ভিতু। কিন্তু সে দিন সব সাহস এক করে বলেই ফেললাম, ‘একটা প্রেম করা দরকার।’ রিক্সা ফা বললেন আপনি যে পাগল, ‘আপনার আমার মতো কাউরে দরকার, দেখি খুজে দেই কাউরে।’ কথা গুলো আমার ভেতরে কাজ করতে লাগলো। কি কাজ জানি না তবে...
এর পর ১৩ তম বারের মতো ব্লক খুলে তাকে এ্যড করলাম আমার লিস্টে । এর পর ফেব্রুয়ারী চলে গেলো, মার্চ এলো। একদিন রিক্সাফা কে ডাকলাম একটা ব্যন্ড করবো বলে। আগে ছোট খাটো করেছি। এবারের এই করাটা উদ্দেশ্যমূলক । আমি গিটার বাজাবো, আমাদের এক বড় ভাই ইবনে মাসুদ, বেস বাজাবেন আর তিনি গাইবেন। একদিন চায়ের দোকানে বসে জ্যামিং এর চেষ্টা চললো। আমি খেয়াল করলাম রিক্সাফা দুক্ষ-দুক্ষ স্ট্যটাস দেন। আমার খারাপ লাগছিলো, আমা উপরে যদি উনার বাপের সম্পত্তির মতো অধিকার জন্মায় ঝাড়ি দেওয়ার জন্য, তাইলে আমার ও অধিকার আছে, জানতে চাইবার জন্য। সেদিন ২৩ মার্চ। কথা হলো, এবং কথা বলার পর যা বুঝলাম মনের অসুখ, এ অসুখের চিকিৎসা এক মাত্র আমি ই জানি, আর কেউ না। ২৭ তারিখ সমস্ত শক্তি এক করে বলেই ফেলমান ফেসবুকে চ্যাটে। ‘প্রেম করবেন আমার সাথে?’ বিশ্বাস করুন লাস্ট ৫ বছরে এই কথা বলার ইচ্ছা খুব অল্প বার ই মাথায় আসছে। যাই হোক পচন্ড্র ঝাড়ি খাইলাম ফেসবুকে। বাট ঝাড়িটা আমার পজেটিভ ই লাগছিলো, তবুও হতাশা বাদী , চিরকুমার বিপ্লবী (সাবেক) না বোধক ই ধরে বসেছিলাম। যাই হোক এর পর কথা হয় নি বেশ কিছু দিন। এর পর ৩১ মার্চ তিনি আমারে জানালেন তিনি ক্যামেরা কিনেছেন। আমি সিনেমার পোকা তিনি জানেন। ক্যামেরা দেখতে চাইলাম ১ এপ্রিল (এপ্রিল ফুল) সন্ধ্যায়। সবাই রে বোকা বানাইতে আমরা বিয়া করলাম ফেসবুকে (রিলেশন শিপ স্ট্যটাসে)। অনেক কথার ফাঁকে তিনি বলেই ফেললেন, ‘রিফাত ভাই আপনি কি সিরিয়াসলি প্রেম করবেন।’ আমি মন্ত্র মুগ্ধের মতো বলেই ফেললাম ‘হ্যা।’ যদিও না বলাটাই সমইয়ের দাবি ছিলো। তবুও হ্যা বলেই ফেললাম।
এর পর ৬ টি মাস চলে গেছে, আমরা আছি। আমি আর ফারিয়া রিশতা (সাবেক রিক্সা)। এক সাথে। পরের গল্প সকলের ই জানা।
** রিশতা আমায় একটা হাসির গল্প লিখতে বলেছিলো। আমি হাসির গল্প লিখতে পারি না। তবুও যা লিখলাম তাতে হয়তো ওর হাসি পাবে। না পেলে কষ্ট পাবো না, তবে নতুন করে লিখার চেষ্টা করবো। আমি জানি এক দিন আমি ওকে হাসাতে পারবোই। হা হা হা হা হা।
প্লিজ একটু হাসো।