somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ ও বিবিধ ভাবনা

১৪ ই নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এক.

মূলত ‘বে’ হলো ফারসি উপসর্গ। সরকারি শব্দটির আগে ‘বে’ উপসর্গটি যুক্ত হয়ে যে শব্দটির সৃষ্টি হয়েছে তা-ই হলো বেসরকারি। বস্তুত, শব্দটিতে পাবলিক ভ্যালু কম। বাংলা ভাষায় ‘বে’-উপসর্গ দিয়ে গঠিত অধিকাংশ শব্দেরই রয়েছে নেতিবাচক অর্থ। যেমন : বেহুদা, বেপরোয়া বেফাঁস, বেপর্দা, বেনামি, বেমানান, বেমালুম, বেয়াদব, বেরসিক, বেলাইন, বেসামাল, বেহায়া, বেহিসাবি, বেহুঁশ, বেআক্কল, বেইমান প্রভৃতি। ফলে সাধারণ মানুষও এই উপসর্গযোগে সৃষ্ট শব্দাবলির প্রতি একটু হেয়দৃষ্টি প্রকাশ করে। বেসরকারি শব্দটির আভিধানিক অর্থ হলো যা সরকারি নয়। আরও স্পষ্ট করে বললে বলতেই হয়-যেসব প্রতিষ্ঠান সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে না।

বাংলাদেশে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৭ হাজার ৬৪৭টি। যেখানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা চার লাখ ৬৯ হাজার ৮৪৪ জন। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে সাড়ে ৭ হাজারেরও অধিক (সূত্র : দৈনিক আমাদের সময় :: ২৬ জানুয়ারি ২০১৭)। সাধারণ লোকজন এমপিওভুক্ত, নন-এমপিও বা প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানকেও বেসরকারি মনে করে। প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যক্তিমালিকানাধীন হওয়ায় সেখানে সৈরাচারিতার যথেষ্ট সুযোগ থাকে। কিন্তু এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি বিধি মেনে চলে। এমনকি সরকারি সুযোগ সুবিধাও ভোগ করে। যদিও তা যথোপযুক্ত মনিটরিং ও বৈষম্যমূলক সুযোগসুবিধার কারণে অনেকটাই প্রশ্নবিদ্ধ।


এমপিও শব্দের পূর্ণরূপ হলে Monthly pay order। যেহেতু এমপিও নামেই বেতনবিল পাশ হয় সেহেতু এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে বেসরকারি না বলে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান বা এমপিও প্রতিষ্ঠান বলাই বেশি যুক্তিযুক্ত। শিক্ষামন্ত্রণালয় এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সকল কলকাঠি নাড়াচাড়া করে থাকে। বেতনও প্রদান করে থাকে। তবে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষকই বলতে পারবে না তার বেতন মাসের কত তারিখে হবে! কত তারিখেই বা সে বেতন উত্তোলন করতে পারবে! পার্শ্ববর্তী দেশসমূহে এমপিওভুক্ত নামে কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। সবগুলিই হয় সরকারি নতুবা প্রাইভেট।

শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্রীয় সম্পদ। আর প্রতিটি শিক্ষকই এই রাষ্ট্রীয় সম্পদের নিবিড় তত্ত্বাবধায়ন করে থাকেন। রাষ্ট্রীয় সম্পদের তত্ত্বাবধায়ন করলে রাষ্ট্রই তো সে ব্যয়ভার বহন করবে—এটাই তো স্বাভাবিক। যেহেতু শিক্ষকরা তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে নিষ্ঠাবান সেহেতু রাষ্ট্রেরও উচিত এই সকল ব্রতী শিক্ষকদের ওপর সুদৃষ্টি দেওয়া। নির্দিষ্ট অর্থ-তহবিল গঠন করে প্রতি শিক্ষককেই একটি নির্দিষ্ট সময়ে বেতনপ্রদানের ব্যবস্থা করা এখন সময়ের দাবি।



দুই.

শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শব্দত্রয়ের মধ্যে রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। শিক্ষকের কাজ শুধুই কি শিক্ষাদান? সমাজের প্রতি তাঁর কি কোনো দায়বোধ নেই? সমাজেরও কি তাঁদের প্রতি কোনো দায়বোধ নেই? সরকারেরই বা শিক্ষকদের ওপর দায়বোধ কতটুকু—আসুন একটু খতিয়ে দেখি। ব্রতী শিক্ষক কল্যাণমূলকশিক্ষা নিয়েই সর্বদা ব্যস্ত। শিক্ষাই তাঁর ধ্যান-জ্ঞান। মূলত জ্ঞান বা দক্ষতা অর্জনই হলো শিক্ষা। শিক্ষা হলো সম্ভাবনার পরিপূর্ণ বিকাশ সাধনের অব্যাহত অনুশীলন।

বাংলা ‘শিক্ষা’ শব্দটি এসেছে 'শাস' ধাতু থেকে। যার অর্থ শাসন করা বা উপদেশ দান করা। শিক্ষার ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো ‘education’। আর এ শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ ‘educare’ বা ‘educatum’ থেকে। যার অর্থ to lead out অর্থাৎ ভেতরের সম্ভাবনাকে বাইরে বের করে নিয়ে আসা বা বিকশিত করা। শিক্ষার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে সক্রেটিস বলেন, 'শিক্ষা হলো মিথ্যার অপনোদন ও সত্যের বিকাশ।' এরিস্টটলের মতে 'সুস্থ দেহে সুস্থ মন তৈরি করাই হলো শিক্ষা'।

শিক্ষার সাথে শিক্ষক শব্দটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। একজন শিক্ষক একাধারে শিক্ষক, আদর্শিক গুরু, অভিভাবক, পথপ্রদর্শক, বন্ধু, সমব্যথী, সাহায্যকারী, কৌতূহল উদ্রেককারী, অনুসন্ধিৎসু, ভ্রমণপিপাসু, জ্ঞানপিপাসু, পরিশ্রমী, আত্মপ্রত্যয়ী, সদাচারী, বিনয়ী, পারোপকারী, উৎসাহদানকারী ইত্যাদি ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে শিক্ষার্থীর মেধাবিকাশে পরিপূর্ণ সহযোগিতা করে থাকেন। মোদ্দাকথা, একজন ব্রতী শিক্ষক তার জীবনের সমস্ত অর্জন দিয়ে শিক্ষার্থীর ভেতরের সুপ্ত প্রতিভাকে নিরলসভাবে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেন। আর এ কারণেই হয়ত শিক্ষককে বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর। শিক্ষকদের জন্য এটা নিঃসন্দেহে সম্মানজনক উপাধি। তবে শুধু উপাধি দিয়েই শিক্ষকদের তুষ্ট করা প্রকারান্তরে তাদের সাথে কপটতারই শামিল! কেননা, আর-দশজনের মতো শিক্ষকরাও মানুষ। তাদেরও পেট-পিঠ আছে। বেঁচে থাকার তাগিদে তাদেরও মৌলিক প্রয়োজন মিটাতে হয়। সরকারেরও উচিত সেসকল যৌক্তিক দাবিগুলো বিচারবিবেচনা করে তা পূরণ করা।

শিক্ষকদের মৌলিক দাবির মধ্যে রয়েছে তাদের চাকুরি জাতীয়করণ কিংবা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ তথা স্থায়ী নিশ্চয়তা, মাসের নির্দিষ্ট তারিখে বেতন উত্তোলন, বদলির সুব্যবস্থা, টাইমস্কেল, প্রমোশন, জাতীয় উৎসবে পূর্ণ বোনাস প্রাপ্তি, বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট সুবিধা, যৌক্তিক প্রয়োজনে ছুটির সুবিধা, গবেষণার পর্যাপ্ত সুবিধা, গ্র্যাচুয়িটির পূর্ণবাস্তবায়ন, অবসরে পেনশন প্রকল্পের ব্যবস্থা ইত্যাদি।

শিক্ষক হলেন বাতিঘর। প্রজ্জ্বলিত আলোকশিখার মতোই শিক্ষকের শিক্ষার আলো ক্রমে ছড়িয়ে পড়ে, শহর থেকে শহরতলিতে, গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে, দূর থেকে দূরান্তরে। ব্রতী শিক্ষকও সামাজিক জীব। চাকরির ওপর নির্ভর করে তাকে যেমন চলতে হয়, তেমনি তাঁর চাকুরির ওপর নির্ভর করে চলে তার গোটা পরিবার। ফলে শিক্ষকতার সাথে বেতন-ভাতাদি এবং টাইমস্কেল, প্রমোশন কিংবা অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যাপারও মুখ্য বিষয় হয়ে আলোচনায় আসে।

