somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

এক নিরুদ্দেশ পথিক
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব,ইইই প্রকৌশলী। মতিঝিল আইডিয়াল, ঢাকা কলেজ, বুয়েট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র।টেলিকমিউনিকেশন এক্সপার্ট। Sustainable development activist, writer of technology and infrastructural aspects of socio economy.

গ্রামীণ অবকাঠামো ডিজাইন ও বাস্তবায়ন ত্রুটির সেকাল একাল

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(নোটঃ কিছুটা বড় পোস্ট, তবে কানেক্টেড রাখার চেষ্টার করেছি। সামুতে এক নিরুদ্দেশ পথিক ব্লগের মাত্র ২ বছর পুর্তি উপলক্ষে!)

গ্রামীন পরিবেশে অবকাঠামো বিষয়ক ভাবনা আসলেই আমার মনের পর্দায় ভেসে উঠে ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্টের পাকা কাচা ভাঙা এবং অর্ধ ভাঙা কিছু ব্রিজ এর কথা, বাঁশের সাঁকো গুলোর কথা কিংবা আমাদের গ্রামের পাশ ঘেঁসে যাওয়া উঁচু রেল সড়কটির কথা, বন্যায় ডুবে যাওয়া গ্রামের ভিতরের রাস্তা গুলোর কিছু দূর পর পর যাতে বাঁশের অস্থায়ী সাঁকো ছিল, যেখানে কাদা মাখা পা পিছলে যেতে চাইতো। কিংবা আমাদের স্কুল ঘরটির কথা যার প্লাস্টার খয়ে গেসে, ছাদের আস্তর ভেঙ্গে গেছে কিছু জায়গায়।

ভেসে উঠে আমার গ্রামের বাড়ির সামনের একটা খুব ছোট একটা সেতু যার ঠিক মাঝ খানটায় একটা বড় ফুটা ছিল যেখান থেকে কয়েকটা জং ধরা সরু রড বেরিয়ে ছিল বহু বছর, যেখানে একটা ইটবাহী ট্রাক আটকে পড়েছিল কয়েকদিন, যার পাশের সাইড বেরিকেড আংশিক ভাঙা ছিল, ভিত্তি মূলের ফাটল ধরা ইটের গাইড ওয়াল যা ভারী যানবাহন সহ রাস্তার লোড নিতে না পেরে সরে গেসে কিছুটা দূর, মূল ব্রিজ থেকে যার উপর থেকে ভরা বর্ষায় ছেলেরা পানি ঝাঁপ দেয়ার প্রতিযোগিতা করতো, গ্রামের দুরন্ত ছেলেরা যেখান থেকে খুলে নিয়েছে কয়েকটা ইট! অথবা স্কুল ঘরের দেয়ালের খয়ে যাওয়া প্ল্যাসটারে খোদাই করে প্রেমিকার নামের পাশে প্লাস দিয়ে লিখা সুপ্ত ভালোবাসার কথা যার জন্য মার খেয়েছে আমাদের ভীষণ কড়া হেড মাষ্টার হুমায়ূন স্যারের, যিনি এসমব্লিতে দাঁড় করিয়ে ভরা কন্ঠের দরাজ গলায় শপথ পড়াতেন "আমরা স্কুলে আসবো, উত্তর থেকে আসব, দক্ষিণ থেকে আসবো, পুর্ব থেকে আসবো, পশ্চিম থেকে আসব, ভাই বোনকে নিয়ে"। আজ জীবনের এতটা পথ পাড়িয়ে দিয়ে ভাবছি, কেন আবকাঠামো গুলো সেই সময়ে খুব পুরানো না হলেও এত জীর্ন ছিল, যা প্রতিশ্রুত লাইফ সাইকেলের এক চতুর্থাংশ সময়ও পেরুতে পারেনি। এটা শুধু পচা ইট বসানো কিংবা সিমেন্ট চুরির গল্প নয় এতে নিহিত রয়েছে ডিজাইন সম্পর্কিত অনেক পেছনের কারণ যার সামান্য কিছু দিক আলোচনাই এই লিখার প্রেক্ষাপট।

ক। গ্রাম ও মফস্বলের রাস্তা তৈরির ধরনঃ পলি পতন প্রতিবন্ধকতা, বর্ষা ও ফ্ল্যাশ ফ্ল্যাড পরবর্তি সময়ে জলাবদ্ধতার উৎস

নদীমাতৃক বাংলাদেশে নদী এবং খালের পাড়ে শহর বন্দর এবং হাট বাজার বসে উঠেছে শতাব্দী প্রাচীন নৌপথ ভিত্তিক মাস ট্রাস্নপোর্টেশন এর কারনে যা সভ্যতার অত্যন্ত যৌক্তিক অধ্যায়। কিন্তু পরবর্তিতে সড়ক পথ করার সময় দেখা যায় ঠিক নদী বা খালের একটি কূল ব্লক করে রাস্তা বানানো হয়েছে (কথিত মাটি প্রাপ্তির সুবিধার জন্য) কিন্তু এতে চাষের জমিতে পলি পতনে প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে, বিপরীতে পলি পতন জনিত উর্বরতা ত্বরান্বিত করতে সঠিক সময়ে ওয়াটার পাসের জন্য পর্যাপ্ত কাল্ভার্ট, ব্রিজ কিংবা স্লুইস গেইটের বন্দবস্ত করা হয়নি। অথবা বর্ষা পরবর্তি জলাবদ্ধতা কিংবা ফসল কাটা নতুন ফসলের জন্য জমি প্রস্তুতে দ্রুত পানি সরানোর বিবেচনা ব্রিজ কাল্ভার্ট ডিজাইন এবং ডাইমেনশনে আনা হয়নি। কাচা পাকা রাস্তা করা হয়েছে কিন্তু সেই এলাকার কয়েক যুগে হওয়া বন্যা গুলোর পানির উচ্চতা কেমন ছিল তার গড় মেজারমেন্ট নেয়া হয়নি, ফলে এই ২০১৫ সালের বন্যাতেও গ্রামের ভিতরের সব রাস্তা এবং গ্রামের মূল রাস্তাটির কিছু অংশের উপর পানি উঠতে দেখেছি, অথচ পাশেরই শত বছরের পুরানো রেলসড়ক বন্যা মুক্ত।

মাটি ভরেটের রাস্তার বেইজে সাপোর্ট না রাখায় প্রতি বছর বর্ষা এবং বন্যা পরবর্তি সময়ে ভেঙ্গে যাওয়া অংশে মাটি ফেলে মেরামত করা লাগে। গ্রামীণ আবোকাঠামো সামাজিক বনায়নের বাস্তব আওতায় না থাকায় এই ভাঙ্গন পরিস্থিতি আরো ত্বরান্বিত হচ্ছে।

পলি পতনের জন্য নদীর বা খালের দুই কূল উন্মুক্ত রেখে দুই স্রোত ধারার মাঝের ভুমিতে নতুন খাল খনন করে রাস্তা বানানোর ডিজাইন কোথাও চখে পড়ে না যা বাড়তি পানি প্রবাহের এবং শুকনা মৌসুমে পানি ধারনের বন্দবস্ত করতে পারতো। রাস্তা নির্মানে এগুলো এক একটি ডিজাইন গ্যাপ নির্দেশক যা আমরা হয় ধরতে পারিনি অথবা দুর্নিতি পরায়নতার কারনে বাস্তবায়ন করিনি।


খ। গ্রাম ও মফস্বলের রাস্তা পাকার করার ধরনঃ গ্রামীণ অর্থনীতির সব অংশকে ইন্টিগ্রেট না করা

সেকালের গ্রামের পায়ে হাটা মেঠো পথ একালে পাকা হয়েছে কিন্তু স্থানীয় আর্থনৈতিক কর্মকান্ডের বিবেচনা গুলো পিছনেই পড়ে গেসে। চুরি প্রশস্ত করতে এমনভাবে পাকা হয়েছে যে রাস্তাকে প্রশস্ত করা যায়নি, কোন মতে হাফ লেইন সমপরিমান বা তারো একটু কম প্রস্থ বানিয়ে তাকে যার পর নাই নিন্ম মানের ইটা এবং বালু নিয়ে সামান্য রোল করে তার উপর অতি পাতলা পীচে আবৃত করা হয় যা ২-১টি বর্ষার পরেই খয়ে যেতে শুরু করে, এবং বীভৎস রুপ ধারণ করে। পীচে আস্তরিত অংশের ঠিক বাইরেই রাস্তার ঢাল শুরু, পায়ে হাঁটা পথ টুকু পর্যন্ত থাকেনা।পীচ ঢালা কিংবা পীচ খয়ে যাওয়া কনাময় এসব পথেই গ্রামের ছেলে মেয়ে দূরের মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে আসা যাওয়া করে, এর বাইরে সংকীর্ন পথটুকুও রাখা হয়না যাতে খালি পায়ে মাঠে কাজ করা কৃষক হাঁটবে। এই সব রাস্তার উঁচা নিচা গর্তে রোগীর কিংবা সন্তান সম্ভবা মায়েদের কষ্টের কথা কেউ কোনদিন ভাবেনি।

অর্থাৎ রাস্তা তৈরিতে সমাজের সকল অর্থনৈতিক শ্রেণীর চাহিদা বিবেচনায় আসেইনি। বাংলাদেশে মাথায় করে পণ্য পরিবহন করা হয়, কাধে করে এবং কাঁধের ভারে পণ্য পরিবহন করা হয়, এমনকি পণ্য দড়ি টানা হয়, বাই সাইকেলের সামনে পিছনে বস্তা রেখে পণ্য পরিবহন করা হয়।মানহীন পাকা রাস্তা করে করে গ্রামীন অর্থনীতির এর ক্ষুদ্র কিন্তু পরিবেশ সহায়ক পণ্য পরিবহন এবং হাটা পথ উপড়ে ফেলা হয়েছে।
হাঁ পাকা রাস্তা গ্রামীণ সমাজের ট্রাস্নপোর্টেশনকে আধুনিক করতে ভূমিকা রাখছে, বেশি পণ্য পরিবহণকে সহজ করছে (সেটাই হওয়া উচিৎ) কিন্তু ২-১টি বর্ষার পরেই এই মানহীন রাস্তা গুলো এটতা বাজে হয়ে উঠে যে, তা সুবিধা ভোগ করার বদলে তা মানুষের গলার কাটা হয়ে দাঁড়ায়। উপরন্তু ছোট উৎপাদনের ক্ষেত্রে এই অনাধুনিক পরিবহন সমূহ স্থানীয় পর্যায়ে উতপাদিত এবং বিক্রিত পণ্য মুল্য বাড়াতে রাখতে সহায়ক ভুমিকা রাখছে। এর মাধ্যমে আমরা অপ্রয়োজনে সীমিত পণ্য উতপদন কারীকে পেট্রোল বা ডিজেল চালিত পরিবহন ব্যবহারে বাধ্য করছি।


গ। গ্রামের রক্ষায় বৃক্ষ রোপণঃ এখনও কেন্দ্রীয় বনায়ন প্রকল্পে নেই

অনিয়ন্ত্রিত রাসায়নিক খাদ্য নির্ভর মৎস্য চাষ, বন্যা এবং মানহীন মাটি ফেলার কাজের কারনে গ্রামের ভিতর বাইরের রাস্তাগুলো প্রতি বছর বর্ষায় ভাঙ্গে যাচ্ছে। বছর বছর তাই মাটি ফেলার একই পণ্ডশ্রম করা লাগছে, এতে সরকারের টাকা নস্ট হচ্ছে কিন্তু গ্রামের কার্জকর কোন উন্নতি হচ্ছে না। রাস্তা গ্রামীণ সমাজের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের মেরুদণ্ড। খারাপ রাস্তার কারনে পণ্য পরিবহণ এবং মোট উৎপাদন খরচ বাড়ে, এর বাইরে রয়েছে মানুষের কষ্ট বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক মানুষ , রোগী এবং সন্তান সম্ভবা মায়েদের।
রাস্তায় পরিকল্পিত বৃক্ষ রোপন করা গেলে ভাঙ্গন কিছুটা রোধ সম্ভভ।

ঘ। গ্রাম ও মফস্বল শহরের ব্রিজ নির্মাণঃ অবহেলা এবং খামখেয়ালীপনার চরম চিত্র

গ্রামের ব্রিজ তৈরিতে দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতা ফাঁকি দেয়া হয় এতে করে নানা বিধ সমস্যা তৈরি হয়। সয়েল টেস্ট করা হয় না ঠিক মত, ঠিক কোথা থেকে বাইজমেন্ট পাইলিং উঠবে তা আনুমান সাপেক্ষে কনট্রাক্টর এবং রাজ মিস্ত্রি ঠিক করেন। নিন্ম উচ্চতার কারনে নৌ চলাচল বিঘ্নিত হয় এতে ব্রিজের পাশেই আরেকটি যায়গায় ভরা মৌসুমে নালা করে ছোট ছোট কাঠের নৌকা গুলো ঠেলে পার করতে হয়। দৈর্ঘ্য ছোট করায় একদিকে নদী এবং খাল গুলোকে গলা টিপে হত্যা করার উপক্রম করা হয় যা স্রোতের বিপরীত মূখী বলের (ডি সেন্ট্রিফিউগাল ফোর্স) কারনে ব্রিজের ঠিক পাশের রাস্তার ভিত্তিকে দুর্বল করে দেয় এতে গাইড ওয়াল ভেঙ্গে পড়ে, ব্রিজে উঠার রাস্তা ভেঙ্গে যায়, প্রায়ই দেখা যায় সেখানে বাঁশের তৈরি সাপোর্ট সংযোগ তৈরি করতে হয়, এটা ভুক্তভোগীরা সকলের কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে করেন যা আবার কিছু দিন পর ভেঙ্গে পড়ে। মূল কারণ অনির্ণিতই থেকে যায়।

সেতুর প্রস্থে ভয়াবহ চুরি হয়, এটা দুর্নিতির আরেকটি খাত যা সচরাচর আমাদের নজরে আসে না। এধরনের ব্রিজের রেলিং এ রড সিমেন্ট দেয়া হয় অপর্যাপ্ত যা সামান্য আঘাতে ভেঙ্গে যায় এবং কম্পন মাত্রা বাড়িয়ে মূল সেতুর আয়ু কমিয়ে দেয়। অথচ সেতুর দৈর্ঘ, প্রস্থ উচ্চতা, ভার নিবার সক্ষমতা ক্যাল্কুলেশন সাপেক্ষেই রেলিং এর ডিজাইন করার কথা। আয়তাকার বা বর্গাকার বক্স কাল্ভার্ট না করে সাধারণ গাইড ওয়াল দিয়ে এখনও কিছু কিছু ব্রিজ করতে দেখা যায় যা বন্যার স্রোতে সরে যায়। এগুলো এক একটি ডিজাইন ত্রুটি যা প্রকৌশলী মাত্রই অবগত কিন্তু ডিজাইন ইনপুট হিসেবে নিতে কিংবা প্রকল্প পরিচালকের দুর্নিতি প্রবনাতার কারনে বাস্তবায়ন থেকে পলায়নপর।

ঙ। গ্রাম ও মফস্বল শহরের রাস্তার প্রস্থঃ মাল্টি লেভেল ট্রাস্নপোরটেশনের বেবেচনা ডিজাইনে নেই

এমনিতেই গ্রামীণ কাঁচা সড়ক গুলো সংকীর্ন করে তৈরি করা হয়, উপরন্তু ভাঙ্গন জনিত কারনে সেগুলো আরো জীর্ন হয়। কিন্তু কাঁচা সড়ক পাকা করার সময় স্টান্ডার্ড লেইন বাস্তবায়নের কথা থাকলেও গ্রামের কাঁচা রাস্তা পাকা করার সময় রাস্তা পর্জাপ্ত বর্ধিত না করে কোন মতে পুরো রাস্তা কভার করে শুধু হাফ লেইন পিচ করা হয়। উপরন্তু এইসব রাস্তার কিছু সেতুতে লেইন আরো সংকীর্ন করে ফেলা হয় যাতে উভয় মুখি যানচলাচল ব্যাহত হয়। এইসব পাকা রাস্তার পাকা প্রস্থের বাইরে পায়ে হেঁটে চলার রাস্তা থাকে না, যা জুতা সেন্ডেল না পড়া লোকের চলাচলে, গবাদি পশু চলাচলে কিংবা মালামাল টানা বা ঠেলার প্রতিবন্ধক। বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজে মালামাল এবং কৃষি পন্য যে পায়ে হাঁটা পথে টানা বা ঠেলা হয়, কৃষকের নিজের কাঁধে বা কাঁধের উপর ভারে বহন করা হয় এইসব ডিজাইনার কিংবা পরিকল্পনাকারীদের বেবেচনায় নেই। ফলে এই পাকা রাস্তা গ্রামীণ সমাজের উচ্চ বিত্তের কম্ফোর্ট বয়ে আনলেও কৃষকের উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি করে।

চ। গ্রাম ও মফস্বল শহরের স্কুল বাসা মসজিদ নির্মানঃ রাজ মিস্ত্রিই ডিজাইনার

গ্রামীণ এলাকার বিল্ডিং কন্সট্রাকশনে সয়েল টেস্ট, ফাউন্ডেশন ডিজাইন, আরসিসি লোড মেজার করার সিভিল এবং ম্যাকানিক্যাল ব্যাপার গুলো রাজ মিস্ত্রি দিয়েই করান হয় মূলত খরচ বাঁচাতে। এর উপরে আদ্রতার ব্যাপার, বন্যা সহনীয় উচ্চতার হিসেব আমলে নিয়ে ফাউন্ডেশন এবং রড-সিমেন্ট ইত্যাদির আনুপাতিক ব্যবহারের ব্যাপার সমূহ অবহেলিত। ফলে কন্সট্রাকশনের স্থায়ীত্ব নাতিদীর্ঘ একই স্থাপনা রিমেইক করতে সরকার এবং নাগরিকের উপর্যুপরি ব্যয় হচ্ছে যা পরিহার করার সুযোগ রয়েছে ।


ছ। কৃষি ভূমি সংরক্ষণে গ্রামে গ্রামে ভার্টিক্যাল কনস্ট্রাকশনের আইডিয়া এখনও উপেক্ষিতঃ

এখনো আইল বা সীমানা ধরে বসত বাড়ি ভাগ হচ্ছে, এক লোকের যত সন্তান তত প্লট এবং তত ঘর করা হচ্ছে, আমরা বলছি এটা হোরাইজন্টাল কন্সট্রাকশন যা ঘনবসতি পুর্ন দেশে বেমানান। এতে দেখবেন গ্রামের এক একটি বাড়ি এক একটি বস্তি হয়ে উঠছে। বসত বাড়ির ভূমিকে ডিজিটাইজ করে আইলটাকে সফট কন্সেপ্ট এ আনা যায়। সরকার গ্রামে বহুতল বসতবাড়ির মডেল না বানালে কৃষি ভূমি রক্ষা পাবে না, একটু ধনী হলেই নতুন নতুন কৃষি ভূমি ভরাট হয়ে বাড়ি হচ্ছে। এখন কথা হচ্ছে সরকারের দরকার কেন, ব্যাপারটা মানুষকে বুঝাতে হবে যে, জমি ১ শতাংশ হোক হাফ শতাংশ হোক জমি ব্যাক্তিরই থাকবে, তবে বেড়া দিতে হবে না, সে চাইলে বিক্রি করতে পারবে আগের মতই, এতে জমির দামও কমবে না। একই বাড়ির অনেক গুলো পরিবার এর জন্য একটি বহুতল বাড়ির মডেল ডিজাইন করে, ধনী গরিব উভয়কেই চাহিদামত মান্সম্পন্ন একমোডেশন দেয়া যায়। এসব করতে হলে ভূমি রেজিস্ট্রেশন ব্যবস্থাপনা ডিজিটাইজড করতে হবে। মেলা কাজ। গ্রামীণ ইনভায়রন্মেন্টে ভার্টিক্যাল কন্সট্রাকশন ডিফিকাল্ট, এই কাজটায় সরকারকে খুব দরকার। মানুষকে পাইলট করে দেখিয়ে দিতে হবে আগে, তবে কোন বেসরকারি মুনাফাখোর কাউকে নয়, তাইলে জমি হাতিয়ে নেয়াই হবে তাদের মূল কাজ!

এরশাদ সরকারের আমলে দেশের আবাদী এবং অনাবাদী খাস জমিতে গুচ্চগ্রাম করার আপাত প্রশংসনীয় একটা উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। উল্লেখ্য এই প্রকল্প গুলোতে ধানী জমি, প্রাকৃতিক জলাশয় এবং প্রবাহমান খাল ভরাটের কোন বাছবিচার ছিল না, অর্থাৎ পরিবেশ বান্ধব বসতি গড়ার নির্দেশনা একেবারেই ছিলনা। এই প্রকল্পে গ্রামীণ পরিবেশে একটি সীমিত এলাকায় খুব ঘন ঘন করে ছোট ছোট টিন শেইড রো হাউজ তৈরি করে দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছিল, রাজনৈতিক দুর্বিত্তায়নের ছোবল সে সময় এতটা প্রকট ছিলনা বিধায় মোটামুটি ভাবে বলা চলে ভূমিহীনরাই সেসব ঘরের বরাদ্দ পেয়েছিল।ভুমিহীন ব্যতীত অন্যদের কাছে বিক্রি বা অন্য উপায়ে হস্তান্তরের উপর নিষেধাজ্ঞা ছিল না ঘরগুলতে। পরবর্তিতে স্থানীয় রাজনৈতিক দুর্বিত্তরা এবং জন প্রতিনিধিরা সেসব গরীবদের অনেকেকেই উচ্চেদ করে নিজেরা এইসব ঘর হাতিয়েছে। বর্তমানে এইসব গুচ্চগ্রাম শহুরে বস্তির এক্সটেনশন, এক একটি গুচ্চ গ্রাম হয়ে উঠেছে অপরাধ, জুয়া, মাদক এবং সুদি ব্যবসার কেন্দ্র।

আজ থেকে ২৫-৩০ বছর আগে শুরু হওয়া এই প্রকল্প গুলো অনুভূমিক (হোরাইজোন্টাল) না করে উল্লম্ব্য (ভার্টিক্যাল) করার পরিকল্পনা নেয়া গেলে, (তার আগেই চীন এই মডেলে গিয়েছে বলে এটা সেসময় নুতন কোন আইডিয়া ছিল না, উপরন্তু প্রকল্পটি বিশ্বব্যাংক ফান্ডেড ছিল, সেসব ঘরের টিন গুলোও বিদেশি ছিল) আজকের গ্রামীণ অবকাঠামো পরিকল্পনা সহজতর হোত, কৃষি ভূমি রক্ষা করা যেত। ভূমিহীনদের বাইরে স্বচ্চলদের জন্যও একই মডেল তৈরি করা যেত, এতে এক একটি বাড়ির অনেক গুলো পরিবারকে একটি বহুতল ভবনে উঠিয়ে দিয়ে (অবশ্যই সরকারি আর্থিক সহায়তায়) একটি বাড়ি একটি খামার হয়ে উঠার সুযোগ পেত। আজকের অবস্থা হোল মানুষ থাকার যায়গা নেই, বাড়ি হবে খামার! তাই আজ গ্রামের বাড়িতে আর শীতকালীন কিংবা বর্ষাকালীন শাক সবজির আবাদ একে বারেই অনিপুস্থিত।পাশাপাশি দুটি ঘরের মধ্যস্ত যায়গা এত কম এবং বসতির চাপ এত বেশি যে, ২-১টি লতা জাতীয় গাছ লাগানোর চিন্তাও অবান্তর।

কৃষি ভূমি সংরক্ষণের জীবনপণ তাগিদের বাইরেও উন্নত আবসন কেন্দ্রিক ভিন্ন চাহিদা রয়েছে প্রান্তিক গ্রামীণ সমাজে এবং বস্তিতে, এর সাথে শিক্ষায় সাফল্যের প্রত্যক্ষ সংযোগ রয়েছে। গ্রামীণ স্কুল গুলোয় আমাদের সরকারগুলো শিক্ষা বিস্তারে উপবৃত্তি দিলে সেটি একটি পর্যায় পর্যন্ত কার্যকর ভাবে শিক্ষা সম্প্রসারনে কাজে লেগেছে। কিন্তু কোয়ান্টেটিভ শিক্ষার কভারেজকে আজ কোয়ালিটেটিভ করা যাচ্ছে না যে বিশেষ কিছু কারনে তার মধ্যে মানহীন আবাসন গুরুত্ব পুর্ন।বস্তির পরিবেশে শিক্ষার চেয়েও গুরুত্বপুর্ন অন্য ৪টি চাহিদা পূরণ প্রকট হয়ে উঠে- ক্ষুধা-দারিদ্র, আবাসন -নিরাপত্তা, বস্ত্র-সম্ভ্রম এবং চিকিৎসা। এই চাহিদাগুলো অপুর্ণ রেখে শিক্ষা কিংবা শিক্ষার নৈতিক (এথিকস) বিস্তার অসম্ভভ।

তাই গ্রামীণ ও বস্তির নাগরিককে শিক্ষার পরিপুর্ন সুবিধাভোগী করতে চাইলে তাঁদের পূর্বোক্ত মৌলিক সমস্যাদির সমাধান দিতে হবে, যার মধ্যে মানসম্পন্ন আবাসন অন্যতম। আর গ্রামীণ নাগরিককে আর্থিক ভাবে বিকশিত করতে চাইলে গ্রামীণ অবকাঠামোর টেকসই উন্নয়নে নজর দিতে হবে।


সময় ফুরিয়ে যায়নি। গ্রামীণ অবকাঠামো ডিজাইন করা হোক গ্রামীণ অর্থনীতিকে প্রাণ সঞ্চারের নিমিত্তে। বাংলাদেশের জন্য ডিফাইন্ড টেকসই উন্নয়ন (সাস্টেইন এবল ডেভেলপমেন্ট) এর স্বরূপ বাংলাদেশেরই স্থানীয় জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে হোক!

বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনিতির পূর্ণ বিকাশের প্রতিবন্ধক গুলো সনাক্ত হোক,
গ্রামীণ অবকাঠামো টেকসই উন্নয়নে ইন্ট্রিগ্রেটেড হোক,

বাংলাদেশ এগিয়ে যাক!




ড্রাফটঃ ২রা ফেব্রুয়ারি ২০১৬,
১ম আপডেটঃ ১৩ই ফেব্রুয়ারি ২০১৬
২য় আপডেটঃ ২৩ই ফেব্রুয়ারি ২০১৬
(খ। গ্রাম ও মফস্বলের রাস্তা পাকার করার ধরনঃ গ্রামীণ অর্থনীতির সব অংশকে ইন্টিগ্রেট না করা, এই প্যারা সংযুক্ত করেছি। )
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:২২
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×