somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কালের দর্পণে বেকারত্ব, জেলাশহরে চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা ও বিবিধ প্রসঙ্গ

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



১.
বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। এই দেশে তথ্যপ্রযুক্তি থেকে শুরু করে কৃষি, প্রাকৃতিক সম্পদ, ঔষধ, বস্ত্রশিল্প, হস্তশিল্প, ইলেকট্রনিকস পণ্য, গবেষণা, শিক্ষা প্রভৃতি ক্ষেত্রে রয়েছে অফুরন্ত সম্ভাবনা। বিশেষ করে শিক্ষাক্ষেত্রে বাংলাদেশের অভ‚তপূর্ব উন্নতি ঘটেছে। একটা সময় ছিল যখন বাংলাদেশ থেকে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা কিংবা চাকরি উভয়ের জন্যই গণহারে বিদেশ পাড়ি জমাত। কিন্তু সেই অবস্থার এখন অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে শিক্ষার্থীদের বিদেশগমন অনেকটাই কমে গেছে। সবচেয়ে আনন্দের খবর হচ্ছে—অনেক বিদেশি শিক্ষার্থীরাই এখন আমাদের দেশে এসে পড়াশোনা করছে। কেউ চাকরি করছে, কেউবা ব্যবসা। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নতি ঘটলেও চাকরিক্ষেত্রে ঠিক ততোটা উন্নতি ঘটেনি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যে হারে গ্র্যাজুয়েট উপহার দিচ্ছে সরকার সে হারে তাদেরকে কাজে লাগাতে পারছে না। তাছাড়া চাকরি নিয়োগ পরীক্ষাতেও রয়েছে সনাতনী ব্যবস্থা। আর এ কারণেই অনেক তরুণপ্রাণ বিকশিত হওয়ার আগেই ঝরে যাচ্ছে।

পড়াশোনা শেষ করে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরই প্রত্যাশা থাকে ভালো একটি চাকরি। শিক্ষার্থীদের এ প্রত্যাশার সঙ্গে সম্পূরক থাকে অভিভাবকমণ্ডলীও। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা গেছে অভিভাবকরাই শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ চাকরিরবাজার সম্পর্কে নানাবিধ টিপস দিয়ে সতর্ক করে থাকেন। শিক্ষার্থীরা স্বপ্ন নিয়ে বড়ো হয়, বেড়ে ওঠে। কিন্তু দেশে নিয়োগ পরীক্ষা-পদ্ধতির কিছু সনাতনী ব্যবস্থার কারণে অনেক তরুণের স্বপ্নই অঙ্কুরে বিনষ্ট হয়ে যায়। বাংলাদেশের প্রায় সব সরকারি-বেসরকারি চাকরির পরীক্ষাগুলোই ঢাকাকেন্দ্রিক। বলা যায়, বাংলাদেশ জন্মের শুরু থেকেই নিয়োগ পরীক্ষাগুলো রাজধানীতেই হয়ে আসছে। সারা বছরই সরকারি ও বেসরকারি নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনভিজ্ঞ অসংখ্য পরীক্ষার্থীকে রাজধানীতে যেতে হয়। মফস্বল থেকে বহু কষ্টস্বীকার করে একজন শিক্ষার্থীকে পরীক্ষা দিতে ঢাকায় যেতে হয়।

চাকরি এখন সোনার হরিণ। স্বপ্নের জগৎ এবং বাস্তবজগৎ যেমন এক নয়, তেমনি একাডেমিকজগৎ এবং চাকরিতে প্রবেশের জগৎও এক নয়। একাডেমিক পরীক্ষার প্রতিযোগিতার চেয়ে চাকরির পরীক্ষার প্রতিযোগিতার জগৎ বড়োই বিশাল। জীবন গড়ার যুদ্ধ। এ যেনো মহাযুদ্ধ! এ যুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য একজন শিক্ষার্থীকে একাডেমিক পড়াশোনার চেয়ে অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হয়। শুধু পরিশ্রমই নয়, প্রতিটি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য রয়েছে বেশ বড়ো অঙ্কের ফি! ব্যাপারটি এখানেই চুকে গেলে শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হতো। কিন্তু না। তাদের এই প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার জন্য অভিভাবকের পকেট শূন্য করে ঢাকা যেতে হয়।
এটা সত্য যে, বর্তমানে চাকরির যে স্বল্পতা তাতে একবার পরীক্ষা দিয়েই কেউ কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারে না। ফলে তাকে কয়েকবার বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় বসতে হয়। নিম্নবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে একজন বেকার শিক্ষার্থীকে বারবার নিয়োগ পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো যে কত বড়ো বোঝা তা একমাত্র ভুক্তভোগীরাই জানে!

