somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্ষণের কালোহাত ও প্রতিরোধের উপায়

২৮ শে মে, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ধর্ষণের পেছনে পোষাকের দোষ নাকি দৃষ্টিভঙ্গির দোষ এসব খুঁজে কী লাভ? সব নারীই তো আর বিকিনি পড়েনা কিংবা সব নারীই আবার হিজাব পড়েনা । অথচ দুজনই ধর্ষণের শিকার ।


এখন আসুন দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপারে । ধর্ষকদের দৃষ্টিভঙ্গি ধর্ষকের মতোই । ধর্ষকের কোনো জাত-পাত নাই । যে লেবাসই পড়ুক, যে টাইটেলই লাগাক, তার একটাই পরিচয় । ধর্ষক । নইলে কোন সাধে গরুকে ধর্ষণ করে ! সমাজে সব পুরুষই যদি ধর্ষক হতো নজরুল-রবীন্দ্রনাথ-মুজিব-জিয়াদের জন্ম হতোনা ।

সমাজে যারা ভালো তারা কখনো ধর্ষক হবেনা । নারী উলঙ্গ হয়ে বেরুক আর হিজাব পড়ে বেরুক । তাদের দৃষ্টিভঙ্গি সর্বদাই ইতিবাচক । চোর কখনো ধর্মের কাহিনী শুনে? ধর্ষকদেরকে হাজার বার বুঝান যে ধর্ষণ ভালো না, অমানবিক, পাপ - কোনো লাভ নাই । এখন নিজেকে প্রশ্ন করুন- দৃষ্টিভঙ্গির দোষ, এটা সব পুরুষকে বলা উচিত? অবশ্যই না ।

ধর্ষণ রোধে কী করণীয়? পোশাক না দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন? প্রশ্নোত্তরে অর্ধশতাংশের বেশিরভাগই বলবে দৃষ্টিভঙ্গি । “দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন” টার্মটার দিকে খেয়াল করুন । মূলত কার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে চাই আমরা? ভালো মানুষগুলোর নাকি নরপশুদের? অবশ্যই নরপশুদের । আগেই বলেছি, চোর কখনো ধর্মের কাহিনী শুনেনা । তাহলে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করবেন কিভাবে? বই পড়িয়ে? উপদেশবাণী? সেটিই যদি হতো তাহলে সমাজে-দেশে আজ এতো দুর্নীতিবাজ লোক থাকতোনা । জীবনে কম নীতিবাণী, উপদেশ শোনা হয় নি । যে আলেম উপদেশ দেয় সেই তো ছাত্রীকে মক্তবে ধর্ষণ করেছে । ঠিক আছে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন দরকার । কিন্তু কিভাবে? সামাজিক সচেতনতার ঘাটতি তো কোথাও দেখিনা: টেলিভিশন-রেডিও-পত্রিকা-নাট্যমঞ্চ সর্বত্রই সামাজিক সচেতনতার বিপ্লব চলছে । ধর্ষণের ক্ষেত্রে সচেতনরাই সচেতন হচ্ছে । বুঝতে হবে টয়লেট থেকে ফেরার পর সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার সচেতনতা আর ধর্ষণ করা যাবেনা এই সচেতনতা এক জিনিস নয় । সারাবছর যদি টেলিভিশনে প্রচার করা হয় খুন করা পাপ, অন্যায় তবু হত্যাকারী কি হত্যা করা থেকে ক্ষান্ত হবে? বাদ দিবে খুন করা? যে ধর্ষক পিতার কাছে তার নিজের কন্যা, যে ধর্ষক ভাইয়ের কাছে তার আপন বোন, যে ধর্ষক পুত্রের কাছে তার আপন মা রক্ষা পায় না সেই ধর্ষকের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করবেন কিভাবে? ধর্ষকদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করা আর কুকুরের লেজ সোজা করার চেষ্টা একই ।

তাহলে কী আমি বলছি, বিচার-শাস্তি-দন্ডের মাধ্যমে ধর্ষণ রোধ করা সম্ভব? না, সেটাও সম্ভব না । সম্ভব হলে দেশে এতো সন্ত্রাস-চোর-ছিনতাই কারী থাকতোনা ।

এখন সবচেয়ে প্রত্যাশিত প্রশ্ন হলো- তবে কি ধর্ষণ রোধ করা সম্ভব নয়?

