somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারত বাংলাদেশ সমুদ্রসীমা বিতর্ক

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভারত-বাংলাদেশ সমুদ্রসীমা নিয়ে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। ব্লগেও আমি কিছু লেখা দেখলাম এ নিয়ে। তাই এ নিয়ে কিছু লেখা দেব ভাবলাম। আশাকরি আমার লেখায় উত্তেজনার কিছু প্রশমন ঘটবে।

যে অঞ্চলে ভারতীয় সার্ভেয়ার (কোনো যুদ্ধজাহাজ নেই বলেই জানি ) ও নৌবাহিনীর জাহাজগুলো আছে সেটাকে ওভারল্যাপিং ওয়াটার্স বলে। এর মানে হল, এই অঞ্চলের ওপর একাধিক রাষ্ট্রের দাবী আছে। বাংলাদেশ সাম্য (equity) নীতি মেনে নিজের সমুদ্রসীমা নির্ধারণ করে, কারণ এছাড়া বাংলাদেশের জলসীমা আন্তর্জাতিক জলপথ অবধি পাওয়া যায় না। ভারত ও মায়ানমার সমদূরত্ব (equidistant) নীতি অনুসারে সমুদ্রসীমা আঁকে। এখন, কিছুটা অংশ আছে যা উভয়েরই দাবীতে পড়ে। এরকম ওভারল্যাপিং অংশের পরিমাণ মায়ানমারের সাথে অনেক বেশী, ভারতের সাথে অনেক কম। এসব সত্ত্বেও উভয় দেশই ওই অংশে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কাজে উৎসাহী ও সংশ্লিষ্ট ব্লক নিলামে তুলেছে। এই হল ঘটনা। (একটা লিঙ্ক একটা সাক্ষাৎকার )

এখন বাংলাদেশ পক্ষের দাবী হল যতদিন পর্যন্ত সীমা নির্ধারণ করা হয় নি ততদিন ভারত ওই ওভারল্যাপিং অংশে অনুসন্ধান কাজ বন্ধ রাখুক। ভারতের দাবী হল, ওভারল্যাপিং হলে উভয় দেশই তাতে সার্ভের কাজ চালাতে পারে।

এরই মধ্যে সামনের বছর ভারত ও মায়ানমার জাতিসঙ্ঘে নিজেদের মত সমদূরত্ব নীতিতে আঁকা সমুদ্রসীমা পেশ করবে। বাংলাদেশকেও নিজের দাবী পেশ করতে হবে ২০১১ সালের মধ্যে , নাহলে কোনো আলাদা চুক্তির অনুপস্থিতিতে সমদূরত্ব নীতিতেই সীমা চিহ্নিত হবে। জাতিসঙ্ঘের সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত আইনের ১৫ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুসারে, কোনো আলাদা চুক্তির অনুপস্থিতিতে সমদূরত্ব আইনেই সীমা চিহ্নিতকরণ করা হয়। সেদিক থেকে ভারতের অবস্থানে আমার কোনো ভুল ধরা পড়ে না।

কদিন আগে ঝামেলার পরে বাংলাদেশের সাথে মায়ানমারের আলোচনা কোনো সমাধানসূত্র ছাড়াই শেষ হয় । মায়ানমার বাংলাদেশকে একটা করিডর (ছোটো অঞ্চল যেখান দিয়ে আন্তর্জাতিক জলপথ অবধি যাবার ব্যবস্থা থাকবে) দিতে সম্মত হলেও বাংলাদেশ তাতে রাজী হয়নি।

