somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

চোরাবালি-
পোষাক তৈরীর কারখানায় মাসিক বেতনে কামলা দেয় মাস শেষে মাইনের আশায়, যে মাইনে দিয়ে চলবে নিজের পরিবার ও সমাজের জন্য কিছু একটা করার প্রচেষ্টা মাত্র। নিতান্তই সাদামাঠা গ্রাম থেকে আসা স্বল্প শিক্ষিত মানুষ।

বিদেশ ফেরত জমিলা সখিনা

০১ লা জুলাই, ২০১৫ সকাল ৯:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


একটা সময় বিদেশ ফেরত জমিলা সখিনাদের অত্যাচারের কাহিনী শুনে চোখের কোন জল আসত, ভাবিয়ে তুলত মানুষের বিবেকের জলাঞ্জলি দেখে। ইদানিং অনুভূতি গুলো ভোতা হয়ে গিয়েছে; এসংবাদগুলিতে অট্টহাসি চেপে হাসি মুচকি হাসি, এড়িয়ে যাই নিউজগুলি, চোখবুলিয়ে সময় নষ্ট করার মত মানুষিকতা ফিরে পাই না। এসব কারনের পেছনে নিচের কারণগুলিই যথেষ্ট-

প্রথমত আমরা যারা মনে করি যে তারা ছুটে যায় ফিন দেশে পেটের দায়ে অথবা বাধ্য হয়ে; আসলে ব্যপারটি মোটেও সেরকম না; তারা আসলে ছুটে চলে ভিনদেশে প্রতিপত্তির লোভে। স্বপ্ন দেখে বাড়ী গাড়ি চড়ে ঘুরবে দেশে; এসি বাথরুমে বাথট্যাবে গোসল দেবে নায়িকা স্টাইলে গোলাপ মেশানো জলে। বস্তুত এসব বড়লোকী চিন্তাচেনতা ডেকে আনে তাদের এর দুদর্শামত জীবন। এসব ক্ষেত্রে তাদের আত্মীয় স্বজন এগিয়ে সবার থেকে বেশী। অল্প বয়সীদের বেলায় তারা আম্মাজানেরা আর একটু বয়ষ্কদের বেলায় তাদের ভাইবোন আত্মীয় স্বজনেরা। তারা চিন্তা করে আরে বিদেশী লোক কত্ত ভাল; বোইন বা মাইয়াডারে পাডাইতে পারলেই খালি ট্যাহা আর ট্যাহা, আভাব থাকবে না সংসারে। আসলে আমাদের সমাজে অভাবের পরিধি বেড়েছে অনেকগুনে, অভাবের পরিধি নিয়ন্ত্রণে চাই মানুষিক পরিবর্তন মাত্র। এর বাইরে কিছু না। এ বিষয়ে আমার বাস্তব দেখা কিছু ঘটনা নিচে-

# আমাদের বাসার সার্ভেন্ট যাকে আমার ছোট্ট সংসারে সামান্য কাজের বিনিময়ে বেতন দিতাম ১৫০০টাকা মাসিক আর থাকা খাওয়া চিকিৎসা সহ যাবতীয়। আর আমার শ্বশুর মহাশয় তার নাতীদের উপর গুরুত্বদেবার জন্য তাকে দিতেন মাসিক ১০০০টাকা সবমিলিয়ে তার জমা মাসে ২৫০০/=টাকা। শ্বশুর পক্ষ থেকে পাওয়া আর বউয়ের কোন এক সম্পর্কের আপা তাই তাকেও আপা ডাকতাম। আমার বউ ছোটবেলা থেকে তার কাছে বড় হয়েছে তাই তাকে তার প্রাপ্য থেকে অতিমাত্রায় সম্মান করত। কাজের মধ্যে তিনি বাজার করা কাজটা করে আর বড় বাচ্চাটাকে মাঠে ঘুরতে নিয়ে যায় প্রসবা পায়খানা করাতেন আর কাপড় ধোয়া কাজটা। অন্যান্যগুলি ছুটা বুয়া করে দিত। আমি বাজার থেকে আসলে কোনদিন ব্যাগটি ধরা তো দুরে থাক দরজা খুলে দিত মাত্র লাগাতে হতো আমাকে নিজ হাতে। বউয়ের সম্মানীয় তাই আমিও সম্মান করে কখনও উনাকে কিছু বলি নাই। উনার মাঝে পরিবর্তন দেখা গেল হঠাৎ করেই, আত্মীয় স্বজন ফোন দিতে থাকল প্রতিদিন এবং দীর্ঘ সময় ধরে কথা চলতে থাকল। ভাইবোনদের প্রতি দরদে ভেসে যেতে লাগল। বউকে শোনাতে থাকল, তোদের এখানে থেকে লাভ কি, তোরা কি আপন নি, আই আমার বইনদের কাছেই থাবক ইত্যাদি ইত্যাদি। একদিন বললাম তারাই তো খেতে পাই না তোমাকে দেখবে কি করে, সঙ্গে সঙ্গে উত্তর করল- তারপরও তো তো আমার আপন, একটা কিছু হলে তারাই তো দেখবে। ইত্যদি ইত্যাদি- সোজা উত্তর করে দিলাম, আপা ভাল না লাগলে আপনি চলে যেতে পারেন। শুনে বেশ খুশি হল এবং দুই মাসের মধ্যে চলে গেলেন ভাইবোনদের কাছে।

