somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৩৯

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সকাল ১১:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
ক্ষত্রিয় বংশের উৎপত্তিঃ


ভীষ্ম চিন্তিত সত্যবতীকে আরো বলেন ব্রাহ্মণের মাধ্যমে ক্ষত্রিয় বংশের উৎপত্তির আরো কাহিনী আছে।

বিখ্যাত ঋষি ছিলেন উতথ্য। তার কনিষ্ঠ হলেন দেবগুরু বৃহস্পতি। মমতা ছিলেন উতথ্যের স্ত্রী।



যুবতী মমতাকে কামে পীড়িত বৃহস্পতি রমণে আহ্বান জানান। মমতা বলেন তার গর্ভে বৃহস্পতিরই ভ্রাতার সন্তান আছে, তার পক্ষে বীর বৃহস্পতির সন্তান ধারণ সম্ভব নয়।



তবু বৃহস্পতি তাকে কামনা করলেন। মমতা তাকে বোঝালেন গর্ভের সন্তান পরম পন্ডিত। গর্ভেই সে ষড়ঙ্গ বেদ অধ্যয়ন করেছে। তার পক্ষে একই সঙ্গে দুই বীর সন্তান ধারণ সম্ভব নয়।



কিন্তু কামে অন্ধ বৃহস্পতি নিষেধ না শুনে শৃঙ্গার করলেন। উতথ্য-নন্দন গর্ভে ছিলেন তিনি বৃহস্পতিকে ডেকে বললেন তিনি অনুচিত কর্ম করেছেন তাই তার বীর্য্য এস্থানে থাকবে না। কামে পীড়িত বৃহস্পতি গর্ভস্থ সন্তানের বাক্য অগ্রাহ্য করে রমণে উদ্যত হলেন। তখন উতথ্যকুমার যুগল চরণে রেতদ্বার রুদ্ধ করলেন। বৃহস্পতির বীর্য ভূমিতে পতিত হল, গর্ভের স্থান পেল না। এতে বৃহস্পতি ক্রুদ্ধ হয়ে শাপ দিলেন উতথ্য-নন্দন জন্মান্ধ হবেন।


এই উতথ্য-নন্দন দীর্ঘতমা সৌরভি বংশে অধ্যয়ন করেন। গোধর্ম পাঠ করে গরুর আচার করেন যাকে পায় তাকে ধরে শৃঙ্গার করে। তার কর্ম দেখে ঋষিরা তাকে ত্যাগ করেন, কেউ তাকে সন্মান করে না, সকলে অবহেলা করে। স্ত্রী প্রদ্বেষীও পূর্বের মত তাকে সমাদর করে না। দীর্ঘতমা স্ত্রীকে অনাদরের কারণ জিজ্ঞাসা করলে স্ত্রী বলেন স্বামীর কর্তব্য স্ত্রীর ভরণ-পোষণ করা। জন্মান্ধ ব্রাহ্মণ তাকে সুখ দিতে পারেন নি। এখন তিনি ব্রাহ্মণের সন্তানদের আর পালন করতে পারছেন না। ব্রাহ্মণের উচিত নিজের সন্তানদের পালন করার মত ক্ষমতা অর্জন করা। তিনি যেদিকে দুচোখ যায় চলে যাবেন।


দীর্ঘতমা স্ত্রীর এত কথা শুনে রেগে গিয়ে বললেন –বিপুল অর্থ দিচ্ছি তা গ্রহণ কর এবং পুরুষের মত বাক্য বলা বন্ধ কর।


তিনি আরো শাপ দিলেন, অর্থ লিপ্সার জন্য তার ক্ষত্রিয়কুলে জন্ম হবে।
স্ত্রী বলেন –অর্থ অনর্থের মূল। তিনি অর্থ চান না এবং ব্রাহ্মণ ও তার পুত্রদের তিনি আর সেবা করতে পারবেন না।

