somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উপমহাদেশে হিংসার হাওয়া : ভারতের ফ্যাসিবাদের উত্থান

২১ শে নভেম্বর, ২০০৮ রাত ১১:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কিছুদিন আগেও জঙ্গিবাদের আছর লাগা দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের বিশেষ বদনাম জুটেছিল। ভবিতব্য কী, তা আজ নয় বোঝা যাবে কাল। আজকের পরিস্থিতিতে ভারতে জঙ্গিবাদী কার্যকলাপ নতুন চেহারায় হাজির হয়েছে। সেখানে কিছুদিন পরপরই ট্রেনে-মসজিদে, বাজারে বোমা ফাটছে। এর পেছনে রাতারাতি একটা খলনায়কও পাওয়া গিয়েছিল। তার নাম 'মুসলিম জঙ্গি’। কিন্তু ঘটনার ঘনঘটায় মনে হচ্ছে, উপমহাদেশে জঙ্গিবাদের একচেটিয়া খেতাব খোয়াতে যাচ্ছে মুসলমানরা। মাঠে হাজির হয়েছে ‘হিন্দু জঙ্গিবাদ’। বাবরি মসজিদ ধ্বংস ও গুজরাত দাঙ্গায় সাম্প্রদায়িক দাপটের যে চেহারাটি দেখা গিয়েছিল; এটা তারই সম্প্রসারণ। তবে বেশিরভাগ বিশ্লেষকই 'ওয়ার অন টেররের’ বাঁধা বুলি মোতাবেক চলেছেন, মনের ছানি সরিয়ে কঠিন সত্যকে মোকাবেলা করতে যাননি।

লালন থাকলে বলতেন, এসব দেখি কানার হাটবাজার। আর আজকের কবি রণজিৎ দাশগুপ্ত ‘যেদিকে দুচোখ যায় চলে যাব’ বলে চোখ টেপেন। পরক্ষণেই বলেন, ‘সম্ভবত গড়িয়াহাটার দিকে’। আমাদেরও তাই। মন যা চায়, চোখও তাই খোঁজে। সেই মন জঙ্গিবাদ আর মুসলিমকে একাত্মা একদেহ ভেবেছে। ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী মায় গণমাধ্যমেরও বুনিয়াদি বিশ্বাসও ছিল তাই। কিন্তু এখন তাদের পাণ্ডুলিপি বদলাতে হচ্ছে। পুরনো তত্ত্ব ঝাড়পোঁছ করতে হচ্ছে। কারণ, দেখা যাচ্ছে গত কয়েক বছরের বেশিরভাগ সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে জড়িত খোদ বিজেপি’র লোকজন। ভারতের একদল লেখক-সাংবাদিক-মানবাধিকার কর্মীরা অনেক আগেই ঘন্টা বাজিয়ে ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের এই উত্থানের হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। তাঁদের অভিযোগের আঙুল ছিল বিজেপির লোক-লস্করদের দিকে। কিন্তু সবদেশেই কর্তাদের টনক এতই অনড় যে, তাঁরা দ্বিতীয়বার ভাবতে বসেননি। উল্টো দোষানো হয়; সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর বদনাম হচ্ছে। আজ পরিস্থিতি উল্টে গেছে। সরাসরি নাশকতার অভিযোগে এক সন্ন্যাসিনী ও এক কর্মরত কর্ণেলকে আটক করা হয়েছে। রাজ্যে রাজ্যে পাওয়া যাচ্ছে কর্মী ও আলামত। জেরার মুখে হিন্দু জঙ্গিবাদী নেটওয়ার্কের গুমর ফাঁস হচ্ছে। কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ তো সাপ, আস্ত আজদাহাই যেন বেরিয়ে আসছে! তবে এসবই ডুবোপাহাড়ের চূড়া। তলায় আরো গল্প আছে।