অবশ্যই সম্ভব । তবে রাতারাতি নয় । কারণ, সমাজে-রাষ্ট্রে ধর্ষণ নামের অভিশাপ একদিনেই আসেনি । মূলত ব্যক্তিগত-সামাজিক-রাষ্ট্রীয় ন্যায়নীতি ও মূল্যবোধের অবক্ষয় তথা আত্মার অধঃপতন থেকেই ব্যক্তি থেকে রাষ্ট্রীয় অশান্তি ও সকল অন্যায়-অপকর্মের সূত্রপাত । সকল অন্যায়-অপকর্মের মধ্যে একটি হলো ধর্ষণ । নারীরা আজ গৃহ থেকে সর্বত্রই চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে । একটু খেয়াল করে দেখুন কেবলমাত্র ধর্ষণই যে বেড়েছে তা কিন্তু নয়, দুর্নীতি-গুম-খুনের পরিমাণটা দিনেদিনে হুহু করে বেড়ে চলেছে । শান্তির পরিবর্তে অশান্তিই বাড়ছে ।

সচেতন ও প্রগতিশীল নারীরা ইদানীং একটা পদক্ষেপ গ্রহণে বেশ আগ্রহী । পাল্টা আঘাত । কথা হলো ধর্ষণ করতে আসলেই লিঙ্গ কেটে নেয়া হবে । এ থেকে কী প্রমাণিত হয়? আইনের প্রতি, প্রশাসনের প্রতি এদেশের নারীদের কোনো আস্থা নেই, বিশ্বাস নেই । থাকবে কী করে ! যার কাছে ধর্ষকের বিচার নিয়ে যায় ধর্ষিতা, পুলিশ তাকেই ধর্ষণ করে । আস্থা থাকবে কী করে? উপায়ন্তর না দেখে নারীরা আজ আইন নিজের হাতে তুলে নিতে প্রস্তুত । সব ধর্ষক যে আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে কিংবা পুলিশের দুর্নীতি-ঘুষ-ক্ষমতার অপপ্রয়োগের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে তা কিন্তু না । তবুও ধর্ষণ হচ্ছে । হিংস্র নরপশুদের হাত থেকে বাঁচতে তো হবেই । এজন্যই নারীরা আজ আত্মরক্ষায় বিশ্বাসী । Self-Defence করতেই হবে । কিন্তু তারা কতটুকুন সফল হবে তা নিয়ে সংশয়ের অভাব নেই ।

পুরুষদের প্রতি নারীদের এই মনোভাব কিন্তু একদিনেই গড়ে উঠেনি । কত সহ্য করবে নারী? বাসার আশেপাশে পুরুষগুলো সুযোগ খুঁজে কখন মেয়ে গোসল করতে পুকুর পাড়ে যায়, কখন শপিংমলের ড্রেসিং রুমে ড্রেস চ্যাঞ্জ করতে যায় । এককথায় নারীকে উপযুক্ত পরিবেশে একা পেলেই নরপশুদের জেগে উঠে হিংস্রতা, ফুঁটে উঠে কুৎসিত একটা চেহারা । ছাড় পায় না পাঁচবছরের শিশু ।

