somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৬৫

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
বক্‌-বধঃ


কিছু পরে চারভাই ঘরে ফিরলেন। ভীমকে না দেখতে পেয়ে যুধিষ্ঠির একান্তে ডেকে কুন্তীকে ভীম কোথায় যানতে চাইলেন। সব শুনে যুধিষ্ঠির চিন্তিত হলেন।

কুন্তী বলেন - ব্রাহ্মণকে রক্ষা করতে, এই নগরকে রক্ষা করতেই আমি ভীমকে বক রাক্ষস বধে পাঠালাম।

যুধিষ্ঠির বিরস বদনে বলেন – মা হয়ে তুমি পুত্রকে রাক্ষসের কাছে পাঠালে! আমরা অজ্ঞাতবাসে আছি। ভীম আমাদের মধ্যে বলবান। তার শক্তির সাহায্যে রাজ্য অধিকারের আশা রাখি। কৌরবরা তাকে ভয়ও পায়। তার সাহায্যেই জতুগৃহে আমরা বাঁচলাম। সেই হিড়িম্ববনে আমাদের কাঁধে করে নিয়ে গেল ও হিড়িম্ব বধ করল। সেই বীর পুত্রকেই তুমি রাক্ষস ভোজনে পাঠালে! আমরা আর কি ভাবে বাঁচব। গর্ভধারিণী হয়ে তুমিই এমন কাজ করলে! বলে যুধিষ্ঠির হাহাকার করতে লাগলেন।

কুন্তী বলেন - যুধিষ্ঠির ভেব না। আমিও ভীমের প্রতাপ জানি। তার শরীরে অযুত হস্তীর বল। তাকে কেউ পরাজিত করতে পারবে না। তার জন্মের সময়ই তার পরাক্রম দেখি। প্রসবের পর তাকে তুলতে পারিনি। একটু তুলেই ফেলে দিয়েছিলাম ধুলায়। তার আস্ফালনে পর্বতের শৃঙ্গ চূর্ণ হয়। বারণাবতে দেখলাম স্বচক্ষে সে হাতে করে তোমাদের চারজনকেই সহজে তুলেছিল। আমাদের সবাইকে কাঁধে তুলে হিড়িম্ববনে গেল, হিড়িম্ব বধ করল। তার শক্তিতে আমার বিশ্বাস আছে। সেই এই রাক্ষস বধ করবে। ভীত মানুষদের যিনি ত্রাণ করেন তার সমান পূণ্যবান কেউ নেই। বিশেষ করে ব্রাহ্মণের জন্য প্রাণদান ও জন্মভূমির জন্য যুদ্ধ পৌরুষের প্রতীক। এমন পূণ্যকাজের জন্য তুমি দুঃখ করছ কেন! মায়ের কথা শোন।

মায়ের সকল কথা শুনে দয়ালু যুধিষ্ঠির ধন্য ধন্য করলেন। পরের দুঃখে নিজের পুত্রকে দিয়ে ত্রাণ করায় তিনি মাকে ধন্যবাদ জানালেন। মায়ের পূণ্যেই তারা সকল বিপদ থেকে রক্ষা পাবেন।
তিনি মাকে বলেন - তবে মা ব্রাহ্মণকে বোলো এ সকল কথা যেন অন্য কাউকে না জানায়।


রাত্রে ব্রাহ্মণরূপী ভীম রথে চড়ে বনে গেল বক রাক্ষসের কাছে। ভীম চিৎকার করে বককে ডেকে তারই খাবার খেতে শুরু করল। তার নাম ধরে ডাকায় বক রাক্ষস রেগে থর থর করে কাঁপতে কাঁপতে ক্রোধে সেখানে উপস্থিত হল। তার চলনের ভারে ধরা যেন ভিতরে ঢুকে যেতে থাকল।
ভীমকে তার অন্ন খেতে দেখে রেগে বক দুই চোখ লাল করে চিৎকার করে বলে – হে দুষ্টমতি মনুষ্য! তুই এমন অনীতির কাজ কেন করলি! তোর দোষে সকুটুম্ব ব্রাহ্মণকে আমি আজই ভক্ষণ করব।
এই বলে রাক্ষস রাগে আস্ফালন করতে থাকে। যদিও ভীম রাক্ষসের প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে পিছন ফিরে তার খাদ্য খেতে থাকেন গোগ্রাসে। দেখে ক্রোধে নিশাচর গর্জন করতে করতে দুহাত তুলে ভীমকে ধরতে যায়। সে দুই হাত দিয়ে ভীমের পিঠে আঘাত করতে থাকে। ভীম তাও গ্রাহ্য করেন না। রাক্ষস পিঠে মারতে থাকে ভীমও হেলায় তা সহ্য করে নির্ভয়ে পায়সান্ন খেতে থাকেন। তা দেখে রাক্ষস আরো রেগে বৃক্ষ উপড়ে ভীমকে ছুঁড়ে মারে। তবু ভীম হাসতে হাসতে অন্ন খেতে খেতে বাঁ হাতে বৃক্ষ কেড়ে নেন। পুনরায় রাক্ষস একটি মহাবৃক্ষ উপড়ে গর্জন করে ভীমের উপর ছোঁড়ে।
ভোজন শেষ করে ভীম আচমন সেরে বৃক্ষ উপড়ে যুদ্ধ শুরু করেন। বৃক্ষে বৃক্ষে সাংঘাতিক যুদ্ধ শুরু হয়। এভাবে বনের সব বৃক্ষ নষ্ট হল। এরপর দুজনে দুজনের উপর শিলাবৃষ্টি শুরু করল। দুজনে পরষ্পরকে জড়িয়ে ধরে বাহুযুদ্ধ শুরু করে। পরস্পর পরস্পরের মুন্ড ধরে, বাহুতে বাহু দিয়ে, হাত জড়িয়ে মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে যুদ্ধ করে।


