somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গৌতম ঘোষের “মনের মানুষ”: জাতহীনের জাত মারার তরিকা

০৬ ই জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১১:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক.
দৃশ্য১: সিরাজ সাঁই এর আখড়া। সিরাজ সাই তরুণ লালনকে “সঙ্গ” দেয়ার জন্য একজন নারীকে ডাকলেন। ক্যামেরায় সেই নারীকে দেখা গেল। চোখে মুখে প্রচন্ড কামুকতা। এসেই লালনকে জড়িয়ে ধরে একটা ঘরের দিকে যেতে থাকল। লালন যেন অবশ কিংবা বশ হয়ে গিয়েছেন।তার সাথে সাথে চলেছেন। হঠাত সিরাজ সাঁই লালনকে পিছু ডাকলেন। যেন অনিচ্ছা সত্ত্বেও লালন সিরাজ সাঁই এর কাছে ফিরে আসলেন (সিনেমা হলে প্রচন্ড হাত তালি)। সিরাজ সাই লালনকে সাবধান করে বললেন যে কাজ তুমি করতে যাচ্ছ সে কাজ বিপদজনক । তোমাকে বিন্দু ধারণ করতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। পরের দৃশ্যে সেই নারী ঘনিষ্ঠ অবস্থায় লালনকে জিজ্ঞেস করে, পারবে অমাবশ্যায় পূণির্মা জাগাতে? লালন ইতিবাচক সাড়া দেয়। এর আগের একটা দৃশ্যে দেখা যায় সংসারের মায়ায় আচ্ছন্ন তরুণ লালনকে স্থির করার জন্য সিরাজ সাঁই একজন সাধন সঙ্গীনি জুটিয়ে দেয়ার কথা বলছিলেন।


ছবি-১:লালনের সঙ্গীনি হবার ডাক পাওয়ার পর ময়ুরির হাসি

দৃশ্য২: লালন সাঁই এর আখড়া। একলা ঘরে লালন বসে আছেন। অন্ধকার ঘরে কেবল চাদের আলো খেলা করছে। কলমি এসে লালনের সাথে কথা বলার অনুমতি চায়। লালন তাকে বসতে বলে। কলমি লালনের কাধে মুখ ঘষতে থাকে, বলতে থাকে “আমার জ্বালা মিটিয়ে দেও গো সাঁই” লালনের চোখ মুখ কেমন শক্ত হয়ে যায়। ক্যামেরা লালনের মুখের উপর স্থির। কলমির হাত এবং মুখ লালনের গা বেয়ে নীচে নামতে থাকে। আস্তে আস্তে এত নীচে নেমে যায় যে আর দেখা যায় না। লালন নিজেকে সংবরণ করার চেষ্টা করছে। একপর্যায়ে কলমির খিলখিল হাসি শোনা যায়। কলমি বলে উঠে, “এইতো তোমার শরীর জেগে উঠেছে। আমাকে শান্ত করো সাঁই। তুমি দেখছি ভাবের ঘরে চুরি করো সাই।“ লালন স্থির গলায় বলে উঠে, “শরীর জাগে শরীরের নিয়মে, মন যদি না জাগে?” কলমি চলে যায়।


ছবি-২:"আমার জ্বালা মিটাও সাই"

দৃশ্য৩: লালন সাঁই এর আখড়া। কলমি ঘরের চালে ঘরবাধার কাজে ব্যাস্ত কালুয়ার দিকে ইঙ্গিত মূলক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। কালুয়া চাল থেকে নেমে পাগলের মতো ছোটাছুটি করতে থাকে। নিজের হাতে বানানো ঘর নিজেই দা দিয়ে কোপাতে থাকে। সব দেখে শুনে লালন কালুয়াকে বলে তার নারী সঙ্গ প্রয়োজন এবং কলমি কে বলে কালুয়ার “সেবা” করতে। কলমি জানায় কালুয়ার সাথে একসময় তার সম্পর্ক ছিল কিন্ত কালুয়া সমাজের ভয়ে কলমিকে গ্রহণ করে নি সেসময়। একথা বলেই কলমি গান ধরে: “সময় গেলে সাধন হবে না”। শেষে যেন অনিচ্ছা সত্ত্বেও লালনের নিদের্শে পালন করতে রাজী হয়ে যায় কলমি।



