সকালবেলা। ভাগিনা রুহেল আমীন ওরফে গিট্টু মিয়া মহিলাদের মতো নরমগলায় মামিকে বললো-মামি, আইজ বিশ্ব পায়েস দিবস! মামি মুচকি হেসে বললেন—দুনিয়াত খত দিবস … হাতধোয়া দিবস, টয়লেট দিবস, খানি দিবস, আর আইজ …! ইতা কিগুয়ে বানায়?
গিট্টু মিয়া মামির কথা শুনে ভীষণ লজ্জা পেল। অনেকটা বেলুন চুপসে যাওয়ার মতোই তার অবস্থা! কেবল গাধামিভঙ্গিতে মাথা চুলকাতে লাগল। সামনেই হাতির মতো সুন্দরভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে ছিলেন মামা রুবজ এ রহমান। কুসম্পর্কের ভাগিনা হলেও তো ভাগিনা! মামা কৌশলীভঙ্গিতে বললেন—তোমার পাককরা পায়েস যেদিন খাই ওদিনও আমি কোনো না কোনো সুসংবাদ ফাই।
কথাটি শোনামাত্র মামি মুচকি হেসে ভেতরের রুমে গেলেন। মুহূর্তেই বাজারের ব্যাগ হাতে বেরিয়ে এলেন। অউ নেও। বালাটিকে বাজার খরিয়ো। মামার হাত থেকে বাজারের ব্যাগ নিয়ে গিট্টু মিয়া জোরে বললো—হুররে! মামি জিন্দাবাদ!
গিট্টুকে সঙ্গে নিয়ে মামা বাজারে গেলেন। বেশ যাচাই বাছাই করে বাজারখরচ করলেন। আসার পথে হঠাৎ মামা বললেন—ওবা গিট্টু, তরে তো বেটা চা-টা কিচ্চু খাবাইছি না। আয়, অউ টঙ্গর দোকানো বইয়া চা খাইলাই। বলেই তিনি টঙ্গের দোকানের সুবিধামতো স্থানে গিয়ে বসলেন। সঙ্গে গিট্টেুও। চা’র দোকানে মানুষজনে ছিল টইটম্বুর। কয়েকজনের ব্যাগের পাশে মামাও তার বাজারের ব্যাগ রাখলেন। চা খেতে খেতে পরিচয় হলো আপন খানের সঙে। দুজনেই গল্প জুড়ে দিলেন। সেকী গল্প! যেনো আর ফুড়াতেই চায় না। গিট্টু বারবার তাগাদা দিতে লাগল। মামা ইশারায় বললেন—ওবা, যাইমু। বেটিনতর লাখান ফাগল অইগেলি দেখা যায়।
তিন ঘণ্টা পর মামা বাসায় ফিরলেন। গিট্টুর হাতে বাজারের ব্যাগ। মামা বললেন—ভাগিনা, তোর মামির কাছে ব্যাগটা দিলা। শিশুবাচ্চার মতো গিট্টু আদেশ পালন করল। মামি মহাখুশি ভাব নিয়ে বাজারের ব্যাগ খুললেন। ব্যাগ খুলতেই তিনি অগ্নিশর্মা হয়ে গেলেন—একী! ব্যাগভর্তি কুঁড়া! মিনশের শখ অইছে—বলদের লাখান কুঁড়াপায়েস খাইতা!
মামা বিস্মিত হয়ে খানিকক্ষণ চিন্তা করলেন। বাজার বদল হলো কী করে! তারপর বিজ্ঞের মতো অট্টহাসি দিয়ে বললেন—ইতা চায়না পায়েসের গুড়া! লবণ বেশখরি দিয়া বাট্টি বেটাইন-বেটিনতরে খাওয়াইলে তারা আত্তির লাখান মোটা আর জিরাফর লাখান লম্বা অয়! কথাটি বলেই তিনি বেঁটে মামি ও গিট্টু মিয়ার দিকে তাকালেন। এরপর আবারও অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন।
সারকথা : নিজের জিনিসের প্রতি সর্বদা খেয়াল রাখা উচিত।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২২