আল্লাহ বলেছেন,‘ ক্বুল ইন্নানি হাদানি রাব্বি ইলা সিরাতিম মুসতাকিম, দ্বীনান কিয়ামান, মিল্লাতা ইব্রাহীমা হানিফা, ওয়ামা কানা মিনাল মুশরিকিন- বল, নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালকতো আমাকে সীরাতুম মুসতাকীম (সৎপথ), কায়েম (প্রতিষ্ঠিত) দ্বীন, ইব্রাহীমের হানাফী (একনিষ্ঠ) মিল্লাতের (জাতির) দিকে হেদায়েত প্রদান করেন, আর তিনি মুশরিক ছিলেন না।– (আল-ক্বোরআন, সূরা আনআম, ১৬১ আয়াত)।
*উপরোক্ত আয়াতে কারিমা দ্বারা বুঝাগেল যারা হানাফী তাদেরকে হানাফী মিল্লাতে হেদায়েত করেছেন স্বয়ং আল্লাহ। সুতরাং তাদের ব্যাপারে উল্টা-পাল্টা কথা বলার কোন সুযোগ নেই, বরং যারা বিভ্রান্ত তারাই শুধুমাত্র তাদের বিরোধীতা করে।
* আল্লাহ ইব্রাহীমের হানাফী মিল্লাতকে বলেছেন কায়েম দ্বীন ও সীতাতুম মুসতাকীম, বাস্তবতাও তাই পৃথিবীর মোট মুসলমানের শতকরা দুই তৃতিয়াংশের বেশী হানাফী, আর বাকী এক তৃতীয়াংশের কম অন্য সব মুসলমানদের দল। সুতরাং হানাফী মিল্লাত কায়েম দ্বীন বা সুপ্রতিষ্ঠিত দ্বীন হিসেবে আল্লাহর বাণীর সাথে শতভাগ মিলেগেছে। সুতরাং আল্লাহর বাণী অনুযায়ী হানাফী মিল্লাতই হলো সীরাতুম মুসতাকীম। যা আমরা প্রতি রাকাত নামাজে কামনা করি।
আল্লাহ বলেছেন,‘ ওয়ামান আহসানু দ্বীনান মিম্মান আসলামা ওয়াজহাহু লিল্লাহি ওয়াহুয়া মুহসিনুন, ওয়াত্তাবায়া মিল্লাতা ইব্রাহীমা হানিফা, ওয়াত্তাখাজাল্লাহু ইব্রাহীমা খালিলা- যে মুহসীন (সৎকর্ম পরায়ন) হয়ে ইসলাম পালন করে এবং ইব্রাহীমের হানাফী মিল্লাতের অনুসরন করে, তার চেয়ে দ্বীনে কে বেশী উত্তম? আর আল্লাহ ইব্রাহীমকে খলিল (বন্ধু) হিসেবে গ্রহণ করেছেন।–(আল-ক্বোআন, সূরা নিসা, ১২৫ আয়াত)।
* আয়াতে কারিমা অনুযায়ী আল্লাহ হানাফী মিল্লাতের শ্রেষ্ঠত্ত্বের ঘোষণা প্রদান করেছেন। সুতরাং তাদের চেয়ে আর কারো উত্তম হওয়ার কোন সুযোগ নেই।
আল্লাহ বলেছেন,‘ মা কানা ইব্রাহীমু ইয়াহুদিইয়ান ওয়ালা নাসরানিইয়ান, ওয়ালাকিন কানা হানিফাম মুসলিমা, ওয়ামা কানা মিনাল মুশরিকিন- ইব্রাহীম (আঃ) ইয়াহুদী ও খ্রিস্টান ছিলেন না, বরং তিনি হানিফাম মুসলিমা (একনিষ্ঠ মুসলমান) ছিলেন এবং তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন না।–(আল-ক্বোরআন, সূরা আলে ইমরান, ৬৭ আয়াত)।
*আয়াতে কারিমা অনুযায়ী মুসলমানদের প্রকৃত পরিচয় হলো, হানিফাম মুসলীমা বা হানাফী মুসলীম বা একনিষ্ঠ মুসলীম।
আল্লাহ বলেন,আল্লাহ বলেছেন, ‘ওয়াক্বালু কুনু হুদান আও নাচারা তাহতাদু, ক্বুল মিল্লাতা ইব্রাহীমা হানিফা, ওয়ামা কানা মিনাল মুশরিকিন-তারা বলে ইহুদী ও খ্রিস্টান হও হেদায়েত পাবে, বল বরং আমরা ইব্রাহীমের হানাফী(একনিষ্ঠ) মিল্লাত (জাতি) হব, এবং তিনি মুশরীক ছিলেন না।–আল ক্বোরআন, সূরা বাকারা ১৩৫ আয়াত।
*আয়াতে কারিমা অনুযায়ী হানাফীরা হানাফী হয়েছে আল্লাহর নির্দেশে এবং এটা প্রত্যেক মুসলমানে জন্য ফরজ।
আল্লাহ বলেছেন,‘ মিল্লাতা আবিকুম ইব্রাহীম, হুয়া সাম্মাকুমুল মুমলিমিন- তোমরা তোমোদের পিতা ইব্রাহীমের মিল্লাত, তিনি তোমাদের মুসলীম নাম রেখেছেন- (আল-ক্বোরআন, সুরা হজ্জ্ব, ৭৮ আয়াত)।
*কিন্তু দুঃখ জনকভাবে হজরত ইব্রাহীমের (আঃ) ছোট ছেলে হজরত ইসহাকের (আঃ) বংশের লোকেরা নিজেদের নাম রেখেছে ইয়াহুদী বা বনি ইসরাঈল। তাদের একটি শাখা হলো খ্রিস্টান। আর হজরত ইব্রাহীমের (আঃ) বড় ছেলে হজরত ইসমাঈলের (আঃ) বংশের লোকেরা তাদের নাম রেখেছে কুরাইশ। ইব্রাহীমের (আঃ) মুসলীম নাম কেউ বজায় রাখেনি বিধায় শব্দটাই বিলুপ্ত হয়ে যায়, কিন্তু হজরত ইসমাইলের (আঃ) বংশের কিছুলোক নিজেদের হানিফ পরিচয় বজায় রাখে, যারা ছিল মুষ্ঠিমেয়। নবুয়তের পূর্বে সেই দলে ছিলেন মহানবী (সঃ) ও হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) সহ আরো অনেকে। সুতরাং মহানবী (সঃ) হেরাগুহায় দ্যান করতে গেছেন হানিফ বা হানাফী হিসেবে এবং হানাফী হিসেবেই তিনি নবুয়ত লাভ করেছেন এবং সূরা বাকারার ১৩৫ আয়াতে আল্লাহ তিনি ও তাঁর উম্মতে হানাফী হতে আদেশ করেছেন। সুতরাং মহানবী (সঃ) নবুয়তের আগে ও পরে হানাফী ছিলেন, তাঁর সাহাবায়ে কেরাম হানাফী ছিলেন। আর আয়াতে কারিমা অনুযায়ী যারা হানাফী বা একনিষ্ঠ নয় তারা মুসলীম নয় বরং মুনাফিক। কারণ দু’দিল বান্দাকে মুনাফিক বলে। আমাদের এলাকায় একটা প্রবাদ আছে,‘দু’দিল বান্দা কালিমা চোর, না পায় শ্মশান না পায় গোর’।আর এরাই কপট বা মুনাফিক।
আলেমুল গায়েব আল্লাহ তাঁর বান্দার প্রিয় নাম হানিফাম মুসলিমা বা হানাফী মুসলীম বা একনিষ্ঠ মুসলীম ফিরিয়ে আনার জন্য হজরত আলীকে (রঃ) একদল সাহাবায়ে কেরাম সহ ইরাকের কূফায় নিয়ে এলেন। খোলাফায়ে রাশেদার চতুর্থ খলিফা হজরত আলী (রঃ) ইরাকের কূফায় খোলাফায়ে রাশেদার রাজধানী স্থাপন করলেন। কূফাবাসী পুরুষেরা ইবাদতের নিয়ম শিখল সাহাবায়ে কেরামের (রঃ) থেকে আর মহিলারা ইবাদতের নিয়ম শিখলেন সাহাবায়ে কেরামের ঘরের মহিলা সাহবায়ে কেরামের (রাঃ) থেকে। সাহাবায়ে কেরামের এসব অনুসারীর সবাই ছিলেন তাবেঈ (রঃ)। তাঁদের ইবাদত ছিল ইসলামের চলমান ইবাদত, যা ছিল মহানবীর (সঃ) সর্বশেষ আমল থেকে উৎসারিত।কিন্তু হাদীস ছিল দু’প্রকার যথা জারী ও মানসুখ। মানসুখ হাদীসের বিধান মূলত রহিত। যা নামাজে আমল করলে আমলে কাছিরের দায়ে নামাজ বরবাদ হয়।
সাহাবায়ে কেরাম (রঃ) ও তাবেঈনে কেরামের (রঃ) জারী বা চলমান ইবাদতের বিপক্ষে কোন হাদীস উপস্থান করা চরম বেয়াদবী। কারণ এসব হাদীস উপস্থাপন করা দ্বারা বুঝানো হয় সাহাবায়ে কেরাম (রঃ) হাদীস খেলাফী ছিলেন- নাউযুবিল্লাহ।সুতরাং সাহাবায়ে কেরামের চলমান ইবাদতের বিপক্ষে হাদীস বোখারী, ছিয়াছিত্তা অথবা যে কোন হাদীস গ্রন্থ থেকে উপস্থাপন করা হোক তা চরম বেয়াদবী বলে গন্য হবে।আর আল্লাহ বেয়াদবকে হেদায়েত প্রদান করেননা বিধায় এসব লোক গোমরাহ হয়ে যায়।
সাহাবায়ে কেরামের জারী বা চলমান ইবাদতের বিপক্ষে যত্তবড় ছহী হাদীস থাকুক না কেন তা’মানসুখ সাব্যস্ত হবে এবং এর আমল নিষিদ্ধ হবে। কারণ সাহাবায়ে কেরাম হাদীসের প্রথম অনুসারী তাদের ইবাদতের বিপরীত হাদীস জারি হাদীস বা ছহী হাদীস কোন মতেই হতে পারেনা। যদি তা’ ছহী হয় তবে তা’ অবশ্যই মানসুখ হবে, কিছুতেই তা’ জারি হাদীস হবেনা।
মহান আল্লাহ সাহাবায়ে কেরামের এ জারী বা চলমান ইবাদত লিপিবদ্ব করার দায়িত্ব দিলেন মেধাবী ও ফরহেজগার ইমাম আবু হানিফাকে (রঃ)। যার প্রুফ দেখে ভুল মুক্ত করেছেন মেধাবী ইমাম আবু ইউসুফ (রঃ), ইমাম মোহাম্মদ (রঃ) ও ইমাম জুফার (রঃ) সহ চল্লিশ সেরা ইমামের পরিষদ।এভাবে আল্লাহ তাঁর ইবাদতের নিয়মকে বিশুদ্ধ করিয়ে নিয়েছেন। যা হেদায়েত প্রাপ্ত মুসলামানেরা পালন করে। আর হেদায়েত প্রাপ্ত মুসলমানদের নাম স্বয়ং আল্লাহ রেখেছেন হানিফাম মুসলীমা বা হানাফী মুসলীম বা একনিষ্ঠ মুসলীম, যাদেরকে সংক্ষেপে হানাফী বলে। অবশ্য হানাফীরা শাফেঈ, হাম্বলী ও মালেকীদেরকেও তাদের একই দলের শাখা মনে করে। তবে আমার মতে সবার হানাফী হয়ে যওয়াই উত্তম কারণ এ নাম আল্লাহর অনেক পছন্দ। হানাফী মুসলীম ও তাদের শাখা মিলে মোট মুসলীমের শতকরা সাতাশি ভাগ আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতে রয়েছে।
এ দিকে ফেতনাবাজ আহলে হাদীস মতের লোকেরা ক্বোরআনের সাথে বেয়াদবী করে নিজেদের নাম রেখেছে আহলে হাদীস। তারা সাহাবায়ে কেরামের চলমান বা জারি ইবাদতের বিপরীতে ছহী মানসুখ হাদীসের আমল করে নিজেরা পথ ভ্রষ্ট হয়েছে আবার অন্যদেরকেও পথ ভ্রষ্ট করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।যারা ওয়ালী আল্লাহ, আইম্মায়ে মুসতাহিদিন ও আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের সাথে বেয়াদবী করে তারা আহলে হাদীসদের দলভুক্ত হবে। ওটা মূলত গোমরাহ লোকদের মিলিত হওয়ার প্লাট ফর্ম। ছহী মানসুখ হাদীসের আমলের কারণে এদের নামাজ হয়না, তাই আল্লাহ এদেরকে সীতাতুম মুস্তাকীমের পথেও হেদায়েত দান করেননা। কেউ যদি বলে সে দলে অমুক তমুক আছে, তবে আমি বলব তাদের অবস্থা আবু তালিব, আব্দুল মুত্তালিব ও মহানবীর (সঃ) মা-বাবার মতো।এরা আমাদের যতই প্রিয় হোকনা কেন, সূত্রমতে এরা গোমরাহ। এ এসব গোমরাহ লোকদের থেকে আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন-আমিন।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুন, ২০১৭ রাত ১:২৯