somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৩৮

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১১ বিকাল ৩:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিচিত্রবীর্যের কাহিনী:

সত্যবতীকে পেয়ে রাজা শান্তনু আনন্দিত হলেন এবং তার সঙ্গে অনুক্ষণ ক্রীড়া করেন। দশমাস পর রাণী পরম সুন্দর পদ্মের মত কোমল পুত্রের জন্ম দিলেন। নাম দেওয়া হল চিত্রাঙ্গদ। কয় বছর পর সত্যবতীর দ্বিতীয় পুত্র হল-বিচিত্রবীর্য। এই দুই পুত্রই হলেন পরম সুন্দর, যেন কাম অবতার।


এর কিছুকাল পর শান্তনু দেহত্যাগ করলেন। ভীষ্ম এবং সত্যবতী শোকাকুল হলেন। রাজার মৃত্যুতে প্রজারাও দুঃখী হল। পিতার বিহনে ভীষ্মই দুই কুমারকে পালন করতে শুরু করলেন। চিত্রাঙ্গদকে রাজা করে তিনি রাজ্য শাসন শুরু করলেন।


যুবক বীর চিত্রাঙ্গদ অতিশয় বলশালী ছিলেন। মানুষ, দেবতা, অসুর, গন্ধর্ব সকলকেই নিকৃষ্ট মনে করতেন। একদিন গন্ধর্বরাজ চিত্রাঙ্গদ তাকে বললেন –তোমার ও আমার নাম একই। আমার সঙ্গে যুদ্ধ কর নতুবা অন্য নাম নাও। কুরুক্ষেত্রে সরস্বতী নদীতীরে দুজনের ঘোর যুদ্ধ হল। শেষে গন্ধর্ব নিজ মায়াবলে কুরুনন্দন চিত্রাঙ্গদকে হত্যা করলেন।


ভীষ্ম অপ্রাপ্তযৌবন বিচিত্রবীর্যকে রাজপদে বসালেন। তার যৌবনকাল উপস্থিত হলে বিবাহ দেওয়া স্থির হল। সে সময় কাশীরাজ তার তিন পরমা সুন্দরী কন্যার এক সাথে স্বয়ংবর করছেন শুনে ভীষ্ম মাতা সত্যবতীর আজ্ঞা নিয়ে একাই বারাণসীতে এলেন। স্বয়ম্বরে দেখলেন অনেক রাজা উপস্থিত।


তিনি সকলের উদ্দেশ্যে বললেন –রাজগণ, বহুপ্রকার বিবাহ প্রচলিত আছে। স্বয়ংবরসভায় বিপক্ষদের পরাভূত করে কন্যা হরণ করাও এক পদ্ধতি। আমি ছোট ভাই শান্তনুপুত্র বিচিত্রবীর্যের জন্য এই তিন কন্যা নিয়ে যাচ্ছি। যার শক্তি আছে তিনি যুদ্ধ করুন।

সকল রাজা অস্ত্র নিয়ে তাকে আক্রমণ করলেন। গঙ্গা পুত্র ভীষ্ম, যিনি বশিষ্টের শিষ্য, সকলকে পরাস্ত করলেন। কেউ নিজের প্রাণ হারায় তো কেউ অঙ্গ। সকলে পরাস্ত হয়ে ভীষ্মের জয়গান শুরু করল।
ভীষ্ম তিনকন্যাকে কনিষ্ঠা ভগিনী বা দুহিতার মত যত্নসহকারে হস্তিনাপুরে নিয়ে চললেন। তাকে যেতে দেখে শাল্বরাজ বাধা দিলেন। শাল্বরাজও বীর ছিলেন। দুজনের প্রচন্ড যুদ্ধ হল। ভীষ্ম শাল্বরাজের সারথীর মুন্ডচ্ছেদ করলেন, চার অশ্বকেও হত্যা করলেন, ধনুক কেটে দিলেন। কাতর শাল্বরাজকে কেবল প্রাণদান করে নিজ রাজ্যে ফিরে গেলেন।


হস্তিনানগর রাজা বিচিত্রবীর্যের বিবাহে সেজে উঠল। বিচিত্রবীর্যের বিবাহকাল উপস্থিত হলে তিন কন্যাকে বরের নিকট আনা হল। বড়কন্যা অম্বা তখন জানালেন শাল্বরাজকে তিনি মনে মনে বরণ করেছেন, শাল্বরাজও প্রস্তুত ছিলেন। তার পিতাও এ বিবাহে সম্মত হয়েছিলেন। সব শুনে ভীষ্ম মন্ত্রণা করে অম্বাকে শাল্বরাজের কাছে পাঠিয়ে দিলেন।
অন্য দুই কন্যা অম্বিকা ও অম্বালিকার সঙ্গে বিচিত্রবীর্যের বিবাহ দিলেন।