ছবি-৩:কালুয়ার দিকে কমলির ইঙ্গিতময় দৃষ্টি

উপরের দৃশ্য তিনটি সম্পর্কে কথাবাতা দিয়েই “মনের মানুষ” সম্পর্কে আলোচনা শুরু করা যাক। দৃশ্যগুলোতে সাধারণ ভাবে বাউল সম্প্রদায় এবং বিশেষ ভাবে লালন ও তার শিষ্যদের মধ্যকার নারী পুরুষ সম্পর্ক চর্চার এক ধরণের রিপ্রেজেন্টেশান রয়েছে, যে রিপ্রেজেন্টেশান কোন ধরণের পরিপ্রেক্ষিত কিংবা কার্যকারণ ব্যাখ্যা ছাড়াই লালন, তার গুরু ও শিষ্যদের যৌনতাকে হাজির করে। প্রথম ও তৃতীয় দৃশ্যে দেখা যায়, আখড়ার নারীরা প্রচন্ড কামুকি, সিরাজ সাই কিংবা লালন তাদের ততোধিক কামার্ত শিষ্যদেরকে ঠান্ডা করার জন্য এই কামুকি নারীদেরকে স্রেফ অবজেক্ট বা উপকরণ হিসেবে ব্যাবহার করছেন। এছাড়া তৃতীয় দৃশ্যে “সময় গেলে সাধন হবে না” এই সাধনতত্ত্বের গানটির ব্যাবহার ও সম্ভাব্য ব্যাখ্যাটিও গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয় দৃশ্যটিতে কলমিকে কামুকি হিসেবে হাজির করা হলেও দেখানো হয় প্রথম দৃশ্যের কামে বিবশ লালন আরেকটু পরিণত বয়সে এসে কামকে দমন করছেন। আর এই দেখানোর আযোজনে কলমির মুখে “জ্বালা মিটানো”, “শান্ত করো” ইত্যাদি শব্দ কিংবা মুখ ও হাত নীচে নামিয়ে লালনের যৌনাঙ্গ স্পর্শ করার ইঙ্গিত প্রদান, খিল খিল হাসি ইত্যাদির ব্যাবহার ও দর্শকের কাছে তার সম্ভাব্য মেসেজ বা বার্তাটি লক্ষণীয়।

বাউল সাধনায় জ্ঞানাচার, যোগাচার ও বামাচার- এই তিন ধরনেরই মিশ্রন আছে। এর মধ্যে বামাচারী সাধনা সকাম সাধনা। নারী সংসর্গ ও সঙ্গম এরুপ সাধনার অংশ। লালন ও তার শিষ্য সম্প্রদায়ের সাধনার মধ্যেও নিশ্চিত ভাবেই নারী সংসর্গ ও সঙ্গম এর বিষয়টি যুক্ত। কিন্তু সেটা সাধনারই একটা অংশ, কোন ভাবেই কামোন্মত্ত নারী-পুরুষকে ঠান্ডা করার জন্য পশুর মতো হুট হাট জোড় বেধে দেয়া নয়, কিংবা নারীকে সেই কাম নিবৃত্ত করার অবজেক্ট হিসেবে ব্যাবহার নয়। লালন সাই এ ক্ষেত্রে ভাবের মিলের ব্যাপারে জোর দিয়ে বলেছিলেন:

“আগে ভাব জেনে প্রেম করো
যাতে ঘুচবে মনের যাতনা।।
ভাব দিলে বিদেশীর ভাবে
ভাবে ভাব কভু না মিশিবে
শেষে পথের মাথায় গোল বাধাবে
কারো সাথে কেউ যাবে না।।“
আর প্রেম ও কামের সম্পকের্রে ব্যাপারে বলেছেন:

“সহজ প্রেমে ডুব নারে মন কেনে।
আগে ডুবলে পাবা সোনার মানুষ
আছে রে যোগ-ধ্যানে।।
এই কামের ঘরে কপাট মারো
ভাবের একতালা গড়ো
এঁটে দাও প্রেম-ছোড়ানী মেরে।।“

কিংবা

“বলবো কি সেই প্রেমের বাণী
কামে থেকে হয় নিষ্কামী
সে যে শুদ্ধ সহজ রস
করিয়ে বিশ্বাস
দোঁহার মন দোঁহার ভাবে।।“

ছবিটিতে নারী-পুরুষের সম্পর্ককে এই “ভাব জেনে প্রেম করা”, “কামী থেকে নিষ্কামী হয়ে উঠা” কিংবা “কামের ঘরে কপাট মারা”র সাধনার অংশ হিসেবে দেখি না, দেখি কামোন্মত্ত নারী-পুরুষের কাম নিবৃত্ত করার উপায় হিসেবে, লালন কিংবা সিরাজ সাইয়ের ভূমিকা যেখানে গুরুর নয়, দালালের।


দুই.

ছবির ন্যারেটিভ কন্সট্রাকশান বা আখ্যান নির্মাণের জন্য লালনকে জোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের বজরায় বসিয়ে গল্প বলানো হয়েছে। লালন খাজনা মওকুফের জন্য ঠাকুর বাড়ির জামিদারের কাছে এসে তার জীবনের গল্প বলছেন, ফাঁকে ফাঁকে গান গাইছেন, ঠাকুর জমিদার লালনের ছবি আকছেন, লালন সম্পর্কে নানান প্রশ্ন করছেন, তার বিষ্ময় প্রকাশ করছেন এবং এক পর্যায়ে মুগ্ধ হয়ে জমিদারের জমিতে বানানো আখড়ার খাজনা মৌকুফ করে দিচ্ছেন এরকম একটি কাঠামোর মধ্যদিয়ে পরিচালক ”মনের মানুষ” ছবির গল্পটি বলেন। ছোট বড় ফ্ল্যাশ ব্যাকের মধ্যে দিয়ে গল্প এগিয়ে চলে। আমরা দেখি হিন্দু পরিবারে বেড়ে উঠা তরুণ লালু বাউল গান গাওয়ার চেষ্টা করছে, সিরাজ সাইয়ের সাথে তার কথোপকথন, দেখি কবিরাজ/তালুকদারের ঘোড়ার সহিস হিসেবে তীর্থ যাত্রায় গিয়ে বসন্ত রোগাক্রান্ত হয়, তাকে কলাগাছের ভেলায় ভাসিয়ে দেয়া হয়, ছেউরিয়ায় তাকে নদী থেকে উদ্ধার করে এক মুসলমান তাতী বউ তার জীবন বাচায়, সিরাজ সাইয়ের সাথে আবার দেখা হয়, সিরাজ সাইয়ের শিষ্যত্ব গ্রহণ করে লালন, জাতপাত অস্বীকার করে এবং এক পর্যায়ে নিজেই ছেউরিয়ায় নদীর অপর পাড়ে জ্গংলের মধ্যে আস্তানা গেড়ে গড়ে তুলে তার আখড়া ”আনন্দবাজার”।

এই কথিত আনন্দবাজারে লালন ও তার শীষ্যদের কাজ হলো কেবল গান গাওয়া। নদীর পাড়ে, গাছ তলায়, খড়ের ছাউনির নীচে ক্যাম্পফায়ারের আদলে বেশ এক্সোটিক আয়োজনে চকচকে নতুন কাপড় পড়ে কেবল গান গান তারা। গায়িকার নাচ আর মুখ ও শরীরের বিশেষ ভংগীতে ভীষণ মজে যাওযা পরিচালক নানান অ্যাঙ্গেলে, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ড্রামাটাইজড করে সে দৃশ্য উপহার দেন দর্শকদের।


