somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সরকার বাহাদুর ! আমাদের সন্তানরা কত আর গিনিপিগ হবে

০১ লা জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৪:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাহবুবুল আলম //

২৮ জুন ২০১৬ তারিখে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত একটি সংবাদের অংশবিশেষ উদ্বৃতি করেই আমার আজেকের নিবন্ধটি শুরু করতে চাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ ভবনে মন্ত্রিসভার এই নিয়মিত বৈঠকে ‘অষ্টম শ্রেণীতে প্রাইমারী স্কুল সার্টিফিকেট (পিএসসি) পরীক্ষা পদ্ধতি চালুপূর্বক পঞ্চম শ্রেণী পর্যায়ে বিদ্যমান প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা পদ্ধতি বাতিলকরণ’ শীর্ষক ওই প্রস্তাব তোলা হলে তা ‘আরও পর্যালোচনা করে’ মন্ত্রিসভায় আনতে বলা হয়। মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেছেন, ‘ক্লাস ফাইভে যে সমাপনী পরীক্ষাটা হয় এটা বাতিল করে অষ্টম শ্রেণীতে প্রাইমারী সমাপনী পরীক্ষা নেয়ার একটা প্রস্তাব ছিল। মন্ত্রিসভা এটা বিস্তারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ফের উপস্থাপনের জন্য বলেছে। মন্ত্রিসভায় প্রস্তাবটি চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত আগের মতো প্রাথমিক সমাপনী এবং জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা চলতে থাকবে। মন্ত্রণালয় যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল- মন্ত্রিসভা তা মানেনি, এবারও পরীক্ষা হবে।’ মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল বলেন, প্রস্তাবটি ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিস্তারিতভাবে ফের মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে। মন্ত্রিসভায় এটা অনুমোদন না হওয়া পর্যন্ত আগের পদ্ধতি বহাল থাকবে।
এর আগে কিছু শিক্ষাবিদ, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের দাবির প্রেক্ষিতে ২১ জুন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ঘোষণা দিয়েছিলেন, চলতি বছর থেকেই পঞ্চম শ্রেণি শেষে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা উঠিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণীতে উন্নীত হওয়ায় এবার থেকেই পঞ্চম শ্রেণিতে আর সমাপনী পরীক্ষা নেয়া হবে না। কথা হয়ে গেছে, সিদ্ধান্তও হয়ে গেছে। এখন আনুষ্ঠানিকভাবে শীঘ্রই তা অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে। এবার থেকেই পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা আর হবে না। প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণীতে উন্নীত হওয়ায় এবার থেকেই পঞ্চম শ্রেণীতে আর সমাপনী পরীক্ষা নেয়া হবে না। তিনি আরও বলেছিলেন, প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণীতে উন্নীত হওয়ায় দু’টি সমাপনী পরীক্ষা নেয়ার যৌক্তিকতা নেই। এ বছর থেকেই পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা উঠে যাচ্ছে। অষ্টম শ্রেণীতে হবে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা। অষ্টম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষার নাম ও অন্য বিষয়গুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে মন্ত্রিসভায় একটি প্রস্তাব যাবে। আমি নিশ্চিত হয়েই বলছি, বছর থেকেই পঞ্চম শ্রেণী শেষে সমাপনী পরীক্ষা থাকবে না। একেবারেই অষ্টম শ্রেণী শেষে হবে এ পরীক্ষা।
মন্ত্রীর এ ঘোষণার প্রেক্ষিতে অনেকে অভিনন্দনও জানিয়েছিলেন এদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন, ভিকারুন নিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের আন্দোলরত অভিভাবকদের একজন রুকসানা হাসান বলছিলেন, সিদ্ধান্তের জন্য সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছিলাম আমরা। আমরা স্বস্তির নিঃশাস ফেলেছিলাম। কিন্তু একজন মন্ত্রী এভাবে আগ বাড়িয়ে কথা না বললেই হতো। শিশুদের নিয়ে এসব আর কত দিন চলবে? একেক সময় একেক কথা। উদয়ন স্কুলের অভিভাবক আকবর হোসেন বলছিলেন, এই গিনিপিগ ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে। একটি