somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডাক্তার, সাংবাদিক এবং গালি খাওয়া, পোড়-খাওয়া মানুষের গপ্পো!

২২ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১০:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাম্প্রতিক সময়ে ডাক্তার এবং সাংবাদিকদের মধ্যে যে মুখোমুখি অবস্থান সেটা নিয়ে সবাই আমাকে প্রশ্ন করছেন। আমি কোন উত্তর দেই নি এখন পর্যন্ত, সমানে এর ওর স্ট্যাটাস শেয়ার দিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ মনে হলো কিছু একটা লিখি। সামনের বছর আরও বই বেরুবে, বিতর্কিত বিষয়ে কথা-বার্তা বললে আলোচনায় থাকা যাবে, বই বিক্রির জন্য যৌনতা কিংবা আলোচনায় থাকা অত্যন্ত জরুরি।

যাই হোক কাজের কথায় আসি। প্রথম কথা হচ্ছে আমার আব্বাজান Jahir Uddin Ahmed একজন ডাক্তার। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এম.বি.বি.এস পাস করেন বহু বছর আগে। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুরও আগে, সম্ভবত। আব্বা পাস করার পর কিছুদিন আমাদের গ্রামের বাড়ি ফেনী জেলার ফুলগাজীতে রোগী দেখতেন। তারপর সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন এবং যেহেতু সৎভাবে সরকারি চাকরি করলে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করা যায় না, তাই তিনি সরকারি চাকরিতে যোগদান করার পর কখনই আর প্র্যাকটিস করেননি। আব্বা দীর্ঘদিন সরকারি চাকরি করলেও ঘুষ খাননি, প্র্যাকটিসও করেননি। দুইটার যে কোন একটা করলে আমার আর এন.জি.ও'তে চাকরি করতে হয় না। আমি লেখক হতে পারতাম, এবং লেখক হলে যে মোটামুটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বুড়ো আঙ্গুলের সমান লেখক হতাম, তাতে কোন সন্দেহ নাই।

যাই হোক, কাজের কথায় আসি। আব্বা ডাক্তার, শুধু তাই না, আমার প্রিয় বন্ধু Robin AR, যে কিনা পৃথিবীর সবচে ভাল ডাক্তার, এবং আরেক বন্ধু, Tareq Salahuddin, যে কিনা যতটা ভাল ডাক্তার, তার চাইতেও ভাল সাংবাদিক এবং আরও কিছু বন্ধু যারা যতটা ভাল ডাক্তার, তার চাইতেও ভাল সংবাদ পাঠিকা, তার চাইতেও ভাল সুন্দরী।

যাই হোক, কাজের কথায় আসি। আমার অফিসের বড় বসও হচ্ছেন ডাক্তার। যত বড় বড় আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশে আছে তাদের কর্তা ব্যক্তি হচ্ছেন সব ডাকসাইটে ডাক্তারগণ। এছাড়া আমার চেনা সব সফল জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞও হচ্ছেন একেকজন ব্যর্থ ডাক্তার। সব মিলে আমার জীবন ডাক্তারময়। এদের মধ্যে সবচে ভাল ডাক্তার আমার আব্বা। সর্দি থেকে ক্যানসার পর্যন্ত সকল রোগের চিকিৎসাই তার কাছে একটা - ভাত খেয়ে লাইট বন্ধ করে শুয়ে থাক। ছোটবেলায় এই চিকিৎসাই পেয়েছি তার কাছে।

