somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৪০

১১ ই মে, ২০১২ সকাল ১১:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ধৃতরাষ্ট্রাদির উৎপত্তিঃ

দেবব্রত ভীষ্ম সত্যবতীকে আরো বলেন -– জননী, আপনার বিচারে যে জন শ্রেষ্ঠ তাকে ডেকে আনুন। মন্ত্রী, পুরোহিতদের নিয়ে বিচার করুন। কারণ ভারতবংশের ভাগ্য এতে জড়িত।


সত্যবতী বলেন –পুত্র ভীষ্ম ধর্মাচারী, তোমার বাক্য বেদ তুল্য।
তিনি ধিরে ধিরে তার পিতৃগৃহের পূর্ব কাহিনী সকল বলেন।
কিভাবে মহাতেজা পরাশরমুনির সাহায্যে তিনি দুর্গন্ধা থেকে সুগন্ধি হলেন। যমুনায় মুনি তপোবলে কুজ্ঝটীকা সৃষ্টি করে দ্বীপ নির্মাণ করেন এবং সেখানে ভয়ে তিনি তার বশীভূতা হন। তাদের এক পুত্রের জন্ম হয়। দ্বীপে জন্ম তাই তার নাম দ্বৈপায়ন। তিনিই বেদের চার ভাগ করেন। কৃষ্ণ অঙ্গের জন্য তাকে কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন বেদব্যাস বলা হয়।
জন্মমাত্র পুত্র তপোবনে যান এবং জননীকে বলে যান তাকে আহ্বান করলেই তিনি উপস্থিত হবেন। কন্যাকালে সত্যবতী ব্যাসকে পেয়েছিলেন। এখন ভীষ্ম যদি সম্মত হন তা হলে তিনি পুত্র ব্যাসকেই আহ্বান করবেন।

ভীষ্ম নিশ্চিন্ত হয়ে মাকে বলেন –আমরা দুজনে তাকে অনুরোধ করবো। কারণ কূলরক্ষার চেয়ে শ্রেষ্ঠ কর্ম আর নেই।

ভীষ্মের সম্মতিতে সত্যবতী ব্যাসকে স্মরণ করলেন। তিনি তখন নানা শাস্ত্রধর্ম দেবস্থানে কথন করছিলেন।
মায়ের ডাকে তিনি উৎকন্ঠীত হলেন। সেই মুহূর্তে মাতার সম্মুখে উপস্থিত হলেন।

ভীষ্ম নানা উপাচারে তাঁর পূজা করলেন।

সত্যবতী পুত্রকে আলিঙ্গন করে রোদন করতে লাগলেন। তার স্তনদুগ্ধ ক্ষরিত হল।

মায়ের রোদন দেখে ব্যাস বিস্মিত হলেন। কমন্ডুল থেকে জল মুখে দিলেন এবং মায়ের ক্রন্দনের কারণ জিজ্ঞাসা কর লেন।
মাকে তিনি আজ্ঞা করতে বললেন এবং কথা দিলেন তিনি সাধ্যমত তা পালনের চেষ্টা করবেন।

সত্যবতী তখন তার দুঃখের কাহিনী বললেন। শিশুপুত্রদের রেখে স্বামী স্বর্গে গেলেন। গন্ধর্ব তার জৈষ্ঠপুত্রকে হত্যা করল। ছোটটিকে ভীষ্ম পালন করছিলেন। কাশীরাজের দু’কন্যার সাথে তার বিবাহও দেওয়া হল। কিন্তু বংশবিস্তার না করেই সে নবীন বয়সে মারা গেল। এখন কুরুকূল অস্তমিত হতে চলেছে।

একমাত্র তার প্রথম সন্তান ব্যাসই তা রক্ষা করতে পারেন।
পিতামাতার থেকেই সন্তানের উৎপত্তি। ব্যাসও যেমন তার পুত্র ভীষ্মও তার সন্তান। এখন দুইপুত্র মিলে কূলরক্ষার উপায় ঠিক করুন। কারণ তার কারণেই ভীষ্ম সত্য অঙ্গিকারে বদ্ধ। তাই কেবল ব্যাসের উপরেই সব নির্ভর করছে।
ব্যাস সকল কথা শুনে বলেন মায়ের আজ্ঞার পালন তিনি করবেন।

সত্যবতী বলেন তার ভ্রাতৃজায়ারা রূপে চপলা, তাদেরই ব্যাস আপন ঔরস দান করুন।

ব্যাস বলেন ধর্মে এর প্রতিকার আছে। মায়ের বাক্য তিনি পালন করবেন এতে কূলও রক্ষা পাবে।