ছবি৪: ড্রামাটাইজড এবং গ্লামারাইজড নাচা-গানা

আনন্দবাজারের লালন স¤প্রদায়ের যৌথ জীবনের শুধু যৌনতার অংশটুকু ছাড়া আরো কোন বিষয়ে কোন ডিটেল বা বিস্তারিত বর্ণনার কোন ঝোঁক আমরা পরিচালকের মধ্যে দেখি না। জাতপাত অস্বীকার করে এক পাতে খাওযার দৃশ্য আমরা দেখি, কিন্তু সে খাওয়া খাদ্যের উৎস কি সে বিষয়ে ডিটেল তো দূরের কথা কোন ইঙ্গিত পর্যন্ত ছবিতে নেই। লালন কি সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কেবলই গানবাজনা করতেন আর মাঝে মাঝে মোল্লা পুরুতদের সাথে বাহাস করতেন? তারা কি সেখানে কৃষিকাজ সহ কোন ধরণের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের মধ্যে যুক্ত ছিলেন নাকি গ্রামে গ্রামে ভিক্ষা করতেন? সমাজ থেকে খেদিয়ে দেয়া লোকজন নিয়ে ছেউরিয়ায় যে আখড়া গড়ে উঠার আখ্যান দেখানো হয় ছবিতে তার সাথে বৃহত্তর সমাজের সম্পর্ক কি? নদীয়া থেকে রংপুর পর্যন্ত যে বিশাল জনগোষ্ঠীর মাঝে লালনের জনপ্রিয়তা ও শক্তিশালি ভিত্তি তৈরী হয়েছিল তার উৎসই বা কি? এ কি কেবলি কাঙাল হরিণাথের মুখ দিয়ে বলানো ”গান শুনে” ভক্ত বনে যাওয়া নাকি তাতি-জোলা স¤প্রদায়ের জীবনের সংগ্রামের সাথে এর কোন যোগ ছিল? ভদ্রলোক পরিচালক গৌতম ঘোষ লালন ও তার স¤প্রদায়ের নারী-পুরুষের যৌনতা বিষয়ে যতটুকু আগ্রহ দিখিয়েছেন তার এক শতাংশ আগ্রহও দেখান নি তার সামাজিক ও যৌথ জীবনের অন্যান্য অনুষঙ্গে। আবার যতটুকু এনেছেন, সেটাকে এনেছেন ছাড়া ছাড়া ভাবে, খন্ডিত, খর্বিত, সরলীকৃত ও বিকৃত রুপে।

তিন.
গোটা ছবিতে দেখা যায় লালন স¤প্রদায়ের প্রধান শত্রু হলো মোল্লা আর পুরুত মশাইরা আর প্রধান পৃষ্ঠ পোষক হলো জামিদার। অথচ মোল্লা-পুরুতদের পাশাপাশি বাংলার মানুষের ওরাল ন্যারেটিভ বা কথ্য ইতিহাসের মধ্যে জামিদার তন্ত্রের সাথে লালন সম্প্রদায়ের রীতিমত লাঠালাঠির ঘটনার উল্ল্যেখ পাওয়া যায়। অথচ ছবিতে দেখা যায় ঠাকুর বাড়ির জমিদার দয়া পরবশত খাজনা মৌকুফ করে দিচ্ছে, পাবনার জমিদাদের লাঠিয়াল বাহিনী মোল্লা-পুরুতদের আক্রমণ থেকে লালন ও তার শীষ্যদের রক্ষা করছে! মোল্লা-পুরুতদের সাথে সংঘর্ষের দৃশ্য গুলোও ভীষণ খাপছাড়া। যেমন: পাবনার জমিদারের আমন্ত্রণে লালন মোল্লা পুরুতদের সাথে বাহাস করতে যান। সেখানে ভীষণ কাচা ও দুর্বল সংলাপের বাহাসের মধ্যে দিয়ে লালন মোল্লা-পুরুতদের পরাস্ত করলেও দেখা যায় উপস্থিত দর্শক-জনতা কোন এক অজানা কারণে লালনের দলের উপর ইট-পাটকেল ও লাঠিশোঠা নিয়ে আক্রমণ চালায় আর সে আক্রমণ থেকে তাদেরকে শেষ পর্যন্ত রক্ষা করে জামিদারের লাঠিয়াল বাহিনী!

