somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প দা তি ক

৩১ শে জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লিংক---৩ [link|প দা তি ক|প দা তি ক


ঊর্মিলার একটাই ঘর। পাশে রান্নার ছোট্ট জায়গা। চারটে ছানাপোনা জায়গা নেয় যথেষ্ট।শোয়ার কষ্ট বেড়েছে। শীতের শুরু। রাতের দিকে ঠান্ডা লাগে। তার উপর একজন জোয়ান ছেলে। যদিও আলগা একটা চাটাই দিয়ে আলাদা করা ঘরের এক কোনে একটা চারপাই রাখা আছে। দরজার কাছাকাছি। ওটা এখন নানা জিনিষ পত্রে বোঝাই। অনাদি থাকতে ওখানে সে মাঝে মধ্যে শুতো। ঊর্মিলার এখন সেটা খালি করে দিতে হবে সুবোধকে শুতে দেয়ার জন্য। কপালে কাজ থাকলে ঠেকায় কে। সারাদিনের পরিশ্রমের পর—তবু ঊর্মিলা কাজে হাত দিতে দেরি করলো না। এতক্ষণ ঊর্মিলা খেয়াল করে নি যে সুবোধের সঙ্গে একটা কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ ছিল। ব্যাগে গামছা লুঙ্গি দাঁত মাজার ব্রাশ পেস্ট আর এক সেট প্যান্ট জামা।

আসলে আজকের দিন ধরলে সুবোধের এই অজ্ঞাত যাত্রার দশ দিন পার হচ্ছে। আজকের দিন বাদ দিলে গত নয় দিন দেশে তার নির্দিষ্ট কিছু চোখের আড়ালে চলছিল চলাচল। এভাবে আর চলছিল না। শেষ খবর এটাই ছিল যে দেখা মাত্র গুলি করার আদেশ পেয়েছে পুলিশ। খবরের সত্যি মিথ্যা যাচাইয়ের উপায় ছিল না। তবু শুরুর থেকে ঘটনাক্রম বিবেচনা করে সে নিজেই সিদ্ধান্ত নিল যে বর্ডার অতিক্রম করবে। এ ছাড়া উপায় নেই। পুলিশ ও গোয়েন্দাদের নজর এড়িয়ে ঘুরতে ঘুরতে বাংলাদেশের উত্তরের সীমান্তের কাছাকাছিই অবস্থান করছিল সে। ফলে স্থানীয় যোগাযোগ কাজে লাগিয়ে সে একদিনের মধ্যে সীমান্ত রেখা পার হয়ে গেল। তেমন বাঁধা বা কোন অসুবিধে হয়নি। অবশেষে বর্ডার পার হয়ে যেন স্বস্তি। বুক ভরে বাতাস নিয়ে কিছুটা হালকা বোধ হলো যেন। অন্তত এক্ষুনি পুলিশের গুলির মুখে তাকে পড়তে হবে না। এপারে এসে বেশ কিছুটা ভেতরে ঢুকে একটা চা এর দোকানে বসে অনেকটা সময় নিয়ে সে চা খেয়েছে। জায়গাটা অনেকটা ট্র্যানজিট পয়েন্টের মতো। কেউ কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করে না। কারণ অনেকেই বর্ডার পার হয়ে এসেছে। এসে প্রায় সকলেই এখানে চা খায়। সামনেই কাছাকাছি কী একটা মেলা চলছে। মেলামুখী মানুষই সংখ্যায় বেশি। শোনা গেল মেলার নাম হুজুর সাহেবের মেলা। এই সময় বর্ডারও বেশ নিয়ম কানুন কড়াকড়ি শিথিল করে বসে থাকে। শুরু থেকেই নাকি দু পারের মানুষ এই মেলার অংশীদার। ফলে মানুষ জনের যাতায়াত এই সময় কিছুটা অবাধ থাকে। সুবোধের পক্ষে ভালো হয়েছে যে বর্ডার অতিক্রম করতে এই সময় তার টাকা পয়সা খরচ তেমন খরচ করতে হয় নি।

