somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৬৬

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
ধৃষ্টদ্যুম্ন ও দ্রৌপদীর উৎপত্তি কথনঃ


কিছুকাল পর পান্ডবদের আশ্রয়দাতা ব্রাহ্মণের গৃহে আরেক ব্রাহ্মণ অতিথিরূপে উপস্থিত হলেন। তিনি বিভিন্ন দেশের গল্প বলেন, কুন্তীসহ পঞ্চপান্ডব তা শ্রবণ করেন।

দ্বিজ(ব্রাহ্মণ) বলেন – বহু দেশ ভ্রমণ করলাম, বহু নদী, বহু তীর্থক্ষেত্র ঘুরলাম যা গণনা করে শেষ করা যায় না।
বিবিধ উপাখ্যান ও নানা দেশের বিবরণ প্রসঙ্গে তিনি জানালেন পাঞ্চাল রাজকন্যা দ্রৌপদীর স্বয়ংবরের আশ্চর্য মহোৎসব আয়োজনের কাহিনী। দ্রুপদরাজার কন্যা কৃষ্ণা। রূপে গুণে পৃথিবীতে তার তুল্য কেউ নেই। এই কন্যাটি অযোনিসম্ভবা, যজ্ঞ থেকে এঁনার জন্ম। যাজ্ঞসেনী(যজ্ঞ সেন অর্থাৎ দ্রুপদ্ররাজের কন্যা- দ্রৌপদী) নামে তিনি জগৎ বিখ্যাত। দ্রুপদের পুত্রটিও রূপে গুণে বিখ্যাত। দ্রোণকে বিনাশ করতেই তার জন্ম- নাম ধৃষ্টদ্যুম্ন।


বিভিন্ন দেশের গল্প কুন্তীসহ পঞ্চপান্ডব শ্রবণ করেন

একথা শুনে পান্ডবরা সবিস্তারে সমস্ত ঘটনা জানতে চাইলেন।
ব্রাহ্মণ বলেন – পূর্বে দ্রোণ ও দ্রুপদ বন্ধু ছিলেন। কিন্তু পরে তাদের মধ্যে কলহ হয়। অভিমানে দ্রোণ হস্তিনানগরে গিয়ে কৌরব কুমারদের অস্ত্রশিক্ষা দান করেন। শিক্ষা শেষে শিষ্যদের কাছে দক্ষিণা চান – দ্রুপদরাজাকে বেঁধে তার সামনে হাজির করতে হবে। কুন্তীপুত্র অর্জুন গুরুর আজ্ঞা পেয়ে দ্রুপদরাজাকে বেঁধে আনলেন। অর্ধেক রাজ্য ফিরিয়ে দিয়ে দ্রোণ পুনরায় দ্রুপদের বন্ধু হলেন ও তাকে মুক্তি দিলেন।


দ্রুপদরাজা

অভিমানে দ্রুপদ অন্ন–জল ত্যাগ করলেন। প্রতিহিংসায় তিনি জর্জরিত হতে থাকেন। কিভাবে দ্রোণকে মারা যায় সেই চিন্তা ছাড়া মনে আর কোন ভাবনা ঘোরে না। সর্বদা রাজা সেই ভাবনা নিয়ে গঙ্গাতীরে ভ্রমণ করেন। সেখানে বেদে বিখ্যাত যাজ ও উপযাজ নামে দুই ভাই-ব্রাহ্মণকুমার বাস করতেন। উপযাজকে দ্রুপদ একদিন দেখতে পেলেন। তার পূজা ও পদসেবা করে যোড়হাতে পাঞ্চালরাজ বলেন – দশকোটি ধেনু(গরু) ও অসংখ্য সোনা দেব, যা চাইবেন তাই দেব যদি আমার মনবাঞ্ছা পূরণ করেন। আমার ইচ্ছে দয়া করে শুনুন। ভরদ্বাজ পুত্র দ্রোণ –পৃথিবীতে তার তুল্য অস্ত্রধারী কেউ নেই, কেউ তার সাথে যুদ্ধ করে পারে না। সে যেন দ্বিতীয় পরশুরাম। এমন বুদ্ধি করুন যাতে তাকে যুদ্ধে জয় করতে পারি। ক্ষত্রিয়ের অসাধ্য শক্তি তার। তপো মন্ত্র বলে এর প্রতিকার করুন। এমন যজ্ঞ করুন যাতে আমার পুত্র সন্তান হয় ও তার হাতেই দ্রোণের নিধন হয়।

উপযাজ চিন্তা করে বলেন– আমার মতে ব্রাহ্মণ বধ উচিত কর্ম নয়।
তার কথা শুনে রাজা তাকে পুত্রের জন্য অনুরোধ করতে থাকেন।