ছবিতে তরুণ লালনকে দেখা যায় লালন হয়ে উঠার আগেই ”আর আমারে মারিস নে মা’র মতো গান গাইতে। তরুণ লালনের মধ্যে জাত-পাত বিরোধী মনোভাব গড়ে উঠার পেছনে হাজির করা হয় স্রেফ তার নিজের হিন্দু পরিবার কর্তৃক মুসলমানের হাতে খাওয়ার অপরাধে প্রত্যাখ্যাত হবার কার্য-কারণ। পরিবার কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর নিজ গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় গান শোনা যায়:”এ দেশেতে এই সুখ হল/আবার কোথা যাই না জানি”। লালনের আত্মতত্ত্ব মূলক এই গানটির এই ব্যাবহার উপরে উল্ল্যেখিত ”সময় গেলে সাধন হবে না” গানের ব্যাবহারের ধরণের সাথে এক সূত্রে গাথা। জলবসন্তে মরণ প্রায় লালনকে উদ্ধার করেছিলেন মতিজান। কিন্তু আমরা ছবিতে তার নাম দেখি রাবেয়া। বাস্তবে লালন ছেউড়িয়ায় তাতিদের মধ্যেই আখড়া স্থাপন করলেও ছবিতে দেখা যায় তিনি নদীর অপর পাড়ে জঙ্গলের মধ্যে নাচ-গানে ভরপুর আনন্দবাজার স্থাপন করেছেন। লালনের প্রধান সাধন সঙ্গী বিশাখার কোন উল্ল্যেখই নাই ছবিতে তার বদলে জুড়ে বসেছে কলমি। এছাড়া তার অন্যান্য প্রধান শিষ্যদের সাথে লালনের সম্পর্কের ভিত্তি কিংবা ধরণ-ধারণের কোন ছায়াও ছবিটি তে নেই। কালুয়া নামের যে চরিত্রটি লালনকে দোস্ত বলে সম্বোধন করে এবং বিভিন্ন ভাবে পাগলামি করে দর্শকদের বিনোদন দিয়েছে তার ঐতিহাসিক সত্যতা আমাদের জানা নাই। এরকম আরো অসংখ্য খণ্ডায়ণ, খর্বায়ন, বিকৃতি কিংবা সরলিকরণের ছাপ ছবিটিতে রয়েছে যেগুলো উল্ল্যেখ করে আলোচনা দীর্ঘায়িত করার কোন মানে হয়না।

প্রশ্ন উঠতে পারে, ঐতিহাসিক চলচ্চিত্র কি ইতিহাস যে ইতিহাসের প্রতিটি ঘটনা চরিত্রকে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে নিক্তিতে মেপে উপস্থাপন করতে হবে? আমরা তা দাবী করছিও না, নিশ্চিত ভাবেই ঐতিহাসিক ঘটনা বা চরিত্র বা জীবন দর্শন রূপায়নের প্রয়োজনে নতুন ঘটনা বা চরিত্র আমাদানীর স্বাধীনতা চলিচ্চত্রকারের রয়েছে কিন্তু সেই স্বাধীনতারও একটা সীমা রয়েছে। ইতিহাসের অজানা অচেনা অধ্যায়কে তুলে ধরার ক্ষেত্রে চলচ্চিত্রকারের যে স্বাধীনতা সেটা কিন্তু তার সাথে সম্পর্কিত কোন ঐতিহাসিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত, জানা এমনকি বর্তমান সময়েও চলমান কোন জীবন দর্শন সম্পর্কে প্রতিষ্ঠিত ধারণাকে বিকৃত, খন্ডিত বা সরলীকৃত করে হাজির করাকে অনুমোদন করে না। ছক্ষির পরিচালক গৌতম ঘোষ কিংবা বাংলাদেশের প্রযোজনা সংস্থা ইমপ্রেস টেলিফিল্ম ও আর্শিবাদ চলচ্চিত্র এবং ভারতীয় প্রযোজনা সংস্থা রোজ বেলি ফিল্মস কিংবা বাংলাদেশে ছবিটির কর্পোরেট নিবেদক বাংলালিংক এলিট শ্রেণীর কোন মহানায়ক বা জাতীয় বীরকে নিয়ে এ ধরণের স্বেচ্ছাচার করার স্পর্ধা দেখাতো না, লালন নিম্নবর্গের নায়ক কিংবা জাতহীন বলেই, তাকে নিয়ে যা ইচ্ছা তাই করা যায় কিংবা যা ইচ্ছা করানোও যায়! আর লালনকে নিয়ে এই যা ইচ্ছা তাই করা ও করানো এবং সেটাকে লালনের জীবন দর্শন বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টাকে সাংস্কৃতিক জমিনের উপর চলমান কর্পোরেট, বহুজাতিক ও বিজাতীয় আগ্রাসন ও দখলদ্বারিত্বের নমুনা হিসেবেই দেখতে হবে এবং মোকাবিলা করতে হবে।
৫৫টি মন্তব্য ৪০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×