আলহামদুলিল্লাহ, আপনারা সকলে দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর আনন্দ উদ্দীপনার সাথে ঈদ উদযাপন করেছেন। আমরা আশা করছি আল্লাহ রব্বুল য়ালামীন আমাদের সালাত, সিয়াম, যিকির, তিলাওয়াতসহ প্রতিটি নেক য়ামল কবুল করেছেন। আমরা আশা করতে পারি এ নেক য়ামলের ধারা রমজান পরবর্তী সময়েও আমরা ধরে রাখতে পারব ইনশাআল্লাহ। আর গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার যে প্রেরণা আমরা রমজান থেকে লাভ করেছি তাও ইনশাআল্লাহ রমজান পরবর্তী সময়ে আমরা ধরে রাখব।
আল্লাহ রব্বুল য়ালামীন জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার যে সুযোগ রমজানের মাধ্যমে আপনাকে করে দিয়েছেন, কেউ কি থাকতে পারে যে সে নিজ ইচ্ছায় পুনরায় আগুনে ঝাঁপ দেয়? রমজানে সুস্বাস্থ্য ধরে রেখে দীর্ঘ এক মাস আপনি দিনের বেলা পানাহার থেকে বিরত থেকে ও নানাবিধ সংযম অবলম্বনের মাধ্যমে আপনি প্রমাণ করে দিয়েছেন, "ইচ্ছে করলে আপনি পারেন।" আপনি পারেন আপনার অনেক ব্যস্ততা থাকা সত্ত্বেও পাঁচ ওয়াক্ত সালাত সময়মত আদায় করতে। এবং পুরুষেরা জামাতের সাথে আদায় করতে। আপনি দেখিয়ে দিয়েছেন রাত জেগে নফল ইবাদত করতে পারেন। সেহেরীর সময় উঠতে পারেন। এক খতম বা তার বেশি বা কিছু কম কুরআন তিলাওয়াত করে রমজানে আপনি প্রমাণ করেছেন অনেক কাজের ভিড়েও কুরআন তিলাওয়াতের সময়ও আপনি ঠিকই বের করতে পারেন। মসজিদে তা'লীমে অংশগ্রহণের মাধ্যমে মসজিদ আবাদের স্বাক্ষ্যর মাশাআল্লাহ আপনি রেখেছেন। মেয়েরা পর্দা করে পর্দার প্রতি তাদের আনুগত্য প্রকাশ করেছেন। মাশাআল্লাহ। এছাড়া আপনি নানাবিধ মনের রোগ যেমন ক্রোধ, লোভ, হিংসা, অহংকার, গীবত, পরশ্রীকাতরতা ইত্যদি মনের খোশপাঁচড়া, ক্যান্সার থেকে বেঁচে ছিলেন।
আলহামদুলিল্লাহ। ভাই আমিতো দেখছি জাহান্নামের আগুন থেকে বেঁচে আপনি জান্নাতের প্রায় কাছাকাছি চলে গেছেন।
এখন রমজান পরবর্তী সময়ে আপনি কি আবার পুরনো পথে হেঁটে জাহান্নামের দিকে পা বাড়াবেন? আগুনে ঝাঁপ দিবেন? আপনি কি নেক য়ামলগুলো ছেড়ে দিবেন? গুনাহের মধ্যে আবার লিপ্ত হয়ে পড়বেন?
আমরা বলবো, না। কখনো না। আসুন আমরা ঈমানের হেফাজত করি। আসুন আমরা য়ামলের হেফাজত করি।
আমরা কি করতে পারি?