ধর্ষণ প্রতিরোধে আমাদের করণীয় কীঃ

ধর্ষণ প্রতিরোধের আগে আমাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে ধর্ষণ কি শুধুই ভুল যে সচেতনতার মাধ্যমে সে ভুল সংশোধন করা সম্ভব নাকি এক বিশাল অপরাধ, যা সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে ? নিঃসন্দেহে এটি বিশাল অপরাধ এবং তা আজ সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে । সামাজিক ব্যাধি এজন্যই যে, মানুষ জেনে শুনেই এই কাজটি করে । আর ধর্ষণ সরাসরি একটা ব্যাধিতে পরিণত হয় নি । আত্মিক অবক্ষয়ের পরিণতি ধীরে ধীরে ধর্ষণের জন্ম দিয়েছে । বিপরীত লিঙ্গের প্রতি দুর্নিবার আকর্ষণ মানুষের স্বভাবজাত প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্য । শুধু মানুষ কেনো প্রায় সকল জীবকুলের মধ্যেও তা লক্ষ্যণীয় । এক্ষেত্রে প্রাণিকূল ও মানুষের মধ্যে পার্থক্য মূল্যবোধে । তাই মানুষ ইচ্ছে করলেই জনসম্মুখে যৌনকাজ করতে পারেনা কিন্তু প্রাণী সেটা পারে । মানুষ যার তার সাথে যৌনকাজ করতে পারেনা কিন্তু প্রাণী সেটাও পারে । মানুষ জোর করে বিপরীত লিঙ্গের মানুষটির সাথে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করতে পারে না, অথচ সেটাও প্রাণী পারে । এই পার্থক্যটুকুন যদি না থাকতো তাহলে ধর্ষণ কোনো অপরাধ নয়, ধর্ষণ নিয়ে এই যে এতো চেচাঁমেচি তার কোনো যৌক্তিকতাই নেই । মানুষের উন্নত মস্তিষ্কই কেবল জানে মূল্যবোধ কী, সম্মান কী, সভ্যতা কী । আর এজন্যই মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব । আমরা ইজ্জত নিয়ে বাঁচতে চাই, পশুর মতো নয় । আমাদের সম্মান আছে - সেটা ব্যক্তিগত থেকে শুরু করে বৈশ্বিক । ইতিহাস ঘেঁটে দেখুন- যখনই নারীদের প্রতি অসম্মান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয় হয়েছে, সভ্য-অসভ্য তথা ন্যায়-অন্যায়ের মানদন্ড পরিবর্তন হয়েছে অর্থ্যাৎ যখনই মানুষের আত্মিক অধঃপতন হয়েছে তখনই নারীরা পরিণত হয়েছে সমাজের দ্বিতীয়শ্রেণি, সম্মান হারিয়ে তারা ঘরে ঘরে হয়েছে রক্ষিতা, পুরুষ তাদের করতলে রেখে নিজের ইচ্ছেমত ব্যবহার করেছে । ক্রীতদাসীতে পরিণত হয়েছে নারী জাতিটি । আর হরহামেশায় ঘটে গেছে ধর্ষণের মতো ঘটনা ।