সাংবাদিকদের কথা আর কি বলব। আমার বেশিরভাগ সুন্দরী বান্ধবীই সংবাদ পাঠিকা এবং ডাক্তার। যেহেতু সংবাদ পাঠিকা তাই তাদের সাংবাদিক বললেও ভুল বলা হবে না। এছাড়া মিডিয়াতে টুকটাক আমারও অনেক কাজ। অনেক সাংবাদিক বন্ধু। তবে আমি নিজে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হতে পারিনাই, তাই ডাক্তারদের কেউ একহাত নিলে মন্দ লাগে না। অন্যদিকে সাংবাদিক হওয়া তো কোন ব্যাপার না, যে কিছু হয় না, সে সাংবাদিক হয়, তাই সাংবাদিকরা যখন একহাত নিচ্ছে ডাক্তারদের তখন মজাই লাগছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমি কোন দল? ডাক্তার না সাংবাদিক। এর উত্তর পরে। প্রথম কথা হচ্ছে আমি ডাক্তার এবং সাংবাদিকদের এই মারামারিতে আনন্দিত। এই প্রথম দেশে আওয়ামী লীগ, বি.এন.পি ছাড়া অন্য দুই দলের মারামারি হচ্ছে। এটা গনতন্ত্রের জন্য ভাল। আমি যখন মিরপুর বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ি, তখন আমাদের স্কুলের একটা ছেলের পায়ের ওপর দিয়ে ট্রাক চলে গেল। আমরা সবাই মনের আনন্দে ট্রাক, বাস ভাঙ্গলাম। এই ভাঙ্গাভাঙ্গির আনন্দের সাথে তুলনা করা যায় এমন অন্য আনন্দের কথা এখানে লেখা ঠিক হবেনা, এমন আনন্দ!

যখন বড় হলাম, তখন ৫০০ এম।সি।কিউ থাকা না থাকা নিয়ে দেখলাম আমরা সহ ধানমন্ডি বয়েজ, গভর্মেন্ট ল্যাবের পোলাপাইনরাও ব্যাপক ভাংচুর করতেসে। এরপর যখন নিজে ভাল ছাত্রের স্বীকৃতি পাইলাম নটর ডেমে ভর্তি হয়ে, তখন দেখলাম ঢাকা কলেজের পোলাপাইন এমনকি প্রেমে ব্যর্থ হইলেও বাস, ট্রাক, হাত-পা নানা জিনিস ভাঙ্গে। তো এইসব ভাল ভাল স্কুল কলেজের পোলাপাইনরাই পরে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার নিদেনপক্ষে আমার মত অর্থনীতিবিদ হইসে। আমাদের বড় হয়ে ওঠা হচ্ছে ভাঙ্গাভাঙ্গি করে।

আজকের যেই ডাক্তাররা ব্যপক সাংবাদিক পিটাচ্ছে তারা তো আমাদের সাথে পিটাপিটি করে এসেছে স্কুল-কলেজ থেকেই। ডাক্তারি পড়ে এরা হঠাৎ করে ফেরেশতা হবে এটা আশা করি ঠিক না। উপরন্তু ডাক্তাররাও আমার আপনার মত মানুষ, তাদের বেগ আছে, আবেগ আছে, তারাও টয়লেটে যায়। আমরা এমন ভাব করি ডাক্তাররা হবে অন্যরকম। তাদের পূজা করতে হবে, এটা ঠিক না। অন্যদিকে সাংবাদিকদের কাছে মানুষের কোনই প্রত্যাশা নাই। সাংবাদিকরাও যে ভাল ছাত্র, তারাও যে আজকাল প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েও এই 'ব্যবসা'য় আসেন, এটা অনেকেই ভুলে গেছেন। আমরা আমাদের আশেপাশে যেসব নিম্নমানের অর্বাচীন সাংবাদিকদের দেখি তারা ২-৩ যুগ আগের এবং তাদের কাছে 'বেশী কিছু আশা করা ভুল'। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ডাক্তাররা সেরাদের সেরা তাদের কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক। আমি নিশ্চিতভাবে জানি, অন্যদের সাথেও কথা বলে দেখেছি, ডাক্তাররা সাংবাদিকদের পেটানোতে সাধারণ মানুষ খুশী, কারণ সাংবাদিকদের জবাবদিহিতার কোন জায়গা নাই, তাই সাংবাদিকদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার দায়িত্ব যখন ডাক্তাররা নিয়েছেন তখন সবাই খুশী। উদ্বেগের জায়গাটা হচ্ছে সাংবাদিকদের পেটানোর পাশাপাশি ডাক্তাররা যদি সাধারণ মানুষের উপকার করতেন, চিকিৎসাটা একটু ভালভাবে করতেন তাহলে আফসোস ছিল না। আমাদের দেশের ডাক্তাররা যেই সুযোগ সুবিধা পান তা অত্যন্ত লজ্জাজনক, কিন্তু সেইজন্যই তারা ডাক্তার, তারা এই অবস্থা জেনেই ডাক্তারি পেশায় এসেছেন, তাদের কেউ মাথার মধ্যে বন্দুক ধরেনি। তাছাড়া আপনাদের হরতাল শুধুমাত্র সাধারণ গরীব রোগীদের বহির্বিভাগে আর রাতের বেলায় দিব্যি প্র্যাকটিস করে যাচ্ছেন এটাও ঠিক না রে ভাই। আমার সাথে অর্থনীতি পড়া বন্ধুরা এখন সব ব্যাংকের ম্যানেজার হয়ে মোটামুটি কোটিপতি হয়ে গেছে আর আমি এন।জি।ও'তে চাকরি করি, আমার ব্যাংক ব্যালেন্স মাত্র ৭,০০০ টাকা, ক্রেডিট কার্ডের দেনা এক লক্ষ টাকার ওপর এইজন্য আমি থাইল্যান্ডের ভিসা এপ্লাই করতে পারছিনা - এটার জন্য আমি আমার target group কে পেটাতে পারিনা। আমি উন্নয়খাতে আসবার সময়ই জানতাম আমি আর ধনী হবো না, আমাকে অর্থনৈতিক দৈন্যতার মধ্যেই থাকতে হবে।

ফেইসবুকেই শুধু না, প্রায় শতভাগ ডাক্তারকে দেখলাম আবেগপ্রবণ হয়ে কোন যুক্তি তক্কো ছাড়াই ডাক্তারদের পক্ষ নিচ্ছেন, যেমনটা ঘটছে সাংবাদিকদের ক্ষেত্রেও। সাধারণ মানুষ সাংবাদিকদের কাছ থেকে কোন সুবিধাই পায় না আবার সরাসরি তাদের কাছে আঘাতপ্রাপ্তও হয় না, তাই সাংবাদিকদের ব্যাপারে তাদের তেমন কোন অবস্থান নেই। কিন্তু ডাক্তারদের কাছে মানুষ যে সুবিধা পায় তার জন্য তারা ডাক্তারকে পূজাও করে আবার বাজে সেবার জন্য গালি দিতে দ্বিধাও করে না। এ বিষয়ে তিন জন ডাক্তারের ফেইসবুকের অবস্থান আমার ভাল লেগেছে - Khairul Islam, Pinaki Bhattacharya এবং Sezan Mahmud. তারা যৌক্তিক কথা বলেছেন।

এদিকে আমি ডাক্তার, সাংবাদিক উভয়কেই একটু critically দেখতে গিয়ে বোধহয় দু'কূলই হারালাম। এক্ষেত্রে আমি আমার অবস্থান পরিষ্কার করতে চাই। আমি নার্সদের পক্ষে। দেশের মানুষ যতটুকু সেবা নিয়ে বেচে-বর্তে আছেন তার বড় কৃতিত্ব যায় নার্সদের ঝোলায়। দেশের সকল নার্সকে সশ্রদ্ধ সালাম জানিয়ে ডাক্তার এবং সাংবাদিক বন্ধুদের গালি খাবার অপেক্ষায় থাকলাম। তবে আমার সকল সুন্দরি ডাক্তার এবং সংবাদ পাঠিকা বান্ধবীদের বলতে চাই - তোমরা এই আলোচনার বাইরে। তোমাদের জন্য শুধুই ভালবাসা।

শুভ রাত্রি।

শামীম আহমেদ
নিকেতন, ঢাকা।
২২ এপ্রিল ২০১৪।

https://www.facebook.com/shamimahmedjitu
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১০:২৬
৬টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×