তার মাস তিনেক পর শ্বশুরালয়ে গেলে তিনি আসলেন বললেন, ভাই কিছু টাকা দেন আমি তো দেশের বাইরে যাব, সে কথা শুনে বউ আমার তাকে বোঝালেন অনকে ভাবে অনেক ঘটনার বিবরণ দিয়ে; বললেন যেখানে দেশেই একটা মেয়ে গৃহকর্মী হিসেবে নিরাপত না সেখানে বিদেশের মাটিতে তুমি কি টিকতে পারবে। এসব কথা মোটেও পাত্তা দিল না বরং বলল আমি যে ভাল থাকব এটা তোর চাস না; তোদের বাসায় কামলা দিতাম এখন দেই না এ কারনে তোরা এসব বলিস আমি যেন যেতে না পারি। আমার শ্বাশুরী থেকে শুরু করে সবাই তাকে নিবারনের চেষ্টা করেছেন কিন্তু তার ভাই বোন আত্মীয় স্বজন উলটো আমার শ্বাশুরীকে বলেছে, আমার বোইনটা গেলে আমরা ভাল থাকব এটা আপনারা চান না।

বোনের বিদেশ যাত্রার জন্য বাই বোন সবাই এনজিও থেকে লোন নিয়ে দালালকে টাকা দিয়েছে; এবং পাড়ি জমিয়েছে কাতারে। আর পৌঁছেই স্বপ্ন ভেঙে হয়েছে খান খান; তাকে দেয়ার কথা ছিল একদম্পতীর বাসায় যাদের বাচ্চা দেখতে হবে কিন্তু দেয়া হয় আট সদস্যের পরিবারে; আর সেখানে তার কাজ দেয়া হয় ধোয়া মোছা; বয়ষ্ক একটু তাই তাকে প্রথম রাত থেকে আপ্যায়ন করেছে বয়ষ্ক দুইজন লোক আর বাকীরা আপ্যায়ন করে চলে ফিলিপাইনি কুকারকে। প্রথমত ফিলিপাইনির মোবাইল থেকে কল আসে প্রথমেই আমার বউয়ের মোবাইলে, কান্নাকাটির শব্দে চিনতে না পারলে আমি নিয়ে কথা বলে বুঝি তার অবস্থা। আর বউকে দিলে সে সব খুলে বলে তার কাছে, তার বোনকে ফোন করেছিল, বোনরা উত্তর করেছে, একটু কষ্ট কর আমাদের জন্য আর এসব কষ্ট এমন আরকি; স্বামীর সংসারে থাকলেও তো থাকা লাগত ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রায় মাসখানেক পর তিনি ফিরে আনেন স্থানীয় দালালেরা নিজেদের অস্তীত্বরক্ষার্থে; কেননা অবশেষে তার ভাই শরানাপন্ন হয় স্থানীয় মাস্তানদের আর সে হুমকিতে নিজেদের রক্ষার্থে ফিরিয়ে আনে তাকে দালালেরা।