আমাদের সমাজের দিকে তাকিয়ে দেখুন, রাষ্ট্রের দিকে তাকিয়ে দেখুন । কী অবস্থা ! ন্যায়নীতিবোধ, সম্মানবোধ কোথাও আছে? দুর্নীতিতে ভরপুর প্রশাসন, মন্ত্রনালয়, শিক্ষাঙ্গন, রাজনীতি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা, কর্মক্ষেত্র সর্বত্র । আজ কোথাও এতোটুকুন সত্য নেই, সবখানেই মিথ্যার ছড়াছড়ি । যেখানে সত্য নেই, সেখানে মানবতা কাঁদবেই । সব অপরাধই দিনেদিনে বেড়ে চলেছে । অন্যায়-জুলুম-অশান্তিতে পৃথিবী আজ ভরপুর । লাগামহীন অশান্তির দৌরাত্মাই প্রমাণ করে- ভেঙ্গে পড়েছে আমাদের সামগ্রিক জীবনব্যবস্থা । তাই একটা সমস্যার সমাধান করতে না করতে আরেকটা সমস্যার উদয় হয় । আপাতত ধর্ষণ রোধ করা যায় কিভাবে, এসব ভাবছেন? সম্ভব নয় । গতিশীল ঘূর্ণায়মান ফ্যানকে তার গতির বিপরীতে হাত দিয়ে বন্ধ করতে গেলে হিতের বিপরীত হবেই, দুর্ঘটনা ঘটাটা অতি স্বাভাবিক । ফ্যান বন্ধ করতে গেলে সুইচ চাপতে হবে । কারণ এই সুইচে অনের মাধ্যমেই ফ্যান ঘুরতে শুরু করেছে । প্রথম দিকে ধীরে ধীরে এবং একসময় সে খুব দ্রুত ঘুরতে শুরু করে । তদ্রুপ ধর্ষণ রোধ করতে গেলে আমাদেরকে প্রথমে এটার অন-অফ অপশনে যেতে হবে, কোথা থেকে ধর্ষণের উৎপত্তি । প্রথম দিকেই দেখানো হয়েছে সেটা পোষাকেও না, দৃষ্টিভঙ্গিতেও না । তাহলে কোথায় সেই সুইচ? আত্মিক অধঃপতন থেকে ধর্ষণের মতো অন্যায়-অপকর্মের উৎপত্তি । তাই সুইচের অফ বাটনটা সেটার বিপরীত অর্থ্যাৎ আত্মিক উন্নতিই হলো ধর্ষণসহ সকল অন্যায়-অপকর্ম প্রতিরোধের প্রথম শর্ত । এটা প্রতিষ্ঠিত হলে সমাজে, রাষ্ট্রে সৃষ্টি হবে মানবিক মূল্যবোধ, সম্মানবোধ, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা, রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ইত্যাদি, যা শান্তির মূল উপাদান । কিন্তু আমাদের এটাও ভাবতে হবে যে মানুষ যান্ত্রিক না । একই ধরণের মানুষের বসবাস না । সমাজে-রাষ্ট্রে অনেক ধরণের মানুষ আছে । ন্যায়-অন্যায়ের মানদন্ডের পাশাপাশি অন্যায়ের শাস্তির বিধানও থাকতে হবে এবং তা সুপ্রতিষ্ঠিত । কেউ যদি সংশোধন হতে চায় তার জন্য ক্ষমার ব্যবস্থাও থাকতে হবে । বিপরীত লিঙ্গের মানুষের প্রতি যেনো যথেষ্ট সম্মানবোধ ও ভালোবাসা প্রতিষ্ঠা হয় সেরকম ব্যবস্থা থাকতে হবে । যেহেতু মানুষ সামাজিক জীব ও প্রাকৃতিক ক্রিয়াকর্মের ঊর্ধে নয়, সে হিসেবে সম্পর্কের ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয় এমন কাজের অনুমোদন দেয়া যাবেনা । যেমনঃ যার তার সাথে রাত কাটানো, যাকে তাকে নিয়ে যত্রতত্র যাওয়া, অশ্লীলতা ইত্যাদি । সম্পর্কের ভাঙ্গন মানুষকে পীড়া দেয়, মানুষ মানুষকে বিশ্বাস করতে ভয় পায়, ভালোবাসতে সংশয়বাদী হয়ে উঠে । ধীরে ধীরে মানুষের চিন্তাভাবনায় সেটার বিরূপ প্রতিক্রিয়া বিকৃতি অভ্যাস-অভিরুচির জন্ম দেয় । প্রথমে সৃষ্টি হয় পারিবারিক ভাঙ্গন, সামাজিক ভাঙ্গন ধীরে ধীরে তা রাষ্ট্রীয় ভাঙ্গনে পরিণত হয় । একেকটা ঐক্য-শৃঙ্খলা-আনুগত্যের শিকলের ভাঙ্গনে জন্ম নেয় হাজার হাজার অন্যায়-অপকর্ম-অশান্তি । স্বাধীনতার অর্থ যদি উন্মাদনা হয় সে স্বাধীনতার প্রয়োজন নেই শান্তিকামীদের কাছে । সবাইকে এককাতারে ভাবার সুযোগ নেই । সব মিলিয়েই আমাদেরকে দেখতে হবে । সবাইকে নিয়েই আমাদেরকে এগুতে হবে প্রাকৃতিকভাবে।

