somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৯৫

১৩ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ১১:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[পূর্বকথা - পঞ্চ পান্ডবের সঙ্গে দ্রৌপদীর বিবাহ হল ... ইন্দ্রপ্রস্থে কৃষ্ণের সহায়তায় পঞ্চপাণ্ডবরা অবস্থান করতে লাগলেন... নারদমুনি এসে সুন্দ-উপসুন্দের কাহিনী বলে পঞ্চপান্ডবদের মধ্যে দ্রৌপদীকে নিয়ে একটি নিয়ম স্থাপন করলেন...এভাবে দ্রৌপদীকে নিয়ে পঞ্চপান্ডব সুখে বাস করতে লাগলো...]



অর্জ্জুনের নিয়মভঙ্গ ও বনে গমনঃ

কিছুদিন পর রাজ্যে এক ব্রাহ্মণের গরু চোরেরা চুরি করে পালাল। ব্রাহ্মণ অর্জুনের কাছে এসে কেঁদে পরল।

বিলাপ করে ব্রাহ্মণ বলে –তোমার রাজ্যে থেকে আমার সর্বনাশ হল। মনে তার যত গালি এলো দিতে লাগল।
সঙ্কোচে অর্জুন ব্রাহ্মণকে বলেন –আপনি কেন কাঁদছেন। আমাকে কি করতে আজ্ঞা করেন।
দ্বিজ ব্রাহ্মণ বলে –এখনি তুমি অস্ত্র নিয়ে আমার সাথে এস। চোররা বেশি দুর এখনও যায়নি।

ব্রাহ্মণের কথায় অর্জুন ব্যস্ত হয়ে আয়ুধ মন্দিরে(অস্ত্রশস্ত্রের কক্ষ) চললেন।
দৈবযোগে অস্ত্রগৃহে সে সময় যুধিষ্ঠির ও কৃষ্ণা অবস্থান করছিলেন। পার্থ তা জানতে পেরে গৃহের বাইরে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে পরলেন।

দ্বিজ বলে –শীঘ্র অস্ত্র নিয়ে চল। সে উচ্চস্বরে কাঁদতে থাকে।
ব্রাহ্মণের অশ্রুজল দেখে অর্জুন ভয় পেলেন। কি করবেন ভেবে পেলেন না। অস্ত্রগৃহে এসময় প্রবেশ করলে বার বছরের জন্য অরণ্যে যেতে হবে, সে বড় দুঃখের। এদিকে ব্রাহ্মণের চক্ষুজল যত ভূমিতে পরছে তত তার উপর মহাপাপ বর্ষিত হচ্ছে। এখন ব্রাহ্মণের দুঃখ দুর করাই তার বড় ধর্ম। বিনা ক্লেশে কখনও ধর্ম উপার্জন হয় না-এত সব ভেবে অর্জুন অস্ত্রগৃহে প্রবেশ করে ধনুক নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে এলেন। ব্রাহ্মণের সাথে গিয়ে চোরদের মেরে তার অপহৃত গরু এনে দিলেন।

ফাল্গুনি(অর্জুন) ফিরে এসে যুধিষ্ঠিরকে বলেন –আমি নিয়ম লঙ্ঘন করেছি, বনবাসে যাওয়ার আজ্ঞা দিন, রাজন!

যুধিষ্ঠির বলেন –কেন এমন বলছ, ধনঞ্জয়! নারদঋষি বলেছিলেন ছোট ভায়ের সাথে কৃষ্ণা থাকলে বড়ভাই সে স্থানে গেলে তবে তাকে বনে যেতে হবে। তুমি আমার চেয়ে ছোট, তোমার কোন দোষ হয়নি।

পার্থ বলেন –স্নেহের বশে আপনি একথা বলছেন। ধর্মাচরণে ছল করা চলে না। সত্যকে অস্বিকার করতে মন চায় না। আজ্ঞা করুন মহারাজ আমি বনে যাই।

এই বলে অর্জুন মা, ভাই, বন্ধুদের সবার কাছে বিদায় নিয়ে বনবাসে যাত্রা করলেন। সকলে অত্যন্ত দুঃখিত হল।
অর্জুনের সাথে ব্রাহ্মণ, পৌরাণিক কথক, গায়ক, চারণ কবিরা চললো। মহাবনে প্রবেশ করে অর্জুন আরো অনেক পুণ্যতীর্থে ভ্রমণ করলেন ও স্নানদান করতে লাগলেন।

এভাবে বহুদিন পর তিনি হরিদ্বারে উপস্থিত হয়ে আনন্দিত হলেন। গঙ্গায় স্নান করে তিনি অগ্নিহোত্র(অগ্নির পূজা) করে তর্পণের উদ্দেশ্যে গঙ্গায় প্রবেশ করেন।


অগ্নিহোত্র স্থানে অর্জুনকে তর্পণ করতে দেখে নাগকন্যা জলের মধ্যে অর্জুনকে ধরলেন। টেনে নিয়ে নাগকন্যা অর্জুনকে নিজের গৃহে নিয়ে চললেন।
অর্জুন দেখেন সে এক সুন্দর প্রাসাদ। সেখানেও অগ্নিহোত্র জ্বলছে দেখে কুন্তীপুত্র সেই অগ্নিরও পূজা করলেন।
নিশঙ্ক হয়ে অর্জুন কন্যাকে জিজ্ঞেস করেন –এটি কার গৃহ, তুমি কার কন্যা! কেন এই পুরীতে আমায় টেনে আনলে।

কন্যা বলেন –আমি ঐরাবত নাগরাজ কুলজাত কৌরব্য নাগের কন্যা। আমার নাম উলুপী। তোমাকে দেখে আমার কাম জাগ্রত হয়েছে, সে কারণে তোমাকে নিয়ে এলাম। তুমি আমায় ভজনা করে আমার মন তৃপ্ত কর।

