সেদিনটা হচ্ছে ১ তারিখ। আমাদের ট্যুর এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন। সকাল ৭ টার মাঝে রওনা হওয়ার কথা আমাদের। কিন্তু সবাই এত ক্লান্ত যে ঘুম থেকে উঠতে উঠতেই অনেক দেরি হয়ে গেল। সকালের খাবার কিছুটা খারাপ ই বলা যায়। সাদেক ভাই চাল কুমড়ার একটা তরকারী করেছে সাথে ডাল। কিন্তু পরিবেশের কারণে সেটা অত খারাপ লাগেনি। সবাই বেশ তৃপ্তির সাথেই খেয়ে উঠলাম। রওনা হতে হতে বেজে গেল ৯ টার মত।
আপাতত শুধু নামা। কিন্তু সেই নামতেই আমাদের বেশ বেগ পেতে হয়েছে। মোটামুটি ১ ঘণ্টা ধরে নামলামই শুধু। হয়ত আরো বেশি। সময়ের হিসাব নাই কোন সেখানে। নামতে আমার আবার বেশ ভয়, তাই আমি ছিলাম সব থেকে ধীর গতির। রাশেদ ভাই আমাকে সঙ্গ না দিলে আমি আগাতাম কিভাবে আল্লাহ জানে। রাশেদ ভাই বান্দরবানের ব্যাপারে ব্যাপক অভিজ্ঞ। এর আগে অনেকবার গিয়েছেন। নামার পর ভাবলাম এ যাত্রা হয়ত থামবে এবার। কিন্তু কিসের কি, সামনে দেখি আরেকটা সুবিশাল পাহাড়!!!
নামার শুরু
এই পাহাড়টা আমাদের সম্পূর্ণ ট্যুর এর সবচেয়ে বাজে অভিজ্ঞতা। কিছু কিছু জায়গায় প্রায় ৮০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেল এ খাড়া উঠে গেছে, পা রাখার কোন ভাল জায়গা নাই, অনেক জায়গায় পাতা পড়ে থাকায় বোঝার ও উপায় নেই যে পা রাখলে পিছলাবে কিনা। এক জায়গায় উঠতে হল গাছের শিকড় ধরে। এর থেকে বাজে ট্র্যাক খুব কমই থাকার কথা। অনেক কষ্টে ওটায় উঠে জিরিয়ে নিলাম সবাই। এরপর নামা শুরু হল। একি রকম বাজে নামার ট্র্যাক ও। আমাদের যাদের সমস্যা হচ্ছিল বসে ঘষে ঘষে নামলাম কিছু জায়গায়। রাশেদ ভাই এক বার পা স্লিপ করে পড়তে পড়তে বেঁচে গেল একটা গাছ পেয়ে। এভাবে নামতে হল আনুমানিক ১০০০ ফুট এর মত। অবশেষে অনেক কষ্টের পর যখন নামলাম তখন বাজে প্রায় ১২ টা। একবারে নিচের দিকে ঢাল ছিল কিছুটা সহনীয়। ওটুকু দৌড়েই পার হলাম, কানে তখন মধুর কণ্ঠে বাজছে আমিয়াখুম এর পানির শব্দ।
দূর থেকে আমিয়াখুম
তারপর যা দেখলাম কষ্ট সার্থক। আমিয়াখুম ঝরনার তুলনায় নাফাখুম কে শিশুই বলা যায়। বাংলাদেশ এ এমন একটা ঝরনা আছে চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। জায়গাটা দেখলেই বোঝা যায় আমাদের মত সভ্য মানুষের ছোঁয়া খুব কম ই পেয়েছে আমিয়াখুম। পানির স্রোত এখানে নাফাখুম এর চেয়েও অনেক বেশি। দুঃখের ব্যাপার সেখানে বেশিক্ষণ বসার সৌভাগ্য হলনা। অনেকদুরের পথ যেতে হবে। কয়েকটা বিস্কিট পেটে দিলাম, সাথে স্যালাইন আর পানি খেলাম।
আমিয়াখুম ঝর্না
আমিয়াখুম থেকে রওনা হলাম
৪৫ মিনিটের মত থেকেই আবার হাঁটা শুরু হল। বলা ভাল পাথর টপকানো শুরু হল। কিছুক্ষণ পর এল আসল মজা। এবার ভেলায় চরে ভ্রমণ। ভেলা একটা ছিলই এপারে, আমাদের আগে যারা এসেছিল তাদের বদান্যতা। দুপাশে খাড়া পাহাড়ের দেয়াল। তারমাঝে দিয়ে ৩ দফায় সবাই পার হলাম। ভেলা থেকে নামার জায়গাটা বেশ খারাপ। খুবই পিচ্ছিল আর বিপদজনক, সাদেক ভাই এর সহায়তায় পার হয়ে গেলাম সেই জায়গাটা।
ভেলায় ভ্রমণ
সাতভাই পাথর
প্রাকৃতিক গ্যালারী
আবার পাথর টপকানো শুরু হল। এরপর একে একে দেখলাম সাতভাইখুম, নাইক্ষংমুখ, মাছভারাকুম। প্রতিটি জায়গাই অসাধারণ। এর মাঝে সাতভাইখুম এর সামনে ছিল এক প্রাকৃতিক গ্যালারি। প্রকৃতির আজব লীলা। আরো দেখলাম সাতভাইমুখ পাথর। সেখানে বসে ফটোসেশন হল।
নাইক্ষংমুখ
আমিয়াখুম এর পরে
সারাদিন হাঁটার পর আসলাম নয়াচরন পাড়ায়। অবস্থা আগের দিনের চেয়ে একটু ভাল কিন্তু মনোবল কমে গেছে রাস্তার কাঠিন্য দেখে। সাদেক ভাই আশ্বস্ত করল এরপর থাইখং ছাড়া আর তেমন খারাপ রাস্তা পড়বে না। এখানেও থাকা খাওয়া একি রকম। রাতে তেমন বৈচিত্র্যময় কিছু হল না। সারাদিন প্রকৃতি দেখিয়েছে কি আছে তার ভাণ্ডারে। রান্না হওয়ার সাথে সাথে খেয়ে দেয়ে সবাই ঘুমিয়ে পড়লাম। অবিশ্বাস্য এক দিনের সমাপ্তি ঘটল।
সকল পর্বের লিঙ্ক ঃ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুন, ২০১৩ দুপুর ২:৩৭