মারাত্মক ভুল স্বীকার করে শুধরে নেবার সাহসও তাদের নেই, এটাই প্রমাণ করে। এই দুটি পরীক্ষার কোনটাই একজন ছাত্রের শিক্ষা এবং জীবনের কোন নিশ্চয়তা যে দেয় না, তারপরও সেই যজ্ঞটি চালাতেই হবে, এটা কোন শিক্ষা অনুরাগী সিদ্ধান্ত হতে পারে না। এ পরীক্ষা আমাদের শিক্ষা/ছাত্র/শিক্ষক/অভিভাবক সকলকেই চরম বিপদের মধ্যে রেখেছে, তা-কি কর্তারা জানেন? প্রশ্ন রেখে বিয়াম স্কুল এ্যান্ড কলেজের পঞ্চম শ্রেণীর এক ছাত্রীর মা মৌসুমী আকতার বলেছে, আজ এটা তো কাল আরেকটা, কোমলমতি শিশুদের নিয়ে এসব ছেলেখেলার মানে কি। সে ক্ষেোভের সঙ্গে আরও বলে, সকালে এক নিয়ম, বিকেলে আরেক নিয়ম। শিক্ষা ব্যবস্থা নয় যেন খেলনা।
আমরা সবাই জানি যে, মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তে ২০০৯ সালে পঞ্চম শ্রেণীতে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার প্রচলন শুরু হয়। অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য আয়োজন করা হয় জেএসসি পরীক্ষা। ২০০৯ সালে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা চালুর পরের বছর মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের জন্য নেয়া হচ্ছে ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষা। আগে পঞ্চম শ্রেণীতে আলাদা করে বৃত্তি পরীক্ষা নেয়া হলেও প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী সমাপনী চালুর পর থেকে এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্য থেকেই বৃত্তি দেয়া হচ্ছে। এ পরীক্ষার কারণে ঝরে পড়ার হার কমেছে বলে সরকারীভাবে দাবি করা হলেও অভিভাবক ও অনেক শিক্ষাবিদ শিশুদের স্বার্থে পরীক্ষাটি বাতিলের দাবি তোলেন। ২০০৯ সালে পঞ্চম শ্রেণীতে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা শুরু করার পর থেকেই শিশুদের ওপর পরীক্ষার বোঝা চাপানোর অভিযোগ ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে। ২০১০ সালে শিক্ষানীতিতে প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত করার সুপারিশ করা হলে এ দাবি আরও জোরালো হয়। তখন থেকেই পঞ্চম শ্রেণীর বাতিল করে পরীক্ষাটি অষ্টম শ্রেণীতে করার দাবি জোরালো হয়। কারণ প্রাথমিক স্কুল এক জায়গায়, ষষ্ঠ থেকে অষ্টম আরেক জায়গায়। হাইস্কুলকে আধা ভাগ করে এক জায়গায় আনা যাচ্ছে না। টোটাল ওয়ার্ক করে মন্ত্রিসভা প্রস্তাবটি আবার আনতে বলেছে।
প্রাথমিক সমাপনি পরীক্ষা শুরুর পর থেকেই এই পরীক্ষা নিয়ে কী কী ধরনের স্বেচ্ছাচার ও তুঘলকী কর্মকান্ড চলে আসছে তার ওপর এ পর্যায়ে কিছুটা আলোকপাত করতে চাই। সমাপনি পরীক্ষা শুরুর পর থেকেই পরীক্ষার গ্রহণ পদ্ধতি ও খাতা মূল্যায়ন পর্যন্ত এখনো স্বচ্ছতার অনেক অনেক অভাব রয়েই গেছে। এ’ব্যাপারে পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনি পরীক্ষায় পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে সংশ্লিষ্ট কয়েক শিক্ষক, পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবক এবং পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী প্রাইভেট স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে জানা গেছে পরীক্ষার ইনভেজিলেটর থাকছেন সংশিষ্ট উপজেলার প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষকবৃন্দ, পরীক্ষার খাতাও মূল্যায়ন করছেন একই উপজেলার শিক্ষকরা। তাই, পরীক্ষা নেয়া থেকে শুরু করে খাতা ও ফলাফল মূল্যায়নের প্রতিটি স্তরেই স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। যেমন পরীক্ষায় অংশ গ্রহণকারী প্রাইভেট স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা অভিযোগ করেছেন পরীক্ষার হলে যেসব শিক্ষক দায়িত্ব পালন করেন; তারা কেবল ব্যস্ত থাকেন প্রাইমারী স্কুলের ছাত্রদের প্রশ্ন পত্র বুঝিয়ে দেয়া বাংলা ইংরেজির বানান বলে ডিকটেশন দিয়ে দিয়ে অংকের ফলাফল মিলিয়ে দেন। কিন্তু কোনো প্রাইভেট স্কুলের কোনো ছাত্র যে কোন প্রশ্ন বুঝতে অসুবিধা হলে শত ডাকাডাকির পরও শিক্ষকদের পাশে পান না।
