মুঘল বাদশাহ আলমগীরের পুত্রের গৃহ শিক্ষকের সাথে তার পুত্রের গল্পটি আমরা সবাই জানি। যেখানে শাহজাদা পাত্র থেকে পানি ঢালছিলেন তার শিক্ষকের পা পরিষ্কার করার জন্যে । সেখানে শিক্ষক নিজে তার পা পরিষ্কার করার দৃশ্য দেখে বাদশাহ্ শিক্ষককে ডেকে পাঠান। বাদশাহ’র তলব পেয়ে শিক্ষক অনেক ভয় পেয়ে গেলেন । কিন্তু সভায় বাদশাহ শিক্ষককে তিরস্কার করে বললেন যে, আপনার কাছ থেকে আমার সন্তানতো কোন আদব-কায়দাই শিখলো না! এ কেমন শিক্ষা দিলেন যে আপনার ছাত্র আপনার পায়ে পানি ঢেলে দেবে আর আপনি আপনারই হাত দিয়ে পা পরিষ্কার করবেন? আপনি তাকে এমন শিক্ষা কেন দিলেন না যেন সে নিজেই নিজের হাত দিয়ে আপনার পা ধুয়ে দেয়? তখন শিক্ষক লজ্জিত বোধ করেন এবং শিক্ষকদের প্রতি বাদশাহ’র এত বড় সম্মান প্রদর্শনে অভিভূত হন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের মূল কাজ কী? তত্ত্বীয় উত্তর হচ্ছে শিক্ষা ও গবেষণা করা। কিন্তু বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা কি তাই করেন? উত্তর হচ্ছে, না। হয়তো শতকরা দুই থেকে পাঁচজন শিক্ষক সত্যি সত্যি শিক্ষা ও গবেষণার সঙ্গে জড়িত। শিক্ষার ক্ষেত্রেও সবার মাঝে এক ধরনের অনীহা। দায়সারা ভাবে ক্লাস শেষ করতে পারলে যেন বাঁচেন। ক্লাস নোট একবার তৈরি করতে পারলে সেটা দিয়ে যত দিন চালানো সম্ভব তত দিন চালান। অনেক সিনিয়র স্যার তো ক্লাসে জুনিয়র শিক্ষকদের পাঠিয়ে দায়িত্ব শেষ করেন। এমনকি প্রশ্ন করা, খাতা দেখা সবকিছুই জুনিয়র শিক্ষকদের দিয়ে করান। কিন্তু পারিতোষিক গ্রহণের সময় সবার আগে বিল ফরম পূরণ করেন। তাদের যুক্তি তারা অনেক কাজে ব্যস্ত থাকেন, তাই সময়মতো ক্লাস নিতে পারেন না। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ক্লাস নেওয়ার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত থাকার অজুহাত দেখান, সেখানে শিক্ষার অবস্থা কেমন হবে সেটা সহজেই অনুমেয়।
দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন রাজনীতিই যেন শিক্ষকদের মূল যোগ্যতায় পরিণত হয়েছে। ক্যাম্পাসকেন্দ্রিক ক্ষমতার দ্বন্দ্ব আর দলাদলিতেই ব্যস্ত থাকেন শিক্ষকরা। একাডেমিক ক্যালেন্ডার থাকলেও নিয়মিত ক্লাসে না গিয়ে তারা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের ক্লাব এবং শিক্ষক লাউঞ্জে রাজনীতি নিয়েই পড়ে থাকেন। কেউ সাদা দল, কেউ লাল দল, কেউ বা নীল ইত্যাদি নানান রঙের ব্যানারে তারা সরকারী বা বিরোধী দলের সাথে যুক্ত থাকেন। সরকার দলের শিক্ষকরা যথারীতি সরকারের গুনকীর্তণ করতে থাকেন।
ক্ষমতার স্বাদ পাবার আশায় এবং ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার জন্য অনেকেই ক্ষমতাশীনদের লেজুরবৃত্তি করে চলেছেন । নিজেদের প্রয়োজনেই অনেকে ছাত্রদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। ভিন্ন মতের ছাত্রদের নির্যাতনে উস্কানি দিচ্ছেন অথবা নির্যাতনের সময় নিরব থাকছেন !! দলীয় রাজনীতি ও দুর্নিতির পাশাপাশি শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অনৈতিক কার্যকলাপ যেমন ছাত্রীর শ্লীলতাহানির মত অভিযোগ ও কম নয় !!
এই যদি হয় আমাদের দেশের শিক্ষকদের অবস্থা, তাহলে তাদের কাছ থেকে শিক্ষা নেয়া ছাত্ররা তাদের সাথে কেমন আচরন করবে সেটা তো সহজেই অনুমেয় । নিশ্চই বাদশাহ আলমগীরের ছেলের মত পা ধুয়ে দিবে না !! সেটা প্রত্যাশা করা ঠিক ও না।
আপনারা শিক্ষকরা আপনাদের ওপর অর্পিত মহান দ্বায়িত্ব নিরপেক্ষভাবে, যথাযতভাবে পালন করুন , আশা করা যায় একদিন আবার কোন ছাত্র শ্রদ্ধাভরে আপনাদের পা ধুয়ে দিবে !!
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১০:১৯