somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

>> উপাসনালয়ে কিংবা তাজিয়া মিছিলে হামলা: সাদামাটা কার্ডের ভয়ংকর এক চাল

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৩:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সমগ্র মানবজাতি একই উদর থেকে এলেও বসবাস-অঞ্চলের ভিন্নতা ধীরে ধীরে সৃষ্টি করেছে বৈশিষ্ট্যের ভিন্নতা। এটা শারীরিক,মানসিক, সামাজিক সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে। এই বৈশিষ্ট্যের ভিন্নতার কারণে আবার জাতীয়তায় ভিন্নতা এসেছে। এসব বৈশিষ্ট্য, নৃতাত্বিক। একেক নৃ-গোষ্ঠীর রয়েছে একেক রকম সংস্কৃতি, একেক রকম সভ্যতা।

নৃতাত্বিক বৈশিষ্ট্য এতোটাই শক্তিশালী যে, অনেক সময় ধর্মীয় সভ্যতাতেও প্রভাব ফেলেছে। ধর্মের ভিন্নতা নিয়ে একত্রে বসবাস করা যতখানি কঠিন, তার চেয়ে বহুগুণে কঠিন হচ্ছে, নৃতাত্বিক বৈশিষ্ট্যের ভিন্নতা নিয়ে একত্রে বসবাস।
বাংলাদেশ। এতো অল্প ভূমিতে এতো বেশি জনসংখ্যা মানব-ইতিহাসে কোথাও কখনো ছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না। কিন্তু বিচ্ছিন্ন রাজনৈতিক ঘটনা ছাড়া এই অঞ্চলে জাতিগত ফাটল ধরে নি কখনো। তার কারণ, একদিকে ধর্মীয় অঙ্গনে ফেরকাবাজির অনুপস্থিতি, অন্যদিকে নৃতাত্বিক বৈশিষ্ট্যের অভিন্নতা। নিজ নিজ ধর্ম, মতাদর্শ, চিন্তা-চেতনাকে কেউ অন্যের মুখোমুখি হতে দেয় নি।
দুঃখজনক হলেও সত্য; পৃথিবীতে অরাজকতা সৃষ্টি করে, জাতিতে জাতিতে দ্বন্দ্ব লাগিয়ে যারা নিজেদের কর্তৃত্ব ফলাতে চায়, শাসনের নামে শোষণ করতে চায়, তারা বেশ ক’বছর ধরে বিভিন্ন ধরনের মাস্টারপ্ল্যান করে যাচ্ছে। বাংলাদেশকে দুটি ভাগে বিভক্ত করতে অনেক ধরনের কার্ড ফেলা হয়েছে। সব কার্ডই খেলার বোর্ডে মুখ থুবড়ে পড়েছে।
রাজনৈতিক বিরোধিতাকে জাতীয় বিভক্তিতে পরিণত করতে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত সহ রাজনৈতিক দলকে প্রায়ই মুখোমুখি করে। কিন্তু ফল আসে না। দলীয় ভাবে উচ্চপর্যায়ে কিছু মতবিরোধ দেখা গেলেও তৃণমূলে জাতি একাকার। একই ঘরের এক দেয়ালে বঙ্গবন্ধুর ছবি, তো অন্য দেয়ালে জিয়া। বাজারের রাজনীতি ঘরে ঢোকাতে পারে নি। তারপর “মুক্তিযুদ্ধ-চেতনা থিওরি” । এটাও অসার। এই ঔষধেও কাজ হচ্ছে না। মানুষ ব্যাক্তি-বিশেষে ঘৃণা বা শ্রদ্ধার বহিঃপ্রকাশ করলেও এই চেতনা ঘরে নিয়ে যেতে চায় না। দেখা গেছে, মুজিব-কোট পরে সারাবেলা জামাতের সকলকে বক্তব্যের মাধ্যমে পাকিস্তানে পাঠিয়ে রাতে এসে ভাইয়ের সাথে ভাত খায়, যে নাকি জামায়াতে ইসলামীর।

“আস্তিক-নাস্তিক থিওরি” তো মাঠে মারা গেল। যাদেরকে দিয়ে ডিভাইড করতে চেয়েছিল, তারা নিজেরাই এখন হাইড হয়ে আছে। যে ব্লগিংয়ের মাধ্যমে রেভুলেশন করতে চেয়েছে, সেই ব্লগিংটাই কলুষিত হয়ে গেছে। “ব্লগার” শব্দটাই আম-সমাজে বাজে শব্দে রুপান্তরিত হয়ে গেছে। “হিন্দু/বৌদ্ধ-মুসলিম দাঙ্গা থিওরি”। এই বীজটাও শস্য দিচ্ছে না। মানুষ এটাকে স্থায়ী বিভেদ না করে রাজনৈতিক ইস্যু বলে এড়িয়ে যায়।
জাতিগত বিভক্তি করতে তাই এবার আমদানি করেছে, নতুন এক ফর্মুলার। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এটা বিদ্যমান থাকলেও বাংলাদেশে এই প্রথম। গেইম-প্ল্যানটা খুবই খতরনাক। একজনের ধর্মীয় কর্মে আঘাত। মুসলমানদের মাঝে হাজারো রকমের দলাদলি থাকলেও এখনো কেউ কোন মসজিদে, মাদরাসায় হামলা করে নি (দু একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া, যা স্রেফ দেশীয় রাজনৈতিক)। এরকম চিন্তা-চেতনাই নেই বাংলাদেশের মানুষের।

‘’শিয়া-সুন্নী” ‘’মুসলিম-কাদিয়ানী’’ এসব দ্বন্দ্বের বিভীষিকা ঝলসে দিচ্ছে ইরাক থেকে ইরান,সিরিয়া থেকে পাকিস্তান সহ অনেক দেশে। এই বিভীষিকাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে খুবই ঠান্ডা মাথায়। ঘরে ঘরে ঝগড়া না থাকলে মোড়ল থাকবে ভুখা, এজন্য বিশৃঙ্খলা লাগিয়ে রাখা।কয়েক বছর ধরে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলার কেইস এনালাইসিস এবং ফিল্ড অবজারভেশন করলে প্রতীয়মান হয়, গত কয়েক মাস পূর্বে শিয়াদের তাজিয়া মিছিলে হামলা, এরপর তাদের উপাসনালয়ে হামলা এবং শেষমেশ আজকের আহমদিয়া উপাসনালয়ে হামলা কোনো মুসলমান তার ইমানি চেতনা থেকে করতে পারে না। বরং যারা জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট করে, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে ফায়দা লুটতে চায়, তাদেরই সম্ভাব্য রুটিন ওয়ার্ক। “হামলায় সামান্য একজন মানুষ মরেছে” কিংবা “কেউ মরে নি” এভাবে বলে বিষয়টাকে হালকা ভাবে নেয়া মানে ঘোর অন্ধকারের দিকে পা বাড়ানো। কারণ, এখানে মানুষের সাথে তার মূল্যবোধ জড়িত, যার কারণে সে অন্য মূল্যবোধকে আঘাত হানতে পিছপা হবে না। পৃথিবীতে ঘটছেও তাই।


সরকারের উচিত খুবই সতর্কতার সাথে বিষয়টাকে আভ্যন্তরীণভাবে হ্যান্ডল করা। থার্ড পারসন প্ল্যোরাল নাম্বারকে যদি এটাতে জড়িত করা হয়, খাল কেটে ঘরে কুমির আনার মতো পরিস্থিতি হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৩:৩৬
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×