এতো শুনে দীর্ঘতমা বলেন -আজ থেকে নারীজাতি যতদিন জীবিত থাকবে তারা পতির অধিন হবে। পতিবাক্যের অবহেলা করবেনা, জন্মে ও মরণে পতিকে অনুসরণ করবে। পতি ভিন্ন অন্য পুরুষের কথা ভাবলে তার নরক গমন হবে। পতি ছাড়া নারীর গতি নেই। সংসারে পতিহীনা নারী সকল সুখ থেকে বঞ্চিত হবে। এসব নিয়ম যে লঙ্ঘন করবে তার অপযশে ভুবন পূর্ণ হবে।


এতকথা শুনে দীর্ঘতমার স্ত্রী ক্রুদ্ধ হলেন এবং পুত্রদের বললেন এই পাতকীকে গঙ্গায় ভাসিয়ে দিতে। পুত্ররা মায়ের বাক্যে পিতাকে বেঁধে গঙ্গায় ভাসিয়ে দিল।


ভেলায় ভেসে ব্রাহ্মণ অনেক দূর ভেসে গেল। দৈবক্রমে মহাবীর বলিরাজ তাকে দেখতে পেলেন এবং উদ্ধার করলেন। ব্রাহ্মণের কাছে সকল কথা শুনে বলিরাজা তাকে গ্রহণ করলেন এবং তপোবলে বলির বংশবিস্তার করতে বললেন। দৈত্যরাজের একথায় ব্রাহ্মণ রাজি হলেন।

রাজা বলি রাণী সুদেষ্ণাকে ডেকে বললেন –এই ব্রাহ্মণের সেবা কর, এর থেকেই বংশ বৃদ্ধি হবে।


কিন্তু সুদেষ্ণা অন্ধ দীর্ঘতমাকে অবহেলা করলেন। তিনি শূদ্র দাসীকে সেবায় নিযুক্ত করলেন। দাসীর গর্ভে দীর্ঘতমার সন্তান হল। তারা চার বেদ ও ষড়শাস্ত্র অধ্যয়ন করল। এসময় রাজা বলি এসে দীর্ঘতমাকে জিজ্ঞেস করলেন এরা তার পুত্র কিনা।

দীর্ঘতমা বলেন -এরা আমার সন্তান, দাসী গর্ভজাত। তোমার স্ত্রী আমায় অবহেলা করে কাছে আসে নি।



রাজা বলি অন্তপুরে গিয়ে রাণী সুদেষ্ণাকে তার সকল কথা বললেন। তখন সুদেষ্ণা দীর্ঘতমার সেবায় রত হলেন। এভাবে রাজা বলির বংশবৃদ্ধি হল। তাদের তিন পুত্র-অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ। এরা পরমবীর হলেন। পরে এরা যথাক্রমে অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গের রাজা হলেন। এভাবে ব্রাহ্মণের সাহায্যে ক্ষত্রিয়ের উৎপত্তি হল।
.........................................
উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে
..........................................
আগের পর্ব:

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৩৮
Click This Link
২০টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছায়ানটের ‘বটমূল’ নামকরণ নিয়ে মৌলবাদীদের ব্যঙ্গোক্তি

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



পহেলা বৈশাখ পালনের বিরোধীতাকারী কূপমণ্ডুক মৌলবাদীগোষ্ঠী তাদের ফেইসবুক পেইজগুলোতে এই ফটোকার্ডটি পোস্ট করে ব্যঙ্গোক্তি, হাসাহাসি করছে। কেন করছে? এতদিনে তারা উদঘাটন করতে পেরেছে রমনার যে বৃক্ষতলায় ছায়ানটের বর্ষবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কটের সাথে ধর্মের সম্পর্কে নাই, আছে সম্পর্ক ব্যবসার।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৫০


ভারতীয় প্রোডাক্ট বয়কটটা আসলে মুখ্য না, তারা চায় সব প্রোডাক্ট বয়কট করে শুধু তাদের নতুন প্রোডাক্ট দিয়ে বাজার দখলে নিতে। তাই তারা দেশীয় প্রতিষ্ঠিত ড্রিংককেও বয়কট করছে। কোকাকোলা, সেভেন আপ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×