এত যুদ্ধ করে বক রাক্ষস শ্রান্ত হয়ে পরে। কুন্তীপুত্র ভীম সহজেই বক রাক্ষসকে ধরে ফেললেন। বাম হাতে দুই জানু ও ডান হাতে মাথা রাক্ষসের চেপে ধরেন। রাক্ষসের বুকে হাটু দিয়ে ভীমবীর জোরে টান মারলেন। রাক্ষস দু’টুকরো হয়ে ভেঙ্গে পরল। বক রাক্ষস আর্তচিৎকার করে মরল। বক রাক্ষসের যত অনুচর ছিল তারা ভয়ে সে স্থান ত্যাগ করে পালালো। নগরের কাছে ভীম বক রাক্ষসকে ফেলে মা ও ভাইদের কাছে গিয়ে সব জানালেন।
আনন্দিত মা কুন্তী যুধিষ্ঠিরকে ডেকে ভীমকে আলিঙ্গন করে তার প্রশংসা করতে লাগলেন।

পরদিন ভোরে নগরবাসী বক রাক্ষসের পর্বত প্রমাণ দেহ নগর দ্বারপ্রান্তে পরে থাকতে দেখে চমৎকৃত হল। কেউ জিজ্ঞেস করে এমন কাজ কে করল, কেউ বলে যেই করুক সবাই নিষ্কন্টক হলাম। এই পরম দুষ্ট হিংস্র বক রাক্ষস নিজের পাপেই মরেছে। পরে তারা বিচার করে দেখল আগেরদিন বক রাক্ষসকে খাদ্য পাঠানোর দায়িত্ব কার ছিল। সেই বলতে পারবে বক রাক্ষস কি ভাবে মরল। দেখা গেল ব্রাহ্মণের দিন ছিল। সকলে তাকে দ্রুত ডেকে পাঠাল। কি ঘটেছিল সকলে জানতে উদগ্রিব।

ব্রাহ্মণ বলে – আমার ঘরে কাল পাঁচ মহাপুরুষ আসেন। আমাদের শোকার্ত দেখে তাদের মধ্যে একজন মন্ত্রসিদ্ধের দয়া হল। তিনি আমার পরিবর্তে রাক্ষসের কাছে অন্ন নিয়ে গেলেন। তিনিই বক রাক্ষসকে হত্যা করেছেন এবং রাজ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

সব শুনে নগরবাসী খুশি হল। সকলে ব্রাহ্মণকে পূজা করল। আনন্দ মনে ব্রাহ্মণ ঘরে ফিরে এলো। এরপর থেকে পান্ডবদের ব্রাহ্মণ দেবতুল্য সন্মান করতে লাগল।
মহাভারত অমৃতের ধারা, কাশীরাম কহে শুনে ইহলোকের দুঃখ পার হবে সর্ব জনা।
.....................................
উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে
......................................
আগের পর্ব:

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৬৪
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:০৬
৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পরিণতি - ৩য় পর্ব (একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস)

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:২৮



( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।)

তিন


আচানক ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।

চোখ খুলে প্রথমে বুঝতে পারলাম না কোথায় আছি । আবছা আলোয় মশারির বাহিরে চারপাশটা অপরিচিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইফতার পার্টি মানে খাবারের বিপুল অপচয়

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৩



গতকাল সরকারি ছুটির দিন ছিলো।
সারাদিন রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাকাই ছিলো। ভাবলাম, আজ আরাম করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করা যাবে। হায় কপাল! মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখি গজব ভীড়! এত ভিড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×