এই তো গেল পরীক্ষার একদিন অন্যদিকে খাতা মূল্যায়নের একটা অলিখিত সমঝোতা আছে প্রাইমারী শিক্ষক বনাম প্রাইমারী শিক্ষকদের মধ্যে। পরীক্ষার খাতায় কোড নম্বর দেয়া হলেও তারা বুঝতে পারেন কোনটা কেজি স্কুলের ছাত্রের খাতা আর কোনটা প্রাইমারী স্কুলের ছাত্রের খাতা। তাই খাতা মূল্যায়নের সময় সে ক্ষেত্রে ১৩ পাওয়া ছাত্রকেও ৩৩ বানিয়ে পাশ করিয়ে দেন। আমার এক আত্মীয়ের সন্তান এবার ৫ম শ্রেণীর সমাপণী পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেছিল। পরীক্ষা দিয়ে বাসায় ফেরার পর যথারীতি মা প্রশ্ন ধরে ছেলে উত্তর জিজ্ঞেস করলেও কোনো উত্তর দিতে না পারায় মা যখন মারতে উদ্যত তখন ছেলেটি তার মাকে আশ্বস্ত করল ‘মা আমি ভাল ভাবে পাশ করবো স্যার আমাকে বলেদিয়েছে এবং ইংরেজী লিখেও দিয়েছে।’ পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর দেখা গেল সে ছাত্র এ+ পেয়ে পাশ করেছে পাশ করেছে।
আর চুড়ান্ত ফলাফল নির্ধারণ ও বৃত্তি প্রদানের ক্ষেত্রে আছে নানা ধরণের অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি। স্থানীয় পর্যায়ের শিক্ষাপ্রশাসনে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা নিজেদের উপজেলার অধিকাংশ স্কুলেরই শতভাগ পাশ চান ও বৃত্তিগুলোর অধিকাংশই নিজেদের মধ্যে ভাগভাটায়ারা করে নেন। যেসব স্কুল আগে কোটার বৃত্তি ছাড়া টেলেন্টপুলে কোন বৃত্তি পেতনা, সেব স্কুলে এখন টেলেন্টপুলে বৃত্তির ছড়াছড়ি। স্বচ্ছতা প্রমানের জন্য খ্যাতনামার কিছু কিছু প্রাইভেট স্কুলকে বৃত্তি প্রদানের দিকে সুক্ষ দৃষ্টি রাখেন। যাতে বদনাম না হয়। উদাহরণ হিসাবে সমাপণী পরীক্ষায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান যারা দখল করেছে তারা প্রাইমারী স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী। দেশের যেসব সেরা সেরা স্কুল এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় ১ থেকে দশের মধ্যে মেধা তালিকায় থাকে সেসব সেরা স্কুল গুলোর ছাত্র-ছাত্রীদেরও পঞ্চমশ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষার মেধা তালিকায় স্থান পাওয়া ভাগ্যে জুটেনা। এই নিয়ে হাসাহাসিও হয়। এ ধরণের ফলাফল ম্যানিপুলেশনের কারণে এ+ ও বৃত্তি পাওয়া অনেক প্রাইমারী স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে ভালমানের হাইস্কুলে ভর্তি হতে পারছে না। কাজেই দেশের বিদ্যমান মান নিয়ে সর্বত্রই প্রশ্ন। এসএসসিতে এ+ পাওয়া ছাত্র-ছাত্রির কি দশা তা আমরা কিছুদিন আগে একটি বেসরকারী টেলিভিশনের প্রতিবেদনে দেখেছি। এ প্রতিবেদনটি এখনো ইউটিউব এ আছে।
এ পর্যায়ে বলতে চাই শেখ হাসিনা সরকারের গত বিগত শাসনামলে যে শিক্ষা নীতি ঘোষণা করা হয়েছে তা অবশ্যই অভিনন্দনযোগ্য। কিন্তু সমস্যা দেখা দিয়েছে এর যথাযথ বাস্তবায়ন নিয়ে। যদিও শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন কমিটি-উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু সেসব উপকমিটি কাগজে- কলমে এই শিক্ষানীতি বাস্তবায়রেনর পরমর্শ দিয়ে আসলেও তা বাস্তবায়নে দেখা দিয়েছে নান চ্যালেঞ্জ। বিদ্যমান শিক্ষানীতিতে উচ্চবিদ্যালয়সমূহে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণী সংযোজিত হবে। নিম্ন মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়কে একীভূত করা হবে, তারপর ক্রমান্বয়ে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত চালু করা হবে। কিন্তু এই যে বিশাল কর্মযজ্ঞ তা দ্রুত বাস্তবায় কতটুকু সম্ভব তা কি একবারও ভেবে দেখেছেন শিক্ষামন্ত্রনালয়, বা শিক্ষাবিদরা।
এই যে পরিবর্তন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত এবং উচ্চবিদ্যালয়সমূহকে একাদশ-দ্বাদশ, তারপর একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর কলেজগুলোতেও পরিবর্তন আনতে হবে। প্রায় ৭০ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৫ হাজার উচ্চমাধ্যমিক এর চেয়ে বেশি এবতেদায়ি মাদ্রাসা এবং দুই হাজার কলেজে ভৌত অবকাঠামোর পরিবর্তন ও উন্নয়ন মুখের কথায় সম্ভব কিন্তু বাস্তবে তা তা করা অনেক চ্যালেঞ্জ ও কঠিন কাজ। এর সাথে যুক্ত হবে হাজার হাজার কোটি বিনিয়োগ, এত টাকা কে বিনিয়োগ করবে? তাছাড়া সব চেয়ে বড় প্রয়োজ উচ্চ শিক্ষিত, যোগ্য মেধাবী ও সৃজনশীল পরীক্ষা পদ্ধতিতে অভিজ্ঞ এত বিপুল সংখ্যক শিক্ষক কোথায় পাওয়া যাবে?