(১) প্রতি সপ্তাহে সোমবার ও বৃহস্পতিবার এ দু'দিন রোযা রাখুন। এটা নবীজী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু য়ালাহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত। কারণ এ দু'দিন আসরের সময়ের পর য়ামলনামা আল্লাহর কাছে পেশ করা হয়। নবীজী বলতেন আমি ইচ্ছা করি আমার য়ামলনামা যখন আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয় তখন আমি যেন রোযা অবস্থায় থাকি।
অন্তত শাওয়ালের ছয় রোযা রাখার চেষ্টা করবেন সবাই। রমজানের সব কয়টি রোযা ও এরপর শাওয়ালের ছয় রোযা রাখলে পুরো বছর রোযার সওয়াব পাওয়ার কথা হাদীসে বর্ণিত আছে।
(২) প্রতি আরবী মাসে ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে নফল রোযা রাখুন।
(৩) পাঁচ ওয়াক্ত সালাত পুরুষেরা জামাতের সাথে ও মেয়েরা ঘরে বা পর্দার সাথে সুবিধাজনক স্থানে আদায় করুন। সালাতের ব্যাপারে 'জিরো টলারেন্স' দেখান।
(৪) প্রতিদিন কিছু সময় কুরআনে পাক থেকে কিছু অংশ তিলাওয়াত করুন।
(৫) মসজিদে কিছু সময় ও ঘরে কিছু সময় হাদীসের কিতাব থেকে তা'লীম করুন।
(৬) অশালীন ও অপ্রয়োজনীয় বিনোদন থেকে দূরে থাকুন।
(৭) অপ্রয়োজনীয় অভ্যাস যেমন দাড়ি কামানো, সিগারেট, পান-জর্দ্দা, আড্ডা, হৈ-হুল্লোড় থেকে বিরত থাকুন।
(৮) নিজের মধ্যে গীবত, পরশ্রীকাতরতা, রাগ, অহংকার ইত্যদি দোষ সনাক্ত করুন এবং তা থেকে বেঁচে থাকার জন্য আল্লাহ তায়ালার সাহায্য চান।
(৯) রমজান ও ঈদ কেন্দ্র করে আত্মীয়-স্বজনের সাথে যে সম্পর্ক পুনরায় গড়ে উঠেছিল রমজান পরবর্তী সময়ে ঐসব আত্মীয়-স্বজনকে আপনি কি 'মৃত' বানিয়ে রাখতে চান? যদি তা না চান তাহলে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখুন।
(১০) সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো, নিজের অর্থনৈতিক জীবনে 'সুদমুক্ত' থাকুন এবং সর্বপ্রকার অসাধুতা থেকে বিরত থাকুন। আল্লাহকে ভয় করুন।
(১১) সব সময় নিজের কৃতকর্মের জন্য আল্লাহ রব্বুল য়ালামীনের কাছে তওবা করুন। জড়সড় হয়ে আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা চান। একমাত্র কাফেররাই শুধু আল্লাহর ক্ষমা ও রহমত থেকে নিরাশ হয়। তাই ক্ষমা চাইতেই থাকুন। দেখেন কি হয়।
আপনি যদি প্রয়োজন মনে করেন তবে একজন হক্বানী য়ালেমকে নিজের 'শায়খ' হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন। যিনি আপনাকে জীবনে চলার ক্ষেত্রে দিক-নির্দেশনা বা পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করতে পারেন।
আল্লাহ রব্বুল য়ালামীন আপনাকে আমাকে দ্বীনের পথে চালিত করুন এ দু'আ করি। আল্লাহ কবুল করুন। আমীন।
বিঃদ্রঃ পোস্টটি দয়া করে সংরক্ষণ করুন এবং মাঝে মাঝে দেখুন
পড়ুনঃ
ঈদ মুবারক কাদের জন্য?
ইনশা'আল্লাহ আসিতেছেঃ
(১) ছোটদের ঈমান শিক্ষা
এতে আছে আল্লাহ তায়ালার পরিচয়, ঈমানের অন্যান্য বিষয় এবং মানবজাতি সৃষ্টির উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সম্পর্কে আলোচনা।
(২) বাচ্চাদের জন্য "বর্ণে বর্ণে জ্ঞানশিক্ষা।"
আপনার ছেলে, মেয়ে, ছোট ভাইবোন, ভাতিজার জন্য। এটাচড থাকুন।