অথচ এতদিন সবাই ‘মুসলিম জঙ্গিবাদের’ আতঙ্কে বিভোর থাকায় হক-বেহক অনেক তরুণের প্রাণ গেছে, নির্যাতিত হয়েছে অনেক ‘সন্দেহভাজন’। তবে বেশিরভাগের বিরুদ্ধেই অপরাধ প্রমাণিত হয়নি। তার মানে এই নয় যে, সেখানে মুসলিম জঙ্গিবাদ নেই। আছে। তবে বেমানান শোনালেও তারা বিলীয়মান, উদীয়মান হলো হিন্দু জঙ্গিবাদ। এরই মধ্যে গত আগস্টে ভারতীয় সাপ্তাহিক তেহেলকায় কংগ্রেস এমপি দিগ্বিজয় সিং ভারতে সাম্প্রতিক বোমা বিষ্ফোরণগুলির জন্য বিজেপিকে চিহ্নিত করেন। পার্লামেন্টে তথ্যপ্রমাণ হাজির করার কথাও ছিল তাঁর। তার আগেই জঙ্গিবাদের সঙ্গে বিজেপি পরিবারের আঁটঘাট চাউর হলো। তাদের ভারতজোড়া প্রস্তুতি নিয়ে গণমাধ্যমে যা এসেছে, তাতে অনেকের পিলে চমকানোর যোগাড়। বিভিন্ন রাজ্যে চালু আছে প্রশিক্ষণ শিবির। এদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো হিন্দু জনজাগরণ মঞ্চ, পানভেলের সান্তনা আশ্রম এবং সেন্ট্রাল হিন্দু মিলিটারি এডুকেশন সোসাইটির ভোনশালা মিলিটারি স্কুল। এমনকি কর্মরত কয়েকজন সেনা অফিসারের নামও চলে এসেছে তালিকায়। এসব থেকে ভারতে সন্ত্রাসবাদের নতুন মুখচ্ছবিটা ধরতে পারা যায়। বিজেপি’র সাম্প্রদায়িক আদর্শের সঙ্গে মিলিয়ে একে বলা হচ্ছে, ‘হিন্দু সন্ত্রাসবাদ’। তবে যে ধর্মেরই লোক এধরনের তৎপরতা চালাক, তার জন্য ঐ ধর্মবিশ্বাস ও তার অনুসারিদের নির্বিচারে দায়ি করার বুশীয় খাসলত বিষয়ে সাবধান থাকা দরকার। ধর্মবিশ্বাসের চেয়ে বরং গোড়ার রাজনৈতিক স্বার্থটির দিকে মনোযোগ দেয়াই যুক্তিযুক্ত।

ঐ আজদাহার ফণা আরএসএস তথা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ। এর প্রতিষ্ঠা হয় ১৯২৫ সালে ইতালির ফ্যাসিস্ট নেতা মুসোলিনীর আদর্শে। বিজেপি এর রাজনৈতিক শাখা। উগ্র সাম্প্রদায়িক কর্মসূচি বাস্তবায়নে সামরিক ও সাংষ্কৃতিক প্রশিণের ঘটনাও তাদের জন্য নতুন নয়। অক্সফোর্ড থেকে প্রকাশিত বেঙ্গল ডিভাইডেড গ্রন্থে জয়া চ্যাটার্জি দেখিয়েছেন, কীভাবে ১৯৪৬ সালের দাঙ্গার অনেক আগে থেকেই শরীর চর্চা কাবের আড়ালে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছিল। মজুদ করা হচ্ছিল গোলা-বারুদ। সেসময়ের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাগুলোতে এসবের আকছার ব্যবহারের নজিরও তিনি দিয়েছেন। জয়া চ্যাটার্জিসহ আজকের গবেষকরা তথ্য-প্রমাণ দিয়ে বলছেন, সেসময়কার হিন্দুত্ববাদীদের কার্যকলাপেই সাম্প্রদায়িক দেশভাগ ছিল অনিবার্য। সম্প্রতি খোলস ফেটে যাওয়ার পর দেখা যাচ্ছে, পুরাতন চালের মতোই পুরাতন কৌশল বেশ কাজে দিচ্ছে। তার জোরেই রাজনীতিতে গৌণ হিন্দুত্ববাদ আজ মূল ধারার রাজনীতির অন্যতম কারিকা শক্তি বনে গেছে। ভারতে দলিত-মুসলিম-খ্রীস্টান ও আদিবাসীদের মুক্তি আন্দোলনের প্রতিষেধক হিসেবে অনেকেই মধ্যপন্থি কংগ্রেসের তুলনায় চরমপন্থি বিজেপিকে ভরসা করছে।

নিঃসন্দেহে জঙ্গিবাদ বিজেপির হিন্দুত্ববাদের প্রধান তরিকাও নয়। বিজেপি হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল: ধর্মনিরপেক্ষ বহুজাতিক ভারতকে তারা ‘হিন্দু ভারত’ বানাতে চায়। তাদের চোখে অ-হিন্দুরা ‘জাতীয়’ শত্র“। ভারতের পুঁজিপতি শ্রেণী ও আধুনিক মধ্যবিত্তদের মধ্যেও এই চিন্তার কদর বাড়ছে। ভয়ের কথা সেটাই। নরেন্দ্র মোদীর গুজরাত এই ধরনের ঘৃণার রাজনীতির অতিকায় কর্মশালা। সরকারি মদদে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা চালানো, ঘর-বাড়ি-দোকানপাট পোড়ানো, গণধর্ষণসহ বহু বীভৎসতার পাথুরে প্রমাণ থাকার পরও গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদী ‘সাচ্চা’ মানুষ, দক্ষ প্রশাসক। তাঁর প্রত্যক্ষ মদদের অকাট্য প্রমাণ থাকার পরও তাঁর পুননির্বাচিত হওয়া ঠেকে থাকেনি। ভারত সরকারের নানাবতী কমিশনও মোদীকে নির্দোষ ঘোষণা করতে দ্বিধা করেনি। একেই বলে, যো জিতা ওহি সিকান্দার। ভয় হয়, একদিন হয়তো একাত্তরের গণহত্যাকারীদেরও এরকম সাচ্চা বনে যেতে মুশকিল হবে না।

এই মোদী বাদশা’র রাজ্যে মুক্তবাজার, বহুজাতিক বিনিয়োগ আর কর্পোরেট মডেলের সঙ্গে উগ্র ধর্মীয় আদর্শ একাকার হয়ে ভয়ের রাজত্ব কায়েম করেছে। সংখ্যালঘুদের দলন করা যেখানে বীরত্ব সেখানে ফ্যাসিবাদের উত্থানের পরিবেশ চৌদ্দ আনাই পাকা। নাৎসি জার্মানীতেও ইহুদিদের বিরুদ্ধে জার্মানদের ঘৃণায় মাতিয়ে হিটলার মতায় বসেন। বাদবাকি ইউরোপ তখন ভেবেছিল, দেখি না কী করে! সেই দেখার অপোর খেসারত গোটা মানবজাতিকেই রক্ত আর ধ্বংসের দামে দিতে হয়েছিল। বিজেপিও ওরকম ঘৃণার জিগির ছড়াচ্ছে ভারতের সংখ্যালঘু ও অহিন্দুদের বিরুদ্ধে। সংখ্যালঘু খ্রিস্টানদেরও তারা ছেড়ে কথা বলছে না। বিজেপি’র এক শীর্ষ নেতা তো বলেই ফেলেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগের জার্মানীতে ইহুদিরা যেমন, এখনকার ভারতের মুসলমানরাও তেমন। গুজরাতের পাঠ্যপুস্তকে তাই হিটলার বন্দিত হন। ইহুদিমুক্ত জার্মানির আদলে বিজেপিও অহিন্দুমুক্ত ভারত চায়। বলপ্রয়োগ ও আতঙ্ক ছড়ানো তারই আয়োজন। এ ধরনের রাজনৈতিক মতবাদ ও কর্মসূচির বিশুদ্ধ নাম ফ্যাসিবাদ। বলতে দ্বিধা নেই, আজ ভারতে সেরকম এক ফ্যাসিবাদের উত্থানই আমরা দেখতে যাচ্ছি। ফ্যাসিবাদ ও বড় কর্পোরেশনের সম্পর্ক সুবিদিত। টাটা, রিল্যায়েন্সও বলছে, গুজরাত হলো পুঁজিপতিদের স্বপ্নের গন্তব্য। আকলমান্দ কি লিয়ে ইশারাই কাফি।

