somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাঠশালার কবিতা : কবি চঞ্চল আশরাফ

২৩ শে অক্টোবর, ২০০৮ রাত ১১:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একথাটা অনেকেই বলে থাকেন, আশির দশক থেকে অন্তত বাংলাদেশে বাংলা কবিতার একটা বাঁক-বদল ঘটেছে। সত্তরের দশকের স্লোগানমুখী ও প্রগল্ভ আবেগ-নির্ভরতার জায়গায় কবিতা ক্রমশ সংহত ও সংকেতময় এবং বুদ্ধি-নির্ভর হয়ে উঠছে। আর এরই ধারাবাহিকতা চলে এসেছে প্রথম দশকের কবিতা-অব্দি। যদিও তিন দশকের কাব্য-প্রচেষ্টায় সাযুজ্যটাই একমাত্র কথা নয়। পাশাপাশি স্বাতন্ত্র্যের কিছু চিহ্নসূত্রও আবিষ্কার করা সম্ভব। এবং সেটি বুঝে নিয়েই আগামী দিনের কবিতার পথ নির্ণয় করা জরুরি।

এই চিন্তা থেকেই ‘সেলিম আল দীন পাঠশালা’র উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হচ্ছে তিন দশকের কবিতাপাঠ ও আলোচনার আসর। এ আসর সিরিজ আকারে চলতে থাকবে। ইতোমধ্যে আমরা আহ্বান জানিয়েছিলাম প্রথম দশকের বা শূন্যের দশকের ৫ জন কবিকে। গত ১৮ অক্টোবর কবিতাপাঠ করেছেন নব্বইয়ের দশকের ৫ জন কবি। কবিরা ছিলেন : চঞ্চল আশরাফ, জাফর আহমদ রাশেদ, মুজিব মেহদী, সাখাওয়াত টিপু ও সৈকত হাবিব। আলোচক ছিলেন ড. আজফার হোসেন। ব্লগের বন্ধুদের সঙ্গে তাদের কবিতাগুলো শেয়ার করবার উদ্দেশ্যে, আজ, চঞ্চল আশরাফের স্ব-নির্বাচিত ও স্বকণ্ঠে পঠিত ৫টি কবিতা তুলে দিলাম। পরের কিস্তিতে আরেকজন কবির কবিতা তুলে দিতে পারবো বলে আশা রাখছি (যদি কবির সায় থাকে)।




চঞ্চল আশরাফ

জন্ম : ১২ জানুয়ারি, ১৯৬৯, দাগনভুঁইয়া, ফেনী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে সম্মানসহ স্নাতকোত্তর। ৪টি কবিতার বই বেরিয়েছে তার : চোখ নেই দৃশ্য নেই (১৯৯৩), অসমাপ্ত শিরদাঁড়া (১৯৯৬), ও-মুদ্রা রহস্যে মেশে (২০০২), গোপনতাকামী আগুনের প্রকাশ্য রেখাগুলো (২০০৮)। গল্পগ্রন্থ দুটি : শূন্যতার বিরুদ্ধে মানুষের জয়ধ্বনি (১৯৯৯), সেই স্বপ্ন, যেখানে মানুষের মৃত্যু ঘটে (২০০৮)। একটি উপন্যাস : কোনো এক গহ্বর থেকে (১৯৯৫)। এছাড়া সাহিত্য, ভাষাবিজ্ঞান, দর্শন ও নন্দনতত্ত্ব বিষয়ে লিখেছেন প্রবন্ধ। আড়াইশ'রও বেশি গ্রন্থের সমালোচনা করেছেন বিভিন্ন সাময়িকীতে।



স্ট্র্যাপ

তার ব্রা-র স্ট্র্যাপ থেকে সেই যে উড়ল
অজস্র রঙিন ঘুড়ি, আমার আকাশ
সেই দিন থেকে উদাসীন,
দোদুল্যমান। আর দ্যাখো, সে
হাসে---সমস্ত লাটাই যেন তার হাতে;
‘নামিব না, নামিব না’ বলে ঘুড়িদল
দোলে, ঘুমের ভেতর
আমাকে পেঁচিয়ে ফেলে গোপনতাকামী
আগুনের সুতোগুলি, যতই প্রকাশ্য
হতে চাই, চাপা পড়ি তার হাসির তলায়

অন্তর্বাস থেকে ছুটি নিয়ে
দ্যাখো, সে কেমন বেরিয়ে পড়েছে---
আর, স্বপ্নে হারিয়ে-ফেলা হাসিসহ
জড়িয়ে ধরেছে তাকে
বিরহলাঞ্ছিত প্রেমিকের দল



পাশ-ফেরার গান-২

উপরে ওঠার কথা কেন যে ভাবো নি তুমি পথটা কি ছিল খুব বাঁকা
পাশ ফিরে চেয়ে দেখো, একটি লোহিত স্রোত হুইসেল দিতে দিতে
মুছে গেল পুরনো রেখায়
আরো চেয়ে দেখো তুমি ঘাট থেকে ছুটি নিয়ে নীল পটভূমি ধরে
উঠে গেল একটি জাহাজ

চাকার ঘষায় পথ কেন যে হয় না ক্ষয়; আরো দানবীয় তার চলা
ঘুমের টানেল ধরে আমরাও এসে গেছি শোণিতের খুব উঁচু পাহাড়চূড়ায়
উপরে ওঠার কথা ভাবো নি বলেই আজ তুমিও তো ভূপাতিত
নিরীহ নদীর তীরে, একা



সুইসাইড-নোট

তোর শ্বাসচাপা চুমু আমি হেমন্তের বনশীর্ষে রেখে
আসি। ধূলির তরঙ্গ থেকে
যাচ্ছি শূন্যে ছুটি নিয়ে---
এমন তো নয়; কিন্তু কোথাও চাই না যেতে, গিয়ে
কী হবে? তার চেয়ে ভালো এই অনিদ্রার বন, আর
লুটিয়ে-পড়া পাতার শব্দ। যত নিঃশ্বাস আমার---
সব গুঁজে দিই এই নিম্নগামী ঢেউয়ে। যত দূর থেকে
আসুক বাতাস, ঝরে-পড়ার আগে ব্যথায় বেঁকে
গেলে তোর মুখ আমিও দেখেছি;
এখন যে-মাছি
ওড়ে ওই চেহারার চারপাশে, তার ডানার কম্পনে
জেগে ওঠে নশ্বরতা; আর অনন্তের বনে
ঘুরে-ঘুরে
সরে যাব এই উপড়ানো হৃৎপিণ্ড নিয়ে, বহু দূরে...



রেললাইন শুধু রেললাইন... (০৪)

নিদ্রা থেকে জাগরণে গিয়ে আমাদের রেলপথ পুনরায়
ঢুকে যায় ঘুমে
মাঝখানে রান্নাঘর, কারুকাজ-ভরা শয়নকুঠুরি আর
তরঙ্গিত আকাশের তল
রাতভর কাঁপে জল, স্থির ঘাটে কাঁপে চালকরহিত নৌকা
আর স্বপ্নের হাওয়াঢেউয়ে নিদ্রিত আমাদের চুল।...

সূর্যের প্রসঙ্গ নেই, তবু ভোর আর গোধূলির টুকরোগুলি
আমাদের পথের দু’পাশে উদাসীন পাথরের মতো
পড়ে থাকে;

নৈঃশব্দ্য থেকে গান, নৈঃশব্দ্যে পুনরায়
গন্তব্যের গাম্ভীর্যকে ছুঁতে চায় আমাদের অন্যতর স্নায়ু...

অসংখ্য স্লিপারে আমরা রেখার ভারসাম্য রচনা করেছি;
তবু পটভূমি জাগরণে চৌচির, নিদ্রায় তলহীন নীল
কখনো-বা অন্ধকার, আর
আমাদের রেলগাড়ি স্টেশনবিমুখ, রাতভর প্রতিধ্বনিকামী



রেললাইন শুধু রেললাইন... (০৭)

মেনেছি প্রহেলিকা দেখেছি রাতভর
মানুষ ডুবেছিল কুয়াশাময় শীতে
প্রদোষ কেটে গেলে প্রয়োজনীয় স্বর
হারিয়ে যেতে থাকে আবহসঙ্গীতে...

ট্রেনের বাঁশি বাজে ঘুমের তীর থেকে;
বালক কান পেতে শুনেছে সেই গান
নিদ্রা নেই তার ব্যাকুল দুই চোখে
কিসের ব্যাকুলতা জানে না দেহযান!

কেন এ-চাকাগুলো এসেছে পুনরায়,
কেন যে প্রাণীদের জীবন সাময়িক?
ঘড়ির কাঁটা বেয়ে ট্রেনটি চলে যায়
স্টেশন নড়ে ওঠে ও-ঢেউ স্নায়বিক...

ফ্রেমের ছবিগুলো অপসৃয়মাণ---
নরম স্নায়ু ছাড়া কে বোঝে এই গান




সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে অক্টোবর, ২০০৮ রাত ৯:২৪
১৯টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×