কিন্তু এপারের কয়েক ঘন্টার যাপিত জীবনে সুবোধের স্বস্তিটা এখন আর নেই তেমন । নিজের নিরাপত্তার ব্যাপারে সে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন এখন। নিজেই বুঝতে পারছে যে সে কত অনভিজ্ঞ একজন। বর্ডার অতিক্রম করার সময় তার একবারও মনে হয় নি যে এ দেশে তার আস্তানা কোথায় হতে পারে। আত্মীয় স্বজন কোথায় থাকতে পারে । থাকলে তার ঠিকানা? পালানোর সময় এত সব ভাবার সময়ও ছিল না অবশ্য তার। শেষ পর্যন্ত কাজটা কতদূর সঙ্গত হলো তাও সে এই সময় চিন্তা করতে লাগলো।

উচিত অনুচিত ভাবার সময় এমনিতেই জীবনে ঊর্মিলা খুব কম পেয়েছে। তাদের জীবনের যা ছিরি ছাদ তাতে এসব ভাবা বিলাসীতা। সবটাই তাদের কেমন যেন তাৎক্ষণিকতা দিয়ে মোড়া। যা হবার হবে বা কপালে যা আছে দেখা যাবে—এসব আপ্ত বাক্যে ভর করে চলা তাদের জীবন। তবু আজ উচিত অনুচিত নিয়ে তাকে বেশ ক’টি প্রশ্নের জবাব নিজেকেই দিতে হচ্ছে। যেমন এক—সে নিজে।-একজন মহিলা। স্বামী থাকেনা সঙ্গে। দুই—প্রতিবেশী এবং পুলিশ। বস্তি জীবনে এই দুই জনাই যে কোনো সময় বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। তিন—সুবোধ । শেষ পর্যন্ত একটি ছেলে। আসলে সে একজন পুরুষ। সে আসলে কতটা কী ঊর্মিলার অজানা। তবু সে ছেলেটিকে ঘরে এনে তুললো। মনে দ্বিধা দ্বন্দ্ব ছিল। কিন্তু তা কেন কাজ করলো না? ছেলেটির নম্রতা অসহায়তা কি তাকে কিছুটা বশ করে ফেলেছিলো? পথের পরিচয় পথে কেন ফেলে আসতে পারলো না সে। কে কী রকম মানুষ কে জানে। তার উপর বিদেশের। বাংলাদেশকে যদিও সে অচেনা বিদেশ মনে করে না। এই বস্তিতেইত কত বাংলাদেশের মানুষ আসে যায়। তা ছাড়া সে নিজেওতো ওদিককারই। মায়ের কোলে থাকার সময়ে সেও একদিন দেশ ছেড়েছিল। তবু মানুষ চেনা তার কম্মো নয়। সারাজীবন এই জন্য তার লাঞ্ছনাও খুব কম জোটে নি। যাক নিজের সঙ্গে এসব পুরানা প্যাচাল পারার সময় কই তার।ওদিকে তাকিয়ে দেখে মাথা নিচু করে ছেলেটি এখনও চৌকির উপর ঠায় বসে। মায়াই লাগে দেখলে।
--কী হলো—জামা কাপড় ছাড়েন। সঙ্গে আছে কিছু?
হঠাৎ ঊর্মিলার কথায় যেন সুবোধের সম্বিৎ ফিরলো। তথমত খেয়ে বলে উঠলো—হ্যাঁ হ্যাঁ আছে, এই ছাড়ছি।
--দেখেন দরজার বাইরে বালতিতে জল আছে—হাত মুখ ধুয়ে নেন।
--হ্যাঁ যাচ্ছি
--শুয়নের কষ্ট হইবো।
--কষ্ট কিসের
--দেখতাছেন না ঘরের অবস্থা
--না না আমার কষ্ট কিছুই হবে না। বরং আপনাকে কষ্টের মধ্যে ফেললাম।

