somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শৈশবের একাল - সেকাল; শৈশবের সেই রঙিন দিনগুলি। (৯০ দশক ও বর্তমান সময়)

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ২:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমরা যারা ৯০ এর দিকে জন্মগ্রহণ করেছি এবং যারা গ্রামে বড় হয়েছি তারা গ্রামের সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য দেখেছি আবার শহরের সবচেয়ে অত্যাধুনিক দৃশ্যও দেখেছি।

-এখন তোমরা ঘরে বসেই টেলিভিশনে শত শত চ্যানেল ঘুরাও। মুহূর্তেই দেশ বিদেশের খবরটুকু পাচ্ছ। আর তখনকার সময় শুধুই সাদাকালো টিভি ছিল। আশেপাশের কয়েক বাড়ির মধ্যে একটা। ডিশ নামক কিছু ছিল না। তাতে শুধু বিটিভি আর ইটিভি ছিল। তাও চালের উপরে থাকা এন্টেনা ঘুরাতে হত। প্রতি শুক্রবার দুপুরে বাংলা ছবি, আলিফ লায়লা কিংবা বড় কোন অনুষ্ঠান থাকলে সেই সাদাকালো টিভি বাড়ির উঠানে বসানো হত। আর ঐ বাড়ির পুরুষ-নারী সকলে উঠানে বসে টিভি দেখত।

-তোমরা এখন কোথাও গেলে হরদমছে সেলফি তুলে আপলোড কর, বিয়েতে ডিএসএলআর কিংবা ভিডিও করাও আরও কত কি। আর তখনকার সময়ে কি হত জানো? বড় বড় বিয়ের অনুষ্ঠান হলে তাতে বড়জোর “কোডাক” এর ফিল্ম সিস্টেম ক্যামেরা আনা হত। আর তাকে ঘিরে কত উত্তেজনা। ক্যামেরা থেকে ফিল্ম খোলার সময় অনেক বাড়তি সতর্কতা ছিল। কারণ রোদের তাপ লাগলেই ফিল্ম জ্বলে যেত। কারো কাছে ক্যামেরা থাকা মানে বিশাল ব্যাপার।

-আজ প্রত্যেকের হাতে হাতে সেলফোন। কিন্তু ২০০০ এর আগে সেলফোন কি জিনিস আমরা তা দেখিনি বললেই চলে। বাড়িতে ফোন থাকতো না বললেই চলে। বাজারে ফ্যাক্স এর দোকানে থাকতো মোবাইল। তাও স্মার্টফোন না। নোকিয়ার বড় সাইজের ফোন গুলো। তখন এতটা স্ট্রং নেটওয়ার্ক ছিল না। কথা বলার জন্য টিনের চালে উঠতে হত। এমনকি অন্য কোথাও থেকে ফোন করলে ফিরতি কোলের জন্য পে করতে হত।

-আজ কারো কাছে রেডিওর কদর নেই। তখনকার সময় এরকম এফএম ছিল না। ছিল শুধু বাংলাদেশ বেতার। বাড়িতে দুপুরে রকমারি গানের অনুষ্ঠান সবাই একসাথে শুনতো। মা, চাচী, জেঠী সহ বাড়ির সকলেই উঠানে রোদ পোহাতাম আর রেডিও শুনতাম। সেই শো শুনে বাড়ির বয়স্ক ও মুরুব্বীরা পোকলা দাতে হেঁসে দিত।

-জানো, তখনকার সময় সকালে ঘুম থেকে উঠে কাছারি ঘরে হুজুরের কাছে পড়তে যেতাম। তারপর বন্ধুরা মিলে বিলের মধ্যে ফুটে থাকা শাপলা কুড়িয়েছি। ডুব দিয়ে শালুক তুলেছি, আগুনে পোড়া দিয়ে তা খেয়েছি। বৃষ্টিতে পিছলা পিছলা খেলতাম। বিকালে হাডুডু হাডুডু খেলতাম। স্কুল ফাঁকি দিয়ে এখান থেকে সেখানে ছুটেছি। পুকুরে ডুবিয়ে ডুবিয়ে মাছ ধরে জোলাবাতি খেলতাম। সবাই একসাথে পুকুরে ঝাঁপিয়ে পড়তাম। পুকুরে ডুব দিয়ে মাটি তুলতাম। পুকুরের উপরে আম গাছের উপরে উঠে পানিতে লাফিয়ে পড়তাম, আবার উঠতাম আবার লাফ দিতাম। অন্য রকম সে অনুভূতি।

-রাতে ঝি ঝি পোকার ডাক শুনে ভয়ে গা গরম হয়ে যেত। আমাদের কে ভূতের গল্প শুনিয়ে আমাদের দাদি-নানিরা ঘুম পাড়াতেন। জীবনের সেরা কিছু সময় ছিল সেগুলো।

-সন্ধ্যা হলেই হারিকেন জ্বালিয়ে পড়তে বসতাম। প্রতিদিনের রুটিনবাঁধা নিয়ম ছিল হারিকেনের চিকনি(গ্লাস) পরিষ্কার করতে হতো। মাঝেমধ্যে চিকনি ভেঙ্গে ফেলতাম, পরে গালি শুনতাম। কাগজ দিয়ে ভাঙ্গা অংশ ঢেকে পড়তে বসতাম।

-সন্ধ্যার পর প্রশ্রাব করতে ভয় পেতাম। যদি ভূতে ধরে এই ভয়ে দরজায় দাঁড়িয়েই বা জানালা দিয়ে ছেড়ে দিতাম।

অথচ তোমরা আজ যারা স্কুল,গেমস, পিসি নিয়ে পড়ে থাকো, তোমরা তোমাদের পরবর্তী জেনারেশনের কাছে কি নিয়ে গল্প করবে, বল তো? অন্তত গল্প করার জন্য হলেও তোমাদের গ্রামে যাওয়া দরকার। বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য লুকিয়ে আছে অদূরের ঐ গ্রামে।

আমরা যা মজা করেছি, শৈশবকাল পার করেছি যা এখন শুধু কল্পনাই মাত্র। শৈশবের সেই রঙিন দিনগুলির কথা মনে পড়লে আজো মনের মধ্যে অজানা এক শিহরণ জাগায়। কোথায় হারিয়ে গেল সেই দিনগুলো! কালেরগর্ভে হারিয়ে গেলেও স্মৃতিময় দিনগুলোর কথা কখনই ভুলবো না।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৩:০৬
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×