প্রাথমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহে যে পরিবর্তন বা সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে, এতে অনেক অনেক সমস্যারও সৃষ্টি হবে। যেমন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সেসকল শিক্ষক পড়াচ্ছেন, তাদের দ্বারা কী বিদ্যমান সৃজনশীল পরীক্ষা ব্যবস্থা অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ানো সম্ভব? উচ্চবিদ্যালয়ে যেসব শিক্ষক ষষ্ঠ-অষ্টম শ্রেণীতে পড়াতেন, তাঁদের কী হবে; তারা কি একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়াতে সক্ষম হবেন? একইভাবে কলেজে যাঁরা উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণীতে শিক্ষকতা করতেন, তারা কী স্নাতক ক্লাসে পড়াতে পারবেন? এরপরওতো রয়েছে, ভৌত অবকাঠামো, গবেষণাগার, তার ব্যবহার ইত্যাদির বিষয়আসয় কীভাবে নিশ্চিত হবে? তা ছাড়া যে সমস্ত শিক্ষক বিভিন্নস্তরে ছাত্র ছাত্রিদের পড়াবেন তাদের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও বিদ্যমান শ্রেণী থেকে তিনধাপ ওপরের শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রিদের পড়োনো বিষয়ে সক্ষমতা অর্জনের ব্যবস্থা না করে কিছু সংখ্যক অভিভাবক, শিক্ষাবিদের দাবিতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী বিষয়টি গভীরে না গিয়ে হুট করে ঘোষাণা দিয়ে বসলেন, চলিত বছর থেকেই সমাপনি পরীক্ষা বন্ধ তার এ ঘোষণা বালখিল্যতা ছাড়া কিছু নয়।
আমরা যারা দেশকে ভালোবাসি একই সাথে এই শেখ হাসিনার সরকারকে নিঃস্বার্থ সমর্থন করি দেশের এমন সব শ্রেণী-পেশার মানুষই চায় আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা অধিকতর আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের হোক। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, ধাপকী ধাপ সিঁড়ি টপকে উপরে ওঠে যাক। আমরা চাই আমাদের সন্তানেরা শিক্ষার প্রতিটি ধাপ যথাযথভাবে অতিক্রম করে আধুনিক ও উচ্চতর শিক্ষায় এগিয়ে যাক। তাই বলে সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জনের জন্য ম্যানিপুলেশনের মাধ্যমে শিক্ষার হার বাড়িয়ে আদতে কিছুই লাভ হবে না। একই সাথে আমাদের সন্তানদের বার বার গিনিপিগ না বানিয়ে একটি স্থিতিশীল শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়নের জন্য অনুরোধ করছি।
দৈনিক জনকন্ঠ আজ “শিক্ষার্থী যখন গিনিপিগ” শিরোনামের যে উম্পাদকীয়টি লিখেছে তার অংশবিশেষ আমার এই লেখার সাথে প্রাসঙ্গি বিধায় তার কিয়দাংশ এখানে উদ্ধৃত করেই আমার এই নিবন্ধের ইতি টানবো। তারা লিখেছে “শিক্ষার্থীকে যত পার পড়া গেলাও। ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে যত পার পড়াকে ধারণ করাও। ঠাঁই হোক আর না হোক মগজের কোষে। মুখস্থ করতে পারা না পারার ওপর নির্ভর করে শিশুর পাস ফেল। তার মধ্যে আরেক উৎপাত সৃজনশীল। আর এর জন্য বাজার ভর্তি রয়েছে গাইড বই। এর দাপটে মূল বই উধাও যেন। এসব গ্রন্থের দামও চড়া। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সৃজনশীলতা তলায় গিয়ে ঠেকেছে, সৃজনশীল প্রশ্নের জন্য সৃজনশীল গাইড বই আর কোচিং সেন্টারই ভরসা। গ্রামীণ স্কুলগুলোর হাল হকিকত আরও করুণ। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই ‘লজিস্টিক সাপোর্ট’। শিক্ষা নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের ভেতর যতই মতভেদ থাকুক না কেন, তারা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে পারেন না।”
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৪:৪৯
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×