তৎক্ষণাৎ উত্তর না দিয়ে ঊর্মিলা ছানাপোনাদের দিকে মন দিল। সবকটাই এলোমেলো ভাবে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। সবকটাকে টেনে টুনে ঠিক মতো শুইয়ে দিল। ঊর্মিলার দেরি দেখে ওদের
খাইয়ে দিয়েছিল জাহানারা। সপ্তাহে দু/তিন দিন তার হলদিবাড়ি যাওয়া থাকে সবজি আনার জন্য। ঐ সব দিন গুলোর জন্য পাশের ঘরের জাহানারার সঙ্গে একটা ব্যবস্থা করা আছে ঊর্মিলার। বাচ্চাগুলোকে যাহোক দুপুরে একটু ভাত ফুটিয়ে খাওয়ানোর। একটু চোখে চোখে রাখার। ফলে এই সব দিনগুলোতে জাহানারা ঘন ঘন এ ঘর ও ঘর করেই দিন কাটায়। আজও তাই করেছে। ঊর্মিলার দেরি দেখে বাচ্চাগুলোকে সন্ধ্যার পর খাইয়ে সে ঘরে গিয়েছিল নিজেদের ভাত বসানোর জন্য। এই সময়ই ঊর্মিলা ফেরে। কিন্তু সঙ্গে অচেনা এক যুবক দেখে সে আর ঊর্মিলার সঙ্গে দেখা করতে আসেনি। না হলে একবার এসে অন্তত দেখা করে যায়। বলে-দিদি বাচ্চাকাচ্চা বুইজ্যা লইছেন তো—অহন আমি যাই। ঊর্মিলাও হেসে জবাব দেয়—না, পাই নাই—তুই ব আরো কিছুক্ষণ। মাঝে মাঝে ঊর্মিলা জাহানারার জন্যও লজেন্স বিস্কুট আনে। জাহানারা হাতে নিতে লজ্জা পায়। বলে—আমারেওকি পোলাপান পাইছেন নি।

জাহানারা আর কয়দিন আছে। এই মাস তিন হইলো। বস্তির পোলাপান বস্তির মানুষেই দেখে। আগেও ঊর্মিলা হলদিবাড়ি যাওয়ার আগে একজনকে শুধু বলে যেতো যে রাস্তায় যেন না যায় দেখতে। পাশের ঘরে জাহানারার আসাটাওতো উর্মিলা টের পায় নি প্রথমে। মাঝে মাঝে চাপা কান্না শুনে একদিন ঊর্মিলাই দেখে যে একটি অচেনা মেয়ে ঘরে কোনে বসে। তারপর আলাপ করে। সেই থেকে তার এই ঘরে যাতায়াত ।

আজ সঙ্গে একজন অতিথি দেখে জাহানারা তাদের ভাতে আবার একটু চাল ঢেলে দিয়েছিল। সঙ্গে দুটো আলু সেদ্ধ দিতেও ভোলেনি। কারণ ঊর্মিলার ঘরের হাড়িতে যা ভাত অবশিষ্ট আছে তা শুধু ঊর্মিলার পরিমানেই আছে। আর সারাদিন এত খাটা খাটনির পর ঘরে ফিরে আবার রান্না করা—ঊর্মিলাদির জন্য খুব সহজ হবে না ভেবেই একটু ভাতের ব্যবস্থা।

ইতিমধ্যে ভাত হয়ে যাওয়াতে সে ঊর্মিলার ঘরের দরজায় এসে মিহি স্বরে একবার ‘দিদি’বলে ডেকে একটা ঢাকা পাত্রে ভাত আর আলু সেদ্ধ ঊর্মিলার হাতে দিয়ে চলে গেল। দাঁড়ায় নি। ঊর্মিলা বলা সত্ত্বেও ঘরে ঢোকেনি। হাতে ভাতের পাত্র পেয়ে খুব বেশি অবাক হয়নি। কারণ মেয়েটির বিবেচনা শক্তির উপর তার খুব আস্থা। যদিও ঊর্মিলা ভেবে রেখেছিল যে অতিথিকে নিয়ে তার জন্য রাখা ভাত ভাগ করে আজ রাতের মত কোনোমতে খেয়ে নেবে। এখন এই অতিরিক্ত ভাতটুকু পেয়ে মনে মনে খুশি হলো সে। কারণ নিজের পেটে অসম্ভব খিদে। নিশ্চই ক্ষুধার্ত ছেলেটিও। (ক্রমশ:)

সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০১৬ দুপুর ২:১৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×