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিধি-ব্যবস্থায় সবচেয়ে অযৌক্তিক নিয়ম দেখা যায় প্রমোশনের ক্ষেত্রে। এই প্রমোশনটা আবার রেশিও ভিত্তিতে হয়ে থাকে। দীর্ঘ আট বছর পর টাইমস্কেল। এখন আবার তাও নেই! সবচেয়ে আপত্তিকর বিষয় হলো প্রমোশন প্রক্রিয়া। ইন্টারমিডিয়েট কলেজে প্রতি পাঁচজনের মধ্যে দুইজন সহকারি অধ্যাপক হওয়ার যোগ্যতা রাখেন আর ডিগ্রি কলেজগুলোতে প্রতি সাতজনের মধ্যে দুইজন। বিচারপতি ছিদ্দিকুর রহমান মিয়া তাঁর বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গাইড-এ উল্লেখ করেন—বেসরকারি কলেজশিক্ষক কর্মচারীর বেতনের সরকারি অংশ ও জনবল কাঠামো-১৯৯৫ এর শিক্ষা মন্ত্রণালয় শাখা ১১, নং-শাখা : ১১/বিবিধ-৫/৯৪/ (অংশ-৬)/৩৯৫ মোতাবেক পরিপত্রের ৯ নং ধারার ৪ নং উপধারায় বলা হয়েছে—“মোট শিক্ষক সংখ্যার ৫:২ অনুপাতে প্রভাষকের মধ্য হতে নির্ধারিত সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ বিধি অনুযায়ী সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়োজিত হবেন। এতে মোট পদসংখ্যা বৃদ্ধি পাবে না (মিয়া, ২০১৬ : ১৩১)।”

প্রভাষকগণ তাদের নিয়োগের তারিখ থেকেই জ্যেষ্ঠতা নিরূপণের জন্য বিবেচিত হবেন বলে ধারাতে উল্লেখ রয়েছে। মো. জহুরুল ইসলাম তাঁর বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আইন ম্যানুয়্যাল গ্রন্থে উল্লেখ করেন : “০৪.১০.২০১০ তারিখের একাধিক নীতিমালার ১১ (ছ) মোতাবেক—“নিয়োগকালীন সময়ে তৎকালীন নিয়মানুযায়ী যথাযথ নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন প্রভাষকগণই সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতিযোগ্য হবেন। ৫.২ অনুপাতে প্রাপ্যতার অতিরিক্ত প্রভাষকদের সহকারী অধ্যাপক পদে স্কেল মঞ্জুরের আবেদন করা যাবে না (ইসলাম, ২০১৬ : ৯০৭)।”

সহযোগী পদ নিয়েও রয়েছে বেশ রহস্যঘন আইন। আজকাল আর বেসরকারি কলেজগুলোতে সহযোগী অধ্যাপক পদ খুঁজে পাওয়া বড়োই মুশকিল! বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে কোনোকালে কেউ সহযোগী অধ্যাপক পদে প্রমোশন পেয়েছিলো কিনা তাও যেনো অনেকটাই প্রত্নতাত্ত্বিকের গবেষণার বিষয়! ইন্টারমিডিয়েট বা ডিগ্রি কলেজগুলোর জন্য সহযোগী অধ্যাপক বিষয়ক আইনটি অনেকটাই কাগুজে আইনে পরিণত হয়েছে। ফলে এটা বললে খুব একটা অত্যুক্তি হবে না যে, আইনে সহযোগী অধ্যাপকের উল্লেখ্য কেবল এবং কেবলমাত্র পুস্তকী শব্দ! আর অধ্যাপকের পদ তো কল্পনারও অতীত!