অর্জুন বলেন –আমার সব কথা তুমি যান না, কন্যা। আমি ব্রহ্মচারী হয়ে বার বছর বনবাসে এসেছি। আমি তা লঙ্ঘন করতে চাই না।

উলুপী বলেন –আমি সব জানি। তোমার এই নিয়ম কেবল দ্রৌপদীর জন্য। আমার সঙ্গে মিলিত হলে তোমার দোষ হবে না। আমি তোমার কাছে আর্তি জানাচ্ছি, আমার ধর্ম রক্ষা কর। আর্তজনের মনের ইচ্ছে পূর্ণ করাই ধর্ম, এতে কোন পাপ নেই। আমি চিরদিন তোমার অনুগত থাকব। আমায় একবারমাত্র গর্ভদান করে, আমার প্রাণ রক্ষা করুন, স্বামী!

পার্থ উলুপীর করুণ আর্তি শুনে তার প্রার্থনা পূরণে সম্মত হলেন। একরাত্রি তিনি উলুপীর সাথে কাটিয়ে পরেরদিন পুনরায় গঙ্গা থেকে উঠে এলেন। ব্রাহ্মণরা বিস্মিত হয়ে কি হয়েছে জানতে চাইলে পার্থ সকল ঘটনা তাদের জানালেন। এরপর অর্জুন দ্বিজদের সাথে হিমালয় পর্বতে আরোহণ করলেন। বহু তীর্থে ঘুরে পুণ্যস্নান করতে লাগলেন। বশিষ্টের আশ্রমে অগস্ত্য নামে এক বট দেখলেন। পৃথিবীর দক্ষিণাবর্ত ঘুরে ঘুরে তা তিনি করের মত চিনলেন। পূর্ব দিকে সিন্ধুতীরে বীর ঘুরতে গেলেন। গয়া, গঙ্গা, প্রয়াগ, নৈমিষারণ্য(প্রাচীন তপোবন) প্রমুখ সব তীর্থ ঘোরা হল।

অঙ্গ-বঙ্গের মধ্যে সব তীর্থ স্নান করে কলিঙ্গ প্রদেশের দিকে যাত্রা করলেন। কিন্তু ব্রাহ্মণরা কলিঙ্গে প্রবেশ করলেন না, কারণ সেখানে প্রবেশ করলে ব্রাহ্মণরা ভ্রষ্ট হয়। অর্জুন একাই কলিঙ্গে প্রবেশ করেন। সেখানে একাই সব তীর্থ ঘোরেন।

সমুদ্রতীরে মহেন্দ্র পর্বতে মণিপুর নামে এক নগর ছিল। চিত্রভানু নামে এক রাজার সেটি রাজত্ব। চিত্রাঙ্গদা নামে তার এক কুমারী কন্যা ছিল। দেবতার বাঞ্ছিত সে কন্যা রূপে গুণে অনন্যা। নগরে ঘুরতে ঘুরতে পার্থ তাকে দেখলেন। কন্যাকে দেখে অর্জুন আকৃষ্ট হয়ে রাজার কাছে গেলেন। রাজার কাছে তিনি কন্যার পাণি প্রার্থনা করলেন।


চিত্রভানু রাজা বলেন –কে তুমি, কোথায় তোমার ঘর, কোন বংশেই বা তোমার জন্ম, কার পুত্র! তীর্থবাসী হয়ে রাজকন্যাকে কামনা করছ! কোন সাহসে তুমি এ কথা বল!

অর্জুন বলেন –আমি পান্ডুর পুত্র, কুন্তীর গর্ভজাত। আমার নাম ধনঞ্জয়।
এত শুনে রাজা দ্রুত উঠে এসে পার্থকে আলিঙ্গন করে বসতে আসন দেন।

রাজা বলেন –এতদুর কি কারণে এলেন।
পৃথার নন্দন পার্থ সবিস্তারে সব জানান।

রাজা বলেন –আমার সৌভাগ্য তুমি আমার রাজ্যে এলে। এবার আমি আমার কথা বলতে চাই। প্রভঞ্জন নামে এক দ্বিজ আমার পূর্বপুরুষ ছিলেন। সেই রাজা পুত্র কামনা করে শিবের তপস্যা করেন। প্রসন্ন হয়ে মহাদেব বর দিলেন, আমাদের বংশে প্রতি পুরুষের একটি করে কুমার হবে। কুলক্রমে এক ভিন্ন দুটি সন্তান হল না। যে পুত্র হত, সেই রাজা হতেন। ধূর্জটির(শিব) পূর্বের বর এভাবেই চলছিল। কিন্তু আমার পুত্র হয়নি, একটি কন্যা হল। তাই আমি তাকে পুত্রের মত লালন-পালন করেছি। আমার পর আর রাজা হওয়ার কেউ নেই দেখে আমি ঠিক করেছি এই কন্যা যাকে দান করব, সেই এ রাজ্যের ভার গ্রহণ করবে। কুরুবংশের শ্রেষ্ঠ তুমি, তোমাকে বলা উচিত নয় তবু এক সত্য করলে কন্যা তোমায় দিতে পারি। আমার কন্যার গর্ভে যে জ্যেষ্ঠপুত্র হবে সেই এ রাজ্যের রাজা হবে।

পার্থ রাজার কথায় সম্মত হলেন। চিত্রাঙ্গদার সাথে পার্থের শুভবিবাহ হল। এক বছর পার্থ সেখানে থেকে গেলেন।
...................................
উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে
......................................
আগের পর্ব:

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৯৪ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ১১:৪৪
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×