২.
বাংলাদেশে একমাত্র পিএসসির বিসিএস প্রিলিমিনারি এবং লিখিত পরীক্ষা কেবল বিভাগীয়শহরে হয়ে থাকে। এছাড়া অন্যান্য পরীক্ষাগুলোও ঢাকাকেন্দ্রিক। শিক্ষার্থীদের অর্থনৈতিক দীনতার কথা চিন্তা করে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর তা হলো—ব্যাংকগুলোতে আবেদন করতে এখন আর আগের মতো কোনো ফি দিতে হয় না। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই মহৎ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশসংসার দাবি রাখে। এই মহৎ উদ্দেশ্যটি শিক্ষার্থীদের শতভাগ কাজে লাগত যদি তাদের পরীক্ষাগুলো জেলাশহরে নেওয়া হতো।

বর্তমান সরকার জনগণবান্ধব। তরুণদের জীবন-মান উন্নয়নে এ সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তবে তরুণদের সবসমস্যাই হয়ত সরকারের কাছে সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হয় না। আর সেকারণে এই তরুণ শিক্ষার্থীদের ভোগান্তিরও শেষ হয় না। সরকার যেহেতু সেবার মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে উন্নয়নের গতি ত্বরাণ্বিত করার চেষ্টা করছে; সেহেতু বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর প্রধান সমস্যাগুলোও অগ্রাধিকারভিত্তিতে সমাধান করা সরকারের নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এককথায় দেশের মানুষের সুযোগ-সুবিধাকে প্রাধান্য দেওয়া সরকারের অন্যতম প্রধান নৈতিক দায়িত্ব।

পড়াশোনা শেষ করার পরই শিক্ষার্থীদের বেকারের খাতায় নাম উঠে যায়। সীমাহীন পরিশ্রমের কারণে কিছু সংখ্যকের হয়ত সে নাম কর্তনের সুযোগ ঘটে। কিন্তু বেশিরভাগেরই আর তা সম্ভব হয় না। পরীক্ষা পাসের পর পরিবার যখন সন্তানদের কাছ থেকে অর্থনৈতিক সাপোর্ট চায়, তখন এই সদ্য নাম লেখানো বেকার একটি চাকরির জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে। কিন্তু সমস্যা হলো চাকরির পরীক্ষার স্থান ও ফি নিয়ে। ঢাকায় ঘনঘন চাকরির পরীক্ষা দিতে গিয়ে এইসব তরুণ শিক্ষার্থীদের অনেকেই যাত্রাপথে সর্বস্ব খুইয়েছে। গাড়ি দুর্ঘটনায় প্রাণহানির কথা না হয় নাই বা বললাম!