বিজেপির এই রাজনৈতিক যাত্রায় সন্ত্রাস এক মধ্যবর্তী স্টেশন মাত্র। তারা দিব্যি জানে, সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্মকে পুঁজি করে নির্বাচনের পথেই মতা পাকা করা সম্ভব। হিটলার, মুসোলিনির মতো নরেন্দ্র মোদীও কিন্তু পরপর দু’বার নির্বাচিত হয়েছেন। যে এল কে আদভানীর জীবনের প্রধান কৃতিত্ব বাবরি মসজিদ ধ্বংস, সেই তিনিও ভারতের ভাবি প্রধানমমন্ত্রী বিবেচিত হচ্ছেন। সুতরাং ভোটেই কার্যসিদ্ধি হলে আর কেন সন্ত্রাসকে হাতিয়ার করা? করা এক এক ঢিলে দুই পাখি মারার খায়েশে। নিজেদের সন্ত্রাসকে মুসলিম মুখোশ পরিয়ে দেখালে একদিকে মুসলিমদের রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করা সম্ভব অন্যদিকে জুজুর ভয় দেখিয়ে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে হিন্দুত্ববাদের পতাকাতলে জমায়েত করাও সহজ। এটা তাদের পরীতি পথ। গুজরাত গণহত্যা তাদের জনবিচ্ছিন্ন করেনি, বরং নির্বাচনী বাজিমাতকে সহজ করেছে। তাই গণতন্ত্রের মধ্যে অধিকাংশের শাসনের যে প্রতিশ্র“তি আছে তা মোদী গংয়ের হাতে পরিণত হচ্ছে অধিকাংশের দাপটে। কতিপয়ের উত্থানের চরিত্র ক্যু কিংবা সন্ত্রাসবাদ। আর অধিকাংশের দাপটের চরিত্র ফ্যাসিবাদ।

এই ফ্যাসিবাদ জার্মান বা ইতালিয় ফ্যাসিবাদের মতোই আধুনিকতার মুখোশ পরা বলে চিনতে অনেকের দেরি হচ্ছে। তাই অরূন্ধতি রায় তাঁর ইস্তাম্বুল বক্তৃতায় যথার্থই বলেন, ‘‘এটা কোনা কাকতাল নয় যে, ওসমানিয়া সাম্রাজ্যের যে রাজনৈতিক দলটি আর্মেনিয়দের ওপর গণহত্যা চালিয়েছিল তার নামও ছিল ‘কমিটি ফর ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস’। হিটলার এবং মুসোলিনিও ছিলেন প্রগতির ধ্বজাধারী। আমেরিকার ভিয়েতনাম ও ইরাক-আফগানিস্তান-কসোভো সবই তো ভেক ধরা গণতন্ত্র ও প্রগতির রক্তাক্ত পদচিহ্ন। আদভানীর বিজয় রথও প্রগতি ও আধুনিকতার নামেই যাত্রা করেছে।’’ তারা দেখাচ্ছে, মুসলিম ও আদিবাসীরা এই প্রগতির শত্র“। অন্যদিকে ভারত যেহারে ইসরায়েল ও আমেরিকার অক্ষে ঢুকছে, তাতে ঐ দুটি পরাশক্তির জাতবিদ্বেষের সঙ্গে ভারতীয় মুসলিম বিদ্বেষও একাকার হওয়ার মওকা পাচ্ছে। পরাশক্তি ভারত যদি সে পথে যায়, উপমহাদেশে তার বিপদ কল্পনা করাও কঠিন।

