দর্শক শুরু করছি আমাদের নিয়মিত আলোচনার (প্যাচালের) অনুষ্ঠান “যখন যা মনে লয়”। আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়ঃ ভূত - বিশ্বাসে মিলায় বস্তু। অনুষ্ঠানে আমাদের আজকের অতিথি ডঃ ফিনটফ ছামচু। ডঃ ফিনটফ ছামচু অনুষ্ঠানে আপনাকে স্বাগতম।
- ধন্যবাদ।
- জনাব ছামচু ভূত বিষয়ে কিছু বলুন।
- ভূত বিষয়ে কিছু বলার আগে ভূতের ইতিহাস সম্পর্কে প্রথমে কিছু বলা সমীচিন হবে বলে মনে করি। অবশ্য পৃথিবীতে কবে প্রথম ভূতের আবির্ভাব ঘটে সেটা একটি বিতর্কিত বিষয়। আর বিতর্কিত বিষয় চেপে যাওয়াই অতি উত্তম।
- আসলেই কি পৃথিবীতে ভূত আছে? অনেকেই কিন্তু বিষয়টি বিশ্বাস করতে চায় না।
- দেখুন বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর। ১২৩৬ সালের আমেরিকার নিউজার্সিতে কলিন্স নামের এক ব্যক্তি সর্বপ্রথম ক্যামেরায় ভূতের ছবি ধারন করতে সক্ষম হয়। তিনি প্রমাণ করেন যে “ইহা অলীক নহে”। অবশ্য ভূত তারও আগে থেকে পৃথিবীতে বিরাজমান ছিল। ভূত সম্পর্কে প্রখ্যাত বৃটিশ বিজ্ঞানী ডঃ হিউমায়েত ইউডিন বলেছেন - ভূত হচ্ছে এমন এক বস্তু যাহার কোন বিনাশ নাই। ইহা পূর্বে ছিল। বর্তমানে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকিবে।
কবি বলিয়াছেন - ভূত সেতো ভারী অ™ভুত
রহস্যময় এ ধরনীর তরে।
ভূত বিষয়ে পূর্বে কিছু গবেষণা হয়েছে। তবে পর্যাপ্ত তহবিলের অভাবে তা মাঝপথে বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকে ভূত নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে ভূতের থ্যাবড়া খেয়ে মড়ার উপক্রম হয়েছে।
আবার দেখুন দেশ ভেদে ভূতের প্রজাতিতেও কিন্তু ভিন্নতা আছে। নরওয়ের হ্যানশ্যান জঙ্গলে ম্যানরো নামের এক প্রজাতির ভূতের অস্তিত্ব আছে। এ উপমহাদেশে গেছো ভূত, মেছো ভূত, মামদো ভূত, পেতিœ, শাকচুন্নি এরূপ আরো নানা প্রজাতির ভূত আছে। আবার ভূত তাড়াবার ধনন্বতরী ঔষধ আবিষ্কারের দাবীদারও এই উপমহাদেশেরই বিশিষ্ট পীর ফকিরগণ।
আপনি লক্ষ্য করে দেখুন ভূতের অর্থনৈতিক গুরত্বও কিন্তু কম নয়। ভূত নিয়ে এ উপমহাদেশে নানা কিসিমের গল্প, উপন্যাস, নাটক, সিনেমা নির্মিত হয়েছে। ভূত আছে বলেই তাকে নিয়ে গল্প লিখে সাহিত্যিকগণ বেশ দু’পয়সা রোজগার করছে। নাটক সিনেমা বানিয়ে রুটি রুজির পাশাপাশি খ্যাতি অর্জন করতে পারছে। গ্রামের পীর ফকির, সাধূ সন্নাসীরা ভূতে ধরা রোগীকে ঝাড়ফুক করে বেঁচে বর্তে আছে। ভূত যদি না থাকতো তা হলে এ লোকগুলোর অবস্থা কি হতো একবার ভেবে দেখুন।
- ভূত বিষয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে কিছু বলুন।
- ভূত বিষয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজনের স্বপ্ন আমার অনেক দিনের। এজন্য ফান্ড সংগ্রহের কাজও বেশ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। ভূতদের নিরাপদ আবাসনের জন্য একটি প্রকল্প মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সক্রিয় বিবেচনাধীন আছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। অদূর ভবিষ্যতে ভূতদের ওঈঞ বিষয়ে তালিম দেওয়া যায় কিনা সে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ভেবে দেখবেন বলে আমি আশা করি।
- স্যার এবার একটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন করি। আপনি কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচপি ডিগ্রি গ্রহণ করেছেন বলবেন কি?