ওদিকে শাল্বরাজ অম্বাকে আর গ্রহণ করলেন না। কাঁদতে কাঁদতে অম্বা ভীষ্মের কাছে ফিরে এলেন এবং জানালেন ভীষ্ম হরণ করায় শল্ব আর তাকে গ্রহণ করলেন না। ভীষ্মও তাকে গ্রহণে অসম্মত হলেন। তখন ক্রোধে অগ্নিশর্মা অম্বা প্রতিহিংসা নেওয়ার জন্য জগদগ্নিপুত্র পরশুরামের শরণ নিলেন। কাতরা দেখে পরশুরাম অম্বাকে অভয় দিলেন এবং শিষ্য ভীষ্মকে ডেকে তাকে বিবাহ করার জন্য আজ্ঞা দিলেন। গুরু পরশুরামকে ভীষ্ম বিনয়ের সঙ্গে তার ব্রহ্মচর্য পালনের অঙ্গিকারের কথা বলে বিবাহে অপরাগ জানালেন। শুনে ক্রুদ্ধ জামদগ্ন ভীষ্মকে যুদ্ধে আহ্বান জানালেন।


যুদ্ধে কেউই কাউকে পরাস্থ করতে পারলেন না। দেবতাদের মধ্যস্থতায় পরশুরাম ভীষ্মের বিনয়ে তুষ্ট হয়ে তাকে বুকে টেনে নিলেন এবং তার মত শিষ্য পেয়ে গর্ববোধ করলেন। অম্বার কাছে ক্ষমা চেয়ে তাকে নিজগৃহে ফিরে যেতে অনুরোধ জানালেন।

দুঃখিতা অম্বা ভীষ্মবধের উদ্দেশ্যে দুঃসাধ্য ব্রত গ্রহণ করে কঠোর তপস্যা করতে লাগলেন।

অবশেষে মহাদেব তার উপর তুষ্ট হয়ে আশির্বাদ করলেন –তুমি অন্যদেহে পুরুষত্ব পেয়ে ভীষ্মকে বধ করবে, বর্তমান দেহের সব ঘটনাও তোমার মনে থাকবে। মহাদেব অন্তর্হিত হলে অম্বা নবজন্মকামনায় চিতারোহণ করে দেহত্যাগ করলেন।


এদিকে বিচিত্রবীর্য দুই সুন্দরী পত্নীকে পেয়ে কামাসক্ত হয়ে পড়লেন। অম্বিকা ও অম্বালিকা পরমা সুন্দরী, তাদের রূপের কাছে স্বর্গের বিদ্যাধরীরাও হার মানেন। বিচিত্রবীর্যের সঙ্গে তাদের বিবাহ হল যেন শচী তিলোত্তমা দেবেন্দ্রকে পেলেন। নবীন বয়সে বিচিত্রবীর্য দুই কন্যাকে নিয়ে শৃঙ্গার রসে মত্ত হলেন। অল্পকালে তার যক্ষারোগ ধরল। ভীষ্ম বহু চেষ্টা করলেন কিন্তু আদিত্য যেমন অস্তাচলে যান বিচিত্রবীর্যও সেই রূপে অপুত্রক অবস্থায় যমালয়ে গেলেন। স্ত্রীরা কান্নাকাটি করলেন, সত্যবতীও শোকাতুরা হলেন।

বংশরক্ষার কথা ভেবে সত্যবতী চিন্তিত হলেন এবং ভীষ্মের কাছে গিয়ে তাকে এই বিখ্যাত বংশের অস্তিত্ব রক্ষার অনুরোধ করলেন।
শান্তনুপুত্র ভীষ্ম বলেন –মাতা, ত্রিলোকের সমস্তই ত্যাগ করতে পারি কিন্তু যে সত্য প্রতিজ্ঞা করেছি তা ভঙ্গ করতে পারি না।
সত্যবতী তার কাছে কেঁদে বলেন তিনি সবই জানেন কিন্তু ভীষ্ম ছাড়া তিনি আর কার কাছেই বা যেতে পারেন! ভীষ্মই এখন পথ দেখান।
ভীষ্ম বলেন –কুরুবংশ রক্ষার পথ আছে পূর্বে যখন পিতার কারণে পরশুরাম পৃথিবী থেকে ক্ষত্রিয়দের নির্মূল করেন তখন ক্ষত্রিয় নারীরা ব্রাহ্মণদের ঘরে আশ্রয় নেন। এভাবে পুনরায় ব্রাহ্মণদের সাহায্যে ক্ষত্রিয়বংশ রক্ষা পায়।

.........................................
উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে
..........................................
আগের পর্ব:

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৩৭
Click This Link
২৫টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন দুটি গল্প

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

গল্প ১।
এখন আর দুপুরে দামী হোটেলে খাই না, দাম এবং খাদ্যমানের জন্য। মোটামুটি এক/দেড়শ টাকা প্লাস বয়দের কিছু টিপস (এটা আমার জন্য ফিক্সড হয়েছে ১০টাকা, ঈদ চাদে বেশি হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×