এখন আসা যাক, ধর্ষণসহ সকল অন্যায়-অপকর্ম প্রতিরোধে সেই আত্মিক উন্নয়ন ও পদক্ষেপ গ্রহণ কিভাবে সম্ভব? একটা বিপ্লব দরকার, একটা আন্দোলন দরকার । শান্তিকামী নিঃস্বার্থ মানুষগুলোর সমন্বয়ে একটা মহাবিপ্লব দরকার । কিন্তু কিসের বিপ্লব, কিসের লক্ষ্যে আন্দোলন? আমি আধ্যাত্মিক সাধনার কথা বলছিনা, বলছিনা সবাই নামায পড়ুন, পূজা-অর্চনা করুন, মেডিটেশন করুন । ছেঁড়া কাঁথায় আর কতো পট্টি তালি দিবেন? ওজনের ভারে তো অবস্থা মর মর । We have to need to change our system. হ্যা, আমাদেরকে সিস্টেমটাকেই পরিবর্তন করতে হবে । প্রচলিত সিস্টেমে আইনের শেষ নেই । কিন্তু আইন মানে কয় জন । তাছাড়া যে পরিমাণ আইন রচনা করা হয়েছে সেটা কয়জনের পক্ষে জানা সম্ভব, মানাতো বহুদূর । মানার জন্যতো আইনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে, সেটাই বা কয়জনের আছে ! আবারো সেই আত্মিক উন্নয়নের কথা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আসছে । আমাদের জীবনব্যবস্থা আজ কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে গেছে । নিয়মনীতি, আইনকানুনের ভারে মানুষের জীবন আজ অতিষ্ঠ । এই সিস্টেম অব লাইফ মানে জীবনব্যবস্থাই সকল শান্তি-অশান্তির মূল কারণ । আমাদের এখন এমন একটি জীবনব্যবস্থার প্রয়োজন, যেখানে প্রতিষেধকের চেয়ে প্রতিরোধের গুরুত্ব বেশি, তারপরেও যদি কেউ অসুস্থ হয়ে যায় তার সুস্থতার জন্য প্রতিষেধক ও উন্নত পরিবেশ প্রদান করা হবে । আমাদের আজ এমন জীবনব্যবস্থা প্রয়োজন যেখানে, একজন চোর অর্থাভাবে আর চুরি করতে যাবেনা, তার জীবিকা অর্জনের ব্যবস্থা করে দেয়া হবে । কোনো শিশুকে পেটের ক্ষুধা নিবারণের জন্য স্কুল বাদ দিয়ে কাজের জন্য মিল-ফ্যাক্টরী-বাসায় যেতে হবেনা, তার ক্ষুধা নিবারণের কোনো চিন্তা করতে হবেনা, হা করলেই মুখে খাবার চলে আসবে । একজন নারী তার জীবনে কোথাও ধর্ষণের শিকার তো দূরের কথা, সামান্য নির্যাতনেরও শিকার হবেনা, বরং তাকে সম্মান দিয়ে, নিরাপত্তা দিয়ে পুরুষ নিজেকে বীর ভাববে, মনে তৃপ্তি পাবে । রাতের আঁধারে একাএকা নারী মাইলের পর মাইল পাড়ি দিবে, তার মনে সংশয়-সন্দেহের উদ্রেক হবেনা । ভাবছেন এটাও কি সম্ভব? হ্যা, এটাই সম্ভব করে দেখিয়েছিলেন ১৪০০ বছর আগে আরবের নিঃস্বার্থ কিছু মানুষেরা । মুহাম্মদ সাঃ ও তাঁর আসহাবরা আদর্শিক বিপ্লবের পাশাপাশি তৎকালীন সময়োপযোগী সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে তাঁরা এমন একটা জীবনব্যবস্থা উপহার দিয়ে গেছিলেন । দাসপ্রথার বিলুপ্ত, নারীদের ন্যায্য অধিকার-সম্মান প্রতিষ্ঠা, ইয়াতীম-মিসকীনদের নিরাপত্তা প্রদান ও সবরকমের অভাব দূর, শ্রমের মর্যাদা স্থাপন, রাষ্ট্রে অভাব দূর, রাষ্ট্রনায়ক কর্তৃক স্বকাঁধে খাদ্য বহন করে ক্ষুধার্তদের ঘরে নিয়ে যাওয়া, ধূলোর তখতে বসে রাজ্য পরিচালনা, মানুষের মধ্যে অকৃত্রিম ভ্রাতৃত্ববোধ ও ভালোবাসা সৃষ্টি, সমাজে সকল ধরণের অন্যায় দূর করে ন্যায়-শান্তি স্থাপন করার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রচনা করে গেছেন মানবতার কল্যাণে নিবেদিত প্রাণরা । একদিকে আত্মিক উন্নয়ন অন্যদিকে প্রশান্তিময় এক লাইফস্টাইল । অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছিলো যে, সারা মরুভূমি ঘুরে যাকাত নেয়ার মতো লোক খুঁজে পাওয়া যেতোনা । অথচ সেই আদর্শ, সেই বিপ্লব কালক্রমে ধর্মব্যবসায়ী, স্বার্থপর ধর্মীয় নেতা ও রাষ্ট্রনেতাদের হাতে পড়ে ধীরে ধীরে তা বিকৃত হতে হতে স্রেফ একটা ধর্মে পরিণত হয়েছে, যেখানে ধর্মব্যবসা-জঙ্গিবাদ-কুসংস্কার-অপরাজনীতিতে ভরপুর । আকীদা (সম্যক ধারণা) বিকৃতির দরুণ বর্তমান মুসলিমদের কাছে মানবতার চেয়ে বড় ধর্মকর্ম, ইবাদত হলো নামায-রোযা-তসবিহ-তাহলীল-টুপি-জোব্বা-আতর । তাই প্রকৃত বিপ্লবীদের কাছে ধর্ম আফিমতুল্য । সবগুলো ধর্মই বিকৃতির চূড়ান্তে পৌঁছে গেছে । কিন্তু এটাও সত্য আত্মিক উন্নয়ন কেবলমাত্র ধর্ম দ্বারা সম্ভব । সেটার প্রমাণ অনেবার হয়েছে । হোক সেটা ইসলাম, সনাতন কিংবা বৌদ্ধ ।