- আমি ইউনিভার্সিটি অব শেরাটন থেকে পিএইডি ডিগ্রি সম্পন্ন করেছি। এটি আমেরিকার বোস্টনের প্রিষ্টনে অবস্থিত। এখান থেকে অর্জিত ডিগ্রির খ্যাতি দুনিয়াজোড়া। পৃথিবীর বহুত নামজাদা বুদ্ধিজীবি, শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ এখান থেকে ডিগ্রি নিয়ে করে কেটে খাচ্ছে।
- আপনা পিএইচডির বিষয়টি কি ছিল সে সম্পর্কে যদি একটু বলতেন।
- পাবলিকতো অত কঠিন ইংরেজি বুঝবেনা। বাংলায় বলছি- মানবজীবনে ভূতের প্রভাব, সমস্যা ও সম্ভাবনা। এ বিষয়ে আমার অসংখ্য গবেষণাপত্র ও আন্তর্জাতিভাবে স্বীকৃত একাধিক গবেষণাগ্রন্থ রয়েছে।
এ সময় হঠাৎ ষ্টেডিওর টেলিফোন বেজে ওঠে। উপস্থাপক বলেন- এ পর্যায়ে আমরা একজন দর্শকের ফোন নেব। দর্শক আমরা আপনাকে শুনতে পাচ্ছি। আপনি আপনার নাম বলে প্রশ্ন করুন।
- আমি বরকত।
- মিঃ বরকত ঝটপট প্রশ্ন করুন।
- তার আগে আপনি কন আপনার পাশে যে লোক বইস্যা আছে হের পরিচয় কি।
- দর্শক আমি আগেই বলেছি আজ আমাদের সঙ্গে আছেন বিশিষ্ট ভূত বিশেষজ্ঞ ডঃ ফিনটফ ছামচু।
- আরে ঐ ব্যাটাতো দালাল ছামসু। পরথমে করতো গরুর দালালী। এরপর হইছে আদমের দালাল। গেরামের কত লোকের টেকা মাইরা ব্যাটা গেরাম ছাড়ছে। পার্টি ক্ষমতায় গেছে আর শালায় সাজছে গবেষক।
- দর্শক আমরা আপনার কথা ঠিক বুঝতে পারছি না।
- বুঝাবুঝি পড়ে অইবো আগে বান্ধেন ঐ ব্যাটারে। শালারে আইজ ...
লোকটি আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু টেলিফোন লাইনটি মাঝপথে কেটে গেল।
ডঃ ফিনটফ ছামচু হঠাৎ ফোনে ভীষন ব্যাস্ত হয়ে পড়ল এবং সে অবস্থায়ই আসন ছেড়ে ষ্টুডিও থেকে বেরোবার উদ্দ্যোগ নিচ্ছে দেখে উপস্থাপক বলল-
- স্যার আমাদের সিডিউল অনুযায়ী প্রোগ্রাম আরও কিছুক্ষন চালিয়ে যেতে হবে। নাহলে সিডিউল ঠিক রাখাটা বেশ কষ্টকর হবে।
- আরে মিয়া রাখেন আপনের সিডিউল। জান বাঁচে না তিনি আছেন সিডিউল নিয়ে। ডঃ ছামচু ঝড়ের বেগে ষ্টুডিওর দরজার দিকে পা বাড়ালো।
- ডঃ ছামচু আপনাকে অনেক ধন্যবাদ অনুষ্ঠানে আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য।
এরপর উপস্থাপক ক্যামেরার দিকে মুখ ফিরিয়ে দর্শককে উদ্দেশ্য করে বললেন-
- প্রিয় দর্শক ক্ষমতার জোরে আমাদের সমাজে অনেক ........... । এজন্য অনেক অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটে। কিন্তু আমরা ইচ্ছে করলেই সেসব ঘটনা এড়িয়ে যেতে পারিনা। আজ এখানেই শেষ করছি আমাদের আজকের অনুষ্ঠান। সুস্থ থাকুন। ভাল থাকুন। বেশী বেশী ভূতের প্রোগ্রাম দেখুন। সকলকে ধন্যবাদ।
--------------------------------
কিছু লেখতে পারে না, খালি ত্যানা পেচায়। সইরা বসেন। কাট।