সোনালি, জনতা, অগ্রণী, কৃষিব্যাংক ও অন্যান্য পরীক্ষার দিনগুলোতে ঢাকাবাসীরাও যে চরম দুর্গতিতে পড়ে সেটা কারো অজানা নয়। এসব পরীক্ষার প্রতিটিতেই প্রায় দুই-আড়াই লাখ শিক্ষার্থী আবেদন করে। লাখ দেড়েকও যদি পরীক্ষা দিতে যায়, তাহলে ঢাকায় যানজট হওয়ারই কথা। এ দেড় লাখ ছাত্রের প্রতিজনের যদি পাঁচশ টাকা করেও খরচ হয় তবে প্রতি পরীক্ষার মোট খরচ সাত কোটি পঞ্চাশ লাখ টাকা। শুধু তাই নয়, দূর-দূরান্ত থেকে ঢাকা যাওয়া এসব অনাহূত শিক্ষার্থীদের আশ্রয়েরও জায়গা থাকে না। ঢাকার জনাকীর্ণ শত অলিগলি, অচেনা পরিবেশে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয় বেকার শিক্ষার্থীরা। জাতির ভবিষ্যৎকর্ণধারের হাত থেকে টিউশনির টাকায় কেনা মোবাইলটা পর্যন্ত নিয়ে যায় ছিনতাইকারী! অনেক সময় বাড়ি ফেরার জন্য মানিব্যাগে রাখা টাকাটাও হারাতে হয়! শারীরিক ও মানসিক উদবিগ্নতার কথা না-হয় নাইবা বললাম!

এ কথা সত্য যে, দেশে শিক্ষিত তরুণের হার বেড়েছে। চাকরিরবাজারে সরকার এখনো একক ও বৃহত্তম চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে সরকারি চাকরিতে নতুন বেতন স্কেলের কারণে অনেকেরই আগ্রহ বেড়েছে। তাছাড়া বেসরকারি ভালো চাকরিও সীমিত। আগে সরকারি চাকরিতে কম বেতন ছিল বলে অনেকে ব্যাংকের চাকরিতে যেত। কিন্তু এখন সেই অবস্থারও পরিবর্তন হয়েছে। বিশ্বায়নের কারণে প্রতিটি ক্ষেত্রেই পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগছে। আর সেকারণে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অবশ্যই আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। তাদের খেয়াল রাখতে হবে যাতে একজন চাকরিপ্রার্থীর পরীক্ষায় অংশ নিতে কোনো সমস্যা না হয়। শিক্ষাজীবনের পরীক্ষা এবং নিয়োগ পরীক্ষা প্রার্থীদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আর এ বিষয়টি যুক্তির সঙ্গে একটু হৃদয় দিয়েও উপলব্ধি করতে হবে।
বর্তমানে সরকারি চাকরিকে বেসরকারি-চাকরির থেকে অনেক ভালো ও সম্মানের বলে মনে করা হয়। এছাড়াও সরকারি চাকরিতে টিকে থাকার নিশ্চয়তা বেশি। সরকারি চাকরির আর্থসামাজিক গুরুত্ব অন্য চাকরি থেকে অনেক বেশি। বর্তমানে সেশনজটও অনেকটা কমে গেছে। আর এ কারণে প্রতিযোগীদের সংখ্যাও দিনকে দিন বেড়েই চলছে।

৩.
এছাড়াও আরেকটি বড়ো সমস্যা রয়েছে। আর তা হলো সরকারি ও বেসরকারি পরীক্ষার সময়সূচিতে প্রায়শ সমন্বয়হীনতার অভাব দেখা যায়। সরকারি কর্মকমিশনসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা, শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে চ‚ড়ান্ত পরীক্ষারসূচি নির্ধারণে সমন্বয়হীনতার অভাব হলে লাখ লাখ চাকরিপ্রার্থী ও শিক্ষার্থী চরম ভোগান্তির শিকার হয়। কর্তৃপক্ষকে এসব বিষয়গুলোর প্রতি সুনজর দিতে হবে।

