somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমিয়াখুম বিজয়ের গল্প - বান্দরবান ভ্রমণ চতুর্থ পর্ব

০৭ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২ তারিখ। বান্দরবানে আমাদের চতুর্থ দিন। দলের প্রায় সবাই মানসিক এবং শারীরিক ক্ষমতার সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে গেছি। তবে গত দুই দিনে সারভাইভ করার ভয় প্রায় পুরোটাই কেটে গেছে। এখন চিন্তা সবার যার যার বাসার। বলে আসা হয়েছিল ২ দিন নেটওয়ার্ক থাকবে না। ৩ দিনেও নেটওয়ার্ক পাওয়ার কোন নামগন্ধ নেই।


যাই হোক সকাল ৭ টার মাঝেই নয়াচরন পাড়া থেকে রওনা হয়ে গেলাম। নামার গতি এখন আগের চেয়ে বেশি। আধা ঘণ্টার মাঝেই হাজরাই পাড়ায় পৌঁছে গেলাম। সেখান থেকে কামরুল আর রাশেদ ভাই সাদেক ভাই এর সাথে চলে গেল সাকাহাফং জয় করতে, বাকিরা রইলাম হাজরাইতেই। আমাদের তেল শেষ। সাকাহাফং বাংলাদেশের আনফিশিয়াল হাইস্ট পিক, বাংলাদেশ ও মায়ানমারের বর্ডার এ অবস্থিত। ভবিষ্যতে আশা করি মিস হবে না ওটা। ভবিষ্যতে যারা যাবেন তাদের জন্য বলে রাখি হাজরাই পাড়ায় না থাকাই ভাল। লোকজন একটু ধান্দাবাজ কিসিমের আর খুবই অপরিচ্ছন্ন। এই একটা দিনই মনে হয় একটু আরামে কেটেছে, মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টা হাঁটতে হয়েছিল। ওদের সাকাহাফং উঠে আসার ফাকে এদিক ওদিক ঘুরে ঘুরে দেখলাম, আড্ডা মারলাম, ছবি তুললাম। এসব করেই মোটামুটি সময় কেটে গেল।








হাজরাই পাড়ায় আমাদের কিছু মুহূর্ত




ওরা তিন জন ১.১৫ এর দিকে সাকাহাফং থেকে ফিরে আসল। সবার চেহারা হয়েছিল দেখার মত। কামরুল কুঁড়েতে ঢুকেই বলল ২ ঘণ্টা ৫৫ মিনিটে সাকাহাফং উঠেছে। বলার পর দেখলাম কামরুল নাই, সে বারান্দায় উদ্ভ্রান্তের মত বসে আছে। এরপর ঢুকল সাদেক ভাই। তার অবস্থাও ভাল না। এদিক ওদিক তাকিয়ে বিস্কিট খুঁজল। বিস্কিট শেষ শুনে বিড়বিড় করে বলল বিস্কিট নাই জানলে জীবনেও সেদিন সাকাহাফং এ উঠত না। রাশেদ ভাই ঢুকল সবার শেষে। তার মুখে কোন আওয়াজ নেই, এদিক ওদিক কি জানি খুঁজল মনে হল, তারপরেই ধপাস করে শুয়ে পড়ল।


ওরা রেস্ট নেয়ার জন্য বেশি টাইম পায়নি। আধা ঘণ্টার মাঝেই রওনা হয়ে গেলাম। আজকে মোটামুটি রিলাক্স মুডেই হাঁটলাম। তাড়া ছিল না তেমন, সন্ধ্যার মাঝে দোলাচান পাড়ায় পৌঁছাতে পারলেই চলবে। সাদেক ভাই বলেছে আনুমানিক তিন ঘণ্টার মাঝে পৌঁছে যাব। বিকালে শুধু ছোট্ট একটা হাইক থাকবে।


৪.১৫ এর দিকেই পৌঁছে গেলাম দোলাচান পাড়ায়। আগের সব পাড়া থেকে এটা কিছুটা আধুনিক এবং সব থেকে বড়। এখানে দোকান আছে, কিছু কিছু শিক্ষিত পরিবার ও আছে। পৌঁছে সবাই যেটা করলাম দোকানের উপর এক রকম ঝাঁপিয়ে পড়লাম। তিন দিন আগের কেনা বিস্কিট তো কখন শেষ হয়ে গিয়েছে, সারাদিন না খেয়ে খিদেয় পেট চোঁ চোঁ করছে।


দোকানের জিনিস পত্রের দাম সব দিগুণ। কিন্তু এসব আনতে ওদের কি পরিমাণ কষ্ট করতে হয় আগামি পর্ব পড়লেই জানতে পারবেন এবং এই দিগুণ দাম দিতে আপনার একফোঁটাও খারাপ লাগবে না। দোকানের বড় বিস্কিটের প্যাকেট যা ছিল আমরাই শেষ করে দিলাম, সাথে চানাচুর ও। এরপর হামলা চালালাম ২ টাকার বিস্কিটের দিকে। যে যেই কয় প্যাকেট পারি কিনে রাখলাম।
পেট ঠাণ্ডা করতে করতে ৫ টা বেজে গেল। সাদেক ভাই থাকার জন্য কুঁড়ে ঠিক করতে গেল, সাথে কামরুল। একটু পর দেখি দুজনের কোন পাত্তা নেই। পাড়াটা বেশ বড়, পাড়ার আরেক মাথায় গিয়েও ওদের আর পাইনা, কি বিপদ। রাশেদ ভাই আর মারুফ গেল ওদের খুঁজতে। অনেকক্ষণ পর সাদেক ভাই এর গলার আওয়াজ কানে মধু ঢালল। সেও আমাদের খুঁজতে বেরিয়েছে। কিছুক্ষনের মাঝেই আমরা সেই পাড়ার কারবারির বাসায় আশ্রয় নিলাম। এখানকার ঘর গুলো অনেক বড় বড় এবং মজবুত, ঠাণ্ডাও কম লাগে।


উনাদের জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম এটা একটা মুরং পারা। তাদের নিজস্ব ধর্ম আছে, ধর্মের নাম ক্রামা। এটা পৃথিবীর সব চেয়ে নবীন ধর্ম, তাদের ধর্ম প্রচারক এখনও জীবিত। ওদের নিজস্ব বর্ণমালা ও আছে। অনেক দিন পর চা খাওয়ার সৌভাগ্য হল। দুধ চা নাই স্বাভাবিক ভাবেই, কিন্তু এতদিন পর চা পেয়ে মনে হল অমৃত।

সাদেক ভাই দুইটা মুরগি জোগাড় করে রান্না করতে বসে গেল। আমরা হালকা গল্প গুজব করলাম। ভাত রান্না হতেই খাওয়া দাওয়া সেরে ঘুমিয়ে গেলাম। পরদিন আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে বান্দরবান ট্যুর এর সবচেয়ে লম্বা হাইক।

আগামি পর্বে আপনাদের জন্য থাকছে কেওক্রাডং জয়ের গল্প।

প্রথম পর্বের লিঙ্ক ঃ Click This Link

দ্বিতীয় পর্বের লিঙ্ক ঃ Click This Link

তৃতীয় পর্বের লিঙ্ক ঃ Click This Link
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×