# আমি পেশায় গার্মেন্টস কামলা; আর সে সুবাদে বাংলা পড়তে পারে এবং ইংরেশী সংখ্যা গুনতে পারে এমন কাউকে গার্মেন্টেসে চাকুরী দেয়া খুব সহজ আমার কাছে। পাশের ফ্লাটের ডাক্টার দম্পতি একদিন অনুরোধ করল তার বাসার কাজের মেয়েটি এখন আর তার বাসায় কাজ করতে চাইছে না; সে চাইছে গার্মেন্টেসে চাকরী করতে যদি আপনি দিয়ে দিতেন তা হলে মেয়েটা কাজ করে খেত। মেয়েটিকে ডেকে ডেরা করলাম; কথা বার্তায় বুঝলাম সংসারে অভাব এবং তার মা তাকে অতিরিক্ত ইনকামের জন্য চাপ দেয় নিয়মিত। এখানকার ৩০০০টাকায় তারা সন্তুষ্ট না। তার মা তাকে বিয়ে দিয়েছিল, সে স্বামী কিছুটা এবনর্মাল ছিল একদিন রোড একসিডেন্টে মারা যায়। তারপর থেকে মানুষের বাসয় কাজ করে। অফিসে এইচআরকে বলে দিলাম হেলপার হিসেবে কাজ শুরু করল ৫৩০০টাকা বেতনে। প্রায় বছর খানেক আর সে দিনেক খোজ নেয়া হয় নাই। বছর খানেক পরে একদিন রাতের বেলা অচেনা নাম্বার থেকে পার্সনাল নাম্বারে ফোন এলে ধরলাম; সে বলল ভাইয়া আমি তো আপনাকে নিচে গেলেই দেখতাম কাজ করছেন আপনি তো কোন দিন ফ্লোরে আসেননি তাই দেখনও নি। কিরকম চলছে জিঙ্গেস করতেই বলল ভাইয়া আমিতো চাকরী ছেড়ে দিয়েছি; আমি বিদেশ যাব দোয়া করবেন। কথা শুনে হতবম্ব হয়ে গেলেমা যে মেয়ে দেশে ৬৮০০টাকা বেতন পাছ্ছে সে কেন বিদেশে যাবে। সে চাকরী করে টাকা জমিয়েছে আর তার মা তাদের দেড় শতক জমি ছিল সেটি বিক্রি করে বিদেশ যাবার ব্যবস্থা করেছে; তাকে বোঝালাম কিন্তু তাতে সে খুশি হতে পারল না; বলল সবাই তো খারাপ না ভালতো হতেও পারে; আর যে আমাকে নিয়ে যাচ্ছে সে বেছে কোন সমস্যা নাই বেটী তোর আমি তো আছি; সাধ্যমত বোঝালাম যে অল্পবয়সী মেয়ে তুমি কিন্তু কাজে দিল না, সে ট্রেনিং করেছে ভিসা পেয়েছে সব রেডি। যে দালাল তাকে নিয়ে যাচ্ছে সে তার কোন সম্পর্কের মামা লাগে ইত্যাদি ইত্যাদি।

ব্যস্ততায় কেটে গেছে মাস তিনেক; হঠাৎ বাসায় ফিরতে সিড়িতে উঠতে গিয়ে এক মহিলা হস্তদস্ত হয়ে কাছে এসে বলল, বাবা আপনি রাহানের বাবা না; আমি বললাম হ্যাঁ, মহিলা কান্নাকাটি শুরু করল, বলল যাকে চাকরী দিয়েছিলাম সে তার মেয়ে, এখন ওমানে; যে দালাল তাকে নিয়ে গিয়েছিল তাকে বোইন ডেকে বলেছিল তাই তার কথায় বিশ্বাস করেছিল। কিন্তু সেই দালাল তার মেয়েকে ঢাকাতেই আপ্যায়ন করেছে বাসায় রেখেই; মেয়ের বিদেশ যাওয়া বাতিল হবে ভেবে মেয়েকে বলেছিল একটু সহ্য করতে যেতে পারলেই তো আর কষ্ট থাকবে না। যেখানে দিছে জায়গাটা ভাল ৫সদস্যের মেস; পালাক্রমে ৫জনই তাকে আপ্যায়ন করে সুযোগ পেলে; হুমকি ধামকি দেয় মেরে ফেলার। তারপরও আমি কইছি মানিয়ে নিতে কিন্তু মাইয়া কই মইরা যাইবো; বাবা ডাক্টারের লগে কথা বলে যদি মাইয়ারে ফিরাইয়া আনতে পারেন বলেই কান্নাকাটি শুরু করল। আমি ডাক্টারের বাসা দেখিয়ে দিয়ে নিজের বাসায় চলে গেলাম। কেননা আমার কিছু করার সামর্থ নেই।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুলাই, ২০১৫ সকাল ৯:৩৬
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×