বাংলাদেশের জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটি ১৭ লাখ। তন্মধ্যে পুরুষ ৮ কোটি ১০ লাখ এবং মহিলা ৮ কোটি সাড়ে ৭ লাখ (দৈনিক সকালের খবর। ২৯ মে ২০১৭)। সরকার সময় সচেতন হওয়ার কারণে বর্তমানে শিক্ষার হারও আশানুরূপভাবে বেড়ে চলছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী দেশের বর্তমান সাক্ষরতার হার ৭২.৩ (দৈনিক জনকণ্ঠ। শেষের পাতা। ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭। প্রিন্ট)। প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ার কারণে সরকারির পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতেও তরুণরা চাকরি করতে বাধ্য হচ্ছে। বিশেষ করে ব্যাংকিংসেক্টর থেকে শুরু করে কোম্পানির চাকরি, এনজিও কিংবা শিক্ষাসেক্টরেও। শিক্ষামন্ত্রণালয়ের তথ্য মোতাবেক—দেশে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৭ হাজার ৬৪৭টি। যেখানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা চার লাখ ৬৯ হাজার ৮৪৪ জন। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে সাড়ে ৭ হাজারেরও অধিক (দৈনিক আমাদের সময়। ২৬ জানুয়ারি ২০১৭)। এ তথ্যগুলো থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, দেশে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত তরুণের সংখ্যাই বেশি। প্রতিযোগিতার বাজার যতই বৃদ্ধি পাচ্ছে তরুণরা ততই বেশি ছুটাছুটি করছে। অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য ততই তারা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। কিন্তু তাতে না আছে চাকরির নিশ্চয়তা না আছে ভবিষ্যৎ পেনশন!

সম্প্রতি সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর অনলাইনে জরিপ চালায় বাংলাদেশ শিক্ষা, তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস)। সেখানে দেখানো হয়েছে বাংলাদেশে গত ৩৩ বছরে মাধ্যমিক থেকে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে ১৬ হাজার ৯১০টি। প্রতিষ্ঠান বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও (দৈনিক মানবজমিন। ১ মার্চ ২০১৬)। এই বর্ধিত শিক্ষার্থীরা চাকরির বাজারে এসেও বিরাট লাইন ধরছে। এটা সত্য যে কেউই ভালোবেসে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে যেতে চায় না। অনেকটা নিরুপায় হয়েই তারা বেসরকারি সেক্টরের দিকে ধাবিত হয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এর মতে, দেশে মোট ৬ কোটি ২১ লাখ শ্রমশক্তির মধ্যে ২৬ লাখ লোক বেকার রয়েছেন। বাকি ৫ কোটি ৯৫ লাখ মানুষের হাতে কাজ আছে (বিডি-প্রতিদিন। ২৯ মে ২০১৭। ১০: ৫৬। অনলাইন ভার্সন)। শতাংশের দিক থেকে এ হার ৪ দশমিক ২ শতাংশ। মোট বেকারের মধ্যে মহিলা ৬ দশমিক ৮ শতাংশ এবং পুরুষ মাত্র ৩ শতাংশ বেকার (দৈনিক যুগান্তর। ২৯ মে ২০১৭। প্রিন্ট)।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ২০১২ সালের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ওই বছর দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরসহ উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েছেন প্রায় সাড়ে তিন লাখ। এ হিসাবে ১ লাখ ৭০ হাজার স্নাতক ডিগ্রিধারী থাকছেন বেকার। বর্তমানে এই সংখ্যা বেশি বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা (দৈনিক আমাদের সময়। ০২ জুলাই ২০১৭। প্রিন্ট)।

আইএলওর হিসাবে ২০১৫ সালে বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা প্রায় তিন কোটি। বিবিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে দেশের প্রায় চার কোটি মানুষ শ্রমশক্তির বাইরে রয়েছে। এর অধিকাংশই নারী। প্রায় ৩ কোটি ৫২ লাখ নারী শ্রমশক্তির বাইরে (দৈনিক আমাদের সময়। ০২ জুলাই ২০১৭। প্রিন্ট)। এই বৃহৎ বেকার জনগোষ্ঠীর চাকরির যুদ্ধ সম্পর্কে আমরা আরও আকটু আপডেট তথ্য নিতে পারি সাম্প্রতিক ৩৮তম বিসিএস পরীক্ষার্থীর মোট সংখ্যা থেকে। ৩৮তম বিসিএসের জন্য ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৪৬৮ জন প্রার্থী আবেদন করেছেন। এর আগে ৩৭তম বিসিএসে অংশ নেন ২ লাখ ৪৩ হাজার ৪৭৬ জন পরীক্ষার্থী (দৈনিক প্রথম আলো। ১০ আগস্ট ২০১৭। প্রিন্ট)। এ থেকেই অনুমিত হয় প্রতিবছর চাকরিপ্রার্থীদের সংখ্যা কী পরিমাণে বাড়ছে!