তিনি অনুরোধ করেন পুত্রবধূরা যেন একবছর ধরে ব্রত পালন করেন এবং দান, যজ্ঞ, হোম করে পবিত্র হন। তবেই তিনি তাদের স্পর্ষ করতে পারবেন। এবং সন্তানও হবে পরাক্রমবীর।

কিন্তু সত্যবতী বলেন পুত্র বিলম্ব সম্ভব নয়। নষ্ট, দুষ্ট, চোরের উপদ্রপে অরাজকতা শুরু হয়েছে।

মায়ের কথায় ব্যাস চিন্তিত হয়ে বলেন তার ভয়ঙ্কর মূর্তি কন্যারা সহ্য করতে পারবে! যদি তাকে বধূরা গ্রহণ করতে পারেন তবে সুপুত্র উৎপন্ন হবে।

সব শুনে সত্যবতী অম্বিকার কাছে গেলেন এবং মধুর বচনে তাকে বোঝালেন কূল রক্ষার্থে সে ভাসুরকে গ্রহণ করুক। সত্যবতী স্নেহ করে নানাবিধ কুসুমে শয্যা নির্মান করে দিলেন।


অর্ধরাত্রে ব্যাস গৃহে প্রবেশ করলেন। কৃষ্ণবর্ণ, অঙ্গ সুপিঙ্গল, মাথায় জটাভার, ভয়ঙ্কর মূর্তি, যেন ভৈরব!
তাকে দেখে রাণী ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিলেন। দেখে ব্যাস বিস্মিত হলেন।
পরদিন প্রভাতে সত্যবতী পুত্রের কাছে এলেন। ব্যাস স্নান করে উপস্থিত হলেন।

সত্যবতীকে ব্যাস জানালেন তিনি মায়ের আদেশ পালন করেছেন। মহাবলবন্ত পুত্র জন্মগ্রহণ করবে। কিন্তু কেবল জননীর দোষে সে অন্ধ হবে। পুত্র শতপুত্রের জনক হবে এই আশির্বাদও দিলেন।

কিন্তু সত্যবতী দুঃখীত হলেন কারণ কুরুকূলে অন্ধ রাজা সুশোভন নয়। আর এক পুত্রের জন্ম দিতে অনুরোধ করলেন।
ব্যাস কথা দিয়ে গেলেন।
দশমাস পর ধৃতরাষ্ট্রের জন্ম হল এবং মুনির কথা মত সে জন্মান্ধ হল।

পরে যখন অম্বালিকা ঋতুস্নান করলেন তখন সত্যবতী পুনরায় ব্যাসকে আহ্বান জানালেন।
পূর্ব ভয়ে অম্বালিকা চোখ বন্ধ করলেন না কিন্তু শরীর পান্ডুবর্ণ হল।
পরে ব্যাস সত্যবতীকে জানালেন তাকে দেখে বধূ পান্ডুবর্ণ হলেন তাই পুত্র হবে পান্ডুবর্ণ।

এত বলে ব্যাস চলে যাচ্ছেন তখন সত্যবতী আবার পুত্রকে অনুরোধ করলেন আরেক গন্ধর্ব সমান পুত্রের জন্য।
ব্যাস পুনরায় সম্মত হয়ে নিজস্থানে ফিরে গেলেন।
বছর ঘুরতেই অপূর্ব গঠনরূপের পুত্র জন্মাল কিন্তু তার শরীর পান্ডুর।


পুনরায় মায়ের স্মরণে ব্যাস উপস্থিত হলেন। এবার ভয়ে অম্বালিকা আর ব্যাসের কাছে গেলেন না। এক পরমা সুন্দরী সেবিকাকে রাণি সাজিয়ে পাঠালেন। নবীন যৌবনা শূদ্র যুবতি শ্রদ্ধা ভক্তি ভরে মুনিকে প্রণাম করলেন। সন্তুষ্ট হয়ে মুনি বললেন তার গর্ভে ধর্মের মত পুত্র জন্মাবেন। নরের মধ্যে তিনি পরম পন্ডিত হবেন। বর দিয়ে ব্যাস ফিরে গেলেন আশ্রমে।

মুনির বরে শূদ্রানীর গর্ভে ধর্ম নিজে এসে জন্মগ্রহণ করলেন।
.........................................
উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে
..........................................
আগের পর্ব:

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৩৯
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মে, ২০১২ সকাল ১১:৩২
৩০টি মন্তব্য ২৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×