somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্ট্রিং থিওরী------------------------------------- সহজ কথায় যা বুঝি ২

০৫ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১০:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম পর্ব

থিওরী অব এভরিথিং, স্ট্রিং থিওরী এবং কেন দরকার এই সুপার স্ট্রিং থিওরী?

স্কুল লেভেলে যারা ম্যান্ডেলিফের মডেলটা পড়েছেন তারাজানেন যে এই মহাবিশ্বের সকল পদার্থই পর্যায় সারনীর মৌলিক পদার্থের মাধ্যমে গঠিত। হয়তোবা আরও দুয়েকটা নতুন মৌলিক পদার্থ থাকতে পারে অনাবিষ্কৃত কিন্তু দুনিয়াবী জিনিসপত্র সব এগুলো দিয়েই তৈরী। এর বাইরে কিছু নেই। এখন কথা হলো এই মৌলিক পদার্থগুলো কি দিয়ে তৈরী? এর জন্য আছে তেমনি একটা সারনী যাকে আমরা স্ট্যান্ডার্ড মডেল বলেই জানি।
এই স্ট্যান্ডার্ড মডেল দ্বারা প্রায় সবকিছুর ব্যাখ্যা করা গেলেও অনেক প্রশ্নের উত্তর এখনও দিতে পারে নাই। এই যেমন বিশাল মহাবিশ্বের দিকে তাকালে দেখা যাবে সবাই সবার থেকে দুরে চলে যাচ্ছে কিন্তু কেউ কক্ষপথ থেকে ছিটকে পড়ছে না অথবা কেউ হাতের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে না। তবু এই মহাবিশ্ব সম্প্রসারমান। ডার্ক ম্যাটার আর ডার্ক এনার্জী এর পেছনে কাজ করলেও এগুলো কি দিয়ে তৈরী সেটা আমরা জানি না।

এখন একটা সাধারন কথা বলি। সবকিছু যদি বিগ ব্যাং এর মাধ্যমে সৃষ্টি হয় তাহলে সকল পার্টিক্যল এবং মৌলিক বল তথা এই মহাবিশ্বের সবকিছুই একত্রিত ছিলো বলা যায় অল্প কিছু সময়ের জন্য খুবই উচ্চশক্তি এবং চাপে।

এই পথ ধরেধরেই গুটি গুটি পায়ে আইনস্টাইন আর ম্যাক্সওয়েল সাহেব তড়িৎ আর চুম্বকীয় বলকে একীভূত করেছেন যার ফলে আমরা মোবাইলে একে অপরের সাথে কথা বলতে পারছি। প্রকৃতিতে আলোর অস্তিত্বও সেটাকে ঘোষনা করে। আবার গ্লাসগো, ওয়েইনবার্গ আর মুসলিম হয়েও কাফের সালাম সাহেব তিনজনে এই তড়িৎচৌম্বকীয় বলের সাথে দুর্বল আনবিক বলকে একত্রিত করে তড়ীৎ দুর্বল বলের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। আসলে এর সবকিছুই একটা গুরুত্বই ব হন করে। সবকিছুই একত্রিত হবে, সবকিছু একত্রে ছিলো একসময় এবং একটা অনুর ভেতর সবকিছুই একীভূত আছে এবং এসব কনিকা-প্রতিকনিকার সৃষ্ট সংঘর্ষের ধারাভিকতায় থেকেই এই মহাবিশ্বের পরিপূর্ন বহিঃপ্রকাশ।

যখন আরও পরীক্ষা নীরিক্ষায় দেখা যায় উচ্চ শক্তিস্তর ১০^১৬ GeV এ এই দুর্বল তড়িৎ বল আর শক্তিশালী আনবিক বল একীভূত হয়ে যায় তখন এদের চালচলন সব একক বলের ন্যায় আচরন করে। ঠিক এভাবেই ১০^১৯ GeV তে গ্রাভিটি কি রকম আচরন করে সেটাও দেখার বিষয়।

স্ট্রিং থিওরীর কাজটা এটাই.....ঠিক ১০^১৯ GeV এই চারটি বলের আচরন কেমন হয় সেটা পর্যবেক্ষন করা।