৪.
সময় নদীর মতোই প্রবহমান। আর এই সময়ের সঙ্গে পাল্লা করে প্রতিবছরই চাকরি প্রার্থীদের সংখ্যা গাণিতিক হারে বেড়েই চলছে। চাকরিপ্রার্থীদের তুলনায় যথেষ্ট পরিমাণে কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হওয়ায় বেকারদের মধ্যে ক্রমশ হতাশা বেড়েই চলছে। প্রথম আলোর তারুণ্য জরিপ অনুযায়ী, প্রায় ৭৪ শতাংশ তরুণ দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সন্তুষ্ট। কিন্তু তারপরেও ভবিষ্যৎ কর্মক্ষেত্র নিয়ে ভরসা করতে পারছে না ৮২ শতাংশের বেশি তরুণ। প্রবৃদ্ধি বাড়লেও কর্মসংস্থানের যথেষ্ট সুযোগ তৈরি না হওয়ায় এবং বিশ্বব্যাপী অর্থনীতির যে মন্দা, তাতে তারা নিজেদের নিয়ে খুব আশাবাদী হতে পারছে না (দৈনিক প্রথম আলো। ১৬ জুলাই ২০১৭। প্রিন্ট)।

সরকার সর্বক্ষেত্রেই চায় নিরঙ্কুস উন্নয়ন, স্বচ্ছতা, মেধার পরিপূর্ণ বিকাশ। আর এ লক্ষ্যেই সরকারের বাস্তবমুখী শ্লোগান—ডিজিটাল বাংলাদেশ। সত্যিকার অর্থে ডিজিটাল বাংলাদেশ একটি শ্লোগান, একটি প্রত্যয়, একটি স্বপ্ন। এটা অপ্রিয় সত্য যে, বাংলাদেশ এখন ক্রান্তিকালের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলছে। দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা একুশ শতকে বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার চ্যালেঞ্জ নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের অনেক প্রাতিষ্ঠানিক সেক্টরেই তিনি পরিপূর্ণ আধুনিকীকরণ করেছেন। শুধু তাই নয়, শিক্ষাব্যবস্থাতেও তিনি এনেছেন আমূল পরিবর্তন। তিনি চাইলেই চাকরিপ্রত্যাশীদের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘব হতে পারে।

জনগণবান্ধব এ সরকার জনস্বার্থে অনেক কাজই নিরলসভাবে করে যাচ্ছে। এ সরকারকেই বৃহৎ জনস্বার্থের কথা চিন্তা করতে হবে। আর সে কারণেই নিতে হবে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। সরকারি-বেসরকারি নিয়োগ পরীক্ষাগুলো জেলাশহরে নেয়ার ব্যবস্থা করলে অভাগা শিক্ষার্থীরা প্রথাগত সনাতনী ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাবে। এবং একই সঙ্গে মিলবে তাদের অর্থনৈতিক মুক্তি।
এসব নিরুপায় শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে ও সরকারি চাকরিতে গ্রাম থেকে উঠে আসা শিক্ষার্থীদের নিযুক্ত করার জন্য পিএসসি, ব্যাংক ও অন্যান্য সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা জেলাশহরগুলোতে আয়োজন করা এখন সময়ের দাবি। এটা করতে পারলে যেমন ঢাকা শহরের যানজট কিছুটা কমে যাবে, তেমনি গ্র্যাজুয়েট নামধারী বেকার অসহায় ছাত্ররাও সপ্তাহে সপ্তাহে ঢাকা যাওয়ার চিন্তা থেকে মুক্তি পাবে। সরকারের একটু সদিচ্ছার ফলেই বদলে যেতে পারে পরীক্ষাপদ্ধতির সনাতনীরূপ। একটু গণমুখী সুপরিকল্পনায় স্বস্থির নিশ্বাস পাবে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সর্বস্তরের জনগণ।

মুনশি আলিম
সিলেট
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:১৪
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×