somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জোছনা বিছানা পাতে

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এমন সময়ও আসে মাঝেমধ্যে, ঠায় বসে থাকতে মন্দ লাগেনা। ডানে তাকালে ভালো লাগে। আবার বামে তাকাতেও ভালো লাগে। চারপাশের লোকজনকে মর্ত্যের মানুষ বলে ভাবতে ইচ্ছে করেনা, ভাবতে ইচ্ছে হয় সবার আত্মা বিশুদ্ধ হয়ে গিয়েছে। ঠিক এমুহুর্তে আমার ক্ষণজুড়ে কি ওই মাঝেমধ্যে আসা ব্যাপারটা ঘটছে? চারপাশের একটা বর্ণনা দেওয়া যাক।
প্রথম কথা আকাশ জোড়া বিশাল একটা চাঁদ। যে চাঁদটাকে গত কয়েকদিন ধিরে ধিরে বড় হতে দেখেছি, সেটা আজ তার সমস্ত আলো নিয়ে পৃথিবীর বুকে ঝরে পড়ছে। আমার বাম পাশে পদ্মা। দূরে তাকালে দেখতে পাচ্ছি, তীরবর্তি ঘন হয়ে উঠতে থাকা প্রাচীন অরণ্য। অরণ্যের অন্তরালে জনপদ আছে, এই গভীর নিশুতিতে যে জনপদ ঘুমিয়ে আছে নিথর শ্রান্তিতে। সেসব ঘুমন্ত মানুষদেরও গল্প আছে, পথচলা আছে, তাদের হৃদয়ে পদ্মার মতো বিশালতা আছে কিনা জানিনা, হয়তো পদ্মা তাদের চোখে ভরা বর্ষাগুলোতে দুঃস্বপ্নই এনে দিয়ে থাকে।
এই রাত্রির মাঝ প্রহরেও এলাকাটা জনশুন্য নয়। চায়ের দোকান খোলা, খাবারের ক্যান্টিনও। এখান থেকে মাইল খানেক হেঁটে ডান দিকে গেলেই উপমহাদেশের সবচেয়ে বিখ্যাত নিশিপল্লী (কুক্ষাত কেন বলবো? নিখাদ শ্রম আর খাটুন্তে অর্থের বিনিময়েই এখানে লেনদেন হয়। দুর্নিতির মজ্জা নগর সভ্যতার গহীন ভিতরে। এখানে নয়।) যেখানে রাত্রি গভীর হলেই অন্যরকম সূর্য্য ওঠে। কোন একদিন এই আঁধারের রাজ্যে মানবতাকে দেখতে যাব আমি। একবিংশ শতকের মহান সভ্যতা আমাদের কতোটা আলোকিত করে তুলেছে, দেখা দরকার না? তবে আজ অন্যদিন। আজ নয়।
আমি বরং দেখি এক বিমুগ্ধ প্রান্তর। মাইলের পর মাইল বয়ে যাওয়া যে প্রান্তরে চুঁয়ে চুঁয়ে পড়ছে জ্যোছনা। মনে করি কোন এক অজ্ঞাত মহাপুরুষের বাণী- হৃদয় বিষন্ন হলেই তা বিশুদ্ধ হয়ে ওঠে। চেনা বিষন্নতা নয়, জীবনের গভীর বোধের দিকে আমাদের টেনে নিয়ে যায়, এমন বিষন্নতা।
তোমার কথাও কি আমি মনে করবো? আমাকে পড়তে পড়তে দেখবে একদিন নারী থেকে মানবী হয়ে উঠেছো। সুতরাং তোমাকে বারবার মনে পড়বে। তোমার কথা আমাকে লিখে যেতে হবে। এমন নরম জোছনা নামলেই ইচ্ছে করবে হাত রাখতে হাতের পর। ভুলে কিভাবে যাবো, যাবে? এ পথ তোমার কাছে ফেরার পথ ছিলো। বিগত দিন ছিলো। রাত্রি ছিলো। এমন নরম জোছনা ছিলো। আমরা একটা নদীর এপার, ওপারে বসে বাতাসে এক প্রতিজ্ঞা ভাসিয়ে দিলাম। প্রান্তরে বিছানা পাতা এই জোছনার প্লাবন আমরা একসাথে দেখবো একদিন, পাশাপাশি। মানবী, প্রান্তর ভেঙে আজন্ম জোছনা নামে আজও, নামবে। কবে তোমার সময় হবে আকাশ দেখার?
আমি এখন কোথায় আছি বলবার কি প্রয়োজন? অনেকেই হয়তো বুঝে গিয়েছে, জেনে গিয়েছে। ফেরির অপেক্ষায় এক দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আমার বাস। চারপাশের সবাই ঘুমন্ত। সামনের সিটে আমার খুব পরিচিত এক শিশু তার জননীকে বুঝাবার চেষ্টা করে যাচ্ছে, বাস থেকে বাইরের হাওয়ায় যাবার তার প্রবল ইচ্ছা। জানালার পাশে বসে আমার কেনো কিছু করতে ইচ্ছে করেনা? হাঁসতে ইচ্ছে করেনা, কাঁদতেও না। অদুরে দাঁড়ানো শিরীশ গাছটার মৌনতা দেখে ভাবি, আমিও একদিন ওই গাছটার মতো হয়ে যাবো। ওকি? গাছের ডালে ডানা ঝাপ্টায় কোন অচেনা পাখি?
চাঁদ ডুবে গেলে কি ধুপ করে আঁধার নামবে? আন্দালুসিয়ান একটা প্রবাদ আছে। রাত্রির সবচেয়ে অন্ধকার সময় আসে সুর্য ওঠার আগের ঘন্টায়। জোছনা রাতের শেষে আঁধার ঠিক কখন নামে? নাকি নামেনা? এতসব ভেবে লাভ কি? বাতাসে মুখ বাড়িয়ে দিলেই আরাম। বাতাসেই তো জীবনের গল্প মিশে থাকে, লেপ্টে থাকে প্রিয় ঘ্রাণ, চেনা ইতিহাস। এখন বরং কবিতা পড়া যাক। জীবনানন্দের গভীর বিষাদিয়া লাইন।
আকাশে ঘুঘুর ডাক, বাতাসে ঘুঘুর ডাক এমন ঘুঘুর ডাক আজ
উঠোনে চাঁদের আলো, নরম চাঁদের আলো, এমন চাঁদের আলো আজ
তুমি যে রয়েছো কাছে,
তোমার হাতের ছায়া, তোমার শাড়ির ছায়া ঘাসে।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৩:০৩
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×