বাংলাদেশ সরকার যদি সমদূরত্বের পরিবর্তে সাম্য নীতিতে ভারত ও মায়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমা নির্ধারণে উদ্যোগী হয়, তাহলে প্রথমেই উচিত আন্তর্জাতিক বিচারালয়ে ব্যাপারটা নিস্পত্তির জন্য আবেদন করা। কারণ, বাংলাদেশের সাথে মায়ানমার ও ভারত উভয়ের আলোচনাই ফলপ্রসূ হয়নি। আর, ২০১১ অবধি স্থিতাবস্থা চললে এমনিতেই সমদূরত্ব নীতিতে সমুদ্রসীমা চিহ্নিত হবে। তাই, বাংলাদেশের উচিত কোর্টে যাওয়া, কোর্টে এখন এরক্কম অসংখ্য মামলা চলছে , কোর্টে গেলে সবার মেনে নেবার মত কোনো সমাধানসূত্র পাওয়া যাওয়া উচিত।

আপডেট
বাংলাদেশের এক উচ্চপদস্থ সমুদ্র বিশেষজ্ঞের সাক্ষাতকার (লিঙ্ক কাজ করছে না বলে ক্যাশ থেকে নিলাম) থেকে কিছু অংশ তুলে দিলাম। সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে ২৮ নভেম্বর ২০০৮।

"সমুদ্র-সীমানা নির্ধারণে কারিগরি দক্ষতা কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?

আসলে পুরো ব্যাপারটিই কারিগরি। সুতরাং এখানে কারিগরি বিষয় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনার দাবি রাখে যা নতুনভাবে বলার প্রয়োজন নেই। বস'ত এর জন্য আনক্লস-১, আনক্লস-২ ও আনক্লস-৩ সম্যকভাবে বুঝতে হবে। এর ফলে আমরা এক্ষেত্রে বিশেষায়িত হয়ে উঠব। নইলে প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্র সীমানা নিয়ে আমরা আলোচনা তো দূরের কথা প্রাথমিক আলোচনাও করতে পারব না।"

"নিয়ম অনুযায়ী ২০১১ সালের মধ্যে সমুদ্র-আইন রিভিউ বা আপডেটেড করে তা জাতিসংঘে পেশ করতে হবে। আসলে আমরা কী আন্তর্জাতিক সমুদ্র-আইন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জাতিসংঘে পেশ করার যোগ্যতা অর্জন করেছি?

সমুদ্রসীমা নির্ধারণে উপকূলীয় এলাকায় চার্ট তৈরির জন্যে ১৯৯০ সালের দিকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে বিদেশিরা ১০-১২ মিলিয়ন ডলার সাহায্য দিয়েছিল। ওই প্রকল্পে হাজার খানেক চার্টও প্রস্তুত করা হয়েছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন সম্পর্কে সম্যক ধারণার অভাব ও কারিগরি বিষয়ে অজ্ঞতার কারণে সেগুলো সমুদ্রসীমা নির্ধারণে কোনও কাজেই আসেনি। সমুদ্রসীমা নির্ধারণে কারিগরি দক্ষতার মিশেলে কোনও জরিপ করার প্রাথমিক কর্মকান্ডেও আমরা এখনও শুরু করতে পারিনি।"

"মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সামপ্রতিক উত্তেজনা কী সমুদ্র সীমানা নির্ধারণের বিষয়টি অমীমাংসিত রাখার অনিবার্যতা নয়? এবং প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গেও এ নিয়ে বিরোধের আশঙ্কা কতখানি?

খুর্শেদ আলম : হ্যাঁ, বিষয়টি অবশ্যই সমুদ্রসীমা নির্ধারণ অমীমাংসিত রাখার অনিবার্যতা। এ নিয়ে ভারতের সঙ্গেও আমাদের বিরোধ দেখা দিতে পারে। এ বিরোধের মীমাংসা তথা বঙ্গোপসাগরে আমাদের সমুদ্র অধিকার প্রতিষ্ঠা নির্ভর করছে এ বিষয়ে আমাদের কারিগরি দক্ষতা কত হালনাগাদ হলো তার ওপর।

আপডেট ২
ভারতীয় জাহাজগুলো সমীক্ষা শেষে জায়গা ছেড়ে চলে গেছে। (প্রথম আলো )
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ সকাল ৮:২৪
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×