এখানেই পাকিস্তান ও বাংলাদেশের ধর্মীয় উগ্রবাদীদের সঙ্গে তাদের তফাত। এই দুটি দেশে ধর্মীয় রাজনীতি প্রধানত আধুনিকতা বিরোধী। অথবা তারা আধুনিকতার নিজস্ব বয়ানে বিশ্বাসী। রাজনৈতিক ইসলামের ধারাটি এখানকার শাসকবর্গের মূল অংশ নয়। বড় জোর শাসকবৃত্তের ছোট তরফ তারা। শহুরে উঠতি ধনিক ও নিম্নবিত্ত এবং গ্রামীণ দরিদ্রদের নিয়েই এদের কারবার। জেএমবি প্রধান শায়খ রহমানের জবানিতে থেকেও বোঝা যায় পশ্চিমা আধুনিকতায় ক্ষিপ্ত ও বিত্তবঞ্চিতরাই তাদের সহিংস রাজনীতির খাতক। ভারতের বেলায় তা আসছে অগ্রসর শ্রেণীগুলোর একচেটিয়া ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার রক্ষাকবচ হিসেবে। সনাতন ভারতীয় উচ্চবর্ণের আধিপত্যবাদী মতাদর্শ আর দেশি-বিদেশি পুঁজির বাসনা সেখানে গলাগলি করি পরস্পরকে পুষ্টি যোগাচ্ছে। অন্যদিকে ফ্যাসিবাদ কায়েম করবার জন্য যে অর্থনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় তাকদ লাগে তা ভারত ছাড়া উপমহাদেশের অন্য দুটি রাষ্ট্রের নেই, সেরকম মতাদর্শও অনপুস্থিত। আমাদের মতো দেশে তা বড়জোর সেনাশাসন ও প্রধান দুটি দলের হাতিয়ার হওয়ার বেশি যেতে পারে না। ১৯৭১-এ যেভাবে তাদের নির্যাতকদের দোসর হিসেবে দেখা গেছে, সেটাই এখন পর্যন্ত তাদের রাজনীতির সীমানা। নিজের জোরে বড় আন্দোলন কিংবা নির্বাচিত সরকার গঠন তাদের সাধ্যের বাইরে। সরকারি প্রশ্রয় ছাড়া দাপট দেখানোর কোনো নজিরও এখনো মেলেনি। মধ্যপ্রাচ্যের পেট্রোডলার আর মধ্য এশিয়ার রাজনৈতিক মদদের হিসেব কষলে, শক্তি নয় বরং এদের নির্ভরশীলতারই প্রমাণ মেলে।

আবার এটাও খেয়ালে রাখা দরকার যে, ভারতীয় সমাজ ও রাজনীতির মধ্যে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যে সচেতনতা রয়েছে, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে তা খুবই কমজোরি। তাহলেও, ভারতে কিছু ঘটা মানে তার ঢেউ আলবৎ বাংলাদেশকেও দোলাবে। সেটা হবে ব্রিটিশ আমলের সাম্প্রদায়িক হানাহানির নতুন পর্ব। সেই পর্ব আসা মানে উপমহাদেশের সকল ধরনের সংখ্যালঘুদের জীবনে নরক নেমে আসা। সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মের মানুষের জীবনও তখন আর আগের মতো থাকবে না। ফলে, বিপদ ভেতর-বাহির দুদিকেই। বিশেষ করে বৈশ্বিক আর্থিক মন্দার পরিবেশে এই ভয় আরো বেশি। মন্দার মধ্যেই কিন্তু ইউরোপীয় ফ্যাসিবাদ জনগণের হতাশাকে পুঁজি করে বেড়ে উঠেছিল। সবসময়ই মন্দা-নৈরাজ্য হয় বিপ্লব নয়তো প্রতিবিপ্লব ডেকে আনে। আমাদের বেলায় অমঙ্গলের সোনায় সোহাগা আয়োজন দেখে ইতিবাচক পরিবর্তন দুরাশা মাত্র। কিন্তু ইতিহাস মানে পূর্বনির্ধারিত নিয়তি নয়। মানুষই ইতিহাস বানায় ও বদলায়। উপমহাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিগঠন আমাদেরই কর্মফল এবং আমরাই পারি তার খাত বদলে দিতে।

অরূন্ধতি রায়ের কথা ক’টি তাই কানে বাজে, ‘জার্মানিতে যখন ইহুদি-গণহত্যা (হলোকস্ট) চলছিল, তখনও জার্মানরা ছেলেমেয়েদের পিয়ানো বা বেহালার বাজনা শেখাতে নিয়ে যেত, উদ্বিগ্ন থাকত বাচ্চাদের পড়ালেখা নিয়ে!’ আমরাও কি মেতে থাকব মিথ্যা ভরসায়। শিশুরা ভয় পেলে চোখ বুঁজে ফেলে। এটাই তাদের আত্মরক্ষার সহজাত কৌশল। আমরাও কি তেমন চোখ বুঁজে থাকার আত্মরক্ষায় মাতবো? আর ভাববো, যেহেতু আমি দেখছি না সেহেতু ভয় নেই! ধন্য আশা কুহকিনী।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে নভেম্বর, ২০০৮ দুপুর ২:১৫
৩৯টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×