somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আল-মাহমুদ , সোনালি কাবিন ও মডার্নিস্ট প্যারাডাইম

২৯ শে জুন, ২০১৬ সকাল ১১:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১)আল-মাহমুদের দৃষ্টিভঙ্গি মডার্নিস্ট। অর্থ্যাৎ , তিনি মডার্নিস্টদের মতোই ‘শরীর’কে জ্ঞানের প্রধান উৎস হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এ চিন্তায় শরীর ও মনকে আলাদা করে দেখানো হয় এবং খুব জটিলভাবে শরীরকে মনের তুলনায় উপরে স্থান দেয়া হয়। অথবা এমনভাবে মনের অস্তিত্বকে প্রমাণ করা হয় ( দেকার্ত যেমন ) যেখানে মাইক্রোস্কোপিক বা আনুবীক্ষণিক পরীক্ষার পদ্ধতি ( যা কিনা আধুনিক জ্ঞানতাত্ত্বিক পদ্ধতি ) অনুসরণ করে যুক্তি সাজানো হয়। এর ফলে দেকার্ত যে পদ্ধতিতে মনের অস্তিত্ব খুঁজে পান, তা আমাদের কাছে আপাত দৃষ্টিতে শরীরনির্ভর মনে না হলেও , একটু লক্ষ্য করলেই বুঝা যাবে যে, দেকার্তের চিন্তাপদ্ধতি হলো আধুনিক বিজ্ঞানের মাইক্রোস্কোপের ‘Gaze’ এর মতোই। এই গেজ বা দেখা পুরোমাত্রাতেই সাবজেক্ট ও অবজেক্টের বিভাজন ( যা কিনা আধুনিক জ্ঞানতত্ত্বের প্রধান ভিত্তি ) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও প্রভাবিত । আধুনিক নৃবিজ্ঞান দেহ বা শরীর বা আকার ও প্রকারগত ব্যাপারসমূহের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছে এসব চিন্তার পথ ধরেই। ফলে , দেহ সবসময়ই আধুনিক ইতিহাস , রাজনীতি , বিজ্ঞান , অর্থনীতি , চারুকলা ইত্যাদি ইত্যাদির প্রধান ফোকাস হয়ে আছে । বলা বাহুল্য , এই দেহ আধুনিক জমানার ‘দেহের ধারণা’ যেখানে দেহকে ব্যবহার বা এক্সপ্লোয়েট এবং কন্ট্রোল বা নিয়ন্ত্রণ করা যায় । ইংরেজিতে বলা যাক , যেখানে Docile body বা জ্ঞানদ্বারা নিয়ন্ত্রিত ( মেডিক্যাল , মনোবিজ্ঞান, সাহিত্য ,রাজনীতিবিজ্ঞান ইত্যাদি ইত্যাদি ) দেহ উৎপাদন করা যায় ।
২) নৃবিজ্ঞান এর ফলে আধুনিক ভাষাভিত্তিক জাতিরাষ্ট্র গড়ে তোলার তাত্ত্বিক ক্ষেত্র তৈরির কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছে। অন্যভাবে বলা যেতে পারে, আধুনিক জাতিরাষ্ট্র গড়ে তোলার সহায়ক জ্ঞানতত্ত্ব হিসেবে নৃতত্ত্ব এবং সাহিত্য ও অপরাপর জ্ঞানের সোর্সসমূহ উদ্ভূত হয়েছে ।
৩) সেদিক থেকে আল মাহমুদের সোনালী কাবিন মডার্নিস্ট প্যারাডাইম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত । তিনি বাঙ্গালীর এক কন্টিনিউয়াস নৃতাত্ত্বিক ইতিহাসের বর্ণনা প্রদান করেন এতে। ফলে, মনে হয় যে, এ ভূখন্ডের একজন ব্যক্তি ইতিহাসে নানাসময় অনার্য, হিন্দু , বৌদ্ধ , মুসলমান ও খ্রিস্টান হয়েছে । এখানে ‘বডি’কে ইতিহাস দ্বারা সুরক্ষা দেয়া হয়েছে এবং মানসিক পরিবর্তন বা ওয়ার্ল্ড আউটলুককে ( হিন্দু বা মুসলমানের জগত সম্পর্কে আলাদা আউটলুক, তাদের জগতের সাথে সম্পর্ক , কসমিক দৃষ্টিভঙ্গি বা পলিটিক্স ) কম গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। এটা পরিষ্কারভাবে মডার্ণ ‘সাবজেক্ট’কে সুরক্ষা দেয়ার পলিটিক্যাল প্রচেষ্টা। বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদকে চরমভাবে প্রোটেকশন দেয়া হয়েছে এ প্রকল্পে ।
