সেকাল:
মুজিব বাহিনী/বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স( বি এল এফ) , ভারতীয় গোয়েন্দাসংস্থা র এর তত্তাবধানে ভারতের দেরাদুনে মেজর জেনারেল সুজন সিং উবানের ট্রেনিংয়ে প্রায় ১০ হাজার সদস্যের এই বাহিনীর নেতৃত্ব দেন তত্কালীন তিন ছাত্রলীগ নেতা আবদুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, সিরাজুল আলম খান এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে যুবলীগ নেতা শেখ ফজলুল হক মণি। । মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক এমএজি ওসমানী কিংবা পূর্বাঞ্চলে ভারতীয় বাহিনীর অধিনায়ক জেনারেল অরোরা এর কমান্ডের বাইরে এই বাহিনী গঠনের মূল উদ্দেশ্য ছিল মুসলমান ডানপন্থী ও চীনপন্থী বামদের হাত থেকে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব কৌশলে ছিনিয়ে নেয়া। সেই লক্ষেই তারা মাঠে নামে। পরিস্থিতি এমন চরম হয় এক পর্যায়ে মণির নেতৃত্বে তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদকে হত্যা করতে উদ্যত হয় এই বাহিনী । তাজউদ্দিনকে হত্যা করতে প্রেরিত ঘাতক আত্নসমর্পন করলেও যুদ্ধকালীন সময়েই বহু মুকতিযোদ্ধাকে হত্যা ও গুম করে এই বাহিনী । যদিও পাকবাহিনীর সাথে সরাসরি যুদ্ধের তেমন কোন কৃতিত্ব তাদের ইতিহাসে নেই। মুজিব বাহিনী এতটাই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছিল যে , বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, নয় মাসে পাকিস্তান বাহিনী আত্নসর্ম্পন না করলে , যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে, মুজিব বাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ লেগে যেত। সেক্ষেত্রে স্বাধীনতার লাল সূর্য আদৌ উদিত হত কিনা তাই সন্দেহযুক্ত।
জাতীয় রক্ষীবাহিনী: ১৯৭২ সালে 'আর্মড পুলিশ এ্যাক্ট' সংশোধন করে মূলত মুজিব বাহিনীর একটি অংশ থেকে তৈরি এই সেনাবাহিনী প্যারালাল ওই মিলিশিয়া বাহিনী। স্বাধীন বাংলাদেশেও এই বাহিনীর প্রশিক্ষণ ভারতীয় অফিসাররা দিতেন বলে প্রমান পাওয়া যায়। এসএলআর হাতে সবুজ জলপাই রঙের ড্রেসের এই বাহিনী সবার নিকট ছিল এক মূর্তিমান আতঙ্ক। এদের হাতে নির্যাতনে ২৭ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল বলে বিভিন্ন পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে। এছাড়াও ই সময় রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় ১৯ হাজার মানুষ। গুম ও খুন হয় এক লাখ। পিটিয়ে মারা হয় ৭ হাজার মানুষকে। এর মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা থেকে শুরু নারী-শিশুও বাদ যায় নি। তাদের মূল টার্গেট ছিল বামপন্থী দলগুলো ও অবাঙালি বিহারীরা।
বামপন্থীদের ওপর হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য সম্পর্কে মাওলানা ভাসানীর হক কথা লিখে, “একটি বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থা বিশেষ প্রোগ্রামে এ দেশে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের হিসেব হলো, বাংলাদেশে সোয়া লক্ষ বামপন্থী কর্মীকে হত্যা করতে হবে। তা না হলে শোষণের হাতিয়ার মজবুত করা যাবে না।” (২৬ মে-১৯৭২ : সাপ্তাহিক হক কথা)
অনেকে বলেন বঙ্গবন্ধুর অসম্মতিতে ও নির্দেশনার বাইরে এসব ঘটেছে । কিন্তু সাক্ষ্য-প্রমান বলে ভিন্ন কথা :
১৯৭২ সালে একদিকে তিনি (মুজিব) সকল মুক্তিযোদ্ধাকে অস্ত্র জমা দেয়ার নির্দেশ দেন, অপরদিকে আব্দুর রাজ্জাক ও সিরাজুল আলম খানকে অস্ত্র জমা দিতে বারণ করলেন। শেখ মুজিবের ওই নিষেধ সম্পর্কে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সিরাজুল আলম খান আর আমাকে ডেকেই বঙ্গবন্ধু (শেখ মুজিব) বলেছিলেন, সব অস্ত্র জমা দিও না। যেগুলো রাখার দরকার সেগুলো রেখে দাও। কারণ, সমাজ বিপ্লব করতে হবে। প্রতি বিপ্লবীদের উৎখাত করতে হবে, সমাজতন্ত্রের দিকে এগুতে হবে। এটা আমাদের পরিষ্কারভাবে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন।