সবচেয়ে খুশির খবর হলো, মিথ্যে আর বিকৃতিতে আষ্টেপৃষ্ঠে লুকিয়ে রাখা প্রকৃত ইসলামকে আবারো সমগ্র মানুষের সামনে উন্মোচন করলেন মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী । তিনি কোরআন-হাদিস-ইতিহাস-যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করে দিয়েছেন প্রচলিত ইসলাম ইসলামই নয় । তিনিই বলেছেন মানবতাই মানুষের প্রকৃত ধর্ম । মানবসেবাই স্রষ্টার ইবাদত । সালাহ (নামায), সওম (রোজা) যা আছে তা ইবাদত নয় বরং এগুলো আত্মার উন্নয়ন ও বিপ্লবী চরিত্র তৈরির জন্য প্রশিক্ষণমাত্র । ধর্মব্যবসায়ী আলেম-পুরোহিত-মাওলানা-ফরিশি-রাব্বাই-সাদ্দুসাইদের তিনি চরম বিরোধিতা করেন । কেনোনা আল্লাহ এই শ্রেণীটিকে কোরআনে আগুণখোর বলেছেন, ঈশ্বর বেদে বলেছেন বায়স-চন্ডালজন্মা । প্রকৃত সত্যের উন্মোচন ও সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি একটা আন্দোলন গড়ে তুলেছেন । হেযবুত তওহীদ । আপামর জনগণ নিয়ে ধর্মব্যবসা-জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ-অপরাজনীতিসহ সকল অপকর্মের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছে সংগঠনটি । কারণ বিপ্লব ছাড়া সিস্টেম পরিবর্তন সম্ভব না । আর প্রচলিত সিস্টেমের পরিবর্তন না হলে শান্তিও আসবেনা ।

ভাবছেন কেবলমাত্র ধর্ষণ প্রতিরোধে এতো কথা কেনো, এতো বক্তব্য কিসের? ঐ যে বলেছিলাম, গতিশীল ঘূর্ণায়মান ফ্যানকে গতির বিপরীতে সরাসরি হাত দিয়ে বন্ধ করতে গেলে হিতের বিপরীত হওয়াটাই স্বাভাবিক । নিত্যনতুন কত দাবি উঠছে, আইন হচ্ছে- কই ধর্ষণ কমেছে? আমাদের সামগ্রিক সিস্টেমটাই ঘুঁণে ধরা । গাছের মূলে পচন ধরেছে । একটা পাতায় পানি দিয়ে লাভ আছে? আবারো চেষ্টা করে দেখতে পারেন ।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০১৫ দুপুর ১২:৫১
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×