রবি বলল আপনারা যদি ৫৮ টাকা করে রিচার্জ করেন, তাহলে সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা ঈদে পাবে নতুন জামা। আমরা রবির এড দেখে ইমোশনাল হয়ে গেলাম। একেবারে 'আবেগে কান্দালাইছি' টাইপের অবস্থা। আমরা ভাবলাম, আমাদের ৫৮ টাকার কারণে একটা শিশু যদি একটা নতুন জামা পায়, তাহলে ক্ষতি কি? রবির ক্যাম্পেইন সফল করতে দলে দলে আমরা রিচার্জ করতে শুরু করলাম।
মজার ব্যাপার, আমাদের অনেকেই কিন্তু জানতো না, তার ৫৮ টাকা তো নয়ই, ১০ জনের ৫৮০ টাকার বিনিময়েও রবি কোন জামা দেয় নি। কেননা তারা শর্ত দিয়েছিল, ১০০ জন ৫৮ টাকা করে ৫,৮০০ টাকা রিচার্জ করলে একজন শিশুকে দেয়া হবে একটি জামা। ১০০ জনের ব্যাপারটি অনেকের চোখই এড়িয়ে গিয়েছিল, কেননা ছোট্ট করে শর্ত প্রযোজ্য লেখাটা চোখ এড়িয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক।
তবুও ভালো তারা যদি তাদের কথা রাখতো! না, তারা শিশুদের জামা দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু সে জামায় নিজেদের প্রচারণা চালাতে ভুল করেনি। বিশাল বিলবোর্ড, টিভি কিম্বা পত্রিকার বিজ্ঞাপন কোথাও তারা তাদের লোগো সম্বলিত জামা দেখায় নি, কিন্তু দেয়ার সময় তারা ঠিকই তাদের বিশাল লোগো সম্বলিত জামা দিয়েছে। এমন জামা, টি-শার্ট বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কোম্পানি তাদের প্রচার-প্রচারণাচালাতে ফ্রিতেই বিতরণ করে। সেখানে রবি গ্রাহককে ইমোশনালি ব্লাকমেইল করে তাদের কাছ থেকে প্রতি ৫,৮০০ টাকার বিনিময়ে একটা শিশুকে ঈদের জামা তো দিল না, বরং শিশুটিকে দিয়ে তাদের প্রচার-প্রচারণা চালালো।
রবির যদি সত্যিই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সাহায্য করতে চাইতো, তাহলে তারা যে টাকা খরচ করে টিভি-পেপার, বিলবোর্ডে বিজ্ঞাপন দিল, তাতে কয়েক লাখ শিশুকে ভালো মানের জামা কাপড় কিনে দেয়া যেত।
অনেকের মনে হতে পারে এক্ষেত্রে প্রতারণার কি হলো? গ্রাহক যে ৫৮ টাকা করে রিচার্জ করেছে, তা তো তার একাউন্টে পেয়েছে, তাহলে প্রতারণা হয় কি করে? ওকে, ক্লিয়ার করছি।
ধরুন, আমার চাউলের ব্যবসা। প্রতি কেজি চাউল আমি ৪০ টাকা করে বিক্রয় করি, তাতে আমার লাভ হয় কেজিতে ৫ টাকা। প্রতি মাসে আমার চাউল বিক্রি হয় মোটামুটি ৫,০০০ কেজি। রমজানে আমি ঘোষণা দিলাম, গ্রাহকেরা যদি রমজান মাসে আমার দোকান থেকে চাউল কিনেন, তাহলে গ্রাহকের সমপরিমাণ চাউল ঈদের আগে গরিবদের মাঝে ফ্রি বিতরণ করা হবে। স্বাভাবিকভাবেই রোজার মাসে আমার বিক্রি ৫,০০০ কেজি তো ছাড়িয়ে যাবেই, তা ৫০,০০০ বা ৫,০০,০০০ কেজিতে গিয়ে ঠেকলেও অস্বাভাবিক মনে হবে না। আর তাতে আমার লাভ কেমন হলো, সেটা না হয় না-ই-বা বললাম। কথা হচ্ছে, এই যে গ্রাহকেরা আমার দোকান থেকে বেশি বেশি চাউল নিলেন, কেন নিলেন? নিশ্চয়ই তারা আমার অফারের প্রতি আকৃষ্ট হয়েই এসেছেন। মাস শেষে আমার বিক্রি হলো ৫,০০,০০০ কেজি চাউল, ফলে আমি ১০০ কেজি চাউল ফ্রি বিতরণ করে দিলাম। তাও আবার বিতরন করলাম এমনভাবে যেন আমিই তার দাতা, আমিই দয়া করে তাদের সেগুলো বিতরণ করছি!
ঘোষণা ছিল, গ্রাহকেরা যদি রমজান মাসে আমার দোকান থেকে চাউল কিনেন, তাহলে গ্রাহকের সমপরিমাণ চাউল ঈদের আগে গরিবদের মাঝে ফ্রি বিতরণ করা হবে; কিন্তু আমি বিতরণ করলাম ১০০ কেজি। কারণ ছোট করে একটা শর্ত প্রযোজ্য লিখে বলে দিয়েছিলাম, গ্রাহকেরা ৫০০০ কেজি চাউল কিনলে একজন অভাবগ্রস্থকে ১ কেজি চাউল বিতরণ করা হবে। ব্যাপারটা কি স্পষ্ট প্রতারণা নয়?
রবির এই ক্যাম্পেইন থেকে আমরা কি শিখলাম?
শিখলাম, ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে।