somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইলেক্ট্রনিক শপের সহজ পাঠ। পর্ব-৪: পিএলসি (প্রোগ্রামেবল লজিক কন্ট্রোলার) বেসিক।

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বর্তমান বিশ্বে মানুষের কায়িক শ্রম ও জীবনের ঝুঁকি লাঘব করেছে যে যন্ত্রটি তা হচ্ছে প্রোগ্রামেবল লজিক কন্ট্রোলার বা সংক্ষেপে পিএলসি। বিভিন্ন ধরণের শিল্প কারখানা ও বিভিন্ন যন্ত্র নিয়ন্ত্রণে ইলেক্ট্রো-মেকানিক্যাল কন্ট্রোল সিস্টেম হিসেবে এর প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায়; যেমন - উৎপাদন শিল্পে, এসকালেটরে, লিফটে, ট্রাফিক কন্ট্রোলে, এরোস্পেসে, মুদ্রণ শিল্পে, খাদ্য শিল্পে, বস্ত্র শিল্পে, প্লাস্টিক শিল্পে, নিউক্লিয়ার প্লান্টে, বিনোদন পার্কের রাইডগুলোতে ইত্যাদি ক্ষেত্রে পিএলসি ব্যবহৃত হয়। মোট কথা, বর্তমান বিশ্ব হচ্ছে অটোমেশনের বিশ্ব, যেখানে ব্যবহৃত প্রযুক্তিটা হলো পিএলসি।



প্রোগ্রামেবল লজিক কন্ট্রোল উদ্ভব হয়েছে কম্পিউটার বেইজড রিলে কন্ট্রোল সিস্টেম থেকে। পূর্বে এই কাজের জন্য শত শত রিলে ব্যবহার করা হত।







পিএলসিতে প্রোগ্রামিং বা কাজের নির্দেশনা দেয়া হয় সাধারণত ল্যাডার লজিক নামের বিশেষ কৌশলের মাধ্যমে, যা লজিক্যাল কাজের ক্রম তৈরী করে। এভাবে কোন মানুষের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ ছাড়াই ক্রমানুসারে বিভিন্ন কাজ প্রক্রিয়াজাতকরণ করা হয়। পিএলসি সাধারণ কম্পিউটার থেকে ভিন্ন হয়, কারণ সাধারণ কম্পিউটারের মত এত হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার এতে প্রয়োজন হয়না। মাল্টিপোল ইনপুট-আউটপুটের ব্যবস্থা, উচ্চ তাপ সহনশীল, ধুলা-বালি ও ইলেকট্রিক্যাল নয়েজ সহনশীল ও কম্পন সহনশীল করে পিএলসি তৈরী করা হয়।



মাইক্রোপ্রসেসর ভিত্তিক এই যন্ত্রটি যে কেউ সহজে ব্যবহার করতে পারে, এমনকি একজন কম্পিউটার সম্পর্কে অজ্ঞ লোকও। পিএলসি সহজে প্রোগ্রাম করা যার এবং সে প্রোগ্রাম পরিবর্তনও করা যায়, সহজে মেরামত ও সংযোগ দেয়া যায়, ওয়্যারিং খরচ কমায়, সহজে আয়ত্ত করা যায়, রিলে সিস্টেমের চেয়ে আকারে ছোট ও বিশ্বস্ত, আর খরচ অবশ্যই রিলে সিস্টেমের চেয়ে অনেক কমিয়ে এনেছে। এজন্য সকল প্রকার শিল্পে এর জনপ্রিয়তা বেড়ে গেছে। বর্তমানে এটি গতি নিয়ন্ত্রণে, রিলে নিয়ন্ত্রণে, প্রসেস নিয়ন্ত্রণে, নেটওয়ার্কিং এর জটিলতায়, সর্বোপরি পণ্য বন্টন নিয়ন্ত্রণে একটি নির্ভরযোগ্য প্রযুক্তি। পিএলসির কিছু অসুবিধাও আছে; ওয়্যারিং এ অনেক কাজ করতে হয়, রিপ্লেসমেন্টের ক্ষেত্রে ঝামেলা, ভুল বের করা কঠিন ও ভুল বের করতে দক্ষ লোকের দরকার হয়, যখন একটি সমস্যা হয় তখন হোল্ড-আপ টাইমও অনেক দীর্ঘ হয়।





পিএলসিতে প্রোগ্রামেবল মেমরি থাকে যেখানে বিভিন্ন প্রকার নির্দেশনা জমা থাকে। এই নির্দেশনাগুলোই গাণিতিক যুক্তি, সময় নির্ধারণ, ক্রম প্রভৃতি কাজ করে থাকে। একটি মাইক্রোকন্ট্রোলারে একটিমাত্র আইসিতে প্রসেসর, মেমরি ও প্রোগ্রামিং ইনপুট/আউটপুট প্যারিফেরাল নিয়ে যেমন একটি ছোট কম্পিউটার হিসেবে কাজ করে, পিএলসিও ঠিক অনুরূপ কাজ করে থাকে। তবে এদের ভেতর মূল পার্থক্য ব্যবহারে। মাইক্রোকন্ট্রোলার লো পাওয়ার ও সুক্ষ্ম কন্ট্রোলিং সিস্টেমে ব্যবহৃত হয়, আর পিএলসি ব্যবহৃত হয় কল-কারখানায় ও যন্ত্রে হাই পাওয়ার কন্ট্রোলিং সিস্টেমে।







পিএলসি'র হার্ডওয়্যার বলতে প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড, আইসি মডিউল, ওয়্যার, ব্যাটারি, ক্যাসিং ইত্যাদি বুঝায়। ফার্মওয়্যার বা কার্যনির্বাহী সফটওয়্যারটি স্থায়ি হিসেবে রিড অনলি মেমরি (ROM) বা ইরেজেবল প্রোগ্রামেবল রিড অনলি মেমরিতে (EPROM) স্টোর করা থাকে; নির্মাতা প্রতিষ্ঠানই এটি স্টোর করে দেয়। ইপিরম এ প্রোগ্রাম লিখে পরে তা স্থায়ি করা যায়। আর ব্যবহারকারী যে প্রোগ্রামটি চালায় তা সাধারণত রেনডম একসেস মেমরিতে (RAM) স্টোর করা থাকে। কার্যনির্বাহী সফটওয়্যারটি ব্যবহারকারীর প্রোগ্রামে কি ফাংশন থাকবে, কিভাবে প্রোগ্রাম সমাধান করা হবে, কিভাবে ইনপুট/আউটপুট (I/O) কাজ করবে, পাওয়ার বেড়ে-কমে গেলে বা ফল্ট কন্ডিশনে পিএলসি কি পদক্ষেপ নিবে এসব নির্ধারণ করে। এর সিপিইউ'তে চারটি বাস থাকে - ডাটা, এড্রেস, কন্ট্রোল ও সিস্টেম বাস। সিপিইউ ডাটা বাসটি ব্যবহার করে বিভিন্ন অংশে ডাটা পাঠানোর জন্য, এড্রেস বাস লোকেশন এড্রেস পাঠায় স্টোর করা ডাটা উদ্ধারের জন্য, কন্ট্রোল বাস অভ্যন্তরীণ কন্ট্রোলিং এর জন্য সিগন্যাল প্রেরণ করে, আর সিস্টেম বাস ইনপুট/আউটপুট পোর্ট ও ইনপুট/আউটপুট ইউনিটের মাঝে যোগযোগ রক্ষা করে। এছাড়া টাইমার এবং কাউন্টারও পিএলসিতে থাকে।





ইনপুট/আউটপুট সংখ্যাকে বাড়ানো যায় বর্ধিত মডিউল এর মাধ্যমে। ইনপুট/আউটপুট দূরে দূরে থাকলে ক্যাবল দিয়ে তাদের পিএলসির সাথে যুক্ত করা হয়। অনেক সময় অনেকগুলো পিএলসি একটি মাস্টার পিএলসি'র সাথে যুক্ত করা হয় অন্যান্য ইউনিটের ভেতর ইনপুট/আউটপুট ডাটা আদান প্রদানের জন্য। সংযোগের জন্য কোএক্সিয়েল বা ফাইবার ক্যাবল ব্যবহার করা হয়।



ইনপুট মডিউল কি ধরণের হবে তা নির্ভর করে ইনপুট ডিভাইসের উপর। মানে আমরা কি ধরণের ডাটা দিচ্ছি তার উপর - হতে পারে তা ডিজিটাল বা এনালগ। পিএলসি'র প্রথম কাজ হচ্ছে বিভিন্ন ধরণের সুইচ ও সেন্সর থেকে প্রাপ্ত সিগন্যাল গুলোকে সিপিইউ এর উপযোগী লজিক সিগন্যালে পরিণত করা। সিপিইউ ইনপুট, আউটপুট ও অন্যান্য ভেরিয়েবলের অবস্থা দেখে বিশ্লেষণ শেষে আউটপুটে সিগন্যাল পাঠায়। আউটপুট মডিউল সিপিইউ এর কন্ট্রোল সিগন্যালকে ডিজিটাল বা এনালগে রূপান্তর করে যা বিভিন্ন আউটপুট যন্ত্র নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয়।





সাধারণত বেশীর ভাগ পিএলসি কন্ট্রোলার ২৪VDC বা ২২০VAC তে কাজ করে। অনেক পিএলসি'তে পাওয়ার সাপ্লাই ইন্টিগ্রেটেড থাকে আবার অনেকগুলোতে আলাদা মডিউল হিসেবে থাকে। প্রসেসরে প্রয়োজনীয় প্রোগ্রাম দেয়ার জন্য একটি প্রোগ্রামিং ডিভাইস প্রয়োজন হয়। প্রোগ্রামিং ডিভাইসে প্রোগ্রামটি তৈরী করে তারপর পিএলসি'র মেমরি ইউনিটে প্রেরণ করা হয়।





IEC 1131-3 হলো প্রোগ্রামেবল কন্ট্রোলারের প্রোগ্রামিং ভাষার আন্তর্জাতিক মানদন্ড। এই মানদন্ড অনুসারে প্রোগ্রামিং ভাষাগুলো হলো -
ল্যাডার ডায়াগ্রাম (LAD)
সিকোয়েনশেয়াল ফাংশন চার্টস (SFC)
ফাংশনাল ব্লক ডায়াগ্রাম (FBD)
স্ট্রাকচার টেক্সট (ST)
ইন্সট্রাকশন লিস্ট (IL)
স্ট্যাটমেন্ট লিস্ট (STL)
এইগুলো দিয়েই প্রোগ্রাম লেখা হয়, তবে একটার সাথে আরেকটার লিখন পদ্ধতিতে পার্থক্য অনেক।










প্রোগ্রামিং ভাষা নিয়ে আরো কিছু জানতে -






































পিএলসি বিষয়ে আইইবি সহ অনেক প্রতিষ্ঠানই প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। এ বিষয়ে দক্ষতা বাড়াতে সে প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশ নিতে পারেন। উল্লেখ্য যে, এ বিষয়ে আমার কোন প্রশিক্ষণ নেই।



আগের পর্ব -

ইলেক্ট্রনিক শপের সহজ পাঠ। পর্ব-৩: হাট্টি মাটিম টিম, মজার একটা নাম হচ্ছে ক্লাউড কম্পিউটিং

সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:০৯
৩০টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×