আহত দেহ আর রক্তাক্ত হৃদয়ে বন্যা ফিরে গেলেন যুক্তরাষ্ট্রে
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
'মুক্তমনা' ব্লগে লেখালেখির সূত্র ধরেই বিজ্ঞানমনস্ক লেখক ও ব্লগটির প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায়ের সঙ্গে পরিচয়, প্রণয় ও পরিণয় রাফিদা আহমেদ বন্যার। এই ব্লগে লেখালেখির কারণেই মৌলবাদীদের ধারালো চাপাতির দানবীয় অাঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে প্রাণ হারান অভিজিৎ। আহত দেহ আর রক্তাক্ত হৃদয় নিয়ে বন্যা ফিরে গেলেন যুক্তরাষ্ট্রে।
মঙ্গলবার দুপুরে উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়েন রাফিদা আহমেদ বন্যা। যুক্তরাষ্ট্রের উন্নত চিকিৎসায় হয়তো তার দেহের ক্ষত রোগ সেরে যাবে, কিন্তু হৃদয়ের রক্তক্ষরণ কখনো কী বন্ধ হবে? প্রাণের আবেগে ছুটে আসা একুশে বইমেলায় পাশে ঘাতকের আঘাতে রক্তস্নাত স্বামী অভিজিৎকে বাঁচাতে না পারার অক্ষমতা অার নিজে বেঁচে যাওয়া, ভুলতে কী পারবেন কখনো বন্যা?
ইউনেস্কোতে বাবার চাকরির সূত্রে বিশ্বের নানা দেশে বড় হয়ে ওঠা রাফিদা আহমেদ বন্যার স্মৃতিতে মাতৃভূমি বাংলাদেশের মানচিত্রকে নিশ্চয়ই মনে হবে ঘাতকের মুখ। যে দেশে মুক্তচিন্তা করাটাই 'গুনাহ'। ধর্ম-দর্শন নিয়ে লেখার জবাবে পাল্টা যুক্তির লেখনি এ দেশে ভোঁতা, প্রাণ কেড়ে নিতে তৈরি থাকা শাণ দিয়ে রাখা উদ্ধত অস্ত্র। তার কাছে মনে হতেই পারে বাংলাদেশ মানে মধ্যযুগ, বন্যার কাছে বাংলাদেশ মানে বর্বরতা। হাতে গোনা কিছু ধর্মান্ধের কারণে অন্ধকার বাংলাদেশ নিরন্তর তাড়িয়ে বেড়াবে প্রিয়জনহারা প্রবাসী এই তরুণীকে।
প্রথম বিবাহবিচ্ছেদের পর নিঃসঙ্গতার দিনে বন্যার জীবনে একপশলা আলো ছড়িয়ে দিয়েছিলেন অভিজিৎ রায়। দুজন দুই ধর্মের হলেও তাদের বিশ্বাস ছিল মূলত মানবধর্মে। সেটা সেই ২০০২ সালের কথা। ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমেই একে অপরকে চেনা-জানা আর সখ্য-প্রেম। পরের বছর ২০০৩ সালে তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বন্যার ছয় বছর বয়সের কন্যা তৃষাকে বাবার মমতা দিয়েই বুকে টেনে নেন ব্লগার অভিজিৎ। তিন সদস্যের ছোট্ট পরিবারটি সংসার পাতেন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়াতে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) যন্ত্র প্রকৌশলে পড়াশোনো করা অভিজিৎ রায় পিএইচডি করতে গিয়েছিলেন সিঙ্গাপুরে। সেখান থেকে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। প্রকৌশলী অভিজিৎ রায় জর্জিয়ার একটি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। রাফিদা আহমেদ বন্যা এনালিস্ট হিসেবে চাকরি করেন তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে। তাদের ছোট্ট মেয়ে তৃষা আহমেদ এরই মধ্যে বড়া হয়ে ওঠেছে। ‘এ’ লেভেল শেষ করার পর সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে সে। অভিজিৎ রায়ের লেখা বিভিন্ন বিষয়ে একডজনেরও বেশি বই প্রকাশিত হলেও এবারের একুশে বইমেলাকে সামনে রেখে আবারও নতুন বই বের করার পোকা তাকে পেয়ে বসে। স্বামী-স্ত্রী ফেব্রুয়ারি মাসটা ছুটি নেন নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই ছুটে আসেন প্রিয় মাতৃভূমি।
কে জানতো এটাই অভিজিতের শেষ ছুটি এবং শেষ ফেব্রুয়ারি। আর এবারের ফেব্রুয়ারিটা বন্যার কাছে রক্তাক্ত আর স্বজনহারানোর প্রতীক হিসেবেই আজীবন চিহ্নিত হবে।
২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির পাশে দুর্বৃত্তদের চাপাতি হামলায় নিহত স্বামী অভিজিৎ রায়ের সঙ্গে রাফিদা আহমেদ বন্যাও মারাত্মকভাবে আহত হন। ঘটনার পরপরই তাকে ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হয়। এরপর সেখান থেকে নেয়া হয় রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে। পরে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের তত্ত্বাবধানে ওই হাসপাতাল থেকে তিনি মঙ্গলবার (৩ মার্চ) যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে রওনা দেন। সেখানে উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হবে তাকে। তবে ভয়াল স্মৃতিবহন করা বন্যার রক্তাক্ত হৃদয়ের চিকিৎসা পৃথিবীর কোনো চিকিৎসকের পক্ষেই সম্ভব নয়।
অভিজিৎ-বন্যা দম্পতির ১৮ বছর বয়সী মেয়ে তৃষা আহমেদের ফেসবুক স্ট্যাটস দিয়ে এই লেখাটির উপসংহার টানা যেতে পারে। তৃষা লিখেছেন-
‘আমার বয়স যখন ৬ বছর, তখন আমার মায়ের সঙ্গে সম্পর্কের শুরু তার। এরপর গেল ১২ বছরে ক্রমে তিনি আমার বন্ধুতে, আমার নায়কে, আমার আদর্শে, বিশ্বস্ত নির্ভরতায়, আমার নাচের সংগীতে এবং আমার বাবায় পরিণত হন... বাবা আমাকে কখনোই প্রচলিত শান্তশিষ্ট অথবা বিনয়ী হতে বলেননি। তিনি আমাকে শিক্ষিত, উদ্যোগী এবং সাহসী হতে শিখিয়েছেন। তিনি আমাকে যা শিখিয়ে গেছেন, যে ভালোবাসা দিয়ে গেছেন, তা আমি সব সময় মনে রাখব। ... মৌলবাদীরা তাকে (অভিজিৎ) ছুরির আঘাতে হত্যা করেছে। ওই ঘটনায় আমার মা-ও গুরুতর আহত। যদি বলি এই ঘটনায় আমি আতঙ্কিত বা মর্মাহত, তাহলে কম বলা হবে। পরিস্থিতি যত খারাপ হোক না কেন পৃথিবীকে ভালো জায়গায় পরিণত করতে যুক্তির লড়াই শেষ হয়ে যাবে না। তবে ওই ঘটনাটি কেবল যুক্তরাষ্ট্রেই হতে পারে, কারণ বাংলাদেশ পাওয়ারলেস। সেটি দুর্নীতিগ্রস্ত এবং সেখানে কোনো আইনশৃঙ্খলা নেই। আমি গভীরভাবে সন্দিহান যে খুনিরা বিচারের আওতায় আসবে কি না।’।
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ধর্ম ও বিজ্ঞান
করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন
তালগোল
তুমি যাও চলে
আমি যাই গলে
চলে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফুরালেই দিনের আলোয় ফর্সা
ঘুরেঘুরে ফিরেতো আসে, আসেতো ফিরে
তুমি চলে যাও, তুমি চলে যাও, আমাকে ঘিরে
জড়ায়ে মোহ বাতাসে মদির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন
মা
মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।
অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন
কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।
একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে
ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন