মানুষ সামাজিক জীব । আমরা সমাজে বসবাস করি । সেই হিসাবে আমরা সবাই মানুষ । মাঝের থেকে কিছু ব্যক্তি এই ' মানুষ ' শব্দটির পুর্বে অ উপসর্গ বসিয়ে দেয় ।
যা হোক । একটা গল্প বলি । সুমন নামের এক মেধাবী ছাত্রের গল্প । ছোট থেকেই সে মেধাবী । ক্লাসে সব সময়ই ১ম অথবা ২য় হয় । পঞ্চম শ্রেণীতে বৃত্তি পায় । ষষ্ঠ শ্রেণীতে সে ক্যাডেটের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় । এতটুকু বয়সে এত সাফল্যে সে ভীত হয়ে ওঠে । তার পরিবার তাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখে । সে কি পারবে তা পুরণ করতে ! সামান্য ব্যর্থতায় সে খুবই বিমর্ষ হয়ে যেত । ধীরে ধীরে ব্যর্থতা তাকে গ্রাস করে ফেলল । তার পরিবার তাকে ব্যর্থতার দলে ফেলে দিল । সে হতাশ হয়ে পড়ল । যে ছেলেটা কখনো মেয়েদের সামনে দিয়ে হাটার সাহস পেত না সেই ছেলে সিগারেট খেয়ে রীতিমত মেয়েদের সাথে অশ্লীল আচরণ করা শুরু করল । সমাজ তাকে উপাধি দিল " অমানুষ "
ফালতু একটা গল্প বললাম । ধুর ! আচ্ছা ঠিক আছে । এবার ভাল গল্প বলতেছি ।
ধরি রাজু নামের একটা ছেলে । নেশাগ্রস্থ । সিগারেটের নেশা নয় । কম্পিউটারের নেশা । যেখানে সে তার বইয়ের কভার পেজের ছবি মনে রাখতে পারে না সেখানে সে প্রোগ্রামিংয়ের ভাষায় সুদক্ষ । বোঝাই যাচ্ছে তার রেজাল্ট খুবই জঘন্য । ফলাফল : কম্পিউটার বন্ধ । ভাত খেতে বসে বাবার কিছু বকা । মায়ের কমতি আদর । সব মিলে কিছু রাগ , অভিমান । তারপর পরীক্ষার খাতায় তার উদগীরণ । তারপর মানসিক অত্যাচার । ছেলের রাত করে ঘরে ফেরা , বন্ধু , আড্ডা , সিগারেট , অমানুষ . . . . . . . . . . .
আরে আজব তো ! আচ্ছা বাদ দিন । আমি ভাল গল্প বলতে পারি না । আরেকটা বলার চেষ্টা করি । এটাই শেষ ।
ধরি সুপ্তি নামের একটা মেয়ে । দেখতে খুবই সুন্দরী । যে একবার দেখে সে না চেয়েও দ্বিতীয়বার তাকায় । কলেজে উঠল । নতুন জায়গা নতুন বন্ধু । বয়ফ্রেন্ড হয়ে গেল । বিশ্বাসের ভারে নুয়ে পড়ল দেহ । কিছু মুহুর্ত পাগল করে দিল । তারপর ঘটনা আবছা প্রকাশ । পরিবার থেকে চাপ । সম্পর্কে বিচ্ছেদ । হুমকি । ফটোশপের সত্ ব্যবহার এবং কিছু স্থিরচিত্রের প্রচারণা । তারপর ? গৃহবন্দী । বাবা মায়ের বুক ছিড়ে ফেলা সাহিত্যচর্চা । জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা এবং চিরনিদ্রা , কলঙ্ক , অমানুষ . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .
পাঠক মাফ করবেন । সমাজের প্রতি আমি খুবই শঙ্কিত । এখানে সমাজ এমন একটি ওয়াশিং মেশিন যেখানে নোংরা কাপড় দিলে পরিস্কার হয় আর পরিস্কার কাপড় দিলে তাতে দাগ লেগে যায় ।
সম্প্রতি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর অনেক পরিবারকে দেখেছি নিস্তবদ্ধ হয়ে থাকতে । যেন তারা মৃত । আমার জানামতে এটা দুর্বল ঈমানের পরিচয় । অন্য কেউ সন্তানের রেজাল্টের কথা জিজ্ঞেস করলে তাদের বক্তব্য এরুপ যে ভাগ্যে লেখা ছিল । আর ভেতরে ভেতরে তারা ভাবছিল একটু যদি শাসন করতে পারতাম তো রেজাল্ট ভাল হত । বলা বাহুল্য এখানে শাসন মানে গায়ে হাত তোলা অথবা কারাগার ।
মজার ব্যাপার হল অনেককে বুঝিয়েছি যে এই রেজাল্ট নিয়ে কি তুমি কবরে যাবে নাকি ? ফেরেশতারা জিগাবে যে রেজাল্ট কি ? ৪ পয়েন্ট পাইছ তুমি ! জাহান্নামে যাও ।
এসবের যদি কিছুই না হয় তবে কেন এই ৩ টাকার কাগজের লেখা নিয়ে কাউকে বিচার করা হয় ? পরীক্ষার খাতায় লিখতে পারাটাই কি মেধা ? যদি তাই হয় তবে আমি বিয়ের পর সন্তান নিব না । আমি সব সহ্য করতে পারব কিন্তু নিজের ৫ বছর বয়সি ছেলের হাতে বই নামক অত্যাচার তুলে দিতে পারব না ।