১৯৭৪ সালে আইন সংশোধন করে এই বাহিনীকে ইনডেমনিটি দিয়ে বঙ্গবন্ধু সব অপরাধ বৈধ করে দেন।
একাল :
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাব আনুযায়ী ২০০৭ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত যেখানে ১৩ ব্যক্তি গুমের শিকার হন, সেখানে ২০১০ সালে ৩০ জন, ২০১১ সালে ৭০ জন এবং চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত গুম হয়েছে ২২ জন। অর্থাত মহাজোট সরকারের গত সোয়া দু’বছরে গুম হয়েছে ১২২ ব্যক্তি। এই ভীতিকর পরিসংখ্যানই বলে দেয় সরকারি সংস্থাগুলো ছাড়াও কোন বিশেষ বাহিনীর তৎপরতা। গবেষনায় বেরিয়ে আসে
“ক্রসেডার-১০০” (কোডনেম)
মুজিব বাহিনীর মত , ২০০৯ এর সেপ্টেম্বরে ভারতের দেরাদুনে যায় ১০০ সদস্যের আওয়ামী বিশেষ ক্যাডার বাহিনী এবং ২০১০ এর জুন পর্যন্ত ৬ মাস এদেরকে ‘বাংলাদেশি সেনাবাহিনীর কমান্ডোদের ট্রেনিং’ এর নামে গুম, গুপ্তহত্যার স্পেশাল ট্রেনিং দেয় ‘র’ এবং ভারতীয় আর্মির কমান্ডোরা। এর পুরো অপারেশন সরাসরি তত্বাবধান করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব) তারিক আহমেদ সিদ্দিকি। ক্যাডার বাছাই প্রক্রিয়াও অত্যন্ত গোপনে সম্পন্ন করেন মেজর সিদ্দিকি ও কিছু অবসর প্রাপ্ত সামরিক কমকর্তা।
এই বাহিনীকে বর্তমানে গুলশান বারিধারা ডিপ্লোমেটিক জোনে রাখা হয়েছে। বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, অত্যাধুনিক অস্ত্র, গ্যাস বোমা, স্যাটালাইট ফোন সুসজ্জিত এই বাহিনীর সদস্যদের সাধারণ পরিবেশে চলাফেরা নিষিদ্ধ। গোপনীয়তা রক্ষায় তাদেরকে অভাবনীয় বেতন এবং পরিবারকে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়। রোটেশন পদ্ধতিতে অপরেশন বন্টনের মাধ্যমে সাপ্তাহিক ও মাসিক ভিত্তিতে এদেরকে বিনোদন ভ্রমনে ভারতে পাঠানো হয়।
প্রশিক্ষন শেষে এই বাহিনীকে একটি হিট লিস্টি দেয়া হয়েছে যাদেরকে ডিসেম্বর ২০১৩ এর মধ্যে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। হিটলিস্টের মধ্যে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে বিরোধী দলের উচ্চ ও মধ্যম সারির জনপ্রিয় নেতা যারা ভবিষ্যত নির্বাচনে গুরুপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, ডোনার এবং প্রভাবশালী সমর্থকরা। চৌধুরী আলম (বিএনপি), সৌদি কূটনৈতিক খালাফ বিন মোহাম্মদ সালেম আলি ( জামায়াত সহানুভূতিশীল) সহ সাম্প্রতিক বিভিন্ন অমিমাংসিত গুম, হত্যা এই বাহিনীরই দ্বারা সংঘটিত হয়েছে । এম ইলিয়াস আলী এই বাহিনী দ্বারাই অপহুত হন। বিশ্বস্ত সুত্রে জানা যায় এই হিট লিস্টে আরও রয়েছে,আমানুল্লাহ আমান, মির্জা আব্বাস, সাদেক হোসেন খোকা, গরেশ্বর চন্দ্র রায়, হাবিবুর নবী সোহেল, ব্যারিষ্টার আব্দুর রাজ্জাক, শফিউল আলম প্রধান, আসম আব্দুর রব, মুফতি ফজলুল হক আমিনী, মাওলানা ফজলুল করিম।
তথ্যসূত্র :
মাসুদুল হক : বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ‘র’ এবং সিআইএ
যখন সময় এলো : সৈয়দ আল আহসান
সুজন সিং উবান : ফ্যান্টমস অব চিটাগং : দ্য ফিফথ আর্মি ইন বাংলাদেশ
নজরুল ইসলাম : একাত্তরের রণাঙ্গন অকথিত কিছু কথা
মাইদুল হাসান : মূলধারা ৭১
আবদুল মালেক : ফ্রম ইষ্ট পাকিস্তান টু বাংলাদেশ
weeklyblitz.net/2223/saudi-diplomat-murder-mystery-exposed
m.free-press-release.com/news-raw-trained-crusader-100-in-action-in-bangladesh-1335098104.html
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০১২ ভোর ৪:০৪