তিন.
রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ একবার দুঃখ করেই তাঁর ‘হায় চিল’ কবিতায় বলেছিলেন-“কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে (জীবনানন্দ দাশ কবিতা সমগ্র, সম্পাদনায়-ড. মকবুল হোসেন: ২০০৪: ১৪০)!” কবির প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি—নিতান্ত বিপদে না পড়লে পৃথিবীতে কেউই বেদনা জাগাতে চায় না— এটা যেমন সত্য তেমনি কেউ বেদনা জাগার পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তা নিয়ে সমাধানের পথ খুজেঁন না এমনটি পাওয়াও দুষ্কর! সন্তান কান্না না করলে মা-ও নাকি দুধ পান করান না—এহেন পরিস্থিতিতে শিক্ষকদের জীবনের করুণ অধ্যায় নিয়ে শিক্ষকসমাজই যদি কথা না বলেন, দাবি আদায়ের জন্য নিরন্তর চেষ্টা না করেন তবে ব্যস্ত সরকার বাহাদুর নিজ থেকেই যে এ সকল সমস্যার সমাধান করবে এমনটি ভাবা মোটেও ঠিক নয়। অন্তত, উন্নয়নশীল দেশে যেখানে চেয়েই পাওয়া যায় না, সেখানে না চেয়ে পাওয়ার আশা করা নেহায়েতই বোকামি ছাড়া অন্যকিছু নয়।

তবে উল্লেখ্য যে, বেসরকারি শিক্ষকসমাজ বিভিন্ন সময়ে নানা আন্দোলন নিয়েই সরকারের দ্বারস্থ হয়েছে ক্রম পর্যায়ে তাদের সমস্ত দাবিই পূরণ হয়েছে। বর্তমানেও শিক্ষকসমাজ বিশ্বাস করেন—শিক্ষক ও শিক্ষাবান্ধব সরকার নিশ্চয়ই শিক্ষকদের জীবন-মানোন্নয়নে যথেষ্ট অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। এজন্য সরকার বাহাদুরকে প্রথমেই শিক্ষার সাথে ব্রাহ্মণ্যবাদী আইনের পরিবর্তন করতে হবে। না হলে শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন সম্ভব নয়।

শিক্ষকতা পেশায় যারা নিয়োজিত থাকেন তারা মহান দায়িত্ব পালন করেন। শিক্ষকতা একই সাথে পেশা, নেশা এমনকী মিশনও। অধিকাংশই শিক্ষকতাকে জীবনের পরমব্রত হিসেবে মনে করেন। সমস্ত জীবনই তার কেটে যায় মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে। নিজের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময় অর্থাৎ যৌবনের পুরোটা সময়ই তাকে ব্যয় করতে হয় শিক্ষাদান সংশ্লিষ্ট কাজে। যে বা যারাই শিক্ষকতা পেশাকে গ্রহণ করেন তারা কোনো না কোনো সময় স্বপ্ন দেখে—একদিন প্রমোশন হয়ে পর্যায়ক্রমে অধ্যাপক হবে। কিন্তু সরকারের ব্রাহ্মণ্যবাদী আইনের কারণে বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য এমনতর চিন্তা করাও যেনো পাপ!

মূলত রেশিও ভিত্তিটাই একটি আপত্তিকর প্রমোশন পদ্ধতি। কেননা, এতে দুই পঞ্চমাংশের প্রমোশন হয় বাকীরা থেকে যায় বৃত্তের বাইরে। আহা! কী অদ্ভুত আর স্বৈরাচারী নিয়ম। একজন শিক্ষক তার সকল যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও রেশিওতে না পড়লে তাকে সারাজীবন প্রভাষক হিসেবেই থাকতে হবে—এটা কোনোভাবেই ন্যায় বিচারের আওতায় পড়ে না।

শিক্ষকদের বদলি বিষয়টাও যেনো মূলো ঝুলিয়ে রাখার মতো ব্যাপার। বিচারপতি ছিদ্দিকুর রহমান মিয়া তাঁর বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গাইড-এ উল্লেখ করেন, পরিপত্রের ১২ নং ধারা অনুযায়ী—“বেতনভাতাদির সরকারী অংশ প্রাপ্ত কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকুরিরত অবস্থায় প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনুমতিক্রমে কোনো শিক্ষক/কর্মচারী অন্যকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সমপদে নিয়োগের জন্য আবেদন করলে তাকে বিভাগীয় প্রার্থীরূপে গণ্য করা হবে। এরূপ প্রাথী যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত হবেন সে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেতনভাতাদি’র সরকারী অংশ প্রাপ্ত হলে পূর্বোক্ত প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র গ্রহণ এবং অন্যান্য যোগ্যতা পূরণ সাপেক্ষে তিনি সমহারে নতুন প্রতিষ্ঠানে যোগদানের তারিখ হতে বেতনভাতাদি’র সরকারী অংশ প্রাপ্ত হবেন (মিয়া, ২০১৬ :১৩২)।”