৪) অথচ ইতিহাস ( ফুঁকোর মতে ) ডিসকন্টিনিউয়াস। একজন ‘সাবজেক্ট’ রবীন্দ্রনাথের নৌকার মতো ইতিহাসের স্রোতে সেখানে ইন্ট্যাক্ট অবস্থায় ভেসে বেড়ায় নি। একেক সময়ে এখানে একেক ধরণের সাবজেক্টের উৎপত্তি হয়েছে যারা পূর্ববর্তীদের থেকে সম্পূর্ণরূপে আলাদা ও ভিন্ন । স্থূল উদাহরণ দেয়া যেতে পারে ব্যাপারটি পরিষ্কারের জন্য । এটি রসায়নের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার মতো ব্যাপার যেখানে পানির উৎপত্তি হয় হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের সমন্বয়ে ; এবং পানি তৈরি হয়ে গেলে তার বৈশিষ্ট্যে তা হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন হয়ে পড়ে। আমি যে উদাহরণ দিলাম তাও মডার্নিস্ট প্যারাডাইম দ্বারা প্রভাবিত। তারপরও উপযুক্ত উদাহরণের অভাবে এর দ্বারস্থ হতে হলো । তো , যা বলছিলাম, মডার্নিস্ট এপ্রোচ দেহকে যেরকম জ্ঞানের প্রাইমারী সোর্স হিসেবে গণ্য করেছে আমরা যদি সেরকম মনে না করি তাহলে দেখা যাবে , ডিসকন্টিনিউয়াস ইতিহাসের আলাদা আলাদা সময়ে যে ধরণের সাবজেক্ট ফরমেশন বা ব্যক্তিসমূহ উদ্ভুত হয়েছে তারা নতুন ধর্ম , সংস্কৃতি ইত্যাদি ইত্যাদি উপাদানের কারণে আলাদা আলাদা সত্ত্বা । ফলে, কেউ যদি আমাকে দেখে মনে করে যে, আমি ভারতীয় , ফলে ভারতের নিখাদ সনাতন ইতিহাসের উত্তরসূরী আমি – একথা পুরোপুরি ঠিক নয়। মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণের কারণে আমি একইসাথে আরবের সাংস্কৃতিক প্যারাডাইমের উত্তরসূরীও বটে, আবার পড়াশোনা ও চিন্তাভাবনায় পাশ্চাত্য মডার্ণিস্ট ঘড়ানার জ্ঞানতত্ত্বের উত্তরসূরীও আমি । একসাথে আমি আবার সনাতন সংস্কৃতি ধারাও গঠিত। এ অর্থে আমরা সকলেই ‘হাইব্রিড’ঃ কোন একক কন্টিনিউয়াস ইতিহাসের সত্ত্বা নই। এ কথা দুনিয়ার সমস্ত মানুষের ক্ষেত্রেও খাটে। আমাদের দেশের উপজাতি বা আদিবাসীদের নামকরণের , তাই, আমি ঘোরতর বিরোধী। উনারা উপজাতি বা আদিবাসী কিছুই নয়। তারা চাকমা, মারমা , তঞ্চংগ্যা ইত্যাদি ইত্যাদি। তারা কোন কন্টিনিউয়াস ইতিহাসের আদিম বা আদি সাবজেক্ট নয়। উনারাও শ্রেণীবিভক্ত, পাশ্চাত্য ও খ্রিস্টান জ্ঞানতত্ত্ব উনাদের ভেতরেও প্রবেশ করেছে, ইসলাম ও হিন্দু ধর্মের ছোঁয়া আছে এদের মাঝে;সর্বোপরি , এরা বিশ্বপুঁজিব্যবস্থার অধীন সাবজেক্ট । ফলে, তারাও ‘হাইব্রিডিটির বৈশিষ্ট্য দ্বারা গঠিত’।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুন, ২০১৬ সকাল ১১:১৯
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×