উপযাজ বড় ভাই যাজের কাছে দ্রুপদকে পাঠালেন

দ্রুপদের বিনয় দেখে ব্রাহ্মণ প্রসন্ন হয়ে বলেন- আমার বড় ভাই যাজ পরম তপস্বী। বেদে পারদর্শি, অরণ্য নিবাসী। তাঁর কাছে তুমি প্রার্থনা কর। তিনি তোমার সব দুঃখ দুর করতে পারেন।
উপযাজের কথায় রাজা যাজের কাছে গেলেন। প্রণাম করে সব কথা জানালেন। সদয় হয়ে যাজ যজ্ঞ করতে সম্মত হলেন। যজ্ঞ শুরু হলে রাণীকে নিয়ে রাজা ভক্তি ভরে সকল ব্রতের আচার পালন করলেন।
যজ্ঞ পূর্ণ হলে এক কুমারের জন্ম হল। অগ্নিবর্ণ বীর, হাতে তার ধনুঃশর, অঙ্গে তার কবচ ও মাথায় টোপর। হাতে উদ্ধত খড়্গ ধরে, দেখে ভয়ঙ্কর লাগে। পুত্রকে দেখে পাঞ্চালরাজ খুবই আনন্দিত হলেন।
তবে সেই যজ্ঞে আরেকটি কন্যারও জন্ম হল। জন্মমাত্র দশদিকে তার দ্যুতি ছড়িয়ে পরল। তিনি সুদর্শনা, শ্যামবর্ণা, পদ্মপলাশাক্ষী, পীনপয়োধরা, তাঁর নীলোৎপলতুল্য সৌরভ এক ক্রোশ দুরেও অনুভূত হয়। তিনি সুরাসুর, যক্ষ, রক্ষ, গন্ধর্বের বাঞ্ছিত। এভাবে পাঞ্চালরাজের পুত্র ও কন্যা যজ্ঞের মাধ্যমে জন্মগ্রহণ করল। সে সময় আকাশবাণী হল।
এ কন্যার জন্ম হল ভার নিবারণের জন্য। এর মাধ্যমেই ক্ষত্রিয়দের নিধন হবে। কুরুবংশ ধ্বংস হবে-এই কন্যার মাধ্যমে।
পুত্রটির জন্ম হল দ্রোণকে বধ করার জন্য।
সকলে আকাশবাণী শুনে জয় জয় ধ্বনি দিতে লাগল। যত বীরযোদ্ধা সকলে হুঙ্কার দিলেন। আনন্দে দ্রুপদরাজা বিবাদ ত্যাগ করলেন। পুত্র কন্যার নামকরণ করা হল। ধৃষ্ট(প্রগল্‌ভ) ও দ্যুম্ন(দ্যুতি, যশ, বীর্য, ধন)-সমন্বিত এই কারণে কুমারের নাম ধৃষ্টদ্যুম্ন হল।


ধৃষ্টদ্যুম্ন

শ্যামবর্ণের জন্য কন্যার কৃষ্ণা নাম হল। পিতার নামানুসারে দ্রৌপদী ও যজ্ঞ থেকে যাজ্ঞসেনী।
বর্তমানে সেই কন্যার স্বয়ম্বর উপস্থিত। দুরদুরান্ত থেকে রাজারা আসতে শুরু করেছেন।


কৃষ্ণা দ্রৌপদী

ব্রাহ্মণের মুখে এত কথা শুনে পঞ্চপান্ডবের সেখানে যাওয়ার ইচ্ছে হল। সবার মনের কথা বুঝে কুন্তী পুত্রদের ডেকে বললেন –বহুদিন এখানে বাস করেছি। এক জায়গায় বেশিদিন থাকা ঠিক নয়। পূর্বের মত এখন আর ভিক্ষাও মেলে না। পাঞ্চালরাজা খুব দয়ালু শুনছি। যদি তোমাদের মন চায় তো চল সেই রাজ্যে যাই। শুনে সব ভাইরা সম্মত হলেন।
পুত্রদের নিয়ে কুন্তীদেবী যখন আলোচনা করছেন তখন ব্যাসদেব সেখানে উপস্থিত হলেন। কুন্তীদেবী ও পুত্ররা তাকে ভূমিষ্ট হয়ে প্রণাম জানান। মুনি সকলকে আশির্বাদ করলেন। তারা পরস্পর কুশল বাদানুবাদ করতে লাগলেন।
.....................................
উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে
......................................
আগের পর্ব:

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৬৫
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৫৩
১৩টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

=হিংসা যে পুষো মনে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮


হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।

কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৫


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৫




অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×