প্রমীলার সাথে আমার কোনো প্রেমের সম্পর্ক ছিল না, কোনোরূপ যৌনসম্পর্কও নয়।
অথচ আমরা একে অপরকে সবচেয়ে বেশি বুঝতাম, বকতাম সবচেয়ে বেশি।
বললাম, ‘তোকে কল করলেই ‘ওয়েটিং’ পাই, কার সাথে এত কথা?’ অমনি সে
মোবাইল সেটটা মেঝেয় আছড়ে গুঁড়ো করলো। এটা অবশ্য ওর
অভিমান ছিল; ছেলেমানুষি।
দীর্ঘ ১০ ঘণ্টা বাসভ্রমণ শেষে শালগ্রামে পা রাখলো প্রমীলা।
‘না বলে চলে গেলি?’ বলতেই সে ফিরতি বাসের টিকিট কাটলো।
আমি তখন কাঁটাবনের রাস্তায় উদাস গড্ডলিকা।
প্রমীলার ছায়া পাশে দাঁড়ালেই আমার হাড়গুলো টের পায়। আমার কাঁধে
ওর হাত, ‘চেয়ে দেখ, আমি কাঁদছি।’
ঘুমের ভেতর ‘বুবু’ চিৎকারে আড়িয়াল বিলের ধানক্ষেত মাড়িয়ে
দৌড়াতে দৌড়াতে হাঁপিয়ে উঠলে যে ছায়ামূর্তি আমার সামনে এসে
নির্মলহাস্যে মধুর হাত বাড়িয়ে দেয়, সে প্রমীলা।
আমি প্রমীলার শাসন-হুকুম ভালোবাসি।
আমি হাসলেই প্রমীলার দুঃখ হয়, আমি হাসি না।
আমি যদি একবেলা প্রমীলাকে না দেখি, জীবনের সব অর্থই
অনর্থ হয়ে যায়।
আমি যদি একবেলা প্রমীলার সামনে না দাঁড়াই, সে ভাবে
ওর কথা আজ একটুও ভাবি নি।
প্রমীলাকে বলেছিলাম, ‘ভ্রূ প্লাক করিস না পাখি। এই যে পারলারে যাস, ওখানে কি
ছেলেরাও থাকে না?’ প্রমীলা একটা ভয়ানক কাজ করেছিল- পুরোটা মাথা ন্যাড়া করে
পবিত্র ভিক্ষু’র মতো সামনে এসে দাঁড়ালো- ওর চোখ ছিল বিশ্বস্ত ও নির্লিপ্ত,
আত্মবিশ্বাসে ভরপুর; পুলিশের হাতে ধরা-খাওয়া খুনের আসামির
মতো আমি কাঁপছিলাম।
প্রমীলা মাতৃস্থানীয়া নয়, সহোদরা নয়, প্রেমিকা অথবা বান্ধবী নয়। প্রমীলার সাথে
কী আমার সম্পর্ক জানি না। সকল অ-সম্পর্কের গভীরে তীব্র অস্তিত্বশীলা রমণীর
নাম প্রমীলা, যে আমাকে সকল সম্পর্কের মতো এখনো নির্মোহ ভালোবাসে।
২৮ অক্টোবর ২০১২
**
'অসম্পর্কের ঋণ', একুশে বইমেলা ২০১৫
ডাউনলোড লিংকঃ 'অসম্পর্কের ঋণ'
**
উৎসর্গঃ দু;খিত, এ যাত্রায় আপনারা কেউ নন, কেবল প্রমীলাকেই
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১১:২২