বাস্তবতা হলো—বর্তমানে বেসরকারি স্কুল বা কলেজে বদলি সুবিধা একেবারে নাই বললেই চলে। বেসরকারি ব্যাংক বা ইনসুরেন্স-কোম্পানি থেকে শুরু করে এনজিওগুলোতেও বদলি সুবিধা রয়েছে। সেই সাথে রয়েছে যোগ্যতামাফিক প্রমোশন সুবিধা। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজগুলোতেও রয়েছে বদলি সুবিধাসহ প্রমোশন সুবিধা। কেবল বেসরকারি শিক্ষকদের জন্যই যত নিয়মের দুর্ভোগ!

অপ্রিয় হলেও সত্য, শিক্ষকরাই একটি দেশের উন্নতির মূল চালিকাশক্তি। কারণ তারা যে পেশার সঙ্গে জড়িত এবং যাদের মাঝে আলোকবর্তিকা জ্বালাচ্ছেন সে লাখো শিক্ষার্থীই একটি জাতির মেরুদণ্ড। যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে শিক্ষকরা হচ্ছেন শিক্ষার মেরুদণ্ড। কাজেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়ে সরকারেরও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। আর সেকারণেই শিক্ষাসংক্রান্ত আইনের ব্যবহার ও প্রয়োগ সকলের জন্যই সমান হওয়া উচিত।

সরকারের একটু সদিচ্ছার মাধ্যমেই সম্ভব বেসরকারি শিক্ষকদের জীবনমানের আমূল পরিবর্তন। সরকারের সুদৃষ্টির মাধ্যমেই সম্ভব—নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বেতন উত্তোলনসহ প্রমোশন, বদলি-সুবিধা। সরকার নিরলসভাবে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর উন্নয়নে যথেষ্ট কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেকটাই কম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটু সুদৃষ্টির মাধ্যমে বদলে যেতে পারে বেসরকারি শিক্ষাব্যবস্থার আভ্যন্তরীণ সীমাবদ্ধতাসহ শিক্ষকদের জীবনপ্রণালি।

বাংলাদেশের মোট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৯৭ শতাংশই বেসরকারি। এই বিপুলসংখ্যক বেসরকারি শিক্ষক দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষকরা যেহেতু একই সিলেবাসে পাঠদান করেন, তাই সঙ্গত কারণে অনেক আগে থেকেই তাদের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য অবসানের জন্য দেশের সব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণের দাবি জানিয়ে আসছে বেসরকারি শিক্ষকরা । বর্তমান শিক্ষাবান্ধব সরকার এ বৈষম্য কমিয়ে আনার লক্ষ্যে জাতীয় স্কেল প্রদান করলেও এখনো কিছু বৈষম্য রয়েই গেছে। তাই জাতীয়করণই এখন বেসরকারি শিক্ষকদের প্রধান দাবি। অবশ্য জাতীয়করণ হলে অন্যান্য দাবিগুলো আপনাতেই পূরণ হয়ে যাবে।

ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক ও সুশীলসমাজসহ আপামর জনসাধারণেরও প্রাণের দাবি—বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠনগুলোকে জাতীয়করণের অন্তর্ভুক্তকরণ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইচ্ছাপোষণ করলেই বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে জাতীয়করণ করা সম্ভব। কেবল একটু পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা এবং দক্ষ মনিটরিংযের মাধ্যমে পালটে যেতে পারে শিক্ষার পরিবেশ। হে মাননীয় দেশরত্ন, অসংখ্য প্রত্যাশিত মুখ আশার ভেলায় নিজের অস্তিত্বকে জড়িয়ে আপনার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়।

২৫.০৫.২০১৭
মুনশি আলিম
ই-মেইল : [email protected]





সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:৫১
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×