somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কনার সাথে আমার সম্পর্ক

২১ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ৮:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রতিমাসের শেষ শুক্রবারে আমার বাসায় একটা পার্টি হয়। সকাল ১০টা না বাজতেই ওরা বাসায় চলে আসবে; দুজনে বেডের দুপাশে বসবে; ধাক্কাধাক্কি করে, কখনো-বা মাথার চুল টানাটানি করে আমার ঘুম ভাঙাবে। চোখ খুলতেই মুখের কাছে এসে দুজনে উপুড় হয়ে একযোগে সুর করে টেনে টেনে বলবে— গুড মর্নিং…
আমি উঠে বসি। দুজনকে দুহাতে হাগ করে বলি— ইউ আর সো রিলেন্টলেস!
তারপর ওয়াশরুমে ঢুকি।
বের হলে দেখি দুজনে মিলেমিশে বেডরুম গোছাচ্ছে।
আচ্ছা, পার্টির কথাটা একটু বলে নিই। এদিন মনা বাজার-সওদা করে, আর কনা করে রান্নাবান্না। আমার দায়িত্ব হলো ওদের সাথে আরাম করে খাওয়া।
আমার মায়ের রান্নার হাত খুব ভালো ছিল। সব রান্নার মধ্যে কষানো মুরগির মাংসের কথা আমি আজও ভুলতে পারছি না। শীলার রান্নাও আমার মায়ের মতোই। কিন্তু ওর মুরগি কষানো আমার মায়ের কষানোর মতো হয় না। এ নিয়ে বিস্তর গবেষণা করেও কোনো সুরাহা পাই নি। এমন সময় একদিন মনা আর কনা বাসায় এলো। ওরা বললো, মাটির চুলোয় রান্না করতে হবে, আর হলুদ-আঁদা, মরিচ-জিরা, সব মশলা পাটায় পিষতে হবে। ‘দ্য আইডিয়া’। কিন্তু আমরা তো গ্যাসের চুলোয় রান্না করি, মাটির চুলো কোথায় পাবো? এবারও ওরাই ‘দ্য সলিউশন’ নিয়ে হাজির হলো। বাসার বাইরে বাগানের পাশে যে খোলা জায়গাটা রয়েছে, ওখানেই গর্ত করে অ্যাডহক মাটির চুলো বানিয়ে ফেলা হলো।
এরপর শীলা আমাদের ঘিয়ের পোলাও আর মুরগি কষানো খাওয়ালো। আমি ৪৫ বছর আগে মায়ের কাছে ফিরে গেলাম— মা যেন কষানো মাংস দিয়ে আমাকে ভাত বেড়ে দিল।
এভাবে প্রায় নিয়মিতই আমাদের এ ক্ষুদ্র পার্টি চলতে থাকলো। দুপুরের পর পড়ন্ত রোদে গাছের ছায়া হেলে পড়লে তার নীচে একটা পিঁড়িতে বসে শীলা রান্না করতো; কনা তার সাথে যোগ দিত। আমি আর মনা পাশে চেয়ার পেতে বসে রান্নাবান্না দেখতাম, ধেড়ে গলায় গান গাইতাম।
কনা রান্নাবান্নায় খুব পটু নয়। কিন্তু তিনজনে একত্র হয়ে একটা গেট টুগেদার করি, এটাই হলো মূল লক্ষ্য।
খেতে বসে আমরা নানান আলোচনায় মেতে উঠি। কিন্তু কোনো কোনোদিন আমার মনটা খুব ভারী থাকে। খেতে খেতে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে পড়ে।
শীলা খুব ভালো মেয়ে ছিল।
সন্ধ্যায় মনা বাসা থেকে বের হয়ে যায় শহর দেখতে। ফিরতে ফিরতে অনেক রাত হয়। কখনো রাত পার হয়ে যায়। পরদিন দুপুরে লাঞ্চ করে সে বাগের হাটের বাসে চেপে বাড়ি চলে যায়।
বাসায় কনা আর আমার সময়টুকু খুব নিরিবিলিতে কাটে। টিভি দেখি; গান গাই; গল্প করি। কনা ভালো নাচতে পারে; কত্থক, না কী যেন নাম— সবই উচ্চমার্গীয়। শিল্পকলা একাডেমিতে দু-একটা অনুষ্ঠানে সে নেচেছে। কনা বলে, দর্শকসারিতে প্রতিক্রিয়া বেশ ভালো ছিল।

কনা একদিন হঠাৎ বললো, ভাইয়াকে কি আজও টাকা দিয়েছ?
আমার কোনো প্রতিক্রিয়া হলো না। প্রতিক্রিয়া হওয়ার কথা ছিল কিনা তাও বুঝি না।
হতাশ ও আহত স্বরে কনা বলতে লাগলো, খুব ঘৃণা লাগে, নিজেকে ছোটো মনে হয়। আপন বড়ো ভাই কীভাবে এটা পারে! মাঝে মাঝে প্রতিবাদ করতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু পারি না। তুমি তো সবই বোঝো...
সারাবছর অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে ওদের চলতে হয়। মনার কোনো ব্যবসাপাতি নেই, আবাল্য ওর ভবঘুরে স্বভাব। স্বল্প কিছু ঘের আছে, কিন্তু তাতে সুবিধা করতে পারে না। এর উপরে আছে কনার ইউনিভার্সিটির খরচ। ওকে হিমশিম খেতে হয়। আমার পুরো সম্পদের একাংশ ওদের দিয়ে দিলে আমার কোনো কমতি হবে না। মনা এটা জানে, আরো জানে যে আমার বাসার সিন্ধুকটা ওর জন্য আমি বারোমাসই খুলে রাখি।
কিন্তু ওরা কেউ জানে না— আমি ভেবে রেখেছি, আমার স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পত্তি কনার নামেই উইল করে যাব। কনা আমার কেউ না। অথবা জানি না— কনা আমার কে।
সন্ধ্যায় চলে যাওয়ার সময় কনা অনেকক্ষণ পায়চারি করলো। ওর মনে ঐ ব্যাপারটা খুব তোলপাড় করছে তা ঢের বুঝতে পারলাম।
ইতস্তত করতে করতে কনা মুখ খুললো।
— ভাইয়া, বলছিলাম কী, কিছু মনে করবে না তো?
— নাহ। কী কথা, বলো?
— আমার কিছু টাকার দরকার।
— টাকা লাগবে নিবে। কত?
কনা একটা টাকার অঙ্ক বললো। অঙ্কটা খুব ছোটো নয়, অবশ্য অনেক বড়োও নয়। আমি ওর নামে একটা ক্রস্‌ড চেক লিখে হাতে দিলাম।
কনা চেকটা পেয়ে মাথা নীচু করে খাটের একপাশে বসে রইলো। ওর চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা পানি ঝরে পড়লো।
ও একটা ছেলেকে ভালোবাসে। এ টাকা সেই ছেলেটার জন্য।
— ভাইয়া। কনা বলতে থাকলো— এসব আমার ভালো লাগে না। তুমি যে এক মহাপুরুষ, মুনিঋষির চেয়েও মহত্তর, আমার ভাইয়া এটা কোনোদিনই জানবে না। সে শুধু জানবে আমাদের মধ্যে একটা ঘৃণ্য সম্পর্ক আছে, যাকে পুঁজি করে সে তোমার পকেট খালি করছে। এসব আমার একদম ভালো লাগে না।
ওর চোখের উপর আঙুল বুলিয়ে খুব মোলায়েম একটু আদর মেখে দিলাম। ওর অবয়বে অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা আর ভালোবাসা ফুটে উঠলো।
কনার সাথে একটা গভীর অবৈধ সম্পর্ক সৃষ্টির সকল সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে মনা। উদ্দেশ্য একটাই— এর বিনিময়ে যাতে আমার কাছ থেকে নিয়মিতভাবে টাকা তুলতে পারে। অদ্ভুত সুচতুর ফন্দি।
আমি ইচ্ছে করলেই মনাকে বলে দিতে পারি, তোর বোনের সাথে আমার কোনো অবৈধ সম্পর্ক নেই। এটা বলে ফেললে মনা যে বিশ্বাস করবে না তা আমি জানি। কারণ, সকালবেলা কনাকে আমার ঘরে রেখেই সে বাজার করতে বেরিয়ে পড়ে। ইচ্ছে করেই একটু বেশি সময় নিয়ে বাসায় ফিরে। এ দীর্ঘ সময়ে একটা পূর্ণাঙ্গ পুরুষ আর একটা যৌবনবতী মেয়ে ঘরে বসে লুডু খেলবে না। সন্ধ্যাবেলাতেও ওকে আমার কাছে সমর্পণ করেই সে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। নির্জন গৃহে দুজন নর-নারী সারারাত বিবিসি চ্যানেল দেখে কাটাবে না, এটা যে-কোনো আহাম্মকই বোঝে।
আমি কনাকে বলি, আমার মেয়েটা তোমার চেয়ে দু বছরের ছোটো। ও বেঁচে থাকলে আজ এতখানিই বড়ো হতো। হয়ত তোমার মতোই ইউভার্সিটিতে পড়তো। … আমি মহাপুরুষ নই, তবে কামকে জয় করতে জানি। মেয়ের মতো একটা মেয়ের সর্বনাশ করবো, আমি এতটা নির্মম নই। তোমার দরিদ্রতার সুযোগ গ্রহণ করবো, আমি এতটা নীচ আর এতটা পশু নই। আমি ভালো আছি। তোমাদের নিয়ে খুব আনন্দেই তো আছি।

১১ অক্টোবর ২০১৫

---

কালের চিহ্ন, একুশে বইমেলা ২০১৬

---

কালের চিহ্ন ডাউনলোড করতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন

সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ৮:৫৩
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×