সীতাকুণ্ডে আরো অর্ধ লাখ বৃক্ষ নিধন প্রক্রিয়া চুড়ান্ত
সীতাকুণ্ডের উপকুলিয় এলাকার ৩কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঘিরে ফেলেছে শিপইয়ার্ড মালিকরা। নতুন করে আরো ৯টি শিপইয়ার্ড নির্মানের জন্য সবুজ বেষ্টনী নামে পরিচিত অর্ধলাখ কেওড়া গাছকাটার প্রক্রিযা চুড়ান্ত করে রেখেছে। ইয়ার্ড মালিকরা ইতিমধ্যে উপজেলার কুমিরা ইউনিয়নের ঘাটঘর থেকে বাঁশবাড়ীয়া এলাকার সমুদ্র উপকুলের প্রায় তিন কিলোমিটার বেড়িবাঁধের দুই পার্শ্বের বনবিভাগের গাছসহ পছন্দমত জায়গা ঘিরে দখল করে সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে। ফলে ওই স্থানের বৃক্ষনিধনও এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। অনেকে বন্দোবস্তি পাবার জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাছে আবেদনও করেছে।
সরেজমিনে বাঁশবাড়িয়ার আকিলপুর থেকে বেড়িবাঁধের উপর দিয়ে কুমিরা ঘাটঘর এলাকা পর্যন্ত গিয়ে দেখা যায়, এম.এ তাহেরের মালিকানাধীন ডায়মন্ড মেরিন শিপ ব্রেকিং, মোঃ আল মামুন শরীফের এ.এম.এন ষ্টীল. আব্দুর রহমানের ইয়ার্ড, ফরচুন গ্র“পের ইয়ার্ড, মাষ্টার আবুল কাশেমের মালিকানাধীন মাদার ষ্টীল, মেসার্স এস.বি কর্পোরেশন, বাদশা মেম্বারের কর্ণফুলি এন্টার প্রাইজ, আকিব এন্টার প্রাইজ, শাহীন এন্টার প্রাইজসহ বিভিন্ন ইয়ার্ডের নামে সাইনবোর্ড টাঙানো রয়েছে। শুধু তাই নয়, ইতোমধ্যে কোন কোন ইয়ার্ড নির্মাণের জন্য ইট, বালি, রডসহ নির্মাণ সামগ্রী নিয়ে আসা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, শিপইয়ার্ড মালিকরা এসব জায়গা ইয়ার্ড নির্মাণের জন্য পছন্দ করে ঘিরে রাখলেও এসব জমি উপজেলা ভূমি প্রশাসন এখনো কোন ইয়ার্ড মালিককে বন্দোবস্তি বা লিজ দেয়নি।
বাঁশবাড়িয়া আকিলপুরের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, শুনেছি এসব জমি সরকার এখনো বন্দোবস্তি দেয়নি। বন্দোবস্তি না পেয়েও শিপইয়ার্ড মালিকরা যেভাবে সরকারী হাজার হাজার গাছ সহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ শিপইয়ার্ড স্থাপনের নামে দখল করেছে তাতে এসব জমি তাদেরকে বন্দোবস্তি দেওয়া হলে তা সরকারের জন্য কতটা আতœঘাতী হতে পারে তা সহজেই অনুমান করা যায়।
উপকুলীয় বন কর্মকর্তা জামিল মোঃ খান জানিয়েছেন বাঁশবাড়িয়া এলাকার এই উপকুলে অসংখ্য ম্যানগ্রোভ এবং ননম্যানগ্রোভ দুরকম গাছ রয়েছে। এখানেও শিপইয়ার্ড গড়ে উঠলে এই অঞ্চলের গাছগুলির ভাগ্যও সোনাইছড়ি কিংবা ভাটিয়ারীর কেওড়া ও বাইন গাছগুলির মতই হতে পারে বলে আশংকা করছেন তিনি।
আবার শিপইয়ার্ড মালিকরা ইয়ার্ড করার যাবতীয় প্রক্রিয়া চুড়ান্ত করে ফেললেও কুমিরা-বাঁশবাড়িয়া এলাকায় সমুদ্র সিকস্তি কোন ভূমি কোন শিপইয়ার্ড মালিককে বন্দোবস্তি দেওয়া হয়নি জানিয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ গাউছুল আজম বলেন, কুমিরা ঘাটঘর এলাকা থেকে উত্তরে ৯০ থেকে ১০০ একর খাস ভূমি নৌবাহিনী অধিগ্রহনের জন্য চেয়েছে। দেশের এই প্রতিরক্ষা বাহিনীকে অধিগ্রহন দেওয়ার পক্ষে ইতোমধ্যে ভূমি কার্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রাথমিক সম্মতিও জানানো হয়েছে। তাই এ অঞ্চলে শিপইয়ার্ড করার স্বপ্নে যারা এখনো সরকারী জায়গা বা গাছ-গাছরা ঘিরে রেখেছে তারা শিপইয়ার্ড নির্মাণের অনুমতি পাবার সম্ভাবনা খুবই কম।
কুমিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আ.ফ.ম মুফিজুর রহমান বলেন, উপকূলীয় এলাকায় শিপ ব্রেকিং গড়ার ফলে হাজার হাজার কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। বছরের হাজার হাজার কোটি টাকা সরকার রাজস্ব পেয়ে থাকে। তিনি শিপ ইয়ার্ড বন্ধে আন্তরজাতিক ষড়যন্ত্র বন্ধের জন্য সরকারে প্রতি আহবান জানান। তবে তিনি জন বসতীপূর্ণ এই উপকূলীয় এলাকায় একটি প্রতিরক্ষা বাহিনী কর্তৃক ভূমি দখল প্রক্রিয়া বন্ধের জন্য সকলকে সোচ্চার হাওয়ার আহবান জানান।
এদিকে লিজ না পাওয়া এস এল শিপ ইয়ার্ডের মালিক মোহাম্মদ লোকমান জানান, সরকার ব্যাক্তি মালিকানাধীন জায়গায় বেড়ীবাঁধ নির্মাণ করেছে। ব্যাক্তি মালিকানাধীন রেকর্ডভূক্ত জায়গায় ইয়ার্ড নির্মাণ বন্ধ রাখতে একটি সেন্ডিকেট কাজ করছে। তিনি স্থানীয় লোকেরা যাতে এই ব্যবসায় জড়িত হতে না পারে তার জন্য প্রভাবশালী মহল উঠেপড়ে লেগেছে বলে মন্তব্য করেন। তবে তিনি পরিবেশ সম্মত শিপ ইয়ার্ড নির্মাণে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন