somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বৈদেশের দৌড়াদৌড়ি ঈদ আর তিন মুসাফিরের ভোগান্তির প্যাঁচাল

০৬ ই অক্টোবর, ২০০৮ দুপুর ২:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বৈদেশের ঈদ যে কি জিনিষ এইবার বুঝলাম। আগে আত্মীয়-স্বজনরা কাউ কাউ করতো বৈদেশ থেইকা, ভাল্লাগে না ভাল্লাগে
না কইতো – আর আমি কইতাম কাউ কাউ না কইরা নামাজ পইড়া খায়া ঘুম দিলেই তো হয়। এইবার কাউ কাউ শুরু হইছে আমার।

অফিস থেইকা চার কলিগ ইনক্লুড আমাগো প্রজেক্ট ম্যানেজার রওনা দিছি বার্লিন অফিসের দিকে বিশ রোজার দিকে,মাঝখানে একদিন কাতারের দোহায় ধুমায়া ঘুইরা বার্লিন পৌছলাম।

বার্লিনে মজায়ই ছিলাম। অফিসের ওই পারেই হোটেল, অফিস শেষ কইরাই ঘুরতে বাইর হইতাম। বারো দিনে সাকুল্যে চল্লিশ টেকার (ইউরো) টিকেট দিয়া যেমনে ইউ বান,এস বান, ট্রাম আর বাসে ঘুরছি, জার্মানরা জানলে এরপর ট্রিপ-বেসড টিকেট চালু করবো! মাঝে দুইদিন চল চল প্রাগ গগনে বাজে মাদল কইরা চেক রিপাবলিকের প্রাগে ঘুরছি,অসাধারণ। (ব্লগার তুষার ভাইরে ধইন্যাপাতা এই সাজেশনটার লাইগা)।

প্রাগ থেইকা ফিরা অফিসে গেলাম, লাঞ্চের সময় দেখি দুই লেবানিজ কলিগ ঈদ মোবারক দেয়! আমরা ত ভাবছিলাম বাংলাদেশের একদিন আগে ঈদ হইবো এইজন্য তেমন গা করি নাই ঈদের জামাত টামাত নিয়া,এক্ষণ দেখি দুই-দিন আগে ঈদ ফুরুৎ!



ঈদের দিনে আমাগো খানা-দানা, ট্রেনিং সেন্টারে , দেখলে কান্দন আহে।

যাই হোক তক্ষন ও তেমন খারাপ লাগে নাই, খালি ঈদের নামাজটা পড়তে পারলাম না এই ভাবছিলাম। ভাবলাম বাংলাদেশের লগেই ঈদ করমু। কিন্তু আমরা তিনজন রওনা দিলাম পোল্যান্ডের ব্রসলো’তে (wroclaw)- আর দুই কলিগের ঈদের আগে আগে বাংলাদেশে ফিরার প্রস্তুতি শুরু দেইখা বুকে চিন-চিন ব্যাথা শুরু হইল।

ঈদের দিন গিয়া পৌছলাম ব্রসলোতে। ফাঊল লুফথানসা তে পুরা উলটা ঘুইরা আইছি , মিউনিখ ঘুইরা । শালারা আবার আমার লাগেজ হারায়া ফেলছে মিউনিখ থেইকা আসার সময়, আমার লগে আরো বিশ জনের, বোঝো অবস্থা!!
তার উপর মিউনিখ থেইকা আনছে বোম্বার্ডিয়ার বিমানে, আমাগো ছয় নাম্বার বাস বহুৎ ভালা এর চাইতে (মনে হয় যাদুঘর থেইকা নামায়া আনছে)। ভাড়া মাশাল্লাহ যা নিছে তাতে ইজিজেট বা রায়ানএয়ার এ প্যারিস-রোম সব ঘুইরা আসা যায়। মেজাজ পুরা বিলা কইরা দিলো।

আগেই কইয়া রাখছিলাম এক পোলিশ কলিগরে , কোনো মসজিদ থাকলে বা ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট থাকলে যাতে জানায় – ঈদের দিনটা অন্তত দেশী ধরণের খানা খাইয়া কাটামু। হেয় জানাইলো , নাই । :(
কি আর করবাম , অফিসে গিয়া কাম কাইজ বুঝা শুরু করলাম। মাইজখানে তাজিন আপারে পাইলাম মেসেঞ্জারে , একটু হাঁ-হুঁ করলাম।
বাড়িত ফোন দিলাম , শুনলাম আমরা নাই বইল্যা আকাশ নাকি কাইন্দা-কাইট্টা বৃষ্টিতে ভাসায়া দিছে । - :) দাদু আমারে বেশী মিস করতাছে শুইন্যা আরো বেশী খারাপ লাগতাছিলো। আব্বু-আম্মু ভাইগো লগে কথা কইলাম, এই আর কি।

লাঞ্চের সময় অফিসের একটা ক্যান্টিনে গেলাম , লগের দুই কলিগের একজন এই শহরে আগেও আসছিলেন। ওইখানে গিয়া দেখি সব খানা-দানা পোলিশ ভাষায় লেখা । গোস্ত নাকি ঝোল কিসসু বুঝার উপায় নাই। ক্যান্টিনের আন্টি ইংরেজী শুনলে ভাব লয় হিব্রু শুনতাছে। তয় আন্টির মাইয়া নাকি কর্মচারী জানি না, ঊনারে দেইখা পোলিশ ই কওয়ার সাধ হইল। কেন হইলো , কমু না।
যাই হোক , এক অচেনা অফিস-কলিগের সাহায্যে পেরুগগি নাকি কি জানি অর্ডার দিলাম, লগে সালাদ আর একটা শরবত ফিরি, খাইতে পুরা রুহ আফজা। এত ক্যাচাল কইরা ওইটা অর্ডার দিবার কারণ হইলো, পর্ক(শুয়োর) খাইতে চাই না, ওই পেরুগগি নাকি ভেজ আইটেম। কিন্তু যক্ষন দিলো সাথে একটা স্যুপ, তক্ষনে দেখি স্যুপের মধ্যে আদ্দেকটা আধাকাচা মাংস, আর নারিকেলের পিঠার মত পেরুগগির মইধ্যে কি জানি ঠেকে। সালাদটা পানি দিয়া গিল্লা (মরার তাও গ্যাস-ওয়াটার, নরমাল পানি কিনতে খুইজ্যা নিতে হয়!) বেজার মুখে অফিসে আইসা পড়লাম তিন বংগসন্তান মিল্যা। এমনকি আমি, যারে বার্লিনে নুন-মরিচ-তেল ছাড়া সব কাচামুচা খাইতে দেইখ্যা কলিগরা সর্বভূক খেতাব দিছিলো, সেও ফেল মারলাম।

ম্যাকডোনাল্ড পুরা উলটা দিকে, তাছাড়া হোটেল এ না থাইকা সার্ভিসড এপার্টমেন্ট ভাড়া করছিই খালি দুইটা ডাইল-ভাত খাইবার লাইগ্যা। নাইলে তিন তারার আরাম ফালাইয়া অফিসের প্রায় আড়াইশো ইউরো দৈনিক বাঁচায়া আমাগো ফায়দা কি। তাই তিনজন মিল্লা টেসকো থেইকা আলু-পেঁয়াজ-নুন-মরিচ-ডিম আইন্যা আলু ভর্তা ডাইল, ফুলকপি আর টমেটোর ঝোল খাইবার প্ল্যান করলাম। হাছা কইতেছি, এই মেনু শুইন্যা ‘অড্রা’ গাঙের পাশ দিয়া যাইবার সময় আমার দুই-ফোঁটা লোল পইড়া গেছিলো। আহারে , বেহেশতি খানা!!

এপার্টমেন্টে আইস্যা দেখি, মাইরা রাখছে আমাগোরে। ইলেকট্রনিক কার্ড দেখি খালি কোঁ কোঁ করে , দরজা আর খোলে না। খেইপা গিয়া এক কলিগ কাঁচের দরজায় লাত্থি মারবে কিনা পায়তারা করতেছিলো, এইসময় আমি আন্দাজে ডোরম্যান কল দিলাম। শালারা একটা ইংরেজী শব্দ লেখে না। অক্ষর যদিও রোমান,লগে আরও কয়েকটা পেট কাটা এল, এ ,ও আছে, কিন্তু কিসসু বুঝি না।

দেখি এক বুইড়া মহিলা দাদু ব্যাজ লাগাইন্না ইউনিফর্ম পইরা আইসা ফরত-ভরত কইরা কি জানি কয়, আল্লায় জানে পোলিশ ভাষা শুনতে আমার কাছে কেন জানি আরবীর মত লাগে! যাক উনি দরজা খুইল্যা দিলেন। আমি উনার লগে কথা কইবার চাই, আর আমার কলিগ দুইজন আমারে ভেঙ্গায়। ‘জিন্দাব্রে’ ছাড়া কমন আর কোনো শব্দ আমি আর দাদু জানি না, আর আমরা কথা কইয়া যাইতেছি!!

দরজা খুইল্যা এপার্টমেন্ট এ ঢুইকা কিছুক্ষণ পর মেজাজ পুরা আউলাইয়া গেলো। শালার ইলেকট্রিক চুলা ইন্ডিকেটর জ্বালায় কিন্তু গরম হয় না।রান্ধাঘরের বাত্তি জ্বলে না। দেশে তখন বাজে রাইত এগারোটা, এক দোস্ত ফোন দিয়া চরম খানা-পিনার কথা কইয়া মেজাজ আরো বিলা কইরা দিলো। এপার্টমেন্ট ম্যানেজার মহিলারে ফোন কইরা চিল্লাফাল্লা দিলো কলিগ, কিন্নরী কন্ঠে না ভুইল্যা। মহিলা কয়, আইজ আর কেউ আইবো না ।(তারমানে হইলো আবার শহরের উলটা পিঠে যাও নয় পেটে পাত্থর বাইন্ধা পইড়া থাকো)।

আবার বাইর হইলাম দাদুর খোঁজে, ব্রসলো’র ঘূর্ণিঝড় বাতাসে টি-শার্ট পইরা বেখেয়ালে। হায়রে ঈদের রাইত। দাদুরে ইশারা ইঙ্গিতে বুঝাইতে না পাইরা আমাগো এপার্টমেন্টেই লইয়া আসলাম।আইন্না মাথা চাপড়ায়া দেখাইলাম কাহিনি কি। মুখচোখ বাঁকায়া আমরা যে রাইগ্যা গেছি ওইটা ও বুঝাইলাম।

দাদু দেখি আমারে পিছে পিছে যাইতে ইশারা দেয়। আবার বাইর হইলাম। পাশের এপার্টমেন্ট বিল্ডিং এ নিয়া একটা চিপা স্টোররুম থেইকা দেখি একটা বাল্ব আর একটা পোর্টেবল ইলেকট্রিক চুলা আমারে ধরায়া দিলো। আসবার সময় আবার মাথায় হাত দিয়া দেখি কি কি জানি কইতে লাগলো।(মনে হয় কইতাছিলো, নাতি ডরাইস না, দাদী আছে না!) বুড়ির ভাব যেন সব আমি বুঝতাছি। আমিও ইংরেজী ছাইড়া খাস বাংলায় দাদুরে ধইন্যা পাতা তাতা সব দিয়া দিলাম। হাছা কইতাছি, কেন জানি একটু একটু কান্দন আইতাছিলো। দুইন্যার সব দাদুরাই মনে হয় একরকম।


কিছু ফটুক দিমু পরে (আমি নাই আগেই কয়া দিলাম, তয় আমার দুই কলিগ আছে ফটুকে)




সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০০৮ রাত ৩:৫২
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজামী, মুজাহিদ, বেগম জিয়াও বিজয় দিবস পালন করেছিলো!!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০



মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বেগম জিয়ার মুরগী মগজে এই যুদ্ধ সম্পর্কে কোন ধারণা ছিলো না; বেগম জিয়া বিশ্বাস করতো না যে, বাংগালীরা পাকীদের মতো শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে পারে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার থেকে

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×