এই শক্তিস্তরের চারিত্রিক গুনাবলীর মধ্যে প্লান্কের ভরকে সংজ্ঞায়িত করা যায় এবং সেটা যদি সূত্রাকারে লিখি তাহলে আমরা পাচ্ছি:

m=(hc/G)^1/2 = ১.২২*১০^১৯GeV/c^২

এই উচ্চ এনার্জী স্কেলে এটা নির্দেশ করে যে আমাদের মহাবিশ্বের সবচেয়ে আদি সময়ে এরকম অবস্হায় বিরাজ করছিলো আর সবকিছুই এতে একীভূত ছিলো (তবে এখানে আমি যত স হজে বললাম তত স হজে না, অনেকে যদি বিন্দু ভেবে বসেন তাহলে ভুল করবেন, ম্যাভেরিক ভাইয়ের মতো দক্ষ গনিতবিদেরা এই বাক্যটাকে নিতান্ত এমেচারদের জন্য ছেড়ে দিতে পারেন)। কিন্তু মাত্রার শক্তিস্তর অর্জন করা এখনও কোনো পার্টিক্যাল এক্সিলারেটরের পক্ষে সম্ভব হয়নি। আর আমাদের প্রচলিত পদার্থবিদ্যের অনেক থিওরীতে এই প্লান্কের মানে নিয়ে হিসেব করতে গেলে সবকিছু ভেঙ্গে পড়ে।

মোদ্দা কথা হলো যদি আমরা ধরেই নেই বিগ ব্যাং এর মাধ্যমে আমাদের এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি তাহলে এইসকল বল এবং কনিকাসমূহ অবশ্যই একীভুত ছিলো এবং আমাদের সামনে দৃশ্যমান মহাবিশ্বের প্রতিটা অনু এটাই প্রমান করে যে চারটা বলা এক জায়গায় একীভূত আছে বলেও এক অনুর ভেতর সকল প্রকারের কনিকা এবং মৌলিক চারটি বল বিদ্যমান।

ঠিক এই কারনেই স্ট্রিং থিওরী এতটাই গুরুত্বপূর্ন এবং ক্ষমতাশালী।

অনেকেই হয়তো একমত না হতেও পারেন কিন্তু বাস্তবতা এটাই।

স্ট্রিং থিওরী কেন এটা নিয়েই দু পর্ব চলে যাচ্ছে আসলে জিনিসটা কি সেটা নিয়ে আমাদের জানা দরকার।

আপনাকে প্রথম পর্বেই বলেছিলাম শক্তির সূতো দিয়েই এই সবকিছু গঠিত। তাদের বিভিন্ন সাজসজ্বাই মূলত এতসব কনিকা, বলের উদ্ভব। তাহলে এই সূতোগুলোই বা কি এবং কেন?

তার আগে সূতার ব্যাপারটা একটু ক্লিয়ার করি। ইলেক্ট্রনের কথা একটু মনে মনে চিন্তা করি। আপনারা সবাই হয়তো জানেন ইলেক্ট্রন আমরা খালি চোখে দেখি না কিন্তু এই ইলেক্ট্রনের প্রবাহের কারনেই ঘরের বাতি জ্বলে, বিদ্যুত নামের জিনিসটির উদ্ভব। তো আপনি যখন চিন্তা করবেন তখন একে নিতান্ত একটা বিন্দু বা বলপয়েন্টের একটা ডট হিসেবেই ভাববেন। এখন এর যদি দৈর্ঘ প্রস্হ উচ্চতা মাপতে যান কিছুই পাবেন না। তাহলে এর কোনো মাত্রা নাই। আমরা সবচেয়ে মৌলিক সূতো বা তন্তুটির ক্ষেত্রেও তাই ভাববো।

তবে পদার্থবিজ্ঞানীরা বলেন এই কনিকা বিন্দুর মাত্রা না থাকলেও তন্তু বা স্ট্রিং এর একটা মাত্রা দেয়া যেতে পারে। যত ছোটই হোক না কেন এর একটা দৈর্ঘ্য থাকবেই। আমরা গোলাকৃতিই ভাবি বা চ্যাপ্টাই ভাবি না কেন, এর দৈর্ঘ্য থাকতেই পারে। হিসাব করে বলে দেয়া যায় যে সবচেয়ে মৌলিক তন্তুটির দৈর্ঘ্য হতে পারে ১০^-৩২ সেন্টিমিটার (মানে দশমিকের পর ৩২ শূন্যের পর ১...এত ছোট)। তার মানে এটা এতই ছোট যে আমরা একে একটা বিন্দু সম ভাবতেই পারি আর যেহেতু এর একটা দৈর্ঘ্য পাওয়া গেছে তাহলে তার মাত্রা ১।

স্ট্রিং থিওরী অনুযায়ী এই যে যতসব তন্তু বা সূতা সবকিছু দুভাগে বিভক্ত।





একটা খোলা আরেকটা বদ্ধ। বদ্ধটা হবে এমন সুতার এক মাথা আরেক মাথার সাথে লেগে থাকবে। এখন আকৃতি গোলও হতে পারে, চ্যাপ্টাও হতে পারে। এখন আপনি হয়তো বলতে পারেন এই যে একটা সুতা কোনটা বদ্ধ কোনটা খোলা তাহলে এরাতো একটা জায়গাও দখল করতে পারে। এই জায়গাটাকে আমরা বলতে পারি "ওয়ার্ল্ডশিট" বা "স্হানিকপাতা" (কেউ যদি ভালো নাম দিতে চান, দিতে পারেন)।

এখন এই শক্তির তন্তু বা সুতো গুলোর কিছু নির্দিষ্ট ধরনের কম্পন আছে এবং এদের এই চরিত্রগুলোকে আমরা বিভিন্ন কোয়ান্টাম সংখ্যা যেমন ভর, ঘূর্নন ইত্যাদি নামে সংজ্ঞায়িত করতে পারি। এখন এর পেছনে মূল ঘটনাটা হলো এই যে কোয়ান্টাম সংখ্যাগুলোর একেকটা বৈশিষ্ট্য এগুলো একেকটা স্বতন্ত্র পার্টিক্যাল বা কনিকাকে নির্দেশ করে। এই যেমন এই সূতোটা এভাবে কাপছে তার মানে এটা ভর দেবে আর ভর যে দেয় সে হলো হিগস কনিকা। তার মানে হিগস কনিকা এই ধরনের কাপুনিওয়ালা তন্তু দ্বারা গঠিত।

আর এটাই হচ্ছে আমাদের কাঙ্খিত সকল কিছুর একীভূতকরন অর্থাৎ থিওরী অব এভরিথিং যা আমরা শুধু মাত্র একটা জিনিস দিয়ে ব্যাখ্যা করবো আর তা হলো এই তন্তু বা স্ট্রিং।

ভায়োলিন বাজাতে পারেন বা এক তারা? কতরকমের সুর। কিন্তু সব সুর আমরা কিভাবে সংজ্ঞায়িত করতে পারি? চারটা বা একটা বা ছয়টা তারের সম্বিলিত সুর। শুধু তাদের কম্পাংকের ধরনের কম্বিনেশনই একেকটা বিচিত্র‌্যপূর্ন অসংখ্য সুরেলা টিউনের জন্ম।

কি মজা লাগছে এখন? যদি এরপরও মজা না লাগে তাহলে বলতে হয় পদার্থবিজ্ঞান আপনার জন্য নয়। সত্যি আপনার জন্য নয়। এমনকি যে সুরে মোহিত হয়ে যান আপনি সেগুলোও আপনার জন্য নয়।

এখন নীচের ছবিটা দেখুন।



এটা মূলত একটা বদ্ধ তন্তু বা বদ্ধ সূতো। তন্তুর এই রূপটির গ্রাভিটনের জন্য দায়ী। গ্রাভিটন হলো এমন একটি ভরহীন কনিকা যে গ্রাভিটি নামের বলটি বহন করে এবং এর ঘূর্নন সংখ্যা ২। এটাই হলো স্ট্রিং থিওরীর সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য্য কারন আমরা অলরেডি জেনে গেছি গ্রাভিটি কি এবং কেন এটা এতটা গুরুত্বপূর্ন। স্ট্রিং থিওরী এই ব্যাপারটাকে খুব সুন্দরভাবেই ব্যাখ্যা করে।

আজ এ পর্যন্তই: পরের পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০১৬ রাত ১:০৭
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৯

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???



আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে আছি,
আমাদেরও যার যার অবস্হান থেকে করণীয় ছিল অনেক ।
